অদ্ভুত এক পরিবারের গল্প
অদ্ভুত এক পরিবারের গল্প
জাকির সাহেবের এক ছেলে এক মেয়ে, স্ত্রী মিসেস সামান্তা।মিসেস সামান্তা সামনের চুল কেটে চুলের বিভিন্ন স্টাইল করে, বয়স ৪৫ হয়ে গেছে কাওকে বুঝতে দেয় না। ছেলে আকাশ, অনার্স প্রথম বর্ষর ছাত্র, মেয়ে বৃষ্টি ইন্টার ফাস্টইয়ারে পরে। মা মেয়ে কোথাও এক সংগে বেড়াতে গেলে মনে হয় দুই বান্ধবি কোথায় যেন যাচ্ছে। তাদের মা মেয়ের কিছু কিছু জামা আছে একই রকম, মাঝে মাঝে একই জামা পরে বের হয়। মা মেয়ে দুজনেই ঠোটে লাল টুকটুকে লিপিস্টিক, মেকআপ করে বুক উচু করে চলা ফেরা করে। অথচ বাবা অর্থাৎ জাকির সাহেব তাদের থেকে একদম আলাদা। মাঝে মাঝে মনে হয় মা, মেয়ে আর ছেলে মিলে তাদের বাবাকে আশ্রয় দিয়েছে।
মিসেস সামান্তা একটা কম্পানিতে চাকরি করেন। ছেলে সিগারেট খায় বাসায় বসেই। বাবা কোন একদিন শরীর খারাপ লাগায় হঠাৎ দুপুর বেলাতেই বাসায় আসেন। অনেকক্ষণ যাবৎ কলিংবেল টিপছেন অথচ ভেতর থেকে দরজা খুলছে না। কিন্তু ভেতরে কেউ একজন আছে, অনেকক্ষণ ডাকাডাকি করার পর ছেলে দরজা খুললে বাবা দেখতে পায় ভেতর থেকে একটা মেয়ে বেড়িয়ে যাচ্ছে। কি আর করার বলার কিচ্ছু নেই উনি অসময় অফিস থেকে আসেন কেন।
মেয়ে বৃষ্টিও প্রেম করে একটা ছেলের সাথে। মাঝে মাঝে ছেলেটিকে বাড়িতে নিয়ে আসে অমৃতসুধা পান করানোর জন্য । এ ছাড়াও বাবা অনেক বার দেখেছেন তার মেয়েকে একটা ছেলের সাথে রিক্সায় ঘুড়তে। রাতে বসে বসে নীল ছবি দেখে বৃষ্টি। বাবা বুঝতে পারে কিন্তু কিছু বলতে পারে না। কি আর বলবে কেউ কাউকে সন্মানই করে না। বললেই বৃষ্টির মা এসে ধমক দেয়, বলে আমার মেয়ে যা ইচ্ছা করবে তুমি কোনো কথা বলবে না।
রাতে জাকির সাহেব ও তার স্ত্রী একসংগে ঘুমালে কিছুক্ষণ পর স্ত্রী উঠে বাড়ান্দায় গিয়ে মোবাইলে কথা বলে ঘন্টার পর ঘন্টা। সবই দেখে জাকির সাহেব, বুকের ভিতর আগুন জ্বলে যায়। আসলে যে পরিবারে ন্যায় অন্যায় বলে কিছু থাকে না সে পরিবার নরকের সমান।
মাঝে মাঝে সারা রাত থাকে না মিসেস সামান্তা। জিজ্ঞেস করলে এমন ব্যবহার করে মনে হয় জাকির সাহেব প্রশ্ন করে অপরাধ করে ফেলেছেন। সামান্তার হ্যান্ড ব্যাগে কনডমও পাওয়া যায় কখনো কখনো। এভাবেই চলছে তাদের পরিবার। মেয়ে নিয়ে আসে একটা ছেলেকে বাড়িতে, ছেলে নিয়ে আসে একটা মেয়েকে স্ত্রী বাহিরে রাত কাটায় আর একটা লোকের সাথে। কি অদ্ভুত পরিবার।
রাত ১২টার পর ছেলের কানে মোবাইল, মেয়ের কানে মোবাইল, বউয়ের কানে মোবাইল, চলছে তো চলছেই প্রেম প্রেম খেলা । আর বসে বসে এসব চিত্র দেখেন জাকির সাহেব। দেখে কখনো কাঁদেন আবার কখনো হাসেন কখনো বা বাথরুমে ঢুকে ঘন্টা দুয়েক ঝর্ণা ছেড়ে দিয়ে গোসল করেন। এ এক অসিম কষ্ট, না বলা যায় কাউকে বলতে না পারা যায় সইতে।
একদিন মা, মেয়ে,ছেলে মার্কেটে যায় কেনাকাটা করতে। ফিরতে ফিরতে রাত ১১ টা। বাড়িতে ঢুকেই দেখেন জাকির সাহেবের বেড রুমে সুন্দরি এক মহিলা বসে আছে, বয়স ৩০ এর কাছাকাছি। পাসে বসে আছেন জাকির সাহেব মেয়েটির হাত ধরে। এই দৃশ্য দেখে ওরা তিনজনতো অবাক। কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। ভিষণ রেগে গিয়ে ধমকের সুরে মিসেস সামান্তা বলেন- কে এই মহিলা।
জাকির সাহেব মুচকি হাসতে হাসতে পরিচয় করিয়ে দেন, ছেলে মেয়েকে বলেন এটা তোমাদের নতুন মা। আর মিসেস সামান্তাকে বলেন তোমার সতিন। আজ থেকে উনি আমাদের সাথে থাকবেন। কারন তুমি মাঝে মাঝে সারারাত থাক না তখন আমি একা একা বোর হয়ে যাই। আসা করি তোমরা সবাই খুশি হয়েছো !
একথা শোনার পর ৫ মিনিট সবাই একেবারে স্ট্যাচু, ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। এই ৫ মিনিটে সবাই সবার অবস্থান বুঝতে পারে। বুঝতে পারে তাদের কাজ করমে কেমন কষ্ট পেয়েছে জাকির সাহেব। মিসেস সামান্তা দৌড়ে গিয়ে স্বামীর পা জড়িয়ে ধরে ক্ষমা চায়। বলে ক্ষমা করো আমাদের এমন কাজ আর কোন দিন করবো না ছেলে মেয়েদেরও কখনো করতে দিব না। ছেলে মেয়েরাও হাত জোর করে বলে বাবা আমাদের ক্ষমা করে দাও আমরাও আর তোমার অসম্মান হয় এমন কাজ করবো না।
এই গল্পটি যদি আপনার ভাল লেগে থাকে তাহলে সেয়ার করতে ভুলবেন না প্লিজ। যে কোন অভিমত, বা সমালোচনা করার থাকলে কমেন্ট করে জানাবেন অবশ্যই। ধন্যবাদ সবাইকে ।
রচনা- এম, আব্দুল্লাহ আল মামুন
কোন মন্তব্য নেই