Header Ads

এখনো অপেক্ষা (জাহেদ রনি) কবিতা গুচ্ছ।

এখনো 

 কবি

জাহেদ

 জাহেদ রনি
 

কিছু কথা

         মি জাহেদ রনি। বর্তমানে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়,কুষ্টিয়াতে আইটি বিভাগে আছি।সেই ছোটবেলা থেকেই আমার লেখালেখির প্রতি ভালোবাসা জন্মে। লেখালেখি হয়তো আমার রক্তে মিশে আছে তাইতো এত চরাই উতরাইয়ের মাঝেও এখনো লিখে যাচ্ছি। প্রথম কবিতা প্রকাশ পায় ক্লাস এইটে থাকার সময় স্কুলের একটি ম্যাগেজিনে। এরপর কলেজের পত্রিকায় লিখালেখি করতাম এবং এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহিত্য সাময়িকীতে লিখি।

উৎসর্গ

আমার প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশকে

 

ভালোবাসায় অমরত্ব

কেউ কেউ ভালোবেসে মরে যায়,
আর কেউ ভালোবেসে অমর হয়,
আমি বোধহয় তোমাকে ভালোবেসে
অমর হতেই চলেছি তোমার দেয়া
অজস্র অবহেলা বুকে করে,
অথচ আমি তোমার ভালোবাসায়
মরে যেতেই চেয়েছিলাম
যেমন করে ইশ্বরের ডাকে সাড়া
দিয়ে তার প্রিয় উপাসক মরে যায়।


ভালোবাসার ব্যাপন

আমাদের ভালোবাসা শুধু
প্রেমিকার সাথে রেস্তোরাঁয় কিংবা
ক্যাফেতে ঝড়ো আলাপনে সীমাবদ্ধ
না থেকে ছড়িয়ে পড়ুক সর্বত্র,
রাস্তার পাশে বিবস্ত্র ওই অনাথের
জন্যও কিছু ভালোবাসা হোক,
প্রেমিকার শীতল আঁচলে নুইয়ে থাকার
মাঝেই আমাদের ভালোবাসা সীমাবদ্ধ না থাক,
কিছু ভালোবাসা হোক বস্তির কুঠুরিতে
ঘুমন্ত সকাল না দেখা শিশুটির সকাল দেখায়,
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়ায় প্রেমিকার
সাথে উষ্ণ আলাপনেই
আমাদের ভালোবাসা আটকে না যাক,
অথবা সিগারেটের বিলাসিতায় ধোঁয়া
উঁড়িয়েই আমাদের আমাদের
সুখের সীমানা নির্ধরণ না করে কিছু
সুখ ভাগ হোক রেললাইনে শুয়ে থাকা
রোগাটে ওই বৃদ্ধটির জন্য,
আমাদের সুখগুলো টুকরো টুকরো হয়ে
কাগজের মতো ছড়িয়ে পড়ুক,
ছড়িয়ে পড়ুক বস্তিতে,ফুটফাতে,

রিকশাওয়ালার পায়ের প্যাডেলে,
এবং ফুটফাত কোণে বিবস্ত্র শিশুর মুখের হাসিতে।

 

মধ্যবিত্ত বেকারজীবন

আমার ইচ্ছেগুলোকে বেচে দিয়েছি কিছু
সীমাবদ্ধতার ছায়াবৃত্তের বাজারদরে,
আমার ইচ্ছেগুলো চুপসে যায় যখন
চাকুরীর পরীক্ষা দিতে দিতে শ্রান্ত আমি,
যখন ভেসে আসে মায়ের ম্লান মুখখানি,
আমার ভালোলাগাকে চওড়া দামে বেচে দিয়েছি-
আমার পরিজনের ভালো থাকার কাছে,
তার বিনিময়ে খরিদ করেছি কিছু
বেমালুম অপেক্ষা,
এই অপেক্ষা আমার স্বপ্নের জন্য,
এই অপেক্ষা আমার মায়ের অপলক দৃষ্টিমুখর আমার পথ চেয়ে থাকা অবসানের জন্য,
এই অপেক্ষা আমার পরিজনের ভালো থাকার জন্য,
এই অপেক্ষা আমার প্রিয়তমার চোখের নিচের কালির ছাপ সরানোর,
এই অপেক্ষা আমার মধ্যবিত্ত
বেকারজীবনকে অর্থবহ করার জন্যে।

 

অনিবার্য সত্য

তুমি তোমার অস্তিত্বে অস্বীকার
করতে পারো না!
হয়তো তোমার অনেক সামনে
এগিয়ে যাওয়ার কথা ছিলো,
হয়তো তুমি তোমার সতীর্থ্যদের
চেয়ে কয়েক আলোকবর্ষ
পিছিয়ে পড়েছো,
হয়তো তোমার যে স্বপ্নটা ছুঁয়ে
দেখার কথা ছিলো তা অনেকটা
ফসকে গেছে,
তাই বলে কি তুমি তোমার
অস্তিত্ব অবিশ্বাস করবে!
তাই বলে কি এভাবে ঝিম ধরে
বসে থেকে আরো কয়েক
আলোকবর্ষ পিছিয়ে পড়বে?
তুমি চাইলেই পারো পিছিয়ে
যাওয়া কয়েক আলোকবর্ষ পথ
পাড়ি দিতে,
তুমি চাইলেই কিন্তু পারো
আগের চেয়ে কয়েকগুণ অধিক
দৌঁড়ে তোমার সতীর্থ্যদেরও
পেছনে ফেলতে,
তুমি চাইলেই কিন্তু পারো
হাজার হাজার ব্যর্থতার পরিক্রমা
পাড়ি দিয়ে আলোর বেগে
নিজেকে উজ্জ্বল করতে,
এখন সিদ্ধান্ত তোমার,
সিদ্ধান্ত তোমার-
তুমি কি কাপুরুষের মতো
নিজের অস্তিত্বে আগুন ধরিয়ে
নিজেকে পুড়িয়ে ফেলবে?
সিদ্ধান্ত তোমার-
তুমি কি হতভম্ব গাঙচিলের মতো
নিজের পিছিয়ে পড়া পথের দিকে
চেয়ে চেয়ে নিজেকে করুণা করবে?
সিদ্ধান্ত একান্তই তোমার-
তুমি কি তোমার আদিম অস্তিত্বে
অবিশ্বাস করবে?
নাকি আলোকবর্ষ পথ সাক্ষী
রেখে নিজেকে প্রমাণ করবে!
নিজের হাতে হাত ঘষে
উৎপন্ন তাপশক্তিতে
তোমার পিছিয়ে পড়া দেখে যারা
কড়তালিতে হাতক্ষয় করেছে
তাদের মুখে কলুপ এটে দিবে?
সিদ্ধান্ত তোমার,
একান্তই তোমার।


ভাবনালোক

তুমি আমার আকাশ হলে দিব্যি হতো,
মেঘলা খামে মেঘ আমাকে নীল পাঠাতো,
তুমি আমার সকাল হতে ভালোই হতো,
সকালটা যে হেয়ালীতে ভালোই যেতো,
তুমি আমার হৃদয় হলে কেমন হতো?
হৃদয়টাকে খুবটি করে ছুঁয়ে দিতাম,
তুমি আমার বুকের মাঝে পাজর
হলে বেশতো হতো!
যত্ন করে বুকে আমার ছোঁয়া দিতে,
আমি তোমার চোখের মাঝে কাজল
হলে কেমন হতো?
চোখের মাঝে একটা ফোঁটা আদর হতাম,
আমি তোমার শীতসকালের চাদর হলে
ভালোই হতো,
যত্ন করে তোমায় আমি আগলে নিতাম।


প্রতিশ্রুতি

আমাকে ভালোবেসে তুমি
নির্দ্বিধায় মরে যেতে পারেো,
আমি কবর হয়ে তোমাকে আঁকড়ে
ধরে থাকবো অনন্তকাল
কথা দিচ্ছি!
আমি এতটুকুও ছলনা করবো না !
কারণ মৃত্যু কখনো ছলনা শিখে নি
মানুষের মতো,
সে সত্য,সুন্দর এবং অনন্ত।

 

ধর্ষিতা বোন

মুঠোফোনের দিকে তাকাই,
আর আমাদের দুজনের একসাথে তোলা ছবিটা দেখতে থাকি,
দেখতে দেখতে হঠাৎ দম
বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো হয়!
আর কখনো মুঠোফোনের আলোটা অস্পষ্ট হয়ে আসে,
মনে হয় কি এক ভীষণ পবিত্রতা জড়ানো এই ছবিটাতে!
আমি আর আমার বোন,
অনবরত তাকাই ওর মুখের দিকে,
আর ভেসে আসে কি ভীষণ পবিত্র চেহারা চোখের সামনে,
হবেইবা না কেন!
সেতো আমার বোন,
ওর ছবির সাথে কথা বলি,
মনে হয় ছায়ালোক থেকে উত্তর দিচ্ছে:ভাই,আমারতো
খুব বাঁচার ইচ্ছে ছিলো,
ওরা আমাকে বাঁচতে দেয়নি
কি ক্ষতি করেছিরে ভাই!
আমি মেয়ে এই কি আমার অপরাধ!
হঠাৎ ভাবনার ছায়ালোক থেকে ঘোর কেটে আসে,
চেয়ে দেখি হাতে সেই মুঠোফোনটা
যেটা দুই বছর আগে আমার বোন টিউশনির টাকা জমিয়ে কিনে দিয়েছিল,
আমার বোনের দেয়া সেই মুঠোফোনটা হাতে ধরে আছি,
আর মুঠোফোনের সেই ছবিটার দিকে তাকিয়ে থাকি,
দুর্বিষহ কান্নার কালদীর্ঘায়ণ,
মাত্র দুই মাস আগে আগের কথা-
অসভ্য খেপা
পাগলাটে কুকুরেরা আমার বোনটাকে বাঁচতে দেয়নি,
ওর পবিত্র দেহে লম্পট কুকুরেরা কালো কালির আস্তরণ লাগাতে চেয়েছিলো
কিন্তু বোন আমার পবিত্রতা বাঁচাতে গিয়ে সেদিন নিজের অজানা গন্তব্য নির্বাচন করেছিল,
দেখেছি কি পবিত্র মুখটা!
হাতটা সামান্য ভেজা ছিলো রক্তের হিমোগ্লবিনের লাল আস্তরণে,
যেই হাত দিয়ে আমার গাল টিপে দিতো,
না পড়লে শাসন করতো সেই হাত!
বোন, আজ বড় ইচ্ছে করছে তোর হাতে মার খেতে,
তোর অপদার্থ ভাই!
তোকে বাঁচাতে পারলো না,
হঠাৎ হাত থেকে ফসকে যায় সেই মুঠোফোনটা,
আমি ধরে ফেলি আর দেখি মুঠোফোনটা ভিজে গেছে আমার কান্নার পানিতে,
বুকে ভীষণ যত্নে আগলে রাখি আমার বোনের সেই মুঠোফোনটা,
আর হৃদপিণ্ডের কপাটিকাগুলো ক্রমশ বন্ধ হয়ে আসে,
নষ্ট সমাজের যাতাকলে পিষ্ট বিপন্ন কুলষতা উজ্জ্বল হয়ে উঠে

আমার বোনের নিরব-নিঃশব্দময় মুঠোফোনে।

 

আমার ভয় হয়

কলসেন্টারের সুন্দরী মেয়েগুলোর দিকে যেদিন

আমার ভুলে চোখ পড়ে গিয়েছিল তুমি সেদিন
হুঁশিয়ার করে বলেছিলে,
এই খবরদার! ওদিকে একদম তাকাবে না,
আমি নির্বাক হয়ে তোমার দিকে তাকিয়ে একটু মৃদু হেসেছিলাম,
বাড়ি এসেতো সে কি কান্ড!
তুলকালাম বাঁধিয়ে ছাড়লে একদম,
আরেকবার যখন তোমার জন্য
ইদে নিউমার্কেট থেকে শাড়ি
কিনতে যাচ্ছি
বাসে আমার পাশের সিটে
একটা সুন্দরী মেয়ে বসা,
তুমি তখন আমাকে হাত ধরে
টেনে তুলে নিয়ে অন্য সিটে বসালে,
ওইদিন রাতের বেলায় যখন ছাদের
কিনারায় বসে আকাশ দেখছি দুজন
তখন হঠাৎ করেই তোমার ঘাড় ঘেঁষে
দাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলাম:
আচ্ছা,তুমি মাঝে মঝেই এমন
পাগলামি কেন করো বলোতো?
তুমি তখন আমার বুকে বুক লাগিয়ে
একটা গভীর নিঃশ্বাস ছেড়ে এক বাক্যেই বলেছিলে:
আমার ভয় হয়,
তখন তোমার নিঃশ্বাসের বিস্ফোরণ
আমার বুকজুড়ে একটা
কথাই বার বার মনে হচ্ছিলো প্রতিধ্বনিত
করছে:আমার ভয় হয়,
আমি হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছিলাম
আমাকে নিয়ে তোমার উৎকণ্ঠা কতটুকু,
কতোটুকু ভালোবাসলে ভগ্ন হৃদয় উৎকণ্ঠায়
চৌচির হয়ে ভুগে,
আমি চাই আমার জন্য তোমার এই
উৎকণ্ঠা থাকুক যুগ যুগ ধরে,
যখন আমাদের চুলে পাক ধরবে
ঠিক তখনও একইভাবে বুকে আছড়ে পড়ে বলো:আমার ভয় হয়,
ভীষণ ভয় হয়।

দুঃসংবাদ

যারা ভেবেছিলো আমি ভেঙেচুরে
চুরমার হয়ে গেছি দুঃসংবাদ
তাদের জন্য,
আমি আবারো ব্যর্থ হবো ধরেই
নিয়েছিলো যারা দুঃসংবাদ
তাদের জন্য,
আমি পিছলে পড়ে যাওয়ার পর উঠে
দাঁড়াতে পারবো না ভেবে যারা অট্টহাসি হেসেছিলো দুঃসংবাদ তাদের জন্য,
আমার আসন্ন খেলায় যারা আমার আগাম হার নির্ধারণ করে দিয়েছে
দুঃসংবাদ তাদের জন্য,
যারা আমার গতিপথকে মন্থর বলে
তাচ্ছিল্য করে উড়িয়ে দিয়েছে
দুঃসংবাদ তাদের জন্য,
হ্যাঁ,আমাকে জিততে হবে,
তাদের দুঃসংবাদ দেয়ার জন্য হলেও
আমাকে উঠে দাঁড়াতে হবে।

একবার ভালোবেসে দেখতে পারো

একবার ভালোবেসে দেখতে পারো,
আমি বলবো না তোমার জন্য হিমালয়
পর্বত জয় করে ফেলবো
কিংবা মাথার উপর এক টুকরো আকাশটা তোমার করে দিবো,
কারণ ওসব আমার ক্ষমতার বাইরে,
তবে একটা পথ্য দিতে পারি উজার করে
যা দিলে একজনম দিব্যি কাটিয়ে দেয়া যাবে দুজনে,
একবার ভালোবেসে দেখতে পারো,
আমি বলবো না তোমার জন্য
গোটা রাজ্যের রাজত্ব এনে দিবো
অথবা বলবো না চাঁদকে তোমার হাতের
মুঠোয় এনে দিবো,
ওসব আমার একদমই নিয়ন্ত্রণের মধ্যে পড়ে না,
তবে আমার হৃদয়ের মালিকানা তোমার
হাতে তুলে দিতে পারবো,
একবার ভালোবেসে দেখতে পারো
আমি বলবো না তোমার জন্য
ঘড়ির কাটা থামিয়ে দিনকে রাত অথবা রাতকে
দিন করে ফেলবো,
ওসব আমার একদমই সামর্থ্যের মধ্যে পড়েনা,
তবে আমি তোমাকে জীবনের একশো
একতম বসন্তে দাড়িয়েও পাকা চুল,

সাদা দাড়ি নিয়ে একইরূপ ভালোবেসে যাবো।

 

আমি তোমার প্রেমে পড়িনি ভালোবেসেছি

যদি জিজ্ঞেস করো আমি তোমার প্রেমে পড়েছি কি না,
তবে এক বাক্যেই বলবো:
আমি তোমার প্রেমে পড়ি নি,
কখনোই তোমার প্রেমে পড়িনি,
ভালোবেসেছি তোমাকে,
রাস্তা ঘাটে,অলিতে গলিতে মুহূর্তের
মাঝে কিংবা মিলিসেকেন্ডেও প্রেমে পড়া যায়,
হাটা চলাতে,ছোঁয়া আবেশেও প্রেমে পড়া যায়,
ভালোবাসা হয় না,
ভালোবাসা এতো উদ্বায়ী নয় যে মুহূর্তেই খুচরো বাজারে বিকিয়ে যায়,
আমি তোমাকে ভালোবেসেছি প্রেমে পড়িনি,
আমি তোমাকে ভালোবাসি বলেই তুমি
আমার হবে এই আশ্বাসেই যুগ যুগ ধরে
না দেখার মাঝেও খুঁজে নিতে পারি তোমাকে,
শুধু তুমি আমার হবে এই আশ্বাসেই
অন্য কোন রমণীর ছায়া না মাড়িয়েও কাটিয়ে
দিতে পারবো দিনের পর দিন,
মাসের পর মাস কিংবা বছরের পর বছর,
আমি তোমার প্রেমে পড়িনি, ভালোবেসেছি।

 

ব্যক্তিগত লকার

আমার একটা ব্যাক্তিগত লকার আছে,
এই লকারেই আমি আমার সব সুখ-দুঃখ,আবেগ,

অনুভূতিগুলোকে নিরবে তালাবদ্ধ করে রেখেছি,
এই লকারের চাবি আমি এমন কেউ একজনকে তুলে দিতে চাই যার কাছে
আমার এতোদিনের তালাবদ্ধ লকার সুরক্ষিত থাকবে,
যে সুরক্ষিত রাখবে আমার এই ব্যক্তিগত লকারে জমানো সমস্ত আবেগ-অনুভূতি,

সুখ-দুঃখ ভালোবাসাগুলোকে,
আমি চাই আমার এই ব্যাক্তিগত লকারের কেউ একজন বিশ্বস্ত প্রহরী হোক যে লকারে তোলা
আবেগ অনিভূতিগুলোকে হিরে মুক্তোর চেয়েও যত্ন করে দেখে রাখবে,
আমি আমার এই ব্যাক্তিগত লকারের
এক বিশ্বস্ত প্রহরী চাই।

অর্থহীন অধ্যায়

মেয়েটা রোজ বৃষ্টি আসলেই
জানালায় হাত বাড়িয়ে দিতো,
মেয়েটা জানালা ধরতে নয়
বৃষ্টিতে হাত ছোঁয়াতেই হাত
বাড়াতো জানালায় আর
অনাকাঙ্ক্ষিতভাবেই জানালা
ছুঁয়ে দিতো,
অথচ বোকা জানালাটা এভাবেই
মেয়েটার জন্যে রোজ অপেক্ষার
পসরা সাজিয়ে যেতো,
এভাবে ভুল বুঝে বুঝে জানালাটা
ভুল অপেক্ষায় একজনম
নিমিষেই কাটিয়ে দিলো!
অথচ সে বুঝতেই পারলো না
যে সে ছিলো মেয়েটার বৃষ্টি
ছোঁয়ার সিড়ি মাত্র!

বৃহস্পতিবার

বৃহস্পতিবারটার এখন আমার
কাছে তেমন কোন বিশেষত্ব নেই,
অন্য সাতটা দিনের মতোই আসে
আবার চলে যায়,
একটা সময় বৃহস্পতিবার মানে
ছিলো অন্যরকম একটা আনন্দ,
একসময় বৃহস্পতিবার মানে ছিলো
শুক্রবারের আগেরদিন
আর হাফ ক্লাস দিন বাদে ছুটি,
সপ্তাহের আর ছটা দিন অপেক্ষা করতাম
এই একটা বৃহস্পতিবারের জন্য,
কতো প্ল্যান, কতো পরিকল্পনা থাকতো
এইদিনটার জন্য,
প্রেমিকার জন্যে অপেক্ষা কখনো হয়তো
পানসে হয়ে যায় কিন্তু
বৃহস্পতিবারের অপেক্ষা ছিলো চির মিষ্টি,
এখন আর বৃহস্পতিবার আসে না
ওভাবে!
অথবা আসে অথচ আমার মনে
রাখার উৎসাহ থাকে না ,
কারন জীবনটাও যে ঠিক পানসে
হয়ে গেছে অনেকটা বৃহস্পতিবারের মতো,
আমাদের প্রত্যেকের জীবনে চির
মিষ্টি এমন একটা বৃহস্পতিবার থাকুক
যা কখনোই পানসে হবার নয়।

মৃত্যুর মহামারি

পৃথিবীময় ভয়াবহ মৃত্যুর
ছড়াছড়ি,
কোন মহাযুদ্ধ ছাড়া,
কোন অস্ত্রের আঘাতছাড়া,
কোন দুর্ভিক্ষ ছাড়া
এমন এক মৃত্যুর মহামাড়ি
ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র,
পৃথিবী হয়ে উঠছে একটা
ধ্বংসযজ্ঞের স্তুপ,
বিনা যুদ্ধে,
বিনা অস্ত্রে,
বিনা দুর্ভিক্ষে
এমন মহাযুদ্ধের মতো,
এমন লাশের স্তুপ,
এমন আতংক
এর আগে কি দেখেছে কেউ!

 

ওটা ঘোর নয় ওটা চেতনা

এই ফাল্গুনে আমার বাগানের একমাত্র রক্তজবা গাছটিতে ঠিক

একুশটিই রক্তজবা ফুটেছে,
কি অদ্ভুত মিল!
একুশের চেতনা কিংবা রক্তাক্ত রাজপথ আর একুশটি রক্তজবা,
এই ফেব্রুয়ারিতে আমার বাগানের কৃষ্ণচূড়ার

পাপড়িগুলো মনে হচ্ছে লাল রক্তজলে টইটুম্বুর,
নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে না পেরে ছুঁতে যাই ,
সাথে সাথে বাগানের মালি ঘোর কাটিয়ে দিয়ে বললো,
ওটা ঘোর নয় ওটা চেতনা,
এই ফাল্গুনী দুপুরে আমার বারান্দার খাঁচায় আটকে থাকা

তোতাটির বাংলা বাংলা বলা হিজিবিজি আর্তচিৎকার আমাকে স্মরণ করিয়ে দিলো,

ওটা ঘোর নয় ওটা চেতনা।

অন্যায় এবং দেশ

আমি যুদ্ধের কবিতা লিখবো বলে তো
স্বাধীন দেশে জন্মাইনি,
আমি প্রেমের কবিতা লিখবো বলে
এদেশে জন্মেছিলাম
কিন্তু আজও যুদ্ধের কবিতা লিখতে হয়
বারংবার,
যুদ্ধতো শেষ হয়েছে সেই কবেই!
আমার পূর্বপুরুষেরা যে মাটিতে
যুদ্ধের দামামার অবসান করে
বাসযোগ্য করে গেছে
সে মাটিতেই কেন আবার যুদ্ধ করতে হয়?
কেন এখনো এদেশে যুদ্ধ করে বাচতে হয়?
কেন ক্ষমতার রেষারেষিতে রাস্তার মাঝে এখনো নিরীহ দিন মজুরের লাশ পড়ে থাকে?
কেন দিনে দুপুরে মাঝ রাস্তায় কিংবা চলন্ত
বাসে এখনো আমার বোনকে
ধর্ষণ হতে হয়?
কেন সংখ্যালঘু হত্যার নগ্ন মহড়া
এখনো দেখতে হয়?
যুদ্ধ কার সাথে তবে?
একসময় ইংরেজ ছিলো এদেশে,
একসময় হানাদার ছিলো এদেশে,
একসময় দখলদার ছিলো এদেশে,
একসময় ধর্ষক ছিলো এদেশে,
তাই যুদ্ধ করেছি,
আজ কার বিরুদ্ধে যুদ্ধ?
তবে কি আমরা ইংরেজ তাড়িয়ে
আজ নিজেরাই ইংরেজ হয়েছি?
তবে কি হানাদার মুক্ত করে
নিজেরাই হানাদার হয়েছি?
তবে কি দখলদার হটিয়ে
নিজেরাই দখলদার হয়েছি?
তবে কি ধর্ষক মুক্ত করে
নিজেরাই নির্লজ্জের মতো
নিজেদের বোনকে ধর্ষণ করে চলেছি ?

আমার দাদার একাত্তর

ইনি আমার দাদীমা-
আজও একাত্তরের স্মৃতি হাতড়িয়ে বেড়ান।
বিরহের ক্রন্দনে ভরা।
দাদীমা গল্প শোনান আমাকে
একাত্তর সাল -
সকালবেলা-
কয়েকজন বন্ধু ডাকতে এলো দাদাকে।
দাদী তখন বারণ করেছিলেন যেতে,
না,যেতেই হবে মাকে বাঁচাতে হবেতো
-
দাদা বললেন।
তাহলে পান্তা ভাতটুকু খেয়ে যাও,
না, এসে খাবো।
দাদা গেলেন,তখন হাতে একটা
বড় বন্দুক ছিলো;হয়তো স্টেনগান হবে।
দাদী বলতে থাকেন।
আমার অধীর অপেক্ষা,
এরপর কতোটা সকাল যে পেরিয়েছে জানিনা,
পান্তা ভাতগুলো শুকিয়ে মাটির থালায়
শক্ত হয়ে মিশে গিয়েছিল।
আমি জানালার পাশে বসে ভাবতাম
তোর দাদার কথা।চোখের পানি
এখন আর বের হয়না-
শুকিয়ে গেছেতো... তাই।
দাদু বলতে থাকেন অনবরত,
বাষ্পরুদ্ধ নয়নে।
দাদীর চোখের দিকে তাকাই,
দাদী বলতে থাকেন
বলতেই থাকেন।


১

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.