মাসিক কবিতাকণ্ঠ, আগস্ট-২১, বর্ষ-১৪, সংখ্যা- ৬৪ । Kobita

পরিচালনা পর্ষদ
সম্পাদক :
এম, আব্দুল্লাহ আল মামুন
নির্বাহী সম্পাদক:
কবির পথিক
প্রধান শিক্ষক (উপশহর আদর্শ বালিকা বিদ্যালয়,বগুড়া)
উপদেষ্টা সম্পাদক:
কাজী হানিফ
(সিনি: ইন্সটাক্টর, টিটিসি)
প্রচ্ছদ:
এম, আব্দুল্লাহ আল মামুন।
আগস্ট- ২০২১ (বর্ষ- ১৪, সংখ্যা- ৬৪)
আর একজন নজরুল চাই
তৃপ্তিতে ঘুণপোকা
সেলিম আলতাফ
একটি কবিতা অনেক যত্নে -
অনেক সময় নিয়ে লিখেছিলাম।
গাঢ় আবেগের তুলি ছুঁয়ে ছুঁয়ে-
অনুভূতির সুতাগুলো নিপুণ বুননে
তার অবয়ব গড়েছিলাম বেশ ভালোই।
সব শেষ করে চা'য়ের কাপে দিয়েছিলাম
শতভাগ প্রশান্তি প্রাপ্তির তৃপ্তিময় চুমুক।
অনেকদিন এমন লেখা হয়না কেন যেন,
ভোরের আকাশ আগের মতই দেখি স্নিগ্ধ বাতাসে,
পাখিদের একা একা অথবা দল বেঁধে ওড়া দেখি,
জানালার কাঁচে আষাঢ়ে ভেজা প্রিয় কদম দেখি,
বৃষ্টিতে খুঁজে পাই প্রিয় বসন্ত আবেশ আয়োজন।
এতকিছু দেখি, এত অনুভবে ভেসে যাই ক্রমাগত,
তবু মনের মত কোন লেখা হচ্ছিলো না তেমন।
পাচ্ছিলাম না ছন্দময়তার উদ্দাম গতিবেগ স্পৃহা।
আজ তাই হলো অবশেষে লেখার প্রতি স্তবকে।
বাইরে তুমুল ঝরঝর বৃষ্টি ঝরছে ভেজা কদমে,
ধুয়ে যাচ্ছে যত অস্পষ্টতা জানালার কার্ণিশ ছুঁয়ে।
আমার কেন যেন আবার লেখাটার কাছে ফিরে যেতে ইচ্ছে হলো
ইচ্ছে পাখির সুন্দর ডানা মেলে।
পুরো কবিতা পড়লাম আগ্রহ ঘরের দরজা খুলে,
একবার নয়- দুইবার নয় কয়েকবারের পড়াতেও
কোথাও খুঁজে পেলামনা তোমার কোন অস্তিত্ব,
অথচ --
এটা তো তোমাকে নিয়েই তো লিখেছিলাম আমি!
ভালবাসার কবিতাকণ্ঠ।
সুইট খান, (যশোর সেনানিবাস)
তখন ছিলো বাংলা ১৪১৭ সাল,
কবিতা লিখার আগ্রহ ছিলো বেসামাল।
পড়ালিখার ফাঁকে সময় করে
ভালবেসে কবিতা পাঠাতাম কবিতাকণ্ঠে,
কবিতাগুলো যখন প্রকাশিত হতো
উল্লাসে হৃদয় তৃপ্ত হয়ে যেতো।
ছুটে যেতাম 'লিখন' ভাই এর ডাকে
রাজশাহী কলেজ ক্যাম্পাসে সাহিত্য আসরে।
১৪১৯ সালে কিছু প্রতিকূলতার ঘূর্ণিঝড়ে
বিচ্ছিন্ন হই কবিতাকণ্ঠ থেকে,
সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ আর শৃঙ্খলা পালনে
কলম চলেনি বহুকাল লিখা লিখিতে।
আজ বিবেক দংশন আর হৃদয় আকুতিতে
ফিরলাম আবারো কবিতাকণ্ঠের বুকে।
যদিও আজ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত,
তবু দু-কলম ভালবাসা দিলাম কবিতাকণ্ঠের জন্য।
একটা এলোমেলো আকাশ
জাহেদ রনি
এভাবে চলবে না ঠিক আকাশ
ছাই রঙে মুখ গোমরা করে
যদি বসে থাকো তবে কার্নিশ
প্রেম ছেয়ে যাবে অন্ধকারে
ওভাবে নয়
অতো পরিপাটি হলেও কি
চলে?
থাক না একটু এলোমেলো বুক,
ব্রণে ছেয়ে যাওয়া মেঘলা মুখ
থাক না কিছু চাঁদের মতো
কালো কুয়াশার দাগ
একেবারে স্বচ্ছ হলেও কি
একদম নীলচে আকাশ হয়!
না না একদম নীল নয় ঠিক
তার উপর কয়েকটা ছাইরঙা
উড়ন্ত মেঘ মেঘ
হলেও ছাইরং
ছাইরঙে ছবি হয় তাই চাই
এলোমেলো ধূসর আকাশ।
জাগো
হৃদয়ের সীমানা
গলা ফাটাই অর্থনীতিবিদ
স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য
ক্ষমতার দাপটে এই আমি
ভাবছি কিছু অন্য।
অর্থ নয় শ্রমের গুরুত্ব
দিয়ে, ইসলাম বলে হও ধন্য
সাহায্য নয় স্বাবলম্বী হও
নিজ দেশের জন্য।
স্বালম্বী হও নিজ দেশেতে
হও নিজ জেলায়
পার যদি ভালো হয়
গ্রামে উপজেলায়।
উৎপাদন কর নিজের খাবার
তবে বলছি কি আবার
পরে ভাব শিল্প বানিজ্য
যদি ঘরে থাকে খাবার।
নিজের থাকলে খাও
রে মানুষ পরের হলে চাও
হাত পাতিলে কি সবসময়
খাবার তুমি পাও?
আজকে তাই বলি মানুষ
স্বাবলম্বী হও।
সব বৃষ্টি হয়না সুখের
সুশান্ত দত্ত (ভারত)
সব বৃষ্টি হয়না সুখের
পড়লেই আকাশ থেকে।
মেঘের মাঝেও থাকে জমে
মন খারাপ যে ঢেকে।।
কালো মেঘ জমলে মনে
চোখের জলের বৃষ্টি।
দুঃখ গুলো যায়না দেখা
আড়াল করে দৃষ্টি।।
সব হাসিও হয়না খুশির
কান্নাও হয় সুখের।
বেরিয়ে গেলে হয় হালকা
ব্যথা গুলো বুকের।।
কারো মেঘ দেখে পড়ে থাকা
আপন প্রিয়ার রূপ।
যার মাথার উপর নেই ছাদ
বৃষ্টি বড়ই দুঃখ।।
কেউ বৃষ্টি দেখে আকাশ মাঝে
রাম ধেনুকে খোঁজে ।
আবার এই বৃষ্টি কত প্রাণীর
চক্ষু দুটো বুজে।।
বুঝেছো কি তুমি ?
প্রণব চৌধুরী (ভারত)
বুঝেছো কি তুমি ?
না বলা হৃদায়ের কথা,
যদিও তোমাকে বোঝাতে চেয়েছি আমি,
কথার ছলে,
বা অন্য কোনো নামে,
কত,
ক-ত-ই না ভালোবাসি তোমায় I
মম হৃদয়ের মর্মবাণী হায় !
মরমে মরিয়া মরে ৷
জানি তোমার মানস চিত্রপটে,
চিত্রায়িত হয় অন্য কোনো দৃশ্যপট,
সেই চিত্রতে তুমি তো নিপুণ শিল্পীর মত,
চিত্র অঙ্কনে লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চি কে ও,
আনেক পিছনে ফেলে,
তোমার অবয়ব মোনালিসাকেও মানাবে হার ৷
সত্যি তুমি তিলোত্তমা!
প্রিয়তমা মম ৷
বৈষ্ণব পদাবলীর পদকর্তাদের ও
হার মানিয়ে তুমি চলেছো-
"যাঁহা যাঁহা নিকাসয়ে তণু তুণু জোতি,
বাঁহা বাঁহা বিছুরি চমকায় হোতি!"
মম অন্তরস্থল থেকে উৎসারিত এই
অকৃর্তিম ভালোবাসার অর্ঘ,
করবে না কি হৃদয়াঙ্গম ?
বোঝো না কি তুমি ?
মন মন্দিরের মর্ম স্থলে মর্মর মুর্তিতে,
প্রতিস্থাপিত করেছি তোমার আবাক্ষ প্রতিরূপ,
তা তো তুমি ভালো করেই জানো প্রিয়,
তবে কেনো করো না বোঝার লীলা ?
তবে কি ভক্তের ভক্তিতে কোনো ত্রুটি ?
নাকি ?
আরও ঘোর তপস্যা ?
তাতে তো তপনের তাপীয় তাপে-
" তাতল সৈকতে বারি বিন্দুসম,"
তে রূপান্তরিত হয়ে পুনরায় নীল লীলিমায় লীন হবে না তো ?
হে সৃষ্টিকর্তা তোমার সৃষ্টির সৃজন,
শুষ্ক মরুতে মরে যাবে না তো ?
মরমের মনপাথারে হয়ে মলিন ?
বোঝো ভক্তের মনের বেদনা,
ভঙ্গ করো ধ্যান,
দেখো আমি কিরূপে কেমনে কাতরে হয়েছি কঠিন ।
তব পরশে পুনরায় এই পরানে প্রতিষ্ঠিত করো প্রাণ ৷
না বোঝার ধ্যান আর করোনা,
এই অনুরোধ রাখি তব পদতলে !
শ্রাবণমুখর সন্ধ্যা
সামিয়া আক্তার
শ্রাবণ মাসে বারিধারা--অবিরাম যে ঝরে
পুকুর গুলো তখন যেনো-কানায় কানায় ভরে,
ফুলের গন্ধে মৌ গুণ গুণ --সন্ধ্যা নামার সাথে
প্রিয়তমের কথা ভেবে'ই--প্রিয়া মালা গাঁথে।
ঝিঁঝিঁ পোকার নিভো আলো-দূর করে দেয় কালো
মনের ঘরে দেখলে তবে---ভীষণ লাগে ভালো,
বাড়ির ঝোপে শিয়াল ডাকে---হুক্কা হুয়া স্বরে
খোকা খুকু ভয়ে থাকে---মাথা নিচু করে।
শ্রাবণ সাঁঝে মনের মাঝে ---কতো কিছু বাজে
গৃহবধূ প্রদীপ নিয়ে ---ব্যস্ত থাকে কাজে,
শ্রাবণের ওই সন্ধ্যা যেনো---সাজে ফুলে ফুলে
কদম কেয়া ফুল ফুটে--বাতাস দেয় দুলে।
গৃহবধূ শঙ্খ বাজায়---তুলসীতলায় বসে
আসছে বহু দূরের থেকে-আজানের সুর ভেসে,
মিলেমিশে একাকার যে -আজান শঙ্খের ধ্বনি
আমাদের এই দেশটা যেনো-সু-সম্প্রীতির খনি।
আষাঢ়ের ওই শ্রাবণধারা--যখন ধরায় ঝরে
হারানো সব স্মৃতিগুলো--আবার মনে পড়ে,
মনটা আমার ছুটে বেড়ায়-ফুল পাখিদের সাথে
অতীত স্মৃতি হৃদে জাগে-শ্রাবণের সেই রাতে।।
অধিষ্ঠান
চম্পা রায় (ভারত)
হে মহারাজ তুমি দীঘল
তুমি বীর, দেশের বাহুবল
তুমি অটুট বন্ধন এই বাংলার
বাঙালির বরেণ্য সৌরভ সমাহার।
দিকে দিকে দূরের প্রান্তে
সৌরভ পৌঁছেছে মহা সমীরে
ঈশান বার্তা বস্ত্র ঘুরায়ে
জয়জয়কার জয় এর ভিড়ে।
সৌরভ তুমি সৌরভ
তুমি দিয়েছো জাগতিক তট
রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিকশিত দেশ
তোমার উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক পট।
তুমি মায়াময় তুমি পিতা
তুমি গৃহী তুমি করুনার দাতা
দাদার মেখমলে ভারত প্রদেশ
আজ দিক দিগন্তে সৌরভ সমাবেশ।
হাজার তারকার ভিড়ের ভিড়
তবুও তোমার উজ্জ্বল নীড়
জ্বলজ্বলে হয়ে ঘোরে বিশ্বময়
তুমি যে সৌরভ তুমি জ্যোতির্ময়।
রে
সাবলীল এই জীবনধারায়
কন্টক ছোঁয়ায় না ঘিরে
ঈশ্বর তার দুহাত ভরে
তোমারেই যেন বড় আপন করে।
তোমার ছায়ায় দেশ হল এক আনন্দ জগত ভূমি
তোমার মায়ায় বাঙালি জাতি উন্নত মস্তকের তিমির
আপন পদে আপন ছায়ে এমন বিস্ময়কর দান
মহারাজ তুমি এমন থাক এই মহারাজে অধিষ্ঠান।
সময়ের
ছড়া
আমিনুল ইসলাম
এখন টাকাই জাতির মেরুদণ্ড
শিক্ষা জাতির খেল্ তামাশা,
কাশলেও আমি করোনার রুগি,
কাউকে যদি হৃদয় দিয়ে আপন ভাবি,
বিশ্বাসে হয় জল আমাশা।
প্রফেশনাল অফিসে বসে
সবাই করেন রাজনীতি,
রাজনীতিতে ঢুকেই আগে
তৈরি করেন ঘরবাড়ি,
তারপরে হয় পেটনীতি।
স্কুলেতে তালা ঝোলে,
ক্লাস চলে প্রাইভেটে,
বেতন ভাতা ঠিক থাকলেও
টাকার জন্যে হই মরিয়া
শিক্ষা শুধু ব্রাকেটে।
টিচারগুলোর পৌষ মাস এখন
অনলাইনে হয় ক্লাস,
ছাত্ররাও সব অনলাইনে বসে
খেলছে মজার উল্লাশে
পাবজি গেমের ফ্লাস।
গাঁয়ের বাজার বন্ধ রেখে
সীমান্ত বাজার (স্থলবন্দর)দেয় খুলে,
খাল বিলে আজ গড়ছে খামার
ছাত্র শিক্ষক টাকার পিছে ছুটছে ধেয়ে-
শুধু শেওলা জমছে স্কুলে।
জানালাগুলো বন্ধ রেখে
ঘরের দরজা দিয়ে খোলা,
বিড়াল দিচ্ছে মাছ পাহাড়া
মাথাওয়ালারা খেলছে বহুৎ
লকডাউন লকডাউন খেলা।
সোনাহাট স্থলবন্দর, কুড়িগ্রাম
প্রার্থনা
রাজীব আহমাদ
কত আশা কত প্ল্যান
দিবা নিশি করে যাই
করোনায় লাশ দেখে
আবার সব ভুলে যাই,
দুনিয়ার লোভে আজ
মেতে আছি আমরা
বারবার রব কে ভুলে
হয়েছি মোরা গোমরা,
হেদায়াত সেই পাবে
যাকে দেন আল্লাহ্
আমল দিয়ে করো ভারী
মিজানের পাল্লা,
ক্ষমা করে দাও প্রভু
অধম এই জাতিরে
গাফ্ফার সাত্তার
নামের খাতিরে,
অপেক্ষাতে প্রহর কাটে
স্বপ্নে বুনি রাত
করোনা থেকে মুক্ত করো পৃথিবী
মাবুদ তুলেছি দু'টি হাত।
ঝড় এলো
এক রাশ বৃষ্টি
ন্যান্সি দেওয়ান
মেঘের গর্জন শোনা বৃষ্টি আসবে বলে।
হুশিয়ার বিদ্যুৎ তড়িত গতিতে চমকায,
বৃষ্টির প্লাবনে বলে নামবে বৃষ্টি,
ঝরবে আকাশ পানে ।
ঝড়ো হাওয়ার তাণ্ডবে দক্ষিণ;
পবন হইতে উত্তর পবনে ।
বৈশাখ এসেছে দুয়ারে দুয়ারে,
ঝড়ো হাওয়ার আঁধার এলো ।
পরিসরে ঝড় আসবে বলে,
মেঘবরণে বৃষ্টি আসছিলো
আকাশ জুড়ে , এক রাশ বৃষ্টি ;
জমেছে কালো মেঘ উত্তর কোণে
বাতাস বইবে হুহু করে এসেছে
বৈশাখ দুয়ারে দুয়ারে,
এক রাশ বৃষ্টি ঝড় এলো
আকাশ পানে মেঘবরণে ।
ব্যর্থতার ইতিহাসে জীবনের শেষ পাতাখানা
সৈয়দা তৈফুন নাহার
একদিন নিশ্চয়ই সত্যিকারের ছায়া হয়ে যাব জানি , থেকে যাবে ব্যর্থতার ইতিহাস লেখা চিঠি একখানি --
বিশ্বাসভাঙা সময়ের কাছে পলে পলে থেকে যায় অগণিত ঋণ আমার ,
ছায়ামেঘ ঘুমে থাকে অবসন্ন ব্যর্থ হৃদয় ;
সেগুলোই খুঁজে বের করে আনে যত ব্যর্থতা আমার , ছোলা মুড়ি প্যাকেট বা মোঁচার খোলে মুড়ে একে একে নিয়ে আসে ব্যর্থতার বিস্তর খবর !
তুমি হাজার রঙিন কথা ঈশারা উড়ালেই ,ইদানীং তারই আড়ালে থেকে বেরিয়ে আসে তোমার ঘৃনা আর অভিমানে ভরা আমারই ব্যর্থতার প্রমাণ --
আজকাল প্রায়শই তোমার উঁচু তর্জনী হতেই টুপ করে আমার কাছে ধরা দেয় আমারই অজস্র ব্যর্থতা ;
আমিও আঙুলের কর গুনে গুনে হিসাব করি সব ,
একটা একটা করে সে ব্যর্থতা আর অসম জবাবগুলো গুছিয়ে গেঁথে রাখি সূচের মাথায় ;
ভূঁইফোঁড় কথারাও আজকাল আঙুল তোলে আমার দিকে যখন তখন তোমার মতন --
তোমার মত করেই ওরা দেখিয়ে দেয় আমার না দেখা ব্যর্থতা , আর তারই গ্লানী উড়ে আসে পাখাওয়ালা ডানায় ,
আমি অবাক হই ; বিস্মিত চাহনীতে বারবার খুঁজি নিজেকে নিজে তখন !!
যতবার মেলে ধরি কথাদের খাতা -- প্রতিবারই নতুন করে আবিস্কার করি নিজেকে ,
চিনেনি --- বুঝেনি আবার নিজেকে ;
তারপরও ঠিক ভুল ধরে ধরে নিজেকে সাজাই নতুনত্বে --
সুযোগ পেলেই চোখ বুজে খুঁজি এখন আপন ব্যর্থতার আটপৌরে গ্লানিগুলোকে --- জেনে গেছি পরিপূর্ণ ব্যর্থতার ঘরেই এখন আমার নতুন বসবাস !
অনেককিছুর মতই যত্নের ছোঁয়ায় নরম কাঁথার ভাঁজে ভাঁজে রেখে যাব তাই --
আমার সকল ব্যর্থতাদের ঋতুময়ী ইতিহাস ,
সূচ সূতোর মেলবন্ধনে শব্দদের ছোট ছোট ফোঁড় তুলে এঁকে যাব কথাদের চেনা অচেনা সকাল-সন্ধ্যাগুলো ---
অন্ধকার ভেঙে মুছে নেব চোখ , জোড়া কলসীর জলফোঁটা তুলে তৈরী করব নক্সীকাঁথা , রাতের বুকে থরেথরে সাজাব আমার সবগুলো আপন ব্যর্থতা ,
একদিন ব্যর্থতার যবনিকা টেনে লেখাদের কথা হবে লেখা ---
একতাল জলপোঁড়া ব্যর্থ কাহীনিতে ভরে যাবে হয়ত ইতিহাস বোঝাই জীবন গল্পের শেষ পাতাখানা !!
অগো প্রভূ
মোঃ ইব্রাহিম
অগো প্রভূ
কেন চোখ বুঝে আছ কভু
চোখের পাতা খোলে
আজও নিলেনা আমায় কোলে ।
অবহেলায় আর অনাদরে
রাখলে আমায় ভবের পারে
রোদ বৃষ্টি আর কাদা জলে
আমিই ছিলাম সবার পায়ের তলে ।
আগুনের কত ছায়া
দিয়েছ আমার এই কায়ায়
পেতে কৃপার তৃষ্ণার জল
হন্যে হয়ে খুজেছি আমি
অনেক সাগরের তল।
মরুভুমির প্রান্ত পথে
কতইনা হেটেছি আমি
নয়নমাখা জলের সাথে,
তবোও পাইনি কোন দিশা
আজও ছুটছি আমি
তুমার কৃপার নেশায় ।
লাঞ্চনার এত আঘাত
আমি সইব কি করে
তুমি যদি মুখ ফিরিয়ে নেও একেবারে,
কাঁদাও যত কাঁদব তত
ভবের জালা দাও যত
তবোও আমার মাথা
তোমার কাছে রাখব নত ।
ভবের ব্যাথা আমায় দিয়া
কি সুখ পাও নিরবে হাসিয়া
অন্তর পুড়ে দুঃখের ছাই
তবোও তোমার দেখা না পাই
তোমার দেওয়া যাতনা
সইতে আর পারিনা ।
আশা নদীর বালুচরে
এখনো আছি পরে
অকুলেরই কোল তুমি
তোমার দয়ার আশায় আছি আমি ।
নাঙ্গা শিকারী- ০১
মুহাম্মদ শামসুল হক বাবু
হঠাৎ করে কে যেন আমাকে স্মরণ করে
আধুনিকতার জাদুতে অসম্ভব হয়েছে সম্ভব
উত্তাল সমুদ্রে ঘেরা ছিল একটি দেশ
এইমাত্র স্বদেশ হতে ঘুরে এলাম স্বপ্নের বিদেশ!
সে যে সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে অনেক উপরে
আমার চারিদিকে শুধুই দ্বীপ আর দ্বীপ
সেই নীলাকাশটি ছিল বড্ড বেশি সুন্দর
পালতোলা জাহাজের মাস্তুল ছেড়ে যায় বন্দর!
মনে পড়ে যায় কোনও এক নীলাঞ্জনাকে
যে নীলের আভায় জড়িয়ে ধরেছে তোমায়
নীলাম্বরীর নীল শাড়ীর আঁচল করেছে আমায় জব্দ
বাতাসে ভেসে বেড়ায় নীলাদ্রির শতসহস্র শব্দ!
থরে থরে বর্ণগুলো হয়েছে নীল হতে বর্ণীল
এ যে বিধাতার দেয়া এক স্বপ্নিল অনুভূতি
অপূর্ব সুন্দর আর মনোমুগ্ধকর মায়ায় ছিলেম ভিখারি
বহুকাল পরে আজি দেখলাম এক নাঙ্গা শিকারী!
ছিলে ধবধবে সাদা আর হাল্কা গোলাপি রঙে
সারাটি গতর যেন উন্মুক্ত আকাশের মতো
শুধুই টিলা দুটি আবৃত ছিল গাউন কাপড়ে
নিম্নবৃত্ত আর উচ্চবৃত্তের
কারুকাজ দেখেছি আকারে!
ঈদের ছুটি
বুলবুল হাসান
এবার ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাওয়া হলো না 'মা'
বাইপাইলের মোড়ে আর রপ্তানীর গেটে
বড় ভীষণ জ্যাম লেগেছিল।
রাত তখন তিনটা,যেতে হবে পঞ্চগড় সীমান্তে
ততক্ষণে ঈদের নামাজ শেষ।
এই ভেবে বাস থেকে নেমে
আবার ফিরে গেলাম ঢাকার পাটুয়াটুলি
যেখানে এই হতভাগাদের কর্মস্থল।
ঈদের একদিন পরেই লকডাউন,গাড়ি চলবে না
তাহলে ঢাকায় ফিরব কি ভাবে?
তাই,এবার ঈদে বাড়ি যাওয়া হলো না 'মা'!!!
চেয়ে রবো তোমার প্রতিক্ষায় (গদ্য)
ফরিদুজ্জামান
অবনী,,
শ্রাবণের কৃষ্ণবর্ণ মেঘের আড়ালে
অভিমানী বিভাবসুর মতোই হঠাৎ
হারিয়ে গেলে অন্তঃকরণ শুন্য করে।
সেই শুন্যতার চারাটি আজ পরিপূর্ণ বিশাল বৃক্ষে,
কষ্টের ফলে হয়েছে ভরপুর।
শ্রাবণ চলে গেছে
কৃষ্ণবর্ণ মেঘ সরে গেছে
প্রকৃতির মলিন মুখখানা
বিভাবসু রৌদ্রজ্বল হাসি দিয়ে
জয় করে নিয়েছে আপন বলয়ে বহুবার।
অথচ তুমি?
অভিমানের মেঘরাশিতে হারিয়ে
ফিরে আসোনি আজো এক মুহূর্তের জন্যে
একটিবারও।
কত খুঁজেছি তোমায়,
খুঁজেছি দিশাহীন পথপানে তপন হয়ে
অভিমানের মেঘ সরিয়ে তপতী বানানোর
প্রবল ইচ্ছের ডালি সাজিয়ে।
খুঁজেছি এবং আজো খুঁজছি তোমায়,
ক্ষণে ক্ষণে প্রহর গুনে মাস পেড়িয়ে বছর।
নব বৃক্ষপত্রে উজ্জীবিত হয়েছে প্রকৃতি
পুষ্প শোভায় শোভিত হয়েছে চারিপাশ,
ফাগুনের মাতাল হাওয়ায়
কোকিলের মনমাতানো সুরেলা কণ্ঠে
বিমুগ্ধ হয়েছে পরিবেশ বারংবার।
পরিবর্তনে পরিবর্তিত হয়ে
প্রকৃতি নতুন রুপে সেজেছে বহুবার।
অথচ তুমি?
আজো হারিয়ে পালিয়ে অভিমানের মেঘে
লুকিয়ে রেখেছ নিজেকে তোমার ভুবনে।
অবনী,
আমি আজো শুন্যতার বৃক্ষতলে
তোমাকে পাওয়ার পূর্ণতায় চেয়ে আছি,
চেয়ে আছি স্মৃতির ধুলোয় অন্তঃকরণে তৃপ্ততা পেতে
যুগ পেড়িয়ে প্রজন্মের তীরে।
তারপর!
তারপরও প্রজন্ম পেরিয়ে শতাব্দীর শেষ অব্দি
চেয়ে রবো তোমার প্রতিক্ষায়,
শুধু তোমার ফেরার প্রতিক্ষায়।।
যখন আমি থাকবো না
মো. আলী আশরাফ মোল্লা
যখন আমি থাকবো না এই ভবের মাঝে
পরবে কি আমার কথা তোমাদের মনে!
যখন আমার দেহ প্রাণ থাকবে অন্য কোন জগতে
তখন তো নিশ্চয়ই ভুলে যাবে সবাই আমাকে!
চোখের আড়াল মানেই তো মনের আড়াল
এটা তো জানি শুধু জীবিতদের বেলায়!
মরনের পরে ভালো মানুষ ছাড়া কেউ কাউকে
মনে করে না, স্মৃতিতে অস্তিত্বশীল
কিছুই খুঁজে পাই না।
মৃত্যু এমনই এক অমোঘ সুন্দর সত্য বিষয়
যাকে কেউ অস্বীকার করতে পারবে না
জম্মিলে মরিতে হইবে কেউ রুখতে পারবে না।
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত মানুষসহ
জগতের সকল প্রাণীকেই তা গ্রহণ করতে হবে
বর্ণিত আছে মহাগ্রন্থ পবিত্র আল কোরআনে।
মানুষের নাম নিজের বলে তো কিছুই নেই জগতে
জম্মের সময় শিশু বলে আখ্যায়িত হয়ে ভূমিষ্ট হওয়া
মৃত্যু বরণ করলে লাশ বলে কবরে সমাহিত করা
মাঝখানে কটি দিন একটি নাম নিয়ে চলাফেরা করা।
জগতে অনেক কিছুতেই ছলনা প্রতারণা বিদ্যমান
কেবল মৃত্যুতেই তা নেয়,তা কেবলই পরপারে যাওয়া
এই সাজানো সুন্দর পৃথিবীতে থাকতে পারবে না কেউ
সময় শেষ হলে না বলেই চলে যেতে হবে অনেক দূর।
এই জগত সংসার লইয়া কতই না ছিলাম মজে
মৃত্যুর দু দিন পরেই সবাই যাবে তা বেমালুম ভুলে
এই জগত সংসার কর্মব্যস্ত পৃথিবীতে ছিলাম হু হৈল্লুরে
মহান দয়াময় প্রভু তোমায় ডাকিতে পারি নাই ঠিকমতে।
কেউ কাউকে উদ্ধার করতে পারবে না
সবাই ব্যস্ত থাকবে শুধু নিজেকে নিয়ে।
কেউ চিনবে না কাউকে কে আপন কে পর
কে ভাই কে বোন বাবা মা স্ত্রী পুত্র স্বজন
এই দৃঢ় কঠিন দুঃসহতম বিচারের দিনে
প্রভু তুমি বিনে কে মোরে দয়া করিবে!
বড়ই বেমানান
বাবুল আখতার
শুনেছি--
পুরুষ মানুষ মুখ গুমোট করে থাকতে নেই!
থাকতে নেই নির্বাক চোখে তাকাতে!
যার দায়িত্ব অন্যের মুখে হাসি ফোটানো
আর তার মুখটাই গুমোট! মানায় বলো এটা?
--একদম না! বড়ই বেমানান!
শুনেছি--
পুরুষ মানুষ বলতে নেই
-- আমি ভালো নেই!
যার দায়িত্ব অন্য সবাইকে ভালো রাখা
আর সেই মানুষটাই ভালো নেই! মানায় বলো এটা?
--একদম না! বড়ই বেমানান!
শুনেছি--
পুরুষ মানুষ কাঁদতে নেই!
যার দায়িত্ব অন্যের চোখের জল মুছানো
আর তার চোখেই টলমল করছে! মানায় বলো এটা?
--একদম না! বড়ই বেমানান!
শুনেছি--
পুরুষ মানুষ হলে হাজারও কষ্ট বুকে চেপে
হাসতে হয় সদা,
মুখ গুমোট থাকলে বলতে হয়
-- আমি তো ভাবছি একটা কথা!
টলমলে চোখের কথা শুনলে বলতে হয়
-- কই না তো!চোখে ময়লা পড়েছে হয়তো!
পুরুষ মানুষ তো--
প্রতিদিন অনেক কিছুই পারতে হয় আমাকে!
অনেক না-কে হ্যাঁ আর অনেক হ্যাঁ-কে না বলার
নতুন নতুন এক্সপ্রেশন রপ্ত করতে হয় আমাকে!
এজীবন নাটিকায় নায়কের ভূমিকায় হয়তো মানায় না আমাকে! কিন্তু এটা বলতে পারি--
খলনায়কের অভিনয়ে আমি একদম পাক্কা!
আমি কবিতা লেখতে পছন্দ করি তাই চেষ্টা করি
উত্তরমুছুন