চায়নাতে স্টুডেন্ট ভিসার আবেদন কিভাবে করবেন – সম্পূর্ণ গাইড ২০২৬
চীন বর্তমানে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ শিক্ষা গন্তব্য। মানসম্মত শিক্ষা, আধুনিক গবেষণা সুবিধা, সাশ্রয়ী টিউশন ফি, অসংখ্য স্কলারশিপ — সব মিলিয়ে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের কাছে চায়না একটি জনপ্রিয় চয়েস। কিন্তু অনেকেই জানেন না চায়না স্টুডেন্ট ভিসা (X1 / X2) আবেদন করার সঠিক ধাপগুলো কী।
এই ব্লগে ২০২৬ সালের জন্য সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ধাপে ধাপে সম্পূর্ণ নির্দেশনা তুলে ধরা হলো।
চায়না স্টুডেন্ট ভিসা কী?
চীনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ভর্তি নিশ্চিত হওয়ার পর বিদেশি শিক্ষার্থীরা X Visa (Student Visa) নিয়ে চায়না প্রবেশ করেন। এটি দুই ধরনের:
-
X1 Visa — ১৮০ দিনের বেশি সময়ের কোর্স/ডিগ্রির জন্য (Bachelor, Master, PhD)।
-
X2 Visa — ১৮০ দিনের কম সময়ের কোর্স/ট্রেনিং/এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের জন্য।
চায়নাতে স্টুডেন্ট ভিসা আবেদন করার ধাপ – Step-by-Step (২০২৬)
ধাপ ১: বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন ও Offer Letter সংগ্রহ
চায়নার বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করার জন্য সাধারণত প্রয়োজন হয়:
-
পাসপোর্ট (কমপক্ষে ১ বছরের মেয়াদ থাকা)
-
শিক্ষাগত সনদ (SSC/HSC/Equivalent)
-
Transcript
-
Passport size ছবি
-
Study Plan/Personal Statement
-
সুপারিশ পত্র (যদি প্রয়োজন হয়)
-
মেডিকেল রিপোর্ট (কিছু বিশ্ববিদ্যালায়ে প্রয়োজন হয়)
-
Police clearance (অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রয়োজন হয়)
আবেদন করার জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম:
-
CUPSL, CSC Scholarship Portal,
-
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অ্যাপ্লিকেশন সিস্টেম।
ভর্তি নিশ্চিত হলে আপনি পাবেন:
-
Admission Notice
-
JW201/JW202 Form (স্কলারশিপ হলে JW201, সেলফ-ফান্ড হলে JW202)
এ দুইটি ডকুমেন্ট ভিসা আবেদনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
আরো পড়ুন- স্টুডেন্ট ভিসায় ইটালী যাবেন যেভাবে
ধাপ ২: প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট প্রস্তুত করা
চায়না স্টুডেন্ট ভিসার জন্য সাধারণত প্রয়োজন হয়:
আবশ্যক ডকুমেন্ট (২০২৫ আপডেট)
-
বৈধ পাসপোর্ট
-
Visa Application Form (Form V.2013) – অনলাইনে পূরণ করতে হয়
-
Admission Notice
-
JW201/JW202 ফর্ম
-
সাম্প্রতিক পাসপোর্ট সাইজ ছবি
-
মেডিকেল পরীক্ষা রিপোর্ট (Foreigner Physical Examination Form)
-
পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট (PCC)
-
ব্যাংক স্টেটমেন্ট (যদি প্রয়োজন হয়)
-
জন্ম নিবন্ধন / NID কপি
-
ভ্রমণ উদ্দেশ্য সংক্রান্ত স্টেটমেন্ট (SOP)
ধাপ ৩: অনলাইনে ভিসা অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুকিং
চায়না ভিসা সেন্টারের ওয়েবসাইটে গিয়ে অনলাইনে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে হয়।
ধাপগুলো:
-
ভিসা সেন্টারের ওয়েবসাইটে লগইন
-
Visa Application Form পূরণ
-
অ্যাপয়েন্টমেন্ট তারিখ নির্বাচন
-
ফর্ম প্রিন্ট করে নেওয়া
ধাপ ৪: ভিসা সেন্টারে বায়োমেট্রিক ও ডকুমেন্ট জমা
ঢাকায় চায়না ভিসা অ্যাপ্লিকেশন সার্ভিস সেন্টার (CVASC) এ গিয়ে:
-
বায়োমেট্রিক (ফিংগারপ্রিন্ট)
-
ডকুমেন্ট জমা
-
ভিসা প্রসেসিং ফি পরিশোধ করতে হয়
ভিসা প্রসেসিং সময়
-
সাধারণ: ৪–৫ কর্মদিবস
-
জরুরি: ২–৩ কর্মদিবস
ধাপ ৫: পাসপোর্ট সংগ্রহ করা
ভিসা অনুমোদিত হলে পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে পারবেন। এরপর চায়নায় প্রবেশ করা যাবে।
চায়নায় প্রবেশের পর করণীয় (X1 Visa)
X1 ভিসা দিয়ে প্রবেশ করলে চীনে গিয়ে ৩০ দিনের মধ্যে অবশ্যই করতে হবে:
-
Temporary Residence Registration (স্থানীয় পুলিশ স্টেশন)
-
Medical re-check (কিছু শহরে বাধ্যতামূলক)
-
Resident Permit এর জন্য আবেদন – যা ১ বছরের জন্য ইস্যু হয় এবং প্রতি বছর নবায়ন করতে হয়।
X2 ভিসার ক্ষেত্রে সাধারণত রেসিডেন্স পারমিট প্রয়োজন হয় না।
চায়না স্টুডেন্ট ভিসার ফি (বাংলাদেশ ২০২৬)
ফি সময় অনুযায়ী পরিবর্তন হতে পারে, সাধারণত:
-
Single Entry Visa: ৩,৫০০ – ৪,৫০০ টাকা
-
Service Charge (CVASC): ২,০০০ – ২,৫০০ টাকা
-
Urgent Service: অতিরিক্ত চার্জ
চায়না স্টুডেন্ট ভিসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ টিপস (২০২৬)
-
পাসপোর্টের মেয়াদ কমপক্ষে এক বছর রাখুন
-
ভিসা ফর্মে ভুল তথ্য দেবেন না
-
ব্যাংক স্টেটমেন্টে পর্যাপ্ত ব্যালেন্স রাখুন (সেলফ-ফান্ড হলে)
-
PCC আগে থেকে প্রস্তুত রাখুন
-
Admission Notice ও JW Form অবশ্যই প্রিন্ট করে নিন
-
মেডিকেল রিপোর্টে কোনো ভুল যেন না থাকে
চায়না স্টুডেন্ট ভিসা সম্পর্কিত সাধারণ প্রশ্নোত্তর (FAQ – ২০২৬)
১. চায়না ভিসা কত দিনে পাওয়া যায়?
সাধারণত ৪–৫ কর্মদিনে।
২. স্কলারশিপ না থাকলেও কি চায়নায় পড়া যায়?
হ্যাঁ, সেলফ-ফান্ড কোর্স রয়েছে।
৩. JW201 এবং JW202 এর মধ্যে পার্থক্য কী?
-
JW201: স্কলারশিপ পাওয়ার পর
-
JW202: সেলফ-ফান্ড শিক্ষার্থীদের জন্য।
৪. চায়না কি পার্ট-টাইম জব করতে দেয়?
হ্যাঁ, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি নিয়ে করা যায়।
৫. বাংলাদেশ থেকে কি চায়না PCC বাধ্যতামূলক?
বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয় ও ভিসা আবেদনেই প্রয়োজন হয়


কোন মন্তব্য নেই