সৌদি আরবে খুব সহজে ভিসা পাওয়ার নিয়ম ২০২৬ | সম্পূর্ণ স্টেপ–বাই–স্টেপ গাইড
Saudi Arabia Visa Process Made Easy for Bangladeshi Applicants – Full Step-by-Step Guide
সৌদি আরব দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের জন্য অন্যতম আকর্ষণীয় গন্তব্য। উচ্চ আয়ের চাকরি, নিরাপদ কর্মপরিবেশ, আধুনিক জীবনযাত্রা, ধর্মীয় পরিবেশ এবং বিশাল শ্রমবাজার—সব মিলিয়ে সৌদি আরব বর্তমানে সবচেয়ে সহজে ভিসা পাওয়া দেশের তালিকায় অন্যতম। বিশেষ করে ২০২৫ সালে সৌদি সরকার তাদের ভিসা নীতিতে বেশ কিছু সহজীকরণ (Simplification) এনেছে, যা বাংলাদেশি আবেদনকারীদের জন্য আরও সুবিধাজনক হয়েছে।
এই ব্লগে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করবো—
✔ সৌদি আরবে কোন ভিসা সবচেয়ে সহজে পাওয়া যায়
✔ সৌদি ভিসার ধরণ, যোগ্যতা ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
✔ মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (MRP) ও ই-ভিসার আপডেট
✔ ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া (Step-by-Step)
✔ খরচ কত পড়বে?
✔ ভিসা দ্রুত পাওয়ার উপায়
✔ প্রচলিত ভুল ও কীভাবে এড়াবেন
✔ সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQ)
চলুন বিস্তারিত আলোচনা করা যাক…
অবশ্যই পড়ুন- চায়নাতে স্টুডেন্ট ভিসার আবেদন কিভাবে করবেন
১. সৌদি আরবে সবচেয়ে সহজে কোন ভিসা পাওয়া যায়?
সাধারণত নিচের ভিসাগুলো বাংলাদেশিদের জন্য সবচেয়ে সহজ:
১) কর্ম ভিসা (Work Visa / Employment Visa) – সবচেয়ে সহজ
সৌদিতে
কর্মীর
চাহিদা
বেশি
হওয়ায়
এটি
সবচেয়ে
সহজে
পাওয়া
ভিসা।
বিশেষ
করে
নিচের
সেক্টরগুলোতে—
- নির্মাণ শ্রমিক
- ড্রাইভার
- ক্লিনার
- ইলেকট্রিশিয়ান
- প্লাম্বার
- হেলপার
- কৃষি শ্রমিক
- সেলসম্যান
- সুপার শপ কাজ
- হোটেল-রেস্টুরেন্ট কর্মী
২) ভিজিট ভিসা (Family / Business / Tourist)
বিশেষ করে ট্যুরিস্ট ই-ভিসা এখন খুব সহজে পাওয়া যায়।
৩) ডোমেস্টিক ওয়ার্কার ভিসা (Housemaid / Driver)
মেয়েদের জন্য
হাউজমেইড ভিসা
সহজে
পাওয়া
যায়।
পুরুষদের জন্য
ড্রাইভার ভিসা
জনপ্রিয়।
২. সৌদি ভিসার ধরণ (All Visa Types)
|
ভিসা ধরন |
উদ্দেশ্য |
সহজতা |
|
Work Visa |
চাকরি |
⭐⭐⭐⭐⭐ |
|
Tourist Visa |
ভ্রমণ |
⭐⭐⭐⭐ |
|
Business Visa |
ব্যবসায়িক কাজ |
⭐⭐⭐⭐ |
|
Family Visit Visa |
আত্মীয় দেখা |
⭐⭐⭐⭐ |
|
Residence Visa (Iqama) |
পরিবারসহ থাকা |
⭐⭐⭐ |
|
Student Visa |
পড়াশোনা |
⭐⭐ |
|
Hajj/Umrah Visa |
ধর্মীয় ভ্রমণ |
⭐⭐⭐⭐⭐ |
৩. সৌদি ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
সৌদি আরবে ভিসা পেতে যেসব ডকুমেন্ট লাগে—
✔ প্রয়োজনীয় সাধারণ কাগজপত্র
- বৈধ মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (MRP) – কমপক্ষে ৬ মাস মেয়াদ
- ২ কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি (সাদা ব্যাকগ্রাউন্ড)
- জাতীয় পরিচয়পত্র (NID)
- পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট
- মেডিকেল টেস্ট রিপোর্ট (GAMCA / Wafid)
- ফিঙ্গারপ্রিন্ট (Biometrics – Saudi Visa Center)
- ভিসা স্লিপ / Enjaz Registration
✔ কর্ম ভিসার জন্য অতিরিক্ত
- Sponsor Demand Letter
- Visa Authorization Number
- আমারি সহ এক্সপেরিয়েন্স সার্টিফিকেট (যদি প্রয়োজন হয়)
✔ ভিজিট ভিসার জন্য
- আমন্ত্রণপত্র (Invitation Letter)
- সম্পর্ক প্রমাণ পত্র (মায়ের ক্ষেত্রে জন্ম নিবন্ধন, স্ত্রী হলে বিবাহ সনদ ইত্যাদি)
✔ বিজনেস ভিসার জন্য
- কোম্পানির ইভাইটেশন লেটার
- ব্যবসার প্রমাণপত্র
৪. সৌদি আরব ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া – Step-by-Step Guide (২০২৬)
Step 1: পাসপোর্ট তৈরি / নবায়ন
আপনার পাসপোর্টের মেয়াদ ৬ মাসের কম হলে আগে নবায়ন করুন।
Step 2: GAMCA/Wafid মেডিকেল
সৌদি
ভিসার
জন্য
মেডিকেল বাধ্যতামূলক।
Wafid অ্যাপয়েন্টমেন্ট করতে
পারেন।
সাধারণত টেস্টগুলো:
- ব্লাড টেস্ট
- চেস্ট এক্স-রে
- হেপাটাইটিস
- HIV
- TB
- শারীরিক পরীক্ষা
Step 3: অ্যাপ্রুভাল / ভিসা স্লিপ সংগ্রহ
যদি কাজের ভিসা হয়, স্পন্সর আপনাকে ভিসা স্লিপ পাঠাবে।
Step 4: Enjaz (এনজাজ) রেজিস্ট্রেশন
এটি সৌদি দূতাবাসের অনলাইন প্ল্যাটফর্ম।
এখান থেকে—
- আবেদন ফি জমা
- ভিসা ফর্ম পূরণ
- ছবি ও কাগজপত্র আপলোড
Step 5: বায়োমেট্রিকস (Biometric Fingerprint)
Saudi Visa Center (TASF) এ গিয়ে ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিতে হয়।
Step 6: পাসপোর্ট জমা
সৌদি ভিসা সেন্টারে পাসপোর্ট জমা দিতে হয়।
Step 7: ভিসা অনুমোদন
সাধারণত ৩–৭ দিনের মধ্যে ভিসা রেডি হয়ে যায়।
৫. সৌদি ভিসা করতে কত খরচ হয়?
|
ভিসার ধরন |
মোট সম্ভাব্য খরচ |
|
কর্ম ভিসা |
৫০,০০০–৯০,০০০ টাকা (চাকরির ধরন ভেদে) |
|
ট্যুরিস্ট ভিসা |
১২,০০০–১৬,০০০ টাকা |
|
বিজনেস ভিসা |
১৫,০০০–২৫,০০০ টাকা |
|
ফ্যামিলি ভিজিট |
১৫,০০০–১৮,০০০ টাকা |
|
মেডিকেল |
৬,০০০–৭,৫০০ টাকা |
|
বায়োমেট্রিক |
৭০০–১,০০০ টাকা |
দ্রষ্টব্য: এজেন্সি বা স্পন্সরভেদে খরচ কমবেশি হতে পারে।
৬. সৌদি ভিসা সহজে পাওয়ার ১০টি গুরুত্বপূর্ণ টিপস
১. মেডিকেল সঠিকভাবে করুন
সবচেয়ে বেশি রিজেকশন হয় মেডিকেল সমস্যার কারণে।
২. অভিজ্ঞ এজেন্সির মাধ্যমে আবেদন করুন
অনেক ভুয়া রিক্রুটিং এজেন্সি টাকা নিয়ে ভিসা দেয় না।
৩. ভুল তথ্য দেবেন না
পাসপোর্টে ভুল নাম, ভুল জন্মতারিখ থাকলে সমস্যা হয়।
৪. ছবি অবশ্যই সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডে দিন
৫. পাসপোর্টের মেয়াদ ৬ মাসের বেশি রাখুন
৬. Enjaz ফর্ম সাবধানে পূরণ করুন
৭. বায়োমেট্রিকস ঠিকমতো দিন
৮. স্পন্সরের নথি নিশ্চিত করুন
৯. মেডিকেল রিপোর্ট নকল করবেন না
১০. ভিসা ফি জমা দেওয়ার আগে স্পন্সর যাচাই করুন
ই-কামার্সে যাচাই করতে পারেন।
৭. সৌদি ভিসা রিজেকশন হওয়ার কারণ
- মেডিকেল রিপোর্ট ফেইল
- ভুল বা সম্পূর্ণ না হওয়া কাগজপত্র
- Enjaz ফর্মে ভুল
- স্পন্সর তথ্য অসামঞ্জস্য
- পাসপোর্টে ভুল তথ্য
- পূর্বে সৌদিতে আইন ভঙ্গ করা
- ওভারস্টে ইস্যু
৮. সৌদি ভিসা পাওয়া সহজ করার গুরুত্বপূর্ণ নিয়ম (২০২৬ আপডেট)
২০২৫ সালে সৌদি আরব ভিসা নীতি আরও সহজ করেছে—
✔ ই-ভিসা সিস্টেম আরও শক্তিশালী
ট্যুরিস্ট ভিসা এখন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অনুমোদন পাচ্ছে।
✔ বৈধ বায়োমেট্রিক থাকলে পুনরায় করতে হয় না
✔ ডিজিটাল মেডিকেল সিস্টেম (Wafid)
মেডিকেল ফেইল হলে সাথে সাথে ফল জানা যায়।
✔ নতুন শ্রম বাজার খুলেছে
বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য কৃষি, নির্মাণ ও হোটেল সেক্টরে নতুন চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে।
৯. সৌদি আরব যাওয়ার আগে করণীয়
✔ জীবনযাত্রা সম্পর্কে জানুন
✔ কাজের চুক্তি পড়ে নিন
✔ স্পন্সর যাচাই করুন
✔ প্রয়োজনীয় অ্যাপ ইনস্টল করুন—
- Absher
- Tawakkalna
- Wafid
- Nusuk
✔ নিজের কাজ সম্পর্কে দক্ষতা অর্জন করুন
দক্ষ শ্রমিকের আয় বেশি।
১০. সৌদি ভিসা প্রসেস – সময় কত লাগে?
|
ধাপ |
সময় |
|
মেডিকেল |
১ দিন |
|
Enjaz |
১ দিন |
|
বায়োমেট্রিক |
১ দিন |
|
ভিসা অনুমোদন |
৩–৭ দিন |
|
মোট সময় |
৫–১০ দিন |
১১. সৌদি ভিসা সম্পর্কিত সাধারণ জিজ্ঞাসা (FAQ)
১. সৌদি ভিসা কি সত্যিই সহজে পাওয়া যায়?
হ্যাঁ—কর্ম ভিসা, ট্যুরিস্ট ভিসা এবং হাউজমেইড ভিসা সবচেয়ে সহজ।
২. ভিসা করতে কি এজেন্ট লাগবেই?
সবসময়
নয়।
ট্যুরিস্ট ও
ব্যবসায়িক ভিসা
নিজেই
করা
যায়।
৩. সৌদিতে কত আয় হয়?
২০,০০০–৮০,০০০
টাকা
(কাজভেদে)
স্পেশাল স্কিল
হলে
আয়
আরও
বেশি।
৪. ট্যুরিস্ট ভিসা দিয়ে কি চাকরি করা যায়?
না। এটি অবৈধ।
৫. মেডিকেল ফেইল হলে কি করা যায়?
কারণ অনুসারে পুনরায় টেস্ট করতে হয়।
উপসংহার
সৌদি আরব বর্তমানে বাংলাদেশিদের জন্য সবচেয়ে সহজে ভিসা পাওয়া দেশের তালিকায় অন্যতম। সঠিক প্রস্তুতি, সঠিক কাগজপত্র ও অভিজ্ঞ রিক্রুটিং এজেন্সির সহায়তা থাকলে ৫–১০ দিনের মধ্যেই ভিসা হাতে পাওয়া সম্ভব। বিশেষ করে ২০২৫ সালের নতুন ভিসা নীতির কারণে এখন আরও দ্রুত ও ঝামেলাহীনভাবে কাজের ভিসা পাওয়া যাচ্ছে।
ভবিষ্যতে আরও শ্রমবাজার সম্প্রসারণের সাথে সৌদি আরব বাংলাদেশের জন্য আরও বড় সুযোগ তৈরি করেছে। তাই যারা বিদেশে যেতে চান, বিশেষ করে নিরাপদ ও উচ্চ আয়ের দেশ খুঁজছেন—তাদের জন্য সৌদি আরব একটি আদর্শ গন্তব্য।


কোন মন্তব্য নেই