Header Ads

দুই পুরুষ (উপন্যাস) পর্ব- ১৩ (শেষ পর্ব)


দুই পরুষ

                      এম, আব্দুল্লাহ আল মামুন

উপন্যাস পর্ব-১৩ (শেষ পর্ব)

-ছাই ছাই , আমি জানি না নতুন এডভােকেটদের প্র্যাকটিসের কথা ! অর্ধেক দিন রিক্সার ভাড়াও জোটে না।

Dui purush


-তােমাকে কিছু খেতে দিলাে না ?

-খেতে দিবে ? আর খেতে দিলেও আমি তার পয়সায় খাবাে ? আমার এতাে অধঃপতন হয়েছে যে সেই লােফারটার পয়সায় আমি খাবাে। তুমি বলছাে কি !

-খাও না খাও সে পরের কথা। কিন্তু তার তাে অফার করা উচিৎ ছিলাে । তুমি এতাে দিন পরে গেলে।

-আমি যে তার বাড়িতে গিয়েছি সেইটাই তাে তার মহাসৌভাগ্য মনে করা উচিৎ। আমি বলে এসেছি যে চিরকাল কারাে সমান যায় না, একদিন তাকে আমার কাছে হাত পাততেই হবে।

-তাতে কি বলল সে ?

-বলল আমারও নাকি চিরকাল সমান যাবে না। আরাে বলল ডি সি বলে আমার নাকি খুব অহংকার। তারা আমার আন্ডারে চাকরি করে না যে আমি যা বলবাে তাই-ই তাদের শুনতে হবে। মিসেস জাকির শুনে অবাক হয়ে গেলেন। বলল, তাহলেতাে সে আমাকেও অপমান করলাে !

-অপমানই তাে করলাে, সেই জন্যইতাে এই কথা শােনার পর আমি আর এক মিনিট দাঁড়াতে পারি নি। সােজা বেড়িয়ে এলাম।

-ঠিক করেছে, আমি হলে তাে জুতাে পেটা করতাম। আমার শরীরটা খুব খারাপ তাই যেতে পারলাম না । নইলে আমি রাগে কি যে করতাম বলা যায় না।

- যাক গে, ও সব নিয়ে তুমি মাথা ঘামিও না, আমিও মাথা ঘামাবাে না। মাথা ঘামালে মিছেমিছি তােমার প্রেশার বেড়ে যাবে।

কিন্তু মানুষের সমস্যা কি একটা ? অনেক সমস্যা অনেক সময় বিভিন্ন ভাবে আসে। রাজশাহীতে আসার পরপরি মিস্টার জাকিরের একটা বন্ধু জুটেছিল । বন্ধুটি খুব ভালাে মনের মানুষ, মিস্টার জাকিরের আগাগােড়া সবই জানতাে বলা যায়। রাজশাহীতে আসার পর মিস্টার জাকির প্রতি সন্ধ্যায় একটা রেস্টুরেন্টে বসতাে। সেখানেই তার বন্ধুত্ব অর্থাৎ ফজলে রাব্বির সংগে পরিচয় হয়।

প্রথম প্রথম মিসেস জাকিরকে নিয়ে আসতেন। কিন্তু স্ত্রী অসুস্থ হবার পর আর আগেকার মতাে নিয়ম করে আসতে পারতেন না। মাঝে মাঝে একা আসতেন আর ফজলে রাব্বির সংগে গল্প করেই উঠে পড়তেন। বলতেন, আজকে উঠে-

-ফজলে রাব্বি জিজ্ঞেস করতাে, মিসেস কেমন আছে ?

-মিস্টার জাকির গম্ভির মুখে বলতেন, নাহ ভালাে নয়।

রােজই এই এক কথা।

-মিস্টার জাকির বলতেন সারা জীবন চাকরি করে শেষ জীবনটায় যে একটু আরাম করে দিন কাটাবাে তার উপায় আর রইল না। এখন যদি মিসেস মারা যায় তত আমার কি হবে বলুন তাে ? বাড়িতে একলা কি করে কাটাবাে ?

-কথা শুনে ফজলে রাব্বি বলল, আপনি এতাে ভাবছেন কেন ? মিসেস তাে ভালাে হয়ে যেতে পারেন।

-ডাক্তাররা যে সে ভরসা দিচ্ছে না, তাছাড়া যে টাকা পেনশন পাই তা দিয়ে চলে না, খুব কষ্ট কয়ে গেছে।

তার উপর অনেক টাকার শেয়ার কিনেছিলেন। সেই শেয়ারের দামও সব এক সংগে কমে গেল। ব্যাংকে টাকা রাখলে কম সুদ হয়, আর শেয়ারে টাকা খাটালে লাভ বেশী। তাই শেয়ারেই তিনি বেশী টাকা খাটিয়েছিলেন।

এতােগুলাে বিপদ একসংগে আসবে। বিশেষ করে রিটায়ার করার পর, সেটা তিনি আগে কল্পনাও করতে পারেন নি। ভরসার মধ্যে ভরসা শুধু এই পেনশনের টাকা ! তাতে গাড়ি চালিয়ে ইজ্জত রাখা যায় না। সেদিন দেখলেন মিস্টার কর রিক্সায় রেস্টুরেন্টে এসেছেন।

-জিজ্ঞেস করল ফজলে রাব্বি, কি বেপার গাড়ি কি হলাে ?

- গাড়িটা বেঁচে দিলাম।

-সে কী! তাহলে চলবেন কি করে ?

-ড্রাইভারের বেতন দেবাে কোত্থেকে। আর নিজে ড্রাইভ ভালােভাবে করতে পারি না। তার ভিতর আবার পেট্রোলের দাম বেড়ে গেল। এতাে টাকা আমি কোথা থেকে যােগাবাে ?

মিস্টার জাকিরের অবস্থা দেখে বড় দয়া হলাে। চোখের সামনে একটা লােককে ধাপে ধাপে কেবল নেমে যেতেই দেখলাে। অথচ ডি সি মানুষ। এককালে কত দাপটে ছিলেন। কত লােকের দণ্ডমুণ্ডের কতা ছিলেন। প্রথম প্রথম যখন রেস্টুরেন্টে আসতেন তখনও দাপট দেখেছে। তখনও সুটের বাহার দেখেছে। দু'হাতে বয়দের বখশিষ দেওয়ার বহর দেখেছে, তখনও এমন ভাব দেখাতেন যেন তিনি তখনও ডি সি।

তারপর আবার সেই লােকেরই অন্য রকম চেহারা। পুরান পুরান স্যুট । স্ত্রী অসুস্থ গাড়ি বিক্রি করে দেওয়া, শেয়ার বাজারে ধশ আর তারপর অনেক দিন আর পাত্তা নেই।

অনেক দিন পরে হঠাৎ আবার এলেন, চেহারাটা শুকনাে শুকনাে অনেক রােগ হয়ে গেছে।

-জিজ্ঞেস করল ফজলে রাব্বি, এ রকম চেহারা হলাে কেন ? অনেকদিন আসেন নি আপনি। ব্যাপার কি অসুখ হয়েছিল না কি ?

-আমার স্ত্রী মারা গেছে।

-শেষ কালে কি হয়েছিল ?

-হার্ট তাে আগে থেকেই খারাপ ছিল, এবার হঠাৎ হার্ড এ্যাটাক হলাে। একদিন ভাের বেলা দেখলাম তখনও ঘুমাচ্ছে, ভাবলাম ঘুমাচ্ছে ঘুমােক । ঘড়িতে আটটা বাজলাে, নয়টা বাজলাে, দশটা বাজতে চলল তখন ভাবলাম ডেকে তুলে ঔষধটা খাইয়ে দেই। গায়ে হাত দিতেই দেখি একেবারে ঠাণ্ডা গা ! তখনই ডাক্তার ডাকলাম, কিন্তু সে অবস্থায় ডাক্তারই বা কি করতে পারবে। তার অনেক আগেই সে মারা গেছে।

-মেয়েকে খবর দিয়েছেন ?

-খবর দিয়েছিলাম কিন্তু মেয়ে আসে নি।

-তারপর ?

-তারপর আর কি লােকজন ডেকে কবর দেওয়া হলাে। শেষ পর্যন্ত মেয়েই তার চরম শত্রু হয়ে রইল। আসলে বলা যায় মেয়ের জন্যই তার প্রাণটা গেল । মেয়ে যেদিন বাড়ি ছেড়েছে, সেদিন থেকেই তার হার্ট বিকল বিকল অবস্থা। আমার সব হিসাব নিকাস ভুল হয়ে গেছে।

অনেক সান্তনা দিয়ে বুঝালাে ফজলে রাব্বি, বলল, যার যা নিয়তি তা - কে রােধ করতে পারে বলুন ? মেয়ের বদলে যদি ছেলে থাকতাে তাহলেও হয়তাে এ রকমই হতাে।

-তাইতাে এখন নিয়তিকেই বিশ্বাস করি। আগে ওকে বিশ্বাস করতাম না। তখন ভাবতাম জীবনটা যেমন চলছে সেই রকমই বুঝি চলবে। তা যে কত বড় ভুল তা স্ত্রীর মৃত্যুতে যেমন বুঝলাম এর আগে কখনও তা বুঝি নি। আগে কত কিছুই না করেছি। আমার সাথে মানুষ দেখা করতে পারলে তারা নিজেকে ধন্য মনে করতাে। অথচ এখন দেখা হলে তারা আমার সাথে কথাই বলে না।

-এটাই তাে নিয়ম ভাই ।

-ভাবতে পারেন এখন আমি রিক্সায় চড়ছি আর আমার মেয়ের এখন দু’টো গাড়ি। একটায় আমার সেই লােফার জামাই চড়ে, আর একটা আমার মেয়ে।

- ফজলে রাব্বি অবাক ! বলল, দু'টো গাড়ি হলাে কি করে ?

- এখন সে বড় মাপের এ্যাডভােকেট হয়ে খুব পয়সা ইনকাম করছে, উপশহরে একটা ৫ তলা বাড়ি করেছে কচি।

- কিন্তু কোথা থেকে এসব হলাে ?

-আমার জামাই এখন নিজেই মােটর মেরামতের ওয়ার্কশপ করেছে। তার কারখানায় প্রায় দু'শজন লােক খাটে।

-আপনি এসব জানলেন কি করে ?

-ওর মা যখন মারা গেল তখন বলতে গিয়েছিলাম। সে তাে আসলােই না। দিন রাত ক্লাইন্ট নিয়ে সে ব্যস্ত। তার ক্লাইন্টই তাকে আসতে দিল না। এমন কি সেই বখাটে লােফার জামাই, যাকে আমি মানুষ বলেই গন্য করি নি, সে কিনা শুনলাম ৩০ লক্ষ টাকা ইনকাম ট্যাক্স দিয়েছে লাস্ট ইয়ারে।

গল্প শেষ করে রিক্সা করে বড়ি চলে গেল। বেশ কিছু দিন আসেন নি মিস্টার জাকির। ফাজলে রাব্বি ভাবছেন মিসেস জাকিরের মৃত্যুতে তিনি মুষড়ে পড়েছেন, তার উপর আবার বয়স হয়েছে। বাড়িতে বসে বসেই হয়তাে সময় কাটান। সব মানুষেরই একদিন বয়স বাড়বে। এটাই নিয়ম, আগেও এ রেস্টুরেন্টে কত লােক আসতাে। তারপর তারা আসতে আসতে আসা বন্ধ করেছে। তাদের কথা সবাই ভুলে গেছে। এটাই এতকাল দেখে এসেছে ফজলে রাব্বি

কিন্তু মিস্টার জাকিরই এই নির্মম কাহিনীর ব্যতিক্রম করলেন, সে দিন ফজলে রাব্বি রেস্টুরেন্টে বসে বসে জমিয়ে গল্প করছে অন্য লােকদের সংগে। হঠাৎ দেখলাে একটা বি.এম.ডাব্লিউ.ডি গাড়ি এসে থামলাে রেস্টুরেন্টের সামনে। গাড়িটি দেখে মনে হল নতুন কেনা ইম্পাের্ট কার। এ গাড়িটা আগে কখনও এখানে আসে নি। যুবক এক ড্রাইভার গাড়ি থামিয়ে নেমে গিয়েই পিছনের দরজাটা খুলে দিলাে আর ভেতর থেকে নেমে এলেন মিস্টার জাকির।

ওই রকম গাড়িতে মিস্টার জাকিরকে দেখে ফজলে রাব্বির চোখ কপালে উঠে গেছে। অবাক হয়ে ফজলে রাব্বি কখন যে মুখ হা করেছেন তিনি নিজেই জানেন । মিস্টার জাকিরের চেহারা বদলে গেছে। পরনে দামী নতুন স্যুট। মনে হচ্ছে ১৫ বছর বয়েস কমে গেছে।

 - তাকে দেখেই এগিয়ে এলেন ফজলে রাব্বি, বললেন, কি ব্যাপার এতাে দিন আসেন নি কেন।

-এখন আর আগেকার মত সময় পাই না।

-কেন, এতাে ব্যস্ত কিসের ?

-সমস্ত দিন নাতনীকে নিয়েই কেটে যায়।

-নাতনী !

-হ্যা, খুব সুন্দর ফুটফুটে একটা মেয়ে হয়েছে কচির । কচি আমাকে মেয়ের নাম রাখতে বলেছিল, আমার দেওয়া নামটা কচির ভীষণ পছন্দ হয়েছে।

- কি নাম রেখেছেন ?

-তাম্মি। ভালাে না ?

-বাহ সুন্দর নাম রেখেছেন তাে আপনি। খু

ব খুশি হলেন মিস্টার জাকির ।

-গাড়িটা কার ?

-মিস্টার জাকির বললেন, মেয়ের আজ কোর্ট ছুটি তাই কচি বলল বাবা তুমি আমার গাড়িটা নিয়ে যাও।

-আপনি এখন মেয়ের কাছেই থাকেন নাকি ?

- হ্যাঁ, কি আর করি বলুন মেয়ে নিজে এসে আমাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে গেল। জামাইও বলল বাবা আপনি এই বাড়িতে একা একা থাকবেন কি করে । আমাদের বাড়িতে অনেক ঘর, আপনি সেখানেই চলুন। ওরা দু'জনই আমাকে অনেক যত্ন করে জানেন ?

একটু চুপ করে থেকে মুচকি হেসে মিস্টার জকির বললেন, আপনার সাথে দেখা করতে আসলাম যে জন্য ।

-বলুন কিসের জন্য ?

-আসছে রবিবার আমার নাতনীর ১ম জন্ম দিন, আপনাকে কিন্তু দয়া করে একবার পায়ের ধুলাে দিতেই হবে, এই কার্ডে ঠিকানা লিখা আছে।

- নিশ্চয় যাবাে, আপনি কিছু ভাববেন না।

-একটু সকাল সকাল আসবেন, সন্ধ্যে হওয়ার সংগে সংগে আসবেন আমরা জমিয়ে গল্প করবাে।

রবিবার দিন যথারীতি গেলেন মিস্টার জাকিরের মেয়ের বাড়িতে। যেতেই দেখেন বিড়াট ৫ তলা বাড়ি। চার দিকে আলােয় আলাে, সমস্ত বাড়িটা জুড়ে লাল-নীল টুনি বাল্ব জলছে নিভছে। বাড়িটার সামনে বিশাল সুন্দর খোলা যায়গা। দেখে মনে হয় সাজানাে গােছানাে একটা পার্ক। প্রায় দুই হাজার লােকের ভিড়। সার্কাসের মতাে টুপি পড়া হােটেল বয়রা সিগারেট আর কোড ড্রিংসের ট্রে নিয়ে চার দিকে ঘুরে ঘুরে বেড়াচ্ছে।

ফজলে রাব্বিকে দেখেই মিস্টার জাকির এগিয়ে আসলেন ।

-এতাে লােককে দাওয়াত করেছেন ?

-সব আমার জামাই এর, ওর ওয়ার্কশপে কি কম লােক চাকরি করে ? আর আমার মেয়ে এডভােকেট, ব্যরিস্টার আর জজ ম্যাজিস্ট্রেট সবাই এসেছেন। চলুন আমার নাতনীকে দেখবেন চলুন।

ভিতর নিয়ে আসলেন ফজলে রাব্বিকে। অন্দর মহলে মহিলাদের ভিড়, সেখানে একটা ঘরের মধ্যে মিস্টার জাকিরের মেয়ে কচি তার মেয়েকে নিয়ে বসে আছে।

ফজলে রাব্বি উপহার দেবার জন্য একটা জাপানি খেলনা নিয়ে গিয়েছিলেন। সেটা মিস্টার জাকিরের নাতনীর হাতে দিলেন। মেয়েটা সেটা নিয়ে খেলতে লাগলাে। বড় সুন্দর নাতনী মিস্টার জাকিরের। দেখেই মনে হয় যেন রঙ্গীন মােমের পুতুল ।

মেয়ের সংগে পরিচয় করিয়ে দিলেন মিস্টার জাকির ।

-বললেন, উনি আমার ফ্রেন্ড, রেস্টুরেন্টে প্রতি দিনই উনার সাথে গল্প গুজব করি।

- মেয়ে হাত তুলে সালাম দিলাে। জামাই রাসেলের সংগে পরিচয় করিয়ে দিলেন তিনি। ভারি ভদ্র ছেলে, শ্বশুরের বন্ধু বলে সে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করলাে। ফজলে রাব্বির খুশিতে বুকটা ভরে উঠলাে। অত বড় কোম্পানির মালিক তবু এতটুকু অহংকার নেই তার।

সামান্য কিছু খেয়েই বিদায় নিলেন তিনি।

বিদায় নেবার সময় মিস্টার জাকির তাকে বাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে গেলেন, যাবার সময় জিজ্ঞেস করলেন, কেমন দেখলেন আমার নাতনীকে ?

-এক কথায় চমৎকার ।

-মেয়ে সকাল বেলা কোর্টে চলে যায় আর জামাই ফ্যাক্টরিতে যায়, আর তখন আমি এই নাতনীকে নিয়ে কাটাই।

তারপর একটু থেমে মনটা খারাপ করে বললেন, একটাই শুধু দুঃখ থেকে গেল রাব্বি সাহেব, আজকে আমার মেয়ের যে এতাে ঐশ্বর্য হয়েছে, আমার স্ত্রী এ-সব কিছুই দেখে যেতে পারলাে না।

রাব্বী সাহেব কথা না বাড়িয়ে মিস্টার জাকিরকে সান্তনা দিয়ে বাড়িতে ঢুকে পরলেন, তার রুমে গিয়ে বিছানায় একটু হেলান দিয়ে ভাবতে লাগলেন সেই সব পুরােনাে কথা গুলাে। একদিন এই মিস্টার জাকিরই প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে তিনি তার মেয়ের মুখ কোন দিন দর্শন করবেন না। একটা সামান্য মােটরের মিস্ত্রীকে বিয়ে করেছিলেন বলে সেদিন তিনি মেয়েকে কত কথা শুনিয়েছিলেন, কত ভয় পেয়েছিলেন মেয়ে ভবিষ্যতের কথা ভেবে। সত্যিই অন্য কোথাও বিয়ে হলে তাহলে কি আর এত বড় বাড়ি হতাে ? এত দামি গাড়ি হতাে ? এত প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠা মান-সম্মান হতাে ? আসলে মিস্টার জাকিরের কাছে। ভালােবাসা টালােবাসা সব তুচ্ছ। তাঁর কাছে একমাত্র খাটি জিনিস, টাকা। আজ যে মিস্টার জাকির এত হাসি-খুশি সেওতাে মেয়ে জামাইয়ের টাকা রয়েছে বলে। নাতনী যদি সুন্দর না হয়ে কালাে কুৎসিত হতাে তাহলেও কোন সহস্যা হতাে না, সমান আদর করতেন। কারণ একটাই মেয়ে জামাইয়ের টাকা। তা যাক গে যা হয়েছে হয়েছে। ডি সির জীবন এক রকম গেল, মেয়ের জীবন আরেক রকম, কে জানে যে এই দুনিয়ায় নতুন আসলাে তার জীবন কেমন হবে।

জন্ম দিনের পরের দিন কেউ কোন কাজে যায় নি। কচি কোর্টে যায় নি আর রাসেল কারখানা বন্ধ ঘােষণা করেছে ঐ একদিন। তারা ঠিক করলাে আজ কোথাও থেকে বেড়িয়ে আসবে নিজেরাই ড্রাইভ করে।

মিস্টার জাকির পাপ করেছে জীবনে অনেক, জানি না আল্লাহ পাকের কাছে সে জন্য ক্ষমা চেয়েছে কিনা। বাবা মার সাথে খারাপ ব্যবহার এটা আল্লাহও সহ্য করতে পারেন না। কচি তার বাবা মার সাথে যে ব্যবহার করেছে তা ক্ষমা করে দেওয়ার মত নয়। জানি না সে আল্লাহ পাকের কাছে ক্ষমা চেয়েছে কিনা। জানি না তাদেরকে আল্লাহ পাক ক্ষমা করেছেন কি না। তাহলে ছােট্ট ঐ নিষ্পাপ মেয়েটি ? সে কি করেছে ? তারতাে কোন দোষ নেই ? তবে কেন তাদের কার এক্সিডেন্টে তারা সবাই এক সংগে মারা গেল?

সমাপ্ত

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.