Header Ads

আর একজন নজরুল চাই (কাজী হানিফ)

আর একজন নজরুল চাই

আর একজন নজরুল চাই
কাজী হানিফ

প্রকাশক
মােহাম্মদ মিজানুর রহমান
সাহিত্য কথা
৪০/৪১ বাংলাবাজার (২য় তলা), ঢাকা-১১০০

প্রথম প্রকাশ
একুশে বইমেলা ২০০৯

গ্রন্থস্বত্ব
লেখক

প্রচ্ছদ
সৌরভ মাহমুদ

বর্ণবিন্যাস
সাবিত কম্পিউটার সার্ভিস

মুদ্রণ
গাউছিয়া প্রিন্টিং প্রেস
৪৫/খ/২ রজনী চৌধুরী রােড গেণ্ডারিয়া ঢাকা ১২০৪

মূল্য : ৮০ টাকা


Ar Ekjon Nazrul Chai by Kazi Hanif
Published by Mohammad Mizanur Rahman, Shahitta Katha
40/41 Banglabazar Dhaka 1100, Date of Publication : February 2009

Price : Tk. 80 Only, US $ I

ISBN : 984-70315-0047-2


উ ৎ স র্গ

৫২ র ভাষা শহীদ ও ভাষাসৈনিক ৭১-এর বীর মুক্তিযােদ্ধা
ও শহীদ মুক্তিযােদ্ধা এবং
জাতির জনক বংগবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বীরশ্রেষ্ঠ,
বীরপ্রতীক বীরবিক্রম ও বীরাঙ্গনাদের প্রতি।



লেখক পরিচিতি
হানিফ

কাজী আজিজ আক্তার মাে: হানিফ বকুল,

পিতা কাজী মাে. আবু আক্তার, মাতা মােছাঃ খাতেমা বেগম,
ময়মনসিংহে জন্ম গ্রহণ করেন।
তিনি বগুড়া থেকে প্রকাশিত মাসিক ‘কবিতাকণ্ঠ’
নামক পত্রিকায় নিয়মিত কবিতা লেখেন।
তার কথাগুলাে সমসায়িক কালের।

কবি নজরুলের বিদ্রোহী মনোভাব তিনি খুব পছন্দ করেন।
তিনি মনে করেন এদেশে আরো একজন নজরুলের জন্ম হোক।


মুখবন্ধ

           আমি কাজী আজিজ আক্তার মােঃ হানিফ (বকুল), জন্ম ময়মনসিংহ শহরের গাঙ্গিনাপাড়। লেখাপড়া করেছি ঢাকায়। পেশায় জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরাের অধীনস্ত বগুড়া কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের একজন সিনিয়র ইন্সট্রাক্টর (শিক্ষক)।

             আমার দাদার বাড়ী পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার কালনা মহকুমার ভাটরা গ্রামে। পিতা- মরহুম কাজী মােহাম্মদ আবু আক্তার (মতি), মাতা- মােছাঃ খাতেমা বেগম, ভারত বিভক্তের পর পরই ১৯৪৮ ইং সনে তাঁরা ময়মনসিংহ চলে আসেন এবং রেজিষ্ট্রেশনের মাধ্যমে নাগরিত্ব প্রাপ্ত হন। বগুড়া থেকে প্রকাশিত মাসিক “কবিতা কণ্ঠ” নামক একটি পত্রিকায় নিয়মিত কবিতা লিখি, '৭১ এর পরবর্তী নতুন প্রজন্মের জন্যে। সমসাময়িক বিষয়গুলাে চলে আসে আমার কবিতায়। “কবিতা কণ্ঠ” এর প্রচ্ছদে লেখা “আর একজন নজরুল চাই” শ্লোগানে কেন জানি আমি বিমােহীত হয়ে পড়ি।

           ভাবলাম এটাই হােক আমার কবিতা গুচ্ছের প্রচ্ছদ। নতুন প্রজন্ম জেগে উঠুক বিদ্রোহী কবি নজরুলের বিদ্রোহী ধারায়। শানিত তরবারী ফিরে পাক তার পুরাতন রূপ। বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াক। ভাষা শহীদের আত্বা পূনঃ জীবিত হােক, হােক বাংলার সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান শহীদ মুক্তিযােদ্ধাদের আত্মা। বীরশ্রেষ্ঠ, বীরউত্তম, বীরপ্রতীক, বীরবিক্রম, বীরঙ্গনাদের বিজয়ের কথাগুলাে নতুন প্রজন্ম জানুক। তাহলেই স্বার্থক হবে আমার লেখা কবিতাগুলাে।

-কাজী হানিফ


আর একজন নজরুল চাই
 
আমি শিকাগাের শ্রমিকদের কথা বলছি
তাঁরা তাে আমার ভাই
তাঁদের লাল রক্ত আমার গায়
প্রবাহিত শ্রোতধারা,
আমি তাে নজরুলের কথা বলছি
রেল গাড়ীর কুলির কথা
তাই তাে আর একজন নজরুল চাই ।
আমি সুশিল সমাজের কথা বলছি
যারা শুধু টেলিভিশনে শােবিজ করে,
আর পত্রিকায় ফিচার লেখে ।
যার ঘর্ম ঝরা বদন পানিতে সয়লাব।
মেশিন ঘরের পােড়া মবিলের গন্ধ গায়।
পিচ ঢালা কাল রাজপথে যে ঘর্ম মেশায়
আর সােনালী ফসল ফলায়
কেন সে হয় না সুশিল সমাজের ভাই।
অঙ্গুলি কেটে রক্ত দিয়ে
কৃষকের আকুতির কথা
ঘর্মাক্ত শ্রমিকের কথা
কে বলবে আমি শ্রমিকের সাথে মিশে আছি
আমি টেলিভিশনটা ভেঙ্গে
পত্রিকার বেমানান শব্দগুলাে মুছে
এ মহান মে দিবসে
আর একজন নজরুল চাই।
পারবে কি হতে তুমি ভাই?
এসাে আমরা সবাই
আর একজন নজরুল চাই ।


চেয়ে থাকা

আমি বড় একা
পারি না ভাবতে জীবন, তুমি ছাড়া
একে অপরের পরিপূরকে।
মধুময় জীবনের ছবি আঁকা।
হয়ে গেছি বরবাদ
কেন আমি কোন কারণে
তুমি কেন আজ জীবনের ছন্নছাড়া
নিরবিচ্ছিন্ন নয়নে চেয়ে থাকা ।
ভেবেছিলাম তুমি আসবেই
ডাকবে কাছে আমায়
কল্পনা রয়ে গেল
এলে না তুমি আর একবার ।
তবুও স্মরি তােমায় বারে বার
শয়নে স্বপনে কর্ম ও জীবনে
হৃদয়ের মণিকোঠায়।
আসবে বলে তুমি ভাবি বার বার।


নব দিগন্তে বৈশাখ

 হাজার বছরের বাংলায় আমার
এসাে হে বৈশাখ,
কালের অতলে তলিয়ে যেও না
এসাে বার বার।
পুরানাে দিনের জঞ্জালগুলাে।
পুড়িয়ে ফেলাে,
নতুনের শুভাগমনে
তুমি আজ বাংলায় একাকার।
বৈশাখী বাতাসের সুতীব্র ঝাপ্টায়
আমি আমের গন্ধে পাগল,
ঈশান কোণের কালাে মেঘ।
আমার বাসনা উড়িয়ে নিতে চাই।
এসাে হে বৈশাখ, তুমি
আসবে বার বার তুমি আমার,
আমি নবদিগন্তের পাশে
অপেক্ষায় তােমার।


এক মুঠো বাংলাদেশ

পেশী বহুল বাহু মুষ্টিবদ্ধ হাত
এক মুঠো বাংলাদেশ,
জাফলং থেকে সুন্দরবন
আমি অবাক!
সালাম রফিক শফিক বরকত ভাই।
যেথা যাবে।
পাবে আমাকে তাই
সারা বাংলায় আমি ঘুরে ঘুরে
মতিউর আর আসাদের
রক্তমাখা শার্ট পতাকা বানিয়ে উড়াই।
আমার কোন ঠিকানা নাই।
আমি বাংলার বেদুঈন যাযাবর
বংলা মায়ের মুখের হাসি
ঘুমন্ত কৃষকের স্বপ্ন ফসল
আমি অব্যয় অক্ষয়।
কালাে রাজপথে রক্ত দিয়েছি
মুক্ত করেছি বাংলাদেশ
ছিনিয়ে এনেছি সােনার বাংলা
বীরশ্রেষ্ঠ সাতের দেশ
বীরাঙ্গনা,বীরবিক্রম, বীরপ্রতীক,
আমার বেশ।


মাটি আমার মা

মায়ের হাসি বজ্র কঠিন
জীবন আমার মায়ের জন্য,
পারবে না কেউ নিয়ে যেতে
জীবন আমার হােক ধন্য।
সন্তান হারা মায়ের কাছে
আমরা আছি তােমার মাগাে,
মুক্তি যুদ্ধে শহীদ হয়েছে
তােমার ছেলে তাতে কি এসে যায়।
আমার মাটির গন্ধে
তারা আজ পাগল কেন,
মরিয়া হয়ে লাভ হবে না
মরবে তারা সবাই জেনাে।
আমার মাটি ও মানুষ
মূল্য দিয়ে কিনতে পাবে না,
দেবাে না আমরা, সবাই জেনাে
আমরা সবাই তােমার জন্য।


চক্ষু ধােলাই

আইওয়াস করে দিয়ে
পলিথিন তুলে ফেলে
কাগজের ঠোঙ্গা,
দেশটায় সবকিছু
হয়ে গেল মঙ্গা।
দোকানেতে গেলে ভাই
দেখি মােরা সবে তাই
পিছনের গুদামে,
লুকিয়ে রেখে দেওয়া
পলিথিনের ঠোঙ্গা
ঠোঙ্গাতে বেচে ভাই
কত কিছু রঙ্গা,
বসে বসে খাই আমি
খই মুড়ি লঙ্কা,
আমি আজ তাই ভাই
হয়ে গেছি চোঙ্গা।


অধিকার

দুরন্ত, ফুটন্ত, চলন্ত
গতিময় পৃথিবী অফুরন্ত,
দূর্বার দানবের সমস্ত
অনিয়ম ভেঙ্গে দাও,
বাহুবলে আনাে শক্তি।
অক্লান্ত পরিশ্রমে
দেখি তৃপ্ত বাসনায়,
বুকখানি ভরে গিয়ে অফুরন্ত
ভালবাসা অনাবিল শান্তি,
দানবেরে করেছি পরাজয়।
ছন্দের তালে তালে
দুর্বার গতিতে সীমানা পেরিয়ে,
ক্ষিপ্ত আঘাতে ক্ষত বিক্ষত
শরীরের মাংশ পিণ্ড,
ফিনকি দিয়ে ছিটকে যায় রক্ত।
আমি বিহ্বল দৃষ্টি নিয়ে
চাই না দেখতে ক্লান্ত পথিকের,
অশ্রুঝরা জীর্ণ দেহখানি
তারও তাে আছে অধিকার,
মানবাধিকার মানবাধিকার।


রক্তের ঋণ

আমার ভাষা তােমার ভাষা
জীবন হলাে ভিন্ন,
চিন্তা চেতনা এক হয়
ভেবেছ কি কখনাে ।
তােমার আমার চিন্তা চেতনা
কি করে হয় এত মিল ,
বাংলা মায়ের মুখের ভাষা
আনতে গিয়ে হলাে ঋণ ।
সালাম বরকত রফিক শফিক
আসাদ মতিউর লক্ষ বাঙ্গালী,
রক্ত দিয়েছে রাজপথে
স্বাধীন করেছে বাংলাদেশ।
লক্ষ বাঙালীর রক্তের ঋণ
শােধ করেছে শেখ মুজিব,
লাল সবুজের দেশে দেখ
আমার পতাকা উড়িন।


নতুন শপথ

সৈরাচারী আইয়ুবের পতন ঘটেছে কবে,
আসাদ ভাইয়ের রক্তে পথ ভিজেছে যবে ।
মতিউরের বুকের রক্ত কে দেখেছে কবে,
জেলের তালা সব ভেঙেছে ছাত্ররা যবে।
ঐ দেখা যায় দামাল ছেলে আমার গায়ের পথে,
মিলে মিশে পথ চলেছে বাংলা ভাষা এসেছে তবে।
শেখ মুজিবের ডাক শুনে ঘুম ভেঙেছে কবে,
ছেলের রক্তে বুক ভেসেছে মা হেসেছে তবে।

রাসেল ভাইয়ের ডাক শুনেছ মধ্যরাতের পথে,
প্রাণ দিয়েছে সেই ভাইটি খেলত যখন তবে।
আজকে কেন বুকের ব্যথা জেগে জেগে ওঠে,
আমার প্রাণের হুমকি আসে থেকে থেকে তবে।
ভয় পাই না কিছুই আমি জেলের ভিতর থেকে,
কবর খুদে রেখেছিল পাকসেনারা কবে।
ফয়সালাবাদ জেলের ভিতর রেখে দিয়ে তাকে
ভয়ে দেখয়ে পাইনি কিছু পাকিস্তানিদের তরে।

বঙ্গবন্ধুর সােনার বাংলায় সােনা ফলে যেন
তাই তাে সবার লােভ-লালসা বাসা বেধেছে হেন,
সারাবিশ্বের দৃষ্টি দেখ বাংলাদেশের তরে
হায়েনারা চাচ্ছে আবার একটা কিছু করে ।
সবাই বলাে ..............
জোরে বলাে...............
রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই, নইলে এবার রক্ষা নাই,
জেলের তালা ভাঙবাে, শেখ মুজিবকে আনবাে।
 লও লও লও সালাম, শেখ মুজিবের তরে,
বীর বাঙ্গালী এগিয়ে চলাে পিচঢালা ঐ পথে ।
এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম,
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম ।

আরেকটা যুদ্ধ কর, সন্ত্রাস বন্ধ কর,
বীর বাঙ্গালী এক হয়ে, শপথ নেব নতুন করে।
আবার আমি মুক্তি চাই, যুদ্ধপরাধীর বিচার চাই,
দেশবাসী বলাে ভাই, মুক্তিসেনার কসম তাই ।
সালাম বরকত রফিক শফিকের আত্মা মুক্তি পাবে কবে,
সারাবিশ্বে একুশের বইমেলা হবে যবে।
এটাই হলাে নতুন শপথ।
এটাই হলাে আজ,
সবার আগে হবে এখন
এটাই আমার কাজ।


জহির রায়হান

আমি বিজয় দেখেছি
১৬ই ডিসেম্বর
পকি হানাদারেরা পালিয়েছে যখন
বিকাল চারটা তখন
আমার উল্লাস, বুক ফাটা আর্তনাদ
মা তুমি কেঁদো না
ঐ তােমার ছেলে মুক্তিযােদ্ধা
বিজয়ের মালা নিয়ে
এসেছে তােমার জন্য তুমি দেখাে মাগাে।
আমি বিজয় দেখেছি
২৫শে মার্চ কালাে রাতে
এম্বুস করেছে যখন
রাজারবাগ পুলিশ লাইনের পুলিশ
আর বীর বাঙালী,
আমি দেখছি জ্বলন্ত আগুনের লেলিহান শিখা
৩২ নং রােডের বাড়ীতে।
পাক হানাদারেরা করেছে নিধন,
বাঙালীকে যখন বুলেটের গুলিতে ।
আমি এখনাে দেখি
স্টপ জেনােসাইড রূপালী পর্দায়
যে ছবিগুলাে তুলে নিয়েছিল।
জহির রায়হান
আজ নেই, দেখে যেতে পারেনি
মুক্ত বাতাসে মায়ের বিজয়ের হাসি
সুচন্দার বুক খালি করে
কাপুরুষেরা, বিশ্বাস ঘাতকেরা
নিখোঁজ করেছে তারে ।
বৈশাখে ধুয়ে ওঠা শুভ্ৰসূচী সবুজ পাতা
ওরে নব প্রজন্ম ৭১ এর পরে
তােরা কেন থমকে গেলি
কোন লােভে কোন লালসায়
ভুলে গেলি সালাম, বরকত
রফিক শফিক জব্বার কে,
ওদের সালাম দিয়ে
পথ অনুসরণ কর রে কর
সব নিয়ে গেল আবার সেই বর্গীর দল
ছিনিয়ে নে তুই আবার ১৬ তারিখের বিজয়।


প্রত্যাশা

জীবনের সন্ধানে এগিয়ে যাওয়া
সুপুরুষ, সে নিজেই পারে একা,
পিছনের ফেলে আসা দিনগুলাে
অগ্নিপরীক্ষা ছিল, আজ সে মহান।
ঘুমন্ত শিশুর স্বপ্নগুলাে
ভেঙে যায় কেন আগতদিনের আহ্বানে
চিৎকারে আর্তনাদে ফেটে পড়ে
মাটিতে গড়াগড়ি, ছিল অগ্নিপরীক্ষা।
যুবকের পেশী বহুল মুষ্টিবদ্ধ হাত
মহান স্বাধীনতার বজ্ৰ শপথে
সমাজের গ্লানিগুলাে, ধুয়ে মুছে স্বেত শুভ্র
নতুন প্রজন্মের আগমন আগামির জন্য ।
সন্তানদের বলে দিতে চাই।
ভুলাে না তুমি সেদিনের কথা,
তােমার বাবা মুক্তিযুদ্ধে গিয়ে
       জয় করেছে সােনার বাঙলা।
জীবন সন্ধানে নিজেকে করে ক্ষয়
দেশকে কিছু দিও, বিন্দু বিন্দু রক্ত ফোটা
সব কিছু নিও না তুমি, একাই গড়ােনা সম্পদ
সমস্ত কিছুর অংশিদার আমিও,
তুমি উপলক্ষ মাত্র।


দিশেহারা

ক্লান্ত পথিকের চেহারাটা
বিবর্ণ আজ,
একমুঠো ভাত চায়,
পারি না আর, তাই মনে পড়ে
গফুরের কথা।
ব্রজেশ্বর ভুলে গেছে আজ
লুচির কথা,
ছেলেবেলাকার রবীঠাকুর
এখন কোথা পাই।

দরিরামপুরের রুটির দোকান
আজ যাদুঘরে,
একটি রুটির দামে
আমার সর্বস্ব চলে যায় ।

মুশুরির বদলে খেশারী খেয়ে
ল্যাথারিজম রােগে ভুগে,
কোন নেতা নাই আজ
কে দিবে নেতৃত্ব হায়।

কাজী নজরুল আজ
হাতছানি দিয়ে ডাকে,
আমার আমিকে বিসর্জন দিয়ে
নতুন প্রজন্মের তরে।
আঙুল কেটে কলম বানিয়ে
মজলুমের কথা গেছে যে লিখে,
নেতা শূন্য নতুন প্রজন্ম
তাকেই আজকে চায় ।


কে আমি

আমি সবার মাঝে
সবাইকে দেই ভালবাসা,
আমাকে যে ভৎসনা করে
তাকে বিমূখ করি না কখনাে।
কত কথা কত কাজ
কত বুদ্ধি তােমার,
মুহূর্তের ভালবাসায় বিভাের
কিন্তু, স্বার্থ দেখ তুমি সব সময় ।
তুমি আমার সমালােচনা করাে।
কখনাে করাে তিরস্কার,
ভয় পেলে পালাতে পার না
চাও খালি পুরস্কার।
তুমি চিনেছ আমায়?
আমি কে?
ভেবেছ কখনাে অমন করে
আমি যে তােমার এবং সবার।


প্রজন্ম ২০৭১

জীবনের পরাজয় জানিনাকো কখনাে
ক্লান্ত হইনি আমি, হইনিকো ক্ষ্যান্ত,
বিজয়ের পতাকা এনেছি ছিনিয়ে ১৯৭১ এ
দিয়ে গেলাম সবই, তােমাদের জন্যে।
রক্ত ঝরা মুক্তিযুদ্ধের কথা ভাবি
করুণার কথা ভেবে নয় তােমাদের জন্যে,
আমার আগামী প্রজন্ম ২০৭১ সালে
শত বছর পরে ভাববাে আমি অতীতের।
বাংলার প্রতি ঘর ভরে যাবে অন্নে
রােগ শােক জরা ব্যধি যাবে চলে শূন্যে
তুমি তখন বিজয়ের মালা নিয়ে আসবে
আসাদ মতিউর সালাম রফিক শফিক জব্বারের জন্যে।
রবে না কোন ভয়, রবে নাকো শংকা।
হবে নাকো সন্ত্রাস, হবে না ডংকা,
ফিরে পাবে শান্তি, সুখ আর উচ্ছ্বাস
২০৭১ এর স্বাধীনতা হবে শুধু জয়বাস

নূর মােহাম্মদ, মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর, মতিউর রহমান
আব্দুর রউফ, রুহুল আমিন, মােস্তফা কামাল, হামিদুর রহমান,
নবপ্রজন্মে উজ্জীবিত হবে আবার আগামীর জন্যে।
গাইবে গাইবেই তােমরা বাঙালীর জীবনের জয়গান সকলের জন্যে।


বিত্ত্বশালী বাঙালী

কি নেই আমার বাংলায়
বিত্তশালী বাঙালীরা আজ,
চালের বদলে ক্ষুদ খায়।
হায় হায় হায় ।
আমিতাে স্বাধীনতা এনেছি
একমুঠো ভাতের জন্য,
আমি তাে স্বাধীনতা এনেছি
ঔষধের জন্য,
তাই তাে গেয়েছিলাম
“জয় বাংলা বাংলার জয়
হবে হবে হবে নিশ্চয়”
আমার বাংলায় আছে।
গ্যাস, তেল, চুন আর নুন,
বিদেশীরা তাই ভেবেই খুন।
আমার বাঙালী আজ খায়।
চালের বদলে ক্ষুদ।
অশ্রু ঝরে, কি করুণ সুরে
আমাকে মেরে তারা গাড়ীতে চড়ে,
পাশে গিয়ে দাঁড়ালে বলে
সরে যা সর হবে পরে।
জীবনের জয়গান আজ স্নান
কি অন্যায় আমার তুমি মহান,
আমি উদবৃত্ত তােমার বাগানে
ছিড়ে ফেল আমায় ফেল জঞ্জালে।
অল্প কজন তােমরা কত ভারী
লক্ষ টাকা, সােনার গহনা
পাজেরাে গাড়ী
আমি তােমারই অংশ হয়ে বেঁচে আছি ।


সবাই পারে

আমিও পারি তুমিও পারাে
পারার মধ্যে ব্যবধান কত,
ভেবে ভেবে দেখি
তােমার পারা আর
আমার পারায় ব্যবধান কত।
করতে পারা আর না করতে পারা।
জ্বালা দেয় দেয় কত যন্ত্রণা,
পারলে ভালাে না পারলে কালাে।
দেয় অভিশাপ শত শত।
নিজের পারা নিজের করা
মনের তৃপ্তি যত।


শূন্য হৃদয়

মধ্যরাতে মনে পড়ে গেল
জোৎস্না মাখা রাতের কথা,
কলঙ্কহীন আছে কি বলাে
চাদেও তাে আছে তাহা।
মধুময় জীবন কাকে বলে
ভাবতে পারি না কেন আমি,
চেয়ে চেয়ে দেখি তােমাকে
ওগাে প্রিয় মাের সঙ্গীনি।
আমারও তাে কলঙ্ক আছে।
নিজে তাে বুঝি না আমি,
চেয়ে চেয়ে দেখি মনে আমি ভাবি
কেন যেন আমায় ডাকো তুমি।
এত রূপ আর এত গুণগান।
বিহনে কে ডাকে আমায়,
আমারই হৃদয় শূন্য আজি
দেখি গাে আমি শুধু তােমায়।


হংস মিথুন

অবয়ব দেখে চিনেছি তােমাকে
রাতের আঁধারে অমানিশা,
আমি দেখেছি আমার মাঝে
দর্পনে প্রাণ ভরে।
জীবনের জয়গান কে পারে গাইতে
আমি তাে পেরেও পারি না,
বাকরুদ্ধ হয়ে আসে ঠোট কেঁপে কেঁপে।
অবিশ্রান্ত আষাঢ়ের বারিধারায়
হংস মিথুন মেলে যে ডানা,
ময়ূর পেখম মেলে ছন্দে ছন্দে
কেন থেমে যায় তা হয়নি জানা।
গর্জনে মেঘ বিদ্যুতের চমকানি
ছেলেবেলাকার দিনগুলি তাই
থেমে থেমে মনে পড়ে যায়।
মন তাে মানে না চলে যেতে চায়।
তােমার হৃদয়ের মণিকোঠায়,
আমারই তাে জীবন আছে।
আমিও মানুষ তােমারই মতাে,
অতীতের কথা ভেবে ভেবে
ক্লান্ত হতে চাইনি আমি
দুর্দান্ত দূৰ্জেয় হয়ে, বেচে থাকতে চাই।


কারাগার

ভেঙে ফেল ঐ কারার প্রাচীর
কারাগারকে কর মুক্তাঙ্গন,
সবুজ চত্বরে ওড়াও নতুন কেতন
হােক সারাবিশ্ব একটাই অঙ্গন।
আমার আমিকে টর্চার করে
ওরা পাঁজর ভেঙে দেয় কেন,
মানবতার শত্রু তারা সারা দুনিয়ায়
তােমরা সবাই জেন ।
আমার গায়ে লাল সবুজের
তােমারও তাে গায়ে তাই,
তুমিও জান আমিও জানি
শেষ অবস্থা কেমন ভাই।
কারাগারের প্রাচীরগুলাে
লজ্জায় মরে, পারে না দাঁড়াতে
বিজয়ের বেশে মাথা উঁচু করে,
পারে না দাঁড়াতে মানুষগুলাে।
তুমিও মানুষ আমিও মানুষ
উর্দি পরা ভায়েরা আমার,
তােমারও ভাই আমারও ভাই
কথাটি সবাই স্মরণে রেখ।
আমিও পারতাম উর্দি পরতে
পরি নাই বলে ভেবাে না তুমি,
আমার জীবনে অমাবস্যা
তােমার জীবনে পূর্ণিমার চাঁদ।


বাংলা ভাষা

হারিয়ে যেতে চাই না
হাজার বছরের মধ্যে,
লক্ষকোটি বছরের জন্যে
তােমাদের মাঝে থাকতে চাই।
সমৃদ্ধশালী বাংলা ভাষা
টিকিয়ে রাখতে চাই,
পরবর্তী প্রজন্মের জন্য
এটাই হােক আমার অঙ্গিকার।
কবি নজরুলের কবিতা
পড়াে পড়াে রবীঠাকুরের কবিতা,
সুকান্তের কথা ভেবে দেখাে
দেশলাইয়ের ভেতরের কথা।
মধূসুদনের সনেট কবিতা
এনেছে প্রাণ বাংলার অঙ্গনে,
বিদেশী ভাষা দেয়নি তাকে
অমর অজেয় করে।
চাচার আদর হারিয়ে যাবে
আংকেল এসে কানটি ধরে,
আন্টির কাছে নিবে যখন
বুঝবে সেদিন বুঝবে।
হাজার বছরের বাংলা ভাষা
কোটি বছর থাকবে টিকে,
অন্য ভাষা এনাে না তুমি
বাংলা ভাষা হারিয়ে দিতে।
অনেক সাধের বাংলা আমার
অনেক রক্তের বিনিময়,
অনেক বােনের ইজ্জত আমার
অনেক মায়ের মুক্ত শপথ।
ভাইটি আমার হারিয়ে গেল
বাপটি হলাে পাগল
দোহাই লাগে তােমার কাছে।
বাংলা করে সচল।


আর একটা মুক্তি যুদ্ধ

আমার পতাকা খামচে ধরেছে
মাটিগুলাে আঁকরে রেখেছে।
ভাইকে আমার হত্যা করেছে।
বােনকে করেছে হরণ!
আমরা আজ তাদের দেখছি
তারাই তাে মনে হয় আমাদের জীবন।
মুক্ত বিহঙ্গের মতাে উড়ছে
আমি তাই দেখছি বিমূর্ত হয়ে,
দুই নয়ন মেলে, কাদছি করুণ সুরে
আমি এর অবসান চাই,
আমি ঐ বিহঙ্গকে স্তব্ধ করে দিতে চাই।
প্রথম দেখলাম প্রথম আলােয়
পরে দেখলাম টেলিভিশনে,
দেখলাম দেখলাম শুধুই দেখলাম
শতধিক আমার জীবনকে,
ও দৃশ্য দেখতে হলাে বলে।
লাথি মেরেছে আমার পিঠে,
সেদিন দেশ স্বাধীন করেছি বলে।
চোখ দিয়ে অশ্রু গড়ালাে
নির্বিকার হয়ে চেয়ে থাকা ছাড়া
আমার আর কি আছে বলাে?
এমনি করেই কি নিঃশ্বেস হবে?
মুক্তিযােদ্ধারা বলাে?
লজ্জা লজ্জা বাঙালীর লজ্জা
হতে পারে না কোনাে বসে থাকা,
নতুন করে কেতন ওড়া
ওরে বাঙালির দল।
সালাম বরকত রফিক শফিকের
শপথ নিয়ে শহীদ মিনারে চল,
স্মৃতিসৌধের শপথ নিয়ে
আর একটা মুক্তিযুদ্ধ কর ।


মেশিন গান

হামি তােমারই ছােল
হামাক দেমাগ দেখাও
তুমি হামাক রাখতে পার নাই
দোষ আমার তুমি কও।
কুটি যাচ্চি কি করিচ্চি
খোঁজ রাখে না কেউ
সুলটির মধ্যে বসে থাকিচ্ছিলাে
হামার বউ
এটি যাচ্চি ওটি যাচ্চি
জিজ্ঞাসা না করে সন্দেহ করে
কথা কয় না কেউ
আমি তােমারই ছােল।
২৫ তারিখের রাতে আমি
আ্যম্বুস করেছি রেল ঘুমটিতে
হাতে ছিল মেশিন গান
সাথে ছিল বউ।


এসাে বাংলাদেশ গড়ি
 (এসাে বাংলাদেশ গড়ি রােডশাে স্মরণে) 

এ দেশটাকে গড়বাে
দূনীতি, দুর্যোগ, রােগ-ব্যধি রুখবাে
আমরা সবাই আজ সােচ্চার,
অনিয়ম অনাচার যাক যাক মুছে যাক ।
উত্তর দক্ষিণ পূর্ব পশ্চিম
মােরা যেতে পারি সহজে,
গলা টিপে ধরবাে, অনিয়ম ভাঙবাে
নাই কোনাে ভয় আজ নাই কোনাে শংকা।
এতদিনে পারিনি আজকে পারবাে
ভয় কি জানি না সবকিছু দেখবাে,
দুর্নীতির বেড়াজালে আটকে গেছে যা
জালগুলাে ছিড়ে ফেলে হবাে মােরা মুক্ত।
লেখাপড়া করে মােরা অনেক বড় হবাে।
দেশের মাটিতেই বড় বড় শিল্প গড়বাে,
কি নেই এ দেশে, আমরা কি বুঝবাে
দারিদ্র মুক্ত বাংলাদেশ আমরাই গড়বাে।


নেলসন মেন্ডেলা

সংগ্রামী জনতা জেগেছে আজ।
নেলসন মেন্ডেলা মাথার তাজ,
সাতাশ বছর জেল খেটেছ তুমি
আমরা নতুন প্রজন্ম অবাক আজ।

স্বেতাঙ্গ আর কৃষ্ণাঙ্গ বিভেদ
ছিল যত আমেরিকার খেদ,
লৌহ মানব নেলসন মেন্ডেলা
আবিস্কার সারা বিশ্ব আফ্রিকার ।
ভাষার জন্য স্বাধীন যে দেশ
সেই দেশের নাম বাংলাদেশ
কালাে চামড়ার স্বাধীনতার দেশ
আফ্রিকা, আজ জয় জয়াকার। কা

লাে চামড়ার মুক্তি দূত
নেলসন মেন্ডেলা তুমি
নব্বইতম জন্মদিনে
এ কবিতা তােমার উপহার।
শেখ মুজিবের উত্তরসূরী
সারা বিশ্ব সত্যি অবাক,
নেলসন মেন্ডেলা তুমি
বজ্রধ্বনি আর একবার।


একুশের বইমেলা

আমি নতুন প্রজন্মের কাছে।
বলে যেতে চাই, শােন তােমরা
ভুলে যেও না তাঁদের
যাদের জন্যে এসেছ ধরায় ।
আনন্দ উল্লাস উদ্দীপনা
কারা এনেছে জান?
ইতিহাস পড় জানতে পারবে।
তারা কষ্ট করেছে কত।
বুকের রক্ত দেয়নি শুধু
দিয়েছে কত আত্ম বলিদান,
ভেবেছ কখনাে তাদের কথা
যারা দিয়েছে রক্তিম পতাকা।
অনেক নাম না জানা বুদ্ধিজীবিকে
ধরে নিয়ে গেছে রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে,
মুনির চৌধুরী, শহিদুল্লা কায়ছার, আর সিরাজুদ্দিনকে
রেহাই পায়নি আলতাফ মাহমুদ, বধ করেছে তাকে।
লজ্জা করে না তােমরা যারা
মজা খাচ্ছে বাংলাদেশের,
মাথায় হাত দিয়ে আদর করলাে
আর অমনি ভুলে গেলে অতীতকে।
নতুন প্রজন্মের সন্তান আমার
কখনাে ভুলাে না ঐ দিনগুলােকে,
একুশের বইমেলা থেকে
বই এনে দাও স্বাধীনতা যুদ্ধের ।


নারীর সম্মান

সাম্য আর সমতা এক নয় কখনাে,
তুমি যাহা পার আমিও তাহা পারি
তাহা হয় কি কখনাে?
পুরুষ যাহা পারে তাহাই কি পারে নারী।
আমি বিদ্রোহী, তুমি ছলনাময়ী
আমি আঘাত, তুমি ভালবাসা
আমি দুর্বার, তুমি স্নেহময়ী
এটাই মহান আল্লাহর বিধান ।
নবী (স.) বলেছেন,
স্রষ্ঠার পরে যদি সেজদা হ'তাে
বাবার আগে নারীই পেতাে,
পাবে মা যতবার সালাম
বাবা পাবে তার পরে।
এত সম্মান দিয়েছেন মহান
তবুও এত কষ্ট কেন?
স্রষ্ঠাকে মানে প্রশান্তি আসবে
তাজ হবে তুমি তাহা কি জানাে?
আমার আমিকে ভুলে গিয়ে
আমি কত কিছু ভাবি,
তােমায় আমি বড় শ্রদ্ধা করি
তুমিই আমার উৎস শক্তি।


হুঙ্কার

হুঙ্কার দিয়া ডাকছে কে দেখাে
আসিয়াছে বুঝি নজরুল ঐ
আর একজন নয় শত শত দেখাে
আসিতেছে কেবল।

নজরুল আজ নয়কো একা
আসছে সবার তরে
সবাই বুঝিয়াছে নজরুল ছাড়া
আর নিস্তার নাই তবে ।

জগতে আসে প্রতিটি মানুষ
আসে মাত্র একবার
কেন জানি নজরুল আসিছে।
আমাদের মাঝে বার বার শতবার।

দুখি মানুষের বন্ধু তুমি নজরুল
তুমি বিদ্রোহী কবি, প্রেমের কবি
দাও বার বার রণ হুঙ্কার
তােমার হুঙ্কারে প্রাণ ফিরে পাই বার বার
হাজার বার।


কবিতা

তুমি হিংসা করাে, পারাে না বলে
ধিক ধিক শত ধিক,
হিংসা ছেড়ে পথ চলাে তাহলে।
দেখবে স্বপ্নের চূড়া সবাই বলে।
কবিতা প্রেমের কথা বলে।
বলে জীবনের কথা,
জীবন সাজিয়ে চলার পথে।
কবিতাই হয় সফল সমাজে।
মনের তৃপ্তি তােমার বাসনা
পূরণ একদিন হতেই হবে,
লেখাে যদি কবিতা আর
গােলাপ দাও সকলের তরে।
পূর্ণতা আসবে জীবনের তরে
পারবে দিতে জাতী ও সমাজকে,
তােমার মেধার পরিচয়
কবিতা, গল্প ও গানে উঠবে ফুটে।


রক্ত নহর
 (১৯৭১ সালের ২৮শে মার্চে হানাদারদের কবলে স্মরণে)

স্মৃতির জানালাগুলাে খুলে দাও
রুদ্ধ দ্বার ভেঙে ফেল লাথি মেরে,
ওরা শিকল পরায় কেন, ভয়ে?
তালার চাবিটা কেড়ে নাও তবে।
মুখে রুমাল বেধে ওরা এসেছিল
সাথে ছিল দুই হানাদার,
এসএলআর বুকে ধরে বলেছিল
ডর নেহি, যা লেট যাও।
কানের কাছে ফুস ফুস করে
কি বলে ছিল জানি না তবে,
লাথি মেরে দরজা ভেঙে খুঁজছিল।
না পেয়ে চলে গেল সামনের বাড়িতে।
গুড়ুম গুডুম শব্দে জেগে গেল সবে
ভােরবেলা দেখা গেল রক্তের নহরে,
বিজয়ের হাসি নিয়ে শুয়ে আছে।
আমার যুবক তিনটি ছেলে ।


আমার বাবা

বাবা তুমি চলে গেলে আমায় না বলে
তােমার মাথা আমার বুকে,
সাতটি রাত আমি ঘুমিয়েছি তােমাকে নিয়ে
তুমি আমায় এনেছ ধরণীর মাঝে,
তুমিই আমার একমাত্র অহঙ্কার।
মায়ের কাছে শুনেছি তােমার কৃর্তি
আমার সুখের জন্যে তুমি ছিলে
মূর্তিমান এক সৈনিক
আমার অহঙ্কারে তুমি উদ্বেলিত
মায়ের হাসি তােমার প্রাণ জুড়িয়েছে।
আমাকে বিছানায় রেখে
আহাদে আটখানা তুমি খুশিতে অট্টহাসি,
আমি কি পেরেছি দিতে তােমায়
কেবল ভাবি আর ভাবি চোখের অশ্রু ফেলে
অতীতে ফিরে যেতে হয় এমন সবাইকে।
মায়ের পাশে তুমি ছিলে তাঁর অহঙ্কার
বুক ভরা আনন্দে মা ছিল তােমার উল্লাস,
তুমি মহান করেছ আমায়
মায়ের সাথে তােমার প্রাপ্য অতুলনীয়
বাবা তুমি অম্লান চির-শ্বাশত আমার সম্মান।
মা আজ একা বড় একী।
তােমার অতীতের ভালবাসা স্মৃতি
একা একা ভাবে, দেয় না ভাবতে আমাকে
আমার আগামীর সুখের কথা ভেবে
বলে আমি ভাল আছি, খােকা থাক তুমি সুখে।
মায়ের ন্যুজ দেহখানি আমায় ভাবিয়ে তােলে
এত কষ্ট সইতে পারে, মা তাে কষ্ট বােঝে না।
দুঃখের মাঝে সুখ আসবে বলে,
এক বুক ভালবাসা নিয়ে গভীর থেকে গভীরে
সমুদ্র যাত্রা বাবাকে নিয়ে মায়ের ।


অস্থির ভাবনা

রাতের স্তব্ধতা আমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকে
কালাে আকাশে জোনাকীর মতাে নক্ষত্রগুলো প্
রাণ ফিরে পায় রাতের স্তব্ধতা,
খিলখিল করে হাসে আর মিটমিট করে তাকায়
ওর ভালবাসা স্নেহ ভরা চোখে মায়াবি লুকায়।
আমি কাছে গেলে কেন হারিয়ে যায়
তবুও মরিচিকা হয়ে আমার প্রাণে প্রাণ পায়।
চাঁদের সাথে লুকোচুরি খেলা ওলটপালট করে দেয়
মাথায় হাত বুলিয়ে একা একা ভাবি
আমি কার, কাকে দেব আমার ভালবাসা স্নেহ মমতা।
এমনি সময় এলােমেলাে বাতাসের ঢেউ
আবার ওলটপালট করে দেয় আমার সাজানাে চিন্তাগুলাে।
রাতের প্রাণিগুলাে চোখের সামনে ঘুরে অথচ,
কিছুই বলে না কেবল একটু আদর পেতে চায় ।
এমন সময় আকাশে উড়ে যায় একটি পেঁচা
বাদুরগুলাে দোল খায় লিচু গাছে,
আমি ভাবি পৃথিবীর সমস্ত আনন্দগুলাে কি শুধু তার
গগনে ঢেউ ওঠে নদীর পানিতে জোয়ার আসে
আবার আসে ভাটা, চলে যায় অনেক দূর
এ দৃশ্যগুলাে ভাবিয়ে তােলার জটিল বিষয়
অথচ অনেক সময় পেয়েছি ভাববার
মাথায় হাত বুলিয়ে সােহাগের সুরে বলেছিল
এত ভাবনার সময় কোথায় প্রাণের অস্তিত্ব খোজার,
আমার আগামী শিশুটি শুভ্র শিশির ভেজা ঘাসে
ঘুমিয়ে পড়েছে কখন চাদের আলাে দেখতে দেখতে
আমি বিমূর্ত প্রতীক হয়ে আসব, নতুন হবে পুরাতন
ভাবনাগুলাে খান খান হয়ে যাবে সবার। 


পরমাণু

আমার ভাবতে ভালাে লাগে।
বর্তমান পরমাণুর যুগে নতুন কল্পনা,
গ্রাস করতে চায় সারাবিশ্ব
অথৈ সাগরে একটিও বয়া নাই ।
প্রাণের ছোঁয়ায় নতুন প্রজন্ম
সংকটের বেড়াজালে মুক্ত হতে চায়,
কল্পনাপ্রসূত জীবন নিয়ে
বিকলাঙ্গ এক প্রতিবন্ধি।
ভাবের আবেগে মুক্ত মনে
দু হাত বাড়াতে চায় প্রাণ খুলে,
হৃদপিণ্ডের সংকোচন প্রসারণে
উষ্ণ রক্ত সঞ্চালনে প্রতিবন্ধক।
লােহিত কণিকা স্বেত হয়ে যায়
ফ্যাকাসে শরীর মনে হয় জণ্ডিস
তবুও পরমাণুর কথা ভেবে
আতঙ্কিত মনে আগামীর স্বপ্ন।
আমি এই সুন্দর ভূবনে
রেখে যেতে চাই স্বপ্নীল জীবন
মুক্ত বাতাসে ক্লান্তি দূর করে
কেবল ভাবি পরমাণুই আমার জীবন।


শোক আমার অহংকার

আমার ভাবনার মহান বিজয়গুলাে
এক এক করে যদি গাঁথি মালা,
সে তাে অম্লান, ছিড়বে না কোনাে
বাঙালীর বাংলা ভাষার আত্মঅহংকার।
বৰ্গীরা ভেবেছিল শুধু তাদের কথা
শূন্য করতে চেয়েছিল আমার বাংলা,
পেরেছে কি তারা তাদের মতাে করে
আমার অহংকার ভেঙ্গে চুরমার করে দিতে।

আমার নেতাকে বন্দি করেছে
গােপনে বিচার করে ফাসি দিতে চেয়েছে,
হাসি মুখে বলেছে নেতা, আমি কি একা,
আমার পূর্বসূরী তােমার আশেপাশে।
বিজয় আসবে জয় হবে বাঙালীর
কেউ কি পারবে দাবিয়ে রাখতে,
রক্ত যখন দিয়েছে বাঙালী
আরাে রক্ত দিবে, মুক্ত তারা হবেই হবে।

সাড়ে সাত কোটি বাঙালীর সাথে
বেঈমানী করবে না, সে করেনি কখনাে,
বজ্রকণ্ঠে আওয়াজ তুলেছে সেই নেতা
জাতী আজ কাদছে আর কাঁদছে।
অবাক বাঙালী, বিস্ময় নতুন প্রজন্ম
তেত্রিশ বছর পরে গর্জে উঠেছে,
সত্যের জয় আবার হয়েছে বাংলায়
জাতীয় শােক দিবস ১৫ই আগস্টে ।
ওরা কারা, যারা হত্যা করেছে আমার নেতাকে
তারও তাে ছিল মুখের ভাষা বাংলা,
সেও তাে বাংলায় কথা বলতাে।
আমার মাঝেই তাহলে লুকিয়ে ছিল বিশ্বাসঘাতকতা।
বঙ্গবন্ধু তুমি সারা বিশ্বের বিস্ময়,
বিশ্বের অহংকার আর আশির্বাদ।
শােধ করেছাে তুমি রক্তের ঋণ
বাঙালীদের তুমিই তােমার অহংকার।


কালাে রাত '৭১
 
একাত্তরের পঁচিশে মার্চ কালাে রাতে
পাকহানাদারদের হত্যাযজ্ঞে
পালিয়েছিল বাবা মা, ভাই বােন
হাত ফসকে ভাইটি আমার হারিয়ে গেল ।
বােনটি হলাে দিশেহারা
মায়ের আর্তনাদে বাবা অজ্ঞান
হানাদারেরা লুণ্ঠন করলাে আমার মাকে
বাবার বুক গুলিতে ক্ষতবিক্ষত ।
অম্লান সেই দিনগুলাে
আমি কি কখনাে ভুলতে পারি,
হারিয়ে যাওয়া ভাইটি আমার
হয়েছিল মুক্তিসেনা।
বােনটি আমার সেবিকা হয়েছে।
হাজার মুক্তিযােদ্ধার ।
বােনের হাতে ছিল থ্রিনটথ্রি রাইফেল
ভাইয়ের কাঁধে ছিল তখন এমআর।
ষােড়ষী বােনের হাতের চুড়ি
কিশাের ভাইয়ের পায়ের জুতাে
আগলে রেখেছে মা যে কতাে
স্বাধীনতার পরে ভাইটি আর আসেনি ফিরে।
বােনটি আমার কেন জানি
ডুকরে ডুকরে কাঁদে
বলে না কিছু বােনটি আমার
অগোচরে গামছা গলায় আত্মহত্যা করে।
মা এখন ভাবে শুধু কোথায় গেল ছেলে
আর তাে সে এলাে না ফিরে মায়ের
কোলের তরে,
বাবার স্মৃতি মায়ের কাছে বর হয়ে থাকে
একা একা রাতের বেলা চোখটি খালি মােছে।


শিহরণ

শিহরিত এখনাে আমি
আমার প্রবল অনুভূতির শিহরণে,
থেকে থেকে কেন ভাবি তােমাকে
একমুখ হাসি নিয়ে এগিয়ে আসা
এক পলকে।
আমার বিন্দু কণা বিন্দু বিন্দু ঘাম
ললাটে হিমায়িত শিশির,
মাথার উপর হাত বুলানাে বুনাে চুলগুলাে।
বেশি করে ভাবিয়ে তােলে
তােমার অকুতােভয় কবিতার ভালবাসা।
নজরুলের বল বীর চির উন্নত মম শির’
সত্যি তুমি মহান করেছ আমায়
তােমার সংস্পর্শে আমি বিমূঢ়
মনে হয় বারে বারে আমি
ফিরে যাই সেই গানে
হিমায়িত শিশিরের গগণ ললাটে
আমি উন্মাদ আমার অট্টহাসি
বিশ্বের বিস্ময় সৃষ্টি রহস্য।
আবার আসবে তুমি আমার কাছে
হৃদয়ের মণিকোঠায় লুকায়িত
কেউ জানবে না মুখের হাসির
বিদ্রোহী রূপ এগিয়ে আসা তােমার
চীর জাগ্রত করে রাখবাে এই দিনটিকে।


সিয়াম সাধনা

বার্তা এনেছে সিয়াম সাধনার
সন্ধ্যায় এক ফালি চিকন চাঁদ,
শুভ কামনা মুসলিম জাহানের
মুমিন মুমিনাত করবে সিয়াম।
দুঃখিজনেরা পাবে ইফতার
জঠর জ্বালা মিটবে তবে,
এই তাে আল্লাহর বিধান।

দুঃখি মানুষেরা কেমনে থাকে
কি খায় রাতে দিনে,
কেন মানুষেরা উপােস থাকে
এই সিয়াম সাধনার মাসে।
কোরআনের বাণী যদি আমরা মানি
যাকাত দাও তবে,
যাকাত দিলে ফুরাবে না ধন।
বাড়বে দ্বিগুণ হারে।

আমিরুল মুমেনিন
রাষ্ট্রনায়ক হয়েছ তুমি,
এতিম শিশুটি ঘুমিয়ে পড়েছে
খায়নি কত দিন রাতে।
ঈদের দিনে সকাল বেলা
ঈদের নামাজের আগে,
ফিৎরা দিলে এক টাকা দু' টাকা
কি হবে বলাে ঐ দিন ঈদের সকালে ।
ফিরনি পায়েস খেয়ে তুমি
কোলাকুলি করাে সবে,
বন্ধু আর আত্মীয় স্বজনের
বাসায় বাসায় গিয়ে।
বিনিদ্র রজনীর হতদরিদ্র
যে গিয়েছে তােমার দ্বারে
খেতে দিয়ে মাফ চাইলে
সিয়াম কি তােমার হবে।


রাজনীতি

এমন যদি হতাে মুড়ির মােয়ার মতাে
রাজনীতিটা খেতাম আমি চা দিয়ে কত,
নেতারা বলে এমন যদি হােত
চলতে যদি সবাই আজ আমার কথা মতাে।

শুরু আছে শেষ নাই এটা আমি বুঝি ভাই
তুমি বােঝাবে কতাে ছােট ছেলেটার মতাে,
রাজনীতিটা হতাে যদি বাদাম চানাচুর।
নেতারা কথার যুক্তি দেয় নিজের সুবিধা মতাে।

নেতার কথা আমি বলি আমার মতাে করে।
রাজনীতিটা সহজ করে দিবে কেমন করে,
স্বার্থ আমার যেখানে আমি আছি সেখানে
যুক্তি দিয়ে কথা বলি মুক্তি নাই সেখানে।

আজকে আছি কালকে নাই এই কথা কি বােঝে
রাজনীতিটা কতাে সােজা ভেবাে না তুমি অতাে,
জীবন যদি চলেও যায় ভয় কি তাতে বলাে
জেলখানাতে চলে গেলে বলে আমি জানিনা তাে।

এখানেই আমার কথা সহজ জেনাে কতাে
কথাগুলাে ছিলাে না আমার নির্দেশ ছিল যতাে,
আগামীতে থাকবাে আমি সাধারণের মতাে
মুক্ত বাতাস খেতে চাই অঙ্গীকার করছি শত।


সন্ত্রাস দমন

কোন ধর্ম তাে বলে না এমন
নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ,
আবাল বৃদ্ধা বনিতা সকল
কি হবে তাদের বাঁচবে যখন।
ধর্মের নামে নেশায় উন্মত্ত
পাগলের মতাে ছুটছে যারা,
তারা ভেবেছে কি কখনাে
হয়না তাে এমন কথা।
সন্ত্রাস বন্ধ হবে কেমনে।
ভেবেছে কি কেউ এমনে
সারা বিশ্বে বন্ধ করে দাও
অস্ত্র বানানাের কারখানাগুলাে।
কোথায় পাবে অস্ত্র তারা।
থাকবে না কিছু তখন জেনাে,
প্রতিটি সিমান্তে থাকবে।
সিমান্ত রক্ষীরা কেবল যেন।
পাথর আর গুলাল নিয়ে
বাঁশের লাঠি হবে যে যন্ত্র,
বর্ষা ঢাল থাকবে জেনাে
মরবে না নিরিহ মানুষগুলাে।
থাকবে না আর সন্ত্রাস কোনাে।
আগামী বিশ্বের হবে দেখাে,
মুক্ত নির্মল সুচিশুভ্র সকালগুলাে
প্রকৃতির সাথে থাকবাে যেনাে।


রাজধানী ঢাকা
 
কত যে নাম কত যে কথা
জাহাঙ্গীরনগর থেকে শুরু,
ঢাকের আওয়াজ দিয়ে হলাে ঢাকা
আমার প্রিয় আবাসভূমি।
বুড়িগঙ্গার তীরে অবস্থিত
করেছে ঢাকাকে মহিমান্বিত,
ঢাকাই মসলিন ছিল বিখ্যাত
আহসানউল্লাহ মঞ্জিল সমুন্নত।
লালবাগের কেল্লা আর।
লােকগাঁথা সােনারগাঁ,
আমার প্রাণে উচ্ছ্বাস আনে।
চারশত বছরের উজ্জাপনে।
সায়েস্তাখার সুসাশনে
গােলার ধান, পুকুরের মাছ,
গােয়ালের গরু, এই তিনে
সেদিনের সুখ এখনাে প্রাণে।
আমার টাকা আমার অহংকার।
বাংলাদেশের গর্ব আমার,
সারা বাংলার আপামর জনতার
তীর্থভূমি এই হােক জয় জয়াকার।


বর্ষপূর্তি

আমার কণ্ঠে কবিতার প্রতিধ্বনি
কবিতা কণ্ঠের অমিয়বাণী,
আমায় একজন নজরুল দিয়েছে।
আমায় নতুন জীবনে সিক্ত করেছে।
কণ্ঠের অমিয় ছন্দের ডাক
আমার কান্তি দূর করেছে,
নতুন করে আগামীর স্বপ্ন দেখিয়েছে।
বর্ষপূর্তীতে আমার হৃদয় আন্দোলিত।
কোকিল কণ্ঠের সুমধুর রবে
কবিতাকণ্ঠ সুর দিয়েছে,
সুরের মূচ্ছনা, ঝংকার দিয়ে সাড়া জাগিয়েছে
প্রতিনিয়ত আসছে ধেয়ে আমার সােনার ছেলে।
আমার সােনার মেয়েরাও বা কম কিসে
ক্লান্তি দূর করে অমাবস্যায় জোৎস্নার আলাে,
বেগম রােকেয়ার অহংকার নিয়ে
কবি সুফিয়া কামাল এসেছিল তবে।
আরাে অপেক্ষা আমার আগামীতে
সবার কণ্ঠে উচ্চারিত কবিতাগুলাে,
হৃদয় উজাড় করে দেয়া প্রেম ভালবাসা
কবিতাকণ্ঠ এটা তােমারই সম্মান।


হত্যাযজ্ঞ

 ১৯৭১ সালে ১৪ই ডিসেম্বর,
আমার বুদ্ধিজীবিদের হত্যা করেছে
যারা রাতের আধারে নিঃসংশভাবে,
১৬ই ডিসেম্বর বিজয়ের পরে সকালে
দেখেছে বাঙালী প্রত্যক্ষ সাক্ষী সকলে।
১৭ই ডিসেম্বর '৭১
সলিমুল্লাহ হলের সামনে রিক্সায়
ছিল দুটি লাশ একের উপর আরেক
আমি অবাক! এভাবে তারা হত্যা করলাে
সাংবাদিক, সাহিত্যিক, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারদের।
১৭ই ডিসেম্বর '৭১
রাজারবাগ পুলিশ লাইনে বন্দি পাকসেনা
বাঙালীদের দেখলেই বলে ডাণ্ডি কাঁহা দেনা,
দালালেরা গেল কোথায় খুঁজে কেন পাই না
বেশ পাল্টিয়ে হয়েছে পরে দু নম্বর মুক্তিসেনা।
২০০৮ সালে
সেই হায়েনা যুদ্ধাপরাধীর দল।
কোনাে অনুতাপ অনুভূতি নেই ,
তােরা পতাকা ওড়ায় কেমন করে বল
এসেছে সময় বিচার করার যুদ্ধাপরাধীর সকল।


বিজয় বাংলা

বিজয়ের পথে শুনিয়াছি আমি
জীবনের জয়গান,
পূনর্দখল নিতে চায় ঐ হায়েনারা
করতে চায় পাকস্থান।
লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা
খামচে ধরেছে যারা,
আমার পতাকা কেড়ে নিতে চায়
ওরে জলদি ওদের তাড়া।
হায়েনা ওরা নরপশু নরাধম ওরা।
আমার শিশুকে বধ করেছে তাড়া ওদের তাড়া,
মগজ ধােলায়ের নব কৌশলে।
আমার বাংলা ভাষা কেড়ে নিতে চায় ওরা।
আমার বিজয় আমি দেখেছি বেশ
বুঝবি কেমনে তােরা হায়েনারা,
সােনার বাংলা জয় করেছি হাতে মাের পতাকা
জীবন দিয়ে রাখবাে মােদের বাংলাদেশ।


শ্রাবণী

আকাশে মেঘমালা ভেসে বেড়ায়
মনটা চায় আমার ছেলেবেলাকার,
অনুভূতিগুলাে এক করে আমিও যাই
আর যাওয়া হলাে না অমন করে।
রাশি রাশি বারিধারা আসবে কবে
শ্রাবণের আগমনের আশায় আমি,
রাজহাঁসগুলাে ডানা শুকায় রােদে
একটু বৃষ্টির আশায় শুকনাে পুকুরে।
গরুগুলাে ঘাস খায় তৃপ্তি করে
রাখাল বাঁশি বাজায় মনের আনন্দে,
আটপৌড়ে শাড়ী পরে গাছের আড়ালে
লাজ নয়নে শ্রাবণের অপেক্ষায়।
আজ সেদিনের স্মৃতি পড়ে মনে
এসেছিল শ্রাবণ, এসেছিল বৃষ্টি মুষলধারে,
গরুগুলাে গেল গােয়ালে, হাঁস এলাে পুকুরে
দুই নয়নে চেয়ে থেকেছি আমি নীরবে ।


আত্মাহুতি
(খুলনা পাটকল শ্রমিকদের জন্যে উৎসর্গ)

গায়ে আগুন দিয়ে আত্মাহুতি দিতে চায় কেন
জলদি বল ওরে হতচ্ছাড়া জলদি বল তােরা,
জান দিয়েছি মান দিয়েছি, ধন দিয়েছি মােরা
তবু তােরা ভাত দিলি না ওরে হতচ্ছাড়া।
আমরা কেবল মােটা কাপড় মােটা ভাত
সব সময় হই তাতেই কাৎ,
তােরা কিসের নেশায় দিস না বেতন
জীবন মােদের যায় যদি যাক তােরাই বাঁচ।
আমরা কি পাপ করেছি ওরে ভগবান
মুখের গ্রাস কেড়ে নিয়ে তারাই ভাগ্যবান,
জঠর জ্বালায় মরলে মােরা যায় কি তােদের বল
ওরে হতচ্ছাড়া ভাত নয়তাে বেতন কবে দিবি বল।
আমরা আজ পথের কুকুর পথেই থাকি সকল
তােরা মানুষ আমরা পশু বড়ই দুর্বল,
ছেলেমেয়ে গলা জড়িয়ে কাঁদে কেন বল
ওরে হতচ্ছাড়া মােদের বেতন কবে দিবি বল।


বর্ণমালা

মাটির কলস পাথরে রেখে পাথর গিয়েছে ক্ষয়ে
আবাল বৃদ্ধা বনিতা সবাই এসাে পাঠশালাতে,
আমার দেশের সম্পদ দেব না আমি লুটতে
শিক্ষা নিয়ে দেখবাে আমি কে পারে তা কেড়ে নিতে।
লজ্জা কিসের এসাে হে ভাই ভর্তি হই ইস্কুলেতে
আমার সন্তান বুঝবে তখন বাবা ছিল বিলেতে,
স্বাক্ষরতায় কি হবে ভাই নাই যদি থাকে বিদ্যে
বুড়াে জোয়ান সবাই এসাে হয়ে যাই মােরা সিদ্ধে।
নবরত্নের একরত্ন হয়ে যদি পারি কিছু দিতে
আমার চেতনায় বুঝবাে আমি দিলাম কিছু দেশকে,
বর্গিরা যাবে ফিরে আমার এ দেশ থেকে
দেখবে তােমরা সবাই তখন কত আনন্দ খুশী করে।
এসাে হে ভাইবােন আবাল বৃদ্ধা বনিতা সবাই
বাংলা ইংরেজি বর্ণমালার বইখানি হাতে নিয়ে,
একসাথে মােরা আনন্দ উল্লাসে হেসে গেয়ে
নিজের দেশের পাঠশালাতে গিয়ে শিক্ষা নিব তবে।


বাঁশ বাগান

অট্টালিকার ছাদের কোণে চাঁদ উঠেছে
বাঁশ বাগানের চিহ্নটুকু মুছে ফেলে,
আমার কাজলা দিদি মারা গিয়ে
গ্রাম বাংলার ছড়াগুলাে হারিয়ে গেল ।
আমার শিশু আজ চাঁদ দেখে না
বিরক্ত বােধ করে উঠানে দাঁড়িয়ে থাকতে,
উঠান তাে নেই ছয়শাে বর্গফুট ছাদ
ওটাই ওর আনন্দ উল্লাস দৌড়ে বেড়ানাে।
ধানী জমিগুলাে বিক্রি করে দিয়ে
বাঁশ বাগানগুলাে কেটে ফেলে,
নামমূল্যে জমিগুলাে বিক্রি করে
বাবা সন্তানের মুখের অন্ন জোগাড় করে।
জোৎস্না মাখা রাতের আধাে আলাে রাত
ভালাে লাগে না ছেলের বেজায় রাগ,
ছাদ থেকে নিচে নেমে আসে ঘরে
কম্পিউটারে নতুন সিডি থ্রিডি গেম খেলে।


চলন চিল

সমুদ্র নয় নদীও নয় নাম তার চলন বিল
মহান আল্লাহর অপার মহিমায়,
কখনা মাছ কখনাে ধান অথবা
সর্ষে, ভূট্টা, গম অন্য কোনাে ফসলে ভরপুর।
গ্রীস্মের ভরা দুপুরে রাখাল বাজায় বাঁশী
কাছে কিম্বা দূরে কখনাে আরাে অনেক দূরে,
মটর কলাই বা অন্য কিছু খায় গরুগুলাে
হয়ে যায চারণভূমি গ্রাম বাংলার প্রতিচ্ছবি।
মাছে ভাতে বাঙালীর মিঠাপানির মাছ বর্ষায়
ষােল, টাকি, পােনা অথবা মলা ঢেলা টেংরা,
মানুষের পুষ্টির কত আয়ােজন মহান আল্লাহতালার
আমরা কেন দুশ্চিন্তা করি খাবার পাবার ।
শরতের শুরুতে রবি শস্য নয়নাভিরাম দৃশ্য
মৌমাছির আনাগােনা হলুদ ফুলে অপরূপ,
মহিমান্বিত বাংলার এই খাদ্য ভাণ্ডার
সকল জীবের অপরূপ সুরক্ষিত রিজিক ভাণ্ডার।
ভেবে অস্থির খাদ্য নাই, অপুষ্টিতে ভুগছে সবাই
কি হবে আগামী প্রজন্মের কেন আতংক তােমার,
মহান আল্লাহর অশেষ দান সৃষ্টির জীবগুলাের জন্যে
তবুও কেন মিছে ভাবনা আমার হে পরােয়ারদিগার।


আত্মসমালােচনা

কি আছে আমার তা বড় কথা নয়,
মানুষকে ভালবাসতে পেরেছি কিনা।
আমি কেমন তা বড় কথা নয়,
সৃষ্টির মান-মর্যাদার মূল্য দিতে পেরেছি কিনা।
আমি কোন ধর্মের তা বড় কথা নয়,
ধর্মকে শ্রদ্ধায় আনতে পেরেছি কিনা।
খেয়েছি কিনা তা বড় কথা নয়,
জীবকে একবেলা খেতে দিয়েছি কিনা।
মাের স্বাস্থ্য কেমন তা বড় কথা নয়,
মানুষের পাশে দাঁড়াতে পেরেছি কিনা।
পানি আছে কিনা তা বড় কথা নয়,
তৃষ্ণার্তের তৃষ্ণা মেটাতে পেরেছি কিনা।
অর্থ সম্পদ নেই তা বড় কথা নয়,
কর্মসংস্থানের সুযােগ করেছি কিনা।
আমার শিক্ষা বেশি নেই তা বড় কথা নয়,
শিক্ষার জন্যে কাজ করতে পেরেছি কিনা
সময় এসেছে আত্ম-সমালােচনার,
আমি সংশােধন হতে চাই আজ।
আমাকে সুযােগ দিবে কি সমাজ,
কারাে কাছ থেকে ভালবাসা পাওয়ার।


আনন্দ অশ্রু

মেশিন অথবা রােদ্রের খর তাপে দেহ পুড়ে ছাই
তবুও ভাল লাগে আমরা কৃষক শ্রমিক,
সুশিল সমাজের বেঁচে থাকার জন্য
গ্রাম বাংলার ক্ষেতে খামারে ফসল ফলাই।
গােল টেবিল বৈঠকে যখন
আলােচনা হয় কতাে, কতাে কথা,
দারিদ্র্য বিমােচনে কতাে প্রকল্প
বচনভঙ্গিতে কতাে খৈ ফোটে।

কথার ভাজে ভাজে মিনারেল ওয়াটার
এ-ফোর সাইজের অফসেট কাগজে,
মিটিং মাইনুটস লেখা কম্পিউটারের
সাজানাে বর্ণমালা রঙিন ছাপায়।
আমিতাে সেই বৃষ্টিতে ভেজা রােদে শুকানাে
আটষট্টি হাজার গ্রামের একজন,
বর্ণমালাহীন পরিচয়হীন কৃষক কুশিল কুলিন
সাজানাে কথা নেই আঞ্চলিক ভাষা।

তবুও আমি চাই আমার সন্তানেরা।
এয়ারকন্ডিশনে বসে কিছু করুক,
এদেশকে কিছু দিক মুক্তচিন্তা
কৃষকেরা শ্রমিকেরা বর্ণমালা শিখুক।
পূর্ণ হােক আমার বাসনা কামনা
চোখের অশ্রু আনন্দের, হতাশার নয়,
মুক্তির সােপান গ্রাম বাংলার ক্ষেতে খামারে
আমাদের প্রাণের সােনার ধানে।


বর্ণবাদের পরাজয়
 
শত শতাব্দি ধরে চলে আসা
বর্ণবাদী গােষ্ঠীদের নিষ্ঠুর জ্বালা,
আমি দি রুটস দেখেছি
শিউরে উঠেছে শরীর
অমানবিক অত্যাচারে।
ইথিওপিয়ার ইদি আমিন
সাউথ আফ্রিকার নেলসন মেন্ডেলা
যৌবন শেষ করেছে যে,
সাতাশ বছর কারাগারে
অন্ধকার থেকে আজ আলাের পথে।
নিঃশেষ হয়েছে বর্ণবাদ
শংকামুক্ত হয়ে তবুও কি থাকা যায়,
গণতন্ত্রের বিজয়ে প্রমাণিত,
আমেরিকার নির্বাচনে
বিজয় হয়েছে মহান মানবতার।
ওবামার বিজয়ের গুণে
একদিন হবে এমন সুন্দর সকাল,
সাদাকালাে চামড়ার ব্যবধান
কিছুই থাকবে না থাকবে
কেবল প্রবাহিত লাল রক্ত ধারা।


প্রাপ্তি

প্রত্যাশার চেয়ে হয় যদি কিছু বেশি
আমি সেই কামনায় ছিলাম না কখনােই,
এসেছে যা কিছু বরণ করেছি তাকে
সে কখনােই যায়নি ছেড়ে আমাকে।

আমি ভাবিনি কখনাে আমার জীবনে
যা এসেছে মনের অজান্তে সেটিই ছিল ভালাে,
এ কথাই ভেবেছি সারাক্ষণ একান্ত ভাবনায়
আমি তাে হেরে যাইনি জীবনে কখনাে।

হটাৎ তাকিয়ে দেখেছি আমি আমার বিজয়ের হাসি
ভাবিনি অমন করে কখনাে হাসবাে আমি,
কেঁদেছি কখনাে একা একা নীরবে নিভৃতে
আবার অট্টহাসিতে বিভাের ছিলাম অমনি করে।

হাসি কান্নার ব্যবধানে গণিতের সমাধানে
বিচার বিশ্লেষনে যােগ বিয়ােগ গুণ ভাগে,
প্রাপ্তি ছিল বেশি প্রত্যাশার চেয়ে অনেক
দেনা পাওনার হিসাব নিকাশ ছিল বেমানান।

চাই

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.