Header Ads

মাসিক ‘কবিতাকণ্ঠ’ (জুলাই-২০২০ সংখ্যা)

কবিতাকণ্ঠ

জুলাই-২০২০,  সংখ্যা-৫১, বর্ষ-১৩

 

পরিচালনা পর্ষদ

 

সম্পাদক :

এম, আব্দুল্লাহ আল মামুন

 

নির্বাহী সম্পাদক:

কবির পথিক

 

উপদেষ্টা সম্পাদক: 

কাজী হানিফ (সিনি: ইন্সটাক্টর, টিটিসি)

 

প্রচ্ছদ:

এম, আব্দুল্লাহ আল মামুন।

 

আর  একজন   নজরুল   চাই

 --------------------------------------------------------

 

সম্পাদকীয়

                মাসিককবিতাকণ্ঠ ২০০৮ সালের ১লা জানুয়ারী প্রথম প্রকাশ হয়। হাটি হাটি পা পা করে দীর্ঘ বছর অর্থাৎ ৫০ টি সংখ্যা নিয়মিত বের হয়। তারপর বিভিন্ন জটিলতার কারণে আর প্রকাশ করা হয়নি ১০ হাজার কবি পরিবারের এই পত্রিকা। এই জুলাই’২০ থেকে অনলাইনে আবার প্রকাশ হলো মাসিককবিতা কণ্ঠ আবার আপনাদের এক করতে চাচ্ছে এই কবিতাকণ্ঠ। তাই আশা করি আপনারা সবাই (কবিতাকণ্ঠ পরিবার) ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করে নিয়মিত কবিতা পাঠাবেন। সেখান থেকে কবিতা বাছাই করে প্রতি মাসের প্রথম সপ্তাহে কবিতাকণ্ঠ পত্রিকা হিসেবে প্রকাশ হবে এই ওয়েবসাইটে।

            প্রতিটি কবিতার ক্রমিক নাম্বার থাকবে। এবং কবিতাকণ্ঠ পরিবার (ফেসবুক গ্রুপে) পত্রিকার ওয়েবসাইট লিংক শেয়ার করা হবে। আপনারা যে কবিতার সমালোচলা করতে ইচ্ছুক সেই পত্রিকার সংখ্যা নাম্বার, কবিতার নাম ও কবিতার নাম্বার দিয়ে সমালোচনা করুন। প্রতিটি কবিতার সমালোচনা প্রকাশ হবে কবিতাকণ্ঠ পত্রিকায়।

আর আপনারা বিভিন্ন ভাবে কবিতা পাঠাতে পারেন

১/ কবিতাকণ্ঠ পরিবার ফেসবুক গ্রুপে।

২/ এডমিন ম্যাসেঞ্জারে।

অথবা

৩/ https://forms.gle/yDYJbdSHV1YSeBTW6  এই লিংকে ক্লিক করলে একটি ফর্ম বের হবে। সেই ফর্মএ পাঠিয়ে দিতে পারেন আপনার মূল্যবান কবিতা।

                                                                       এম, আব্দুল্লাহ আল মামুন।

  

 

ধর্ষণ এখন এক এনসাইক্লোপিডিয়া (১০১)

                -কবির পথিক(বগুড়া)

 

যৌনতাকে ফুলে,আলপনায় সাজাতে

কেমন যেন ম্যড়ম্যড়ে লাগে আমার

ওসবের জন্য তো অনেকেই আছেন -বাঘা বাঘা।

ধর্ষণ কথাটা শুনলেই-

অনুভব করি পুলক-সর্বক্ষেত্রে রোমাঞ্চ,

লকলকে জিভ আর ড্রাকুলা চোখে

আঁশটে গন্ধখুজি বুনো শুয়োরের মত-যত্রতত্র।

পৃথিবী এখন ধর্ষণ করে পৃথিবী

জারজ সন্তানের জন্মাধিক্যে মানব ভ্রুন বিলুপ্ত প্রায়,

অথচ ধর্ষিত হচ্ছে পালাক্রমে-সিরিয়া সুদান

মায়ানমার,ফিলিস্তিন,ইথিওপিয়া

মানবতা ধর্ষণ করে মানবতা

বিবেক ধর্ষণ করে বিবেক

তারপর পালাক্রমে ধর্ষিত হয়-

জাতিসংঘ,হু,অমুক তমুক।

দল ধর্ষণ করে দল, নেতা নেতাকে

তারপর পালাক্রমে ধর্ষিত হয়-

সংসদ, সচিবালয়, পতাকা, রাষ্ট্রযন্ত্র।

আইন ধর্ষণ করে আইন

বিচার বিভাগ ধর্ষণ করে বিচার পতি

তারপর পালাক্রমে ধর্ষিত হয়-

হাইকোর্ট, জজকোর্ট,সুপ্রিম কোর্ট।

রাজনীতি ধর্ষণ করে রাজনীতি

দুর্নীতি ধর্ষণ করে দুর্নীতি

কর্মী ধর্ষণ করে কর্মী

স্বজনপ্রীতি ধর্ষণ করে স্বজনপ্রীত

তারপর পালাক্রমে ধর্ষিত হয়-

দেশ, দেশপ্রেম,মূল্যবোধ, গণতন্ত্র।

মুক্তিযুদ্ধ ধর্ষণ করে মুক্তিযুদ্ধ

পদ্মাকে ধর্ষণ করে পদ্মা

এরপর তেল, বালিশ, বাঁশ, চাল।

ত্রানকে ধর্ষণ করে ত্রান, করোনাকে করোনা

তারপর পালাক্রমে ধর্ষিত হয়-

৫২,৬৯,৭১, ৭মার্চ,বাঙালী, বাঙালীত্ব

শিক্ষাকে ধর্ষণ করে শিক্ষানীতি, জিপিএকে জিপিএ

মনুষ্যত্ব ধর্ষণ করে মনুষ্যত্ব।

তারপর- সুন্দরবন,হাওড়,ফ্যালানী,স্বাধীনতা ,সার্বভৌমত্ব সব।

বাংলাদেশকে ধর্ষণ করে বাংলাদেশ

আমাকে ধর্ষণ করি আমি

পুরোদেশ, পৃথিবী আজ ধর্ষিত।

আসলে ধর্ষণকেই ধর্ষণ করে ধর্ষণ।

ধর্ষণ এখন আর একটি শব্দ নয়

ধর্ষণ এখন এক এনসাইক্লোপিডিয়া।

 

 

মেঘবালকের প্রেম (১০২)

        কাজী হানিফ (ঢাকা)

 

আজকে বৃষ্টি হবে

দেখ আকাশ কত লাল,

নিম্নচাপে সিডর অথবা

ঝর হবে দেখ ঘুর্নি বাতাস।

পশ্চিমে কালমেঘে দমকা বাতাস

আসবে এখনি হবে লন্ডভন্ড একাকার।

তুমিতো আছ হৃদয়ে ছিন্ন হয়োনা আজ,

বৈশাখী সকাল ছিলো স্নিগ্ধ বিকাল হয়েছে কালসাজ।

চাঁদ মুখ তোমার মলিন কেন আছি নয়ন মেলে,

তবুও কেন ভয় তোমার সাড়া বিকেল জুড়ে।

মেঘবালক দিচ্ছে অভয় তবুও তুমি ম্লান

ভয় নেই বালিকা তুমিইতো আমার প্রাণ।

হৃদয় জুড়ে ডালোবাসা, কেন বেঝনা,

রক্তবিন্দু ধমনীতে ধমনীতে হৃদপিন্ডে বাসনা।

জলোচ্ছাসে ভেষে যাব তবু ছাড়বোনা তোমায়,

ভয়নেই গামছা অথবা শাড়ী আঁচলে মিশে হব একাকার।

দৈত্য দানব যতই আসুক বৈশাখী বিকেলে,

থাকবে তুমি আমার হয়ে সাড়াজীবনে।

এখনো সংকা এখনো ভয় কেন,

কথা দিয়েছি তুমিতো আমার।

সুতোয় বাধা ঘুড়িটি দেখ মেঘ বিকেলে উড়ে,

সাদাকালো মেঘের মাঝে রজনীগন্ধা ফোটে।

বেলি ফুলের মালায় তুমি অপরুপা, রুপসী, অপ্সরা,

এসো এসো বৈশাখ তুমি

নতুন ধারা।

সিডর হবেনা, হবেনা কোন কালমেঘে বৈশাখী তান্ডব

এসো দূর আকাশে মেঘের ভিতরে দুজনে বন্ধুবান্ধব।


অপারগতা (১০৩)

আব্দুল্লাহ দি মাহমুদ (বগুড়া)

 

আমার অনেক গালি দেওয়ার ইচ্ছে ছিলো

পারিনি বলে গুমরে মরেছি

মনের আগুনে মন পুড়ে অঙ্গার হয়েছে

অবিস্ফোরিত বোমা ভিতরে ভিতরে নিস্তেজ হয়ে গেছে

একটা গালিও দিতে পারি নি

মানুষের কাতারে দাঁড়িয়ে দেখেছি

অমানুষের দীর্ঘ সারি বাতাসে শুনেছি

শুয়োরের ঘোঁৎঘোঁৎ আওয়াজ

ক্ষুধার্ত কুকুরের কাড়াকাড়ি হায়েনা

আর নেকড়ের পেটুক উল্লাস

খুব করে গালি দিতে ইচ্ছে করতো

মানুষের কাতারে এরা কেনো?

এরা এখানে কেনো শালা শুয়ার!

মুখ ফুটে মুখের উপর বলতে পারিনি

গালের উপর কষে থাপ্পড় মারতে পারিনি

অসহ্য যন্ত্রণায় বিমূঢ়তায় স্তব্ধ হয়ে থেকেছি

অবাক হয়েছি উপর তলার জানোয়ারের দীর্ঘ লাইন দেখে

চারিদিকে মৃত্যুর মিছিল আতংকিত মুখের মালিন্য

অনাহারী মানুষের অপ্রতিরোধ্য জীবন সংগ্রাম

আর কাজলশুভ্র বসনে লুটেরাদের দেখে

হারামজাদা বলে খুব গালি দিতে ইচ্ছে করতো

পারিনি বলে দাঁতে দাঁত চেপে রেখেছি

অন্ধ সেজে দায় শোধ করেছি কী নিপাট ভদ্রলোক!

দেহভরা রক্তের কোনো মূল্য দেইনি বলে

আজ নিজেকেই গালি দিতে ইচ্ছে করে

ভীষণ রকম ইচ্ছে করে।


 

বৃষ্টি ভালবাসি বলে(১০৪)

      -- সেলিম আলতাফ(খুলনা)


দেখো বৃষ্টি ভালবাসি বলে
থেকে থেকেই সে আমাকে ছুঁয়ে যায়,
জানালা বেয়ে বাইরে থেকে প্রবল ছাট্
আছড়ে পড়ে হৃদয় ঘরের অনুভব শিকড়ে,
তবু আমি খুলে রাখি সব ভেজাবার আশায়,
নিজেকে মেলে ধরি স্বপ্নসুখের সবুজ পাতায়
দেখো বৃষ্টি ভালবাসি বলে
তোমাকে নিয়ে ভাববার সময়টাও ফিরে
আসে বার বার আবেগী পানসী ভিড়িয়ে,
আমাকে শুনিয়ে যায় টুপটাপ ঝরা শব্দ
ভেজা দুপুরি ফুলের আবসন্ন রঙ দেখায়
দেখো বৃষ্টি ভালবাসি বলে
সারা বছর বৃষ্টি আসে যখন তখন
এই শহরের শরীর আর আমার আদ্যপান্ত
ভেজা সুখে ভিজিয়ে দেবার ছলে

 

শুভ্রা ও পলাতক প্রেমিক (১০৫)
  
   অর্ণঃঈক্ষন (রাজশাহী)

ভালোবাসার কাঙাল আমি
আমৃত্যু তোমার দিকেই চেয়ে থাকবো
এক মুঠো প্রেম পাবার আশায়।
যাযাবর বেদুইনের মত
খুঁজেছি তোমার মরুচোখে তৃষ্ণার জল
এক রত্তি আবেগ পাবার আশায়।
অঝোর বৃষ্টিতে কাকভেজা
যে যুবককে তুমি আড়চোখে দেখেছিলে
সে আজোও তোমার অপেক্ষায়।
শুভ্রা,
তুমি নাকি তার সাথে
জোছনা দেখতে ভালোবাসো
তাই আমি চাদের আলো দেখলে
অন্ধকারে লুকিয়ে যাই।

আজও ফেরা হয়নি নিজের ঘরে (১০৬)

           এ কে আজাদ (বগুড়া)

 

কে বলেছিল কদম ফুলকে অমন বৃষ্টির সাথে মিতালী করতে?

সেই তো অর্বাচিন মেঘের সাথে উড়ে গেল স্বপ্নের প্রজাপতি!

বিষাক্ত নিশ্বাসের সাথে গাটছাড়া বাঁধতে কে বলেছিল নরম বিশ্বাসকে?

পলেস্তরা খসে পড়া সময়ের দেয়ালে ঠেস দিয়ে এখন বসে থাকে স্মৃতির মাতাল!

ভাঙতে ভাঙতে উজাড় হতে চলেছে হৃদয়ের লোকালয়।

জানি - ঝরে পড়া বৃষ্টির ফোঁটা ফিরে যায় না মেঘের কিনারে।

তবুও কার যেন প্রতীক্ষায় পথ চেয়ে বসে থাকে বিমর্ষ ডাহুক।

এক জোড়া শিল্পীত সুখের পাখা মেলে বাবুই পাখিটা

 ঠিকই ফিরে গেছে নিজের ঘরে।

অথচ আজও আমি ফিরতে পারিনি হৃদয়ের ঘরে।

নিজের বিপরীতে নিজেকে দাঁড় করিয়ে দিনমান করে গেছি কেবলই অার্তনাদ।

টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে যাওয়া মনের

আয়নায় আঠার মত লেগে আছে কার যেন ছবি।

ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চাটা মায়ের

পিছু পিছু ছুটেই চলেছে এক ফোঁটা দুধের আশায়।

অথচ কেন বুঝতে চায় না অবুঝ মন- ছেড়ে যাওয়া ট্রেনের

পিছে ছুটে লাভ নেই কোন ট্রেন ফেল করা যাত্রীর!

আর কতদিন পরিযায়ী বৃষ্টির পেছনে ছুটে বেড়াবে অবুঝ কদমের ফুল?

বুকের কেতাব খুলে একবারও কি বোকা কবি

পড়বে না যা লিখা ছিল কবিতা,

তার সব চরণে কেবলই ছন্দের ভুল?

 

 

মরিচিকা (১০৭)

রাজীব আহমেদ (বগুড়া)


হৃদয়ে যাদের ধরেছে মরিচীকা

কর্ম যে তার হয়ে পরেছে জাহীম,

রবের দেখানো পথ ভুলে তারা

 চলছে দিন রাত বি-পথ গহীন,

 হেদায়াত থেকে আজ কত দূরে তারা

  ভাবনায় কাটে মোর রাত্রিদিন,

বোঝাতে পারিনি আমি তাদের

ক্ষমা করো প্রভু তুমি তো গাফুরুর্ রাহীম।

 

 

সাধের কন্যা রে (১০৮)

মোহাম্মদ শহীদ উল্লাহ (ঢাকা)


কন্যা তোর খোঁজ লইয়া আমি যাইব

আউশের ছায়ানীড়ে নিয়া আসবো তোমারে

হৃদয়ে রাখিয়া আদর করিবো

কন্যা তোর খোঁজ লইয়া আমি যাইব

 

তোমারে দেখিয়া পড়শী আসিয়া

পরাণ ভরিয়া উল্লাস করিয়া

 ফুলে ফুলে বরণ করিবো

কন্যা তোর খোঁজ লইয়া আমি যাইব

 

ফুল ফুটাইয়া বাগান সাজাইয়া

দোলনাতে বসাইয়া তোমারে লইয়া

খুশিতে খুশিতে ছবি উঠাবো

কন্যা তোর খোঁজ লইয়া আমি যাইব

 

আসর বানাইয়া সানাই বাজাইয়া

ফল খাওয়াইয়া কোকিল ডাকিয়া

কুহু কুহু গান শুনাইবো

কন্যা তোর খোঁজ লইয়া আমি যাইব

 

তোমার লাগিয়া সোহাগ করিয়া

ফল পাড়িয়া জুস বানাইয়া

ঢেলে ঢেলে তোমায় খাওয়াইবো

কন্যা তোর খোঁজ লইয়া আমি যাইব

 

রসিকতা করিয়া সানন্দে রাখিয়া

গল্প বলিয়া কবিতা শুনাইয়া

হাসিতে হাসিতে তোমায় রাখিবো

কন্যা তোর খোঁজ লইয়া আমি যাইব

 

 

হোক ধর্ষণ (১০৯)

নব কুমার (ভারত)

 

আজ আবারও হোক ধর্ষণ

টেনে খুলে নেওয়া হোক অন্যায়ের কালো কাপড়

প্রকাশ্যেই নগ্ন করা হোক..

প্রতিবাদের তীক্ষ্ণ নখ রক্তাক্ত করুক বর্বরতাকে..

ক্ষতবিক্ষত করুক তার যোনি পথের প্রতিটি অংশকে।

গরীবের রক্তে গড়ে ওঠা সুঠাম ঊরুদ্বয়ে করুক সজোরে আঘাত

গড়িয়ে পড়ুক তাজা রক্ত..

তৃপ্তি পাক অত্যাচারিত চোখগুলো!

 

আজ আবারও হোক ধর্ষণ

কামোন্মত্ততার উষ্ণস্রোত বয়ে চলুক ন্যায়ের প্রতিটি শিরায় উপশিরায়

শুষ্ক বিষাক্ত ঠোঁট বসানো হোক অবিচারের স্তনযুগলে...

শোষণ করে নিক মিথ্যা অহংকারের শেষ বিন্দু টুকু!

হিংস্র দাঁতের ছাপ রেখে যাক অন্যায়ের পাঁজরে।

ন্যায়ের ক্রমাগত মর্দনে নিঃশেষিত হোক অবিচার,

তৃপ্তি পাক নির্বিচারে অবহেলিত চোখগুলো!

 

আজ আবারও হোক ধর্ষণ

সত্যের কঠিন শিশ্ন অবাধে প্রবেশ করুক..

কোনো রকম অনুমতি ব্যতিরেকে আঘাত হানুক মিথ্যার আগলে,

তার বলিষ্ঠ বাহুর কাছে বলপ্রয়োগে ব্যর্থ হোক বিকলাঙ্গ সমাজ..

শক্তিশালী বীর্যে পূর্ণ হয়ে উঠুক অসত্যের জরায়ু!

সৃষ্টি হোক নুতনের, সত্যের, সুন্দরের!

নুইয়ে পড়া সমাজ আবারও দাঁড়াতে শিখুক নিজ পায়ে

ঘুচে যাক সকল সমাজিক বিপর্যয়,

তৃপ্তির আস্বাদ পাক সমগ্র সমাজ

 

 

ইচ্ছে ঘুড়ি(১১০)

জুনায়েদ খন্দকার নীর

 

ইচ্ছে ঘুড়ি ডানা মেলে উড়তেছে  দূর পানে,

সময় কাটায় তাল মিলিয়ে বাজছে যে সুর গানে।

নাটাই কভু হাত ছাড়া নয় আটকে রাখো হাতে,

যতোই উড়ুক উড়তে থাকুক দিবা কিংবা রাতে।

 

বৃষ্টি মূখর রৌদ্র মেঘের চলছে দারুণ আড়ি,

একটু খানি দেরি করলে ভিজে ফিরবে বাড়ি।

এবার তবে আসছে ধেয়ে ভীষণ বেগে হাওয়া,

ছিন্ন ভিন্ন করবে যে সব ইচ্ছে পরীর চাওয়া।

 

নাটাই এখন টানতে থাকো যতো দ্রুত পারো,

মেঘ বৃষ্টি যে আপন নয়কো তোমার আমার কারো।

 

আসবে বর্ষণ যখন তখন সময় নাহি মানে,

ইচ্ছে ঘুড়ি উড়বে কখন হিসেব তাহা জানে।

মেঘের পরে চায় যে যেতে উড়তে উড়তে তবে,

রংধনুর রং লাগিয়ে আবির মাখবে কবে!

 

নীল মেঘের ডানায় চড়ে থাকবে নাকো বাঁধা,

রং বেরঙ্গের পসরা সেজে নাচন তুলে রাঁধা।

নাচবে সবে হেলে দুলে নুপুর পড়া পায়ে,

ইচ্ছে ঘুড়ি নামবে যখন ইচ্ছে পরীর গাঁয়ে।

 

 

সভ্যতার আবিষ্কার(১১১)

অরুপ বনিক

 

ধুলো জমতে জমতে সত্যরা আজ বীলিন শহরে।

মিথ্যেরা বাধছে দালান ছুটছে নগরে।

রাফখাতার সত্যগুলো উঠে আসে না হিসাবে।

ঘড়ির কাটার মত মিথ্যাগুলো অবিরত শব্দ করে।

সত্যের মৃত্যু,মিথ্যের জন্ম!!

এই ক্ষন কালে বলে দেয় আমাদের দূর্বলতাগুলো।

সভ্যতার শ্রেষ্ঠ আবিষ্কার 'মিথ্যা' হয়ে থাকলো।

 

মনুষ্যত্বের একাল সেকাল (১১২)

প্রণব চৌধুরী (ভারত)

 

একালের এইক্ষনে এমনি এমনি এখানে কিন্তু হয়নি মনুষ্যত্ব এতিন

মনুষ্যত্বের মধ্যিখানে মায়া,মমতা,মনুষ্যত্ব গিয়েছে মরিয়া মরমে হয়েছে মলিন

যুগ যুগান্তরের যুগসন্ধিক্ষণে যৌথভাবের যুগলমিলন |

প্রকৃতির প্রকারন্তের পরিশিষ্টের পরাগমিলনের প্রকরনের প্রছন্নতায় পঙ্কিল

হায়রে হাভাতে এখন হারেম হুসে নেই হুস

মনুষ্যত্ব, মায়া,মমতা, মহানুভবতা মর্তে এখন রঙ্গীন  ফানুস

অভাবের আবর্তে অবনী অমানুষে আগমন  

কঠিনের করাল কামড়ে কামরূপ,কিস্ককিন্ধা কায়মন

 

সেইযুগের সেইক্ষনে স্বর্ণময় সোনার সহবস্থানে সে ছিল শৌখিন

ভাবের ভাব করত ভাবিত হতো ভালোবাসায় রূপান্তরিত ভুলেছি সেইদিন

স্মরণের স্বরণিকায় স্বর্ণপত্রে স্বমহিমায় ছিল সে স্বাধীন

মনেপড়ে মানসপটে মন্দির, মসজিদ, ময়দান

বিশুদ্ধ অলিনের বিশুদ্ধতায় বিমোহিত হত বপু যা আজ বীলিন

দায়ভার কে নেবে তার ? দায়বদ্ধতা দায়িত্ব

মনুষ্যত্ব আজ গিয়েছে মরিয়া মরমে মন,মতির নেই আজ মর্মাথ

 

 

আপোষহীন ভাবনাগুলো (১১৩)

আবদুর  রউফ (উত্তরা, ঢাকা)

 

অবশেষে আমার আপোষহীন

ভাবনা গুলো ডানা মেলে উড়ে

যেতে চায় দূর দিগন্তে;

নীলিমা রেখা ছুঁয়ে এসে

তোমার ঘন কালো খোলা চুলে

লুকিয়ে যেতে চায়।

বর্ষার আকাশে মেঘে মেঘে

ঘর্ষণে হবে প্রণয়ের বৃষ্টিপাত।

 

আমার ভাবনা গুলো

কবিতার বুকে খোঁজে নেবে

হৃদ স্পর্শী ভাষা; উন্মুক্ত

প্রেমের ঘুড়ি উড়িয়ে দেবে

ভাবনার আকাশের মুক্ত বাতাসে।

অবশেষে ভাবনা গুলো কবিতা

হয়ে স্বপ্ন কেড়ে আনবে।

স্বপ্ন গুলো বৃষ্টি হয়ে শীতল

করে দেবে বেদনার মানব জমিন।

 

 

পথিকেরা চল (১১৪)

আমিরুল ইসলাম সা'

 

চল চল চল তুই চল বহুদূর

আগে দেখে পথ চল পিছনে কুকুর।

পিছে দেখে পথ চলা হবেনা যে তোর

তোর আরো যেতে হবে দূর বহুদূর।

 

সুন্দর আগামীটা গড়বি যে তোর

সত্যের পথে চল উচু রাখ স্বর।

মিথ্যের খুঁটিনাটি গুড়িয়ে দে সব

কালিমার পতাকায় ভরিয়ে দে ভব।

 

সিনা রেখে টানটান সম্মুখে চল

ভুলবি না পথ তোরা পথিকের দল।

রাসূলের বাণী মালা বোঝে নিয়ে

তোরা শান্তির ছায়া তলে আনবি- ধরা।

 

দুনিয়ার খেলাঘরে তুই মুসাফির

যুদ্ধের ময়দানে তুই মহা বীর

পথিকেরা চল তবে আর নয় ভয়

সত্যের আগামীতে আনবি বিজয়।

 

 

ধর্ম (১১৫)

আশিকুর রহমান (বুয়েট, ঢাকা)

 

ধর্ম এসেছে মানুষের শান্তির তরে পৃথিবীতে,

সর্ব ধর্ম চাহে মানুষেরে শান্তির পথে নিতে।

অকল্যাণের কথা, সে তো কোনো ধর্মই নাহি কহে,

অশান্তি আনে যেই মতবাদকভু তা ধর্ম নহে!

শান্তি, মানবকল্যাণসে তো সব ধর্মের বাণী!

কোনো সে ধর্ম মানুষের মাঝে চাহে না' হানাহানি!

তামাম ধর্ম পৃথিবীতে চাহে মানুষের কল্যাণ,

ধর্মের নামে অশান্তি আনে যারাতারা শয়তান!

সাম্য, শান্তি, সম্প্রীতিউহা সব ধর্মের গীতি,

রাক্ষস যারা, বরবাদ করে মানুষের সম্প্রীতি!

যাহারা গুণ্ডা, ভুল বুঝাইয়া অজ্ঞান জনগণে

ভুল পথে নেয়, মানুষের মাঝে বিশৃঙ্খলা আনে।

ধার্মিক বেশে যারা যত বড় গুণ্ডা ধড়িবাজ,

তারা তত গুণী, সম্মানীজাতি, সমাজের কাছে আজ!

 

এক সে স্রষ্টা, ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী নির্বিশেষে,

সর্বজাতির মাঝে জেগে, তিনি সর্বজীবেতে মিশে!

সব সৃষ্টির সত্ত্বায় মিশে, সব সৃষ্টির প্রেমী,

সব মানুষের হৃদয় আলোকিত করিয়া আছেন তিনি।

আল্লারে যারা ভালবাসে, তারা ভালবাসে তাঁর জীবে,

তারা শুধু জীবসেবা করে না', তারা আল্লারে সেবে!

ক্ষুধিতে খাদ্য দেয় না' শুধু, দেয় ওরা আল্লায়,

আল্লারে জল দেয়, যদি জল দেয় কা'কে পিপাসায়।

আশ্রয় দেয় পরম যত্নে গৃহহীনে যারা ঘরে,

ঘরহারা নয়! তারা যেন আশ্রয় দেয় স্রষ্টারে!

সেই জীব হোক হিন্দু, বৌদ্ধ, মুসলিম, খ্রিস্টান

নাস্তিক হোক! – আল্লার কাছে নাই কোনো ব্যবধান!

মানুষ মাত্রই সৃষ্টির সেরা জীব আল্লার কাছে,

কোন নরাধম মানুষের মাঝে বিভেদ-প্রাচীর রচে'?

মানুষে বিচার করিবে কেবলি এক আল্লাই,

অবিশ্বাসীরে বিচার করার তোমার অধিকার নাই!

তোমার বিচার কভু কি মানুষে স্বর্গে পাঠাতে পারে?

তোমার ক্ষমতা নাইকা'রে ঠেলে দেবে দোযখের দ্বারে!

মোল্লার দল 'আল্লা' সাজিয়া বসিয়াছে দিকে দিকে,

ভাবে যেন – “আমি স্বয়ং স্রষ্টা!” – ঈমান আছে কি বুকে?

এরা ফতোয়ার ঝুলি লয়ে ঘোরে, কভু ফতোয়ার বাণে

বিদ্ধ করিয়া 'কাফেরে' গাল পাড়িছে অমুসলিমে!

ভেবেছে – “খোদার বিচার দণ্ড, উহা তো মোদের হাতে।

বাড়াবাড়ি করে এরা প্রতারণা করে আল্লার সাথে!

ফতোয়ার বাণে বিভেদ এনে ভাবে –“আমিই মস্ত আলেম!”

আলেম তো নহ! ইসলামে কয় ব্যাটা –“তুমি বড় জালেম!”

ভ্রান্ত ধারণা ছড়িয়ে বিপথে নেয় এরা জনগণে,

মানুষের সম্প্রীতি বরবাদ করে হানাহানি এনে!

ধার্মিক নহে, ইহাদেরে কহে ধর্মীয় উন্মাদ,

ধর্মের নামে তামাম মানবজাতি করে বরবাদ!

ওরা ইসলাম খোঁজে শুধু ভিন ধর্মীর প্লেট, গ্লাসে,

ঠুনকো এদের ইসলাম! – তাই মাথা-ভরা বিদ্বেষে!

বিধর্মী হাতে খেলে কভু কারো ইসলাম নাহি যায়,

ইসলাম, সে তো 'বিশ্বাসী'-মনে নিত্য আলোক ছড়ায়।

বিধর্মী হাতে খেয়েছে নবীরা, করেনি তুচ্ছ জ্ঞান,

'ছোঁয়াছুঁয়ি-রোগছড়ায়েছে যে বাসে নহে মুসলমান!

বিধর্মীদের কোনো ভাষা নাই, ভাষা স্রষ্টার দান,

কর্মে তো নহে! – ভাষার ভেতরে খুঁজে মরে ইসলাম!

ধর্ম-উন্মাদনায় মাতিয়া গালি দেয় অজ্ঞান,

ওরা 'মালাউন' হলে তুমি ব্যাটা 'সাক্ষাৎ শয়তান'!

কোনো যোগী, ঋষি, কোনো পয়গম্বর, কোনো দরবেশ

অন্য ধর্মে দেয়নি ' গালি, শোনো হে গোবর গণেশ!

ভিন ধর্মের মহামানবেরে দেয়নি ' ওরা গালি,

গালি বুঝি বমি করে দাও কালো হৃদয়ের কালি!

ভিন ধর্মীর ব্যঙ্গে কাঁপায়ে তোলে ওরা দশদিক,

অন্য ধর্মে সহিষ্ণু নহেসে তো নহে ধার্মিক!

ধূর্ত শেয়াল! – ভিন ধর্মীরে গালি দেয় পড়ে যেচে,

 গুণ্ডা, ভণ্ড! – নবীর উপরে মহানবী সেজে আছে!

ভড়ং ধরেছেবড় ভাব নাকি হয়েছে খোদার সনে,

আজ, নয় কাল নবুওয়্যাত বুঝি পাবে সব শয়তানে!

ভণ্ডের দল! হৃদয়ে নাহি ' এককণা সে ঈমান,

বাহিরে এদের ইসলাম, মনে হাসে সদা শয়তান!

ব্যঙ্গ করিছে ভিন ধর্মীর দেবদেবীদেরে লয়ে,

কোরানের সাথে তামাশা করিয়া গিয়াছে 'কাফের' হয়ে!

ভালবাসা দিয়া আল্লার পানে ডাকো” – কহে ইসলামে,

 বিধর্মী 'পরে জুলুম করিতে নিষেধ সে কোরআনে।

অকল্যাণের দূত যারা, তারা ভূত সেজে পথে পথে

টুপি, পাঞ্জাবি পরা জ্বীনচাহে মানুষে বিপথে নিতে!

ভূত-প্রেত দল দাড়ি নেড়ে কহে – “এসো জেহাদের পথে,”

খোদার সৃষ্টি অকারণে মেরে যাবে নাকি জান্নাতে!

এরা প্রতারক! মুখে বলে মানুষের কল্যাণ চায়,

আজীবন এরা ব্যয় করে শুধু আত্মপ্রতিষ্ঠায়!

তখত, ক্ষমতা লোভে এইসব দস্যু দাগাবাজ

ধর্মের নামে মূর্খ জনতা ক্ষ্যাপাইয়া তোলে আজ!

স্বার্থের তরে মানুষের মাঝে হিংসা বিভেদ আনে,

এরা চাহে শুধু নিজ-কল্যাণ, চাহে না কারোর পানে!

 ধর্মের নামে উহারা নিত্য ফেলে মানুষের লাশ,

খুন করে বলে – “ মোরা মুজাহিদ! খোদার বান্দা খাস!”

মানুষ মারিয়া এরা দানবের মত আকর্ণ হাসে,

হ্রেষা রবে কহে – “মানুষ মেরেছি আল্লারে ভালবেসে!”

শৃগালের মত হাঁক ছেড়ে কয় –“জয়! ধর্মের জয়!”

মুজাহিদ! ওতো দূরে থাক, ওরেপশুরও অধমকয়!

ধর্মের নামে মানুষের 'পরে যারা বোমাবাজি করে,

ধর্মের নাম লয়ে অবিচারে নিরীহ মানুষ মারে,

ধর্মব্যবসা করে যারা, - ধর্মের নামে রাজনীতি,

মুখে জপে 'খোদা', অন্তরে শয়তান সনে প্রেম-প্রীতি,

ধার্মিক! – ওতো দূরে থাক! – ওরা নহে মনুষ্য জাতি,

ইহাদের শুধু আছে এক নামরাক্ষসবলে খ্যাতি।

রাক্ষস সব মানব-মুখোশ পরে পথেঘাটে ঘোরে,

ধর্মের নামে দাঙ্গা লাগায়ে স্বার্থ হাসিল করে!

আত্মঘাতী বোমা হামলায় মরে কহেওরা নাকি শহিদ!

শাহাদাত নয়! – নরকে বুকিং দেয় শয়তান-মুরীদ!

 

 সাম্প্রদায়িকতার বিষ যারা ছড়ায় বিশ্বময়,

পথভ্রষ্ট, উহাদের শুধু 'শয়তান' পরিচয়!

 

এক আল্লার সৃষ্টির মাঝে রহিবে না কোনো ভেদ,

হিন্দু, বৌদ্ধ, মুসলিম, খ্রিস্টানে রহিবে না বিভেদ।

আল্লার দেয়া আলো, বায়ু বহে সব ধর্মীর ঘরে,

তাঁর বৃষ্টির জল সব ধর্মীর মাঠে ঘাটে ঝরে!

খোদার উদার আকাশ তামাম মানবজাতিরে ঘিরে,

তাঁর মৃত্তিকা ফসল ফলায় সব ধর্মীর তরে।

তাঁর তরুলতা ফুল ফল দেয়, - করে না ধর্মভেদ,

সর্বজাতির তরে ছায়া দেয়আনে না তো বিচ্ছেদ!

স্রষ্টার দান করে না ধর্মভেদ, তবু কেন আজ

ধর্মজাতির নামে ভেদাভেদ আনো তুমি ধড়িবাজ?

বিষাক্ত করে তামাম পৃথিবী ধর্মজাতির নামে,

নাহি কি রে কেউ ইহাদের ঘাড়ে খালিদের অসি হানে?

ভালবাসে না যে খোদার সৃষ্টি, সে তো মুসলিম নয়,

অকারণে যে বা মানুষ মেরেছে, তারে 'জানোয়ার' কয়!

খোদার তামাম সৃষ্টিরে যারা মনেপ্রাণে ভালবাসে,

আপনারে দেয় বিলিয়ে ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে,

মানুষের কল্যাণ চিন্তায় রাতে যার ঘুম-হারা,

মানুষের দুখে কাঁদে যারা, মানুষের সুখে হাসে যারা,

যাহার হাতের আহার ক্ষুধিতের কথা স্মরে পড়ে যায়,

আল্লার প্রিয় বান্দা তারাইতাঁর ভালবাসা পায়!

তাহাদের প্রেম কভুও করে না ধর্মজাতির ভেদ,

সব মানুষেরে বুকে টেনে ভাঙে মানুষের ভেদাভেদ!

 

সেদিন সুদূর নয়,

ভেদাভেদ ভুলে গাহিবে মানুষ সবে – “মানুষের জয়!”

মানুষের মাঝে জাগিবে সেদিন মনুষ্যত্ব বোধ,

হৃদয়ে জাগিবে ভালবাসা, ধুয়ে যাবে অকারণ ক্রোধ!

ধর্মের নামে অহেতুক করিবে না' অহংকার,

আনিবে ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবার অধিকার।

ধর্মের নামে দ্বন্দ্ব-কলহ হবে সেদিন অবসান,

মানুষের তরে বিলাবে নিজেরে, নেছার করিবে প্রাণ!

দেখিবে না কভু কেবা কোন ধর্মের, কেবা কোন জাত,

সংঘবদ্ধ হয়ে সবে করিবে জুলুমের প্রতিবাদ!

ঠাসিয়া ধরিবে সবে মিলে সব অত্যাচারীর টুঁটি,

ভেদাভেদ এনে কেড়ে খেল যারা ক্ষুধার অন্ন, রুটি!

শোষণ করেছে কেড়ে লয়ে যারা দুর্বলের অধিকার,

হিন্দু, বৌদ্ধ, মুসলিম মিলে মারিবে বেদম মার!

সেদিন ধরায় সত্যিকারের সাম্য কায়েম হবে,

সব ধর্ম জাতি মাঝে সব ভেদাভেদ ঘুচে যাবে!

আসিবে সত্যিকারের শান্তি, ঘুঁচে যাবে অমারাতি,

 উদার গগনতলে এক হবে আসিয়া সকল জাতি।

কন্ঠ মিলিয়ে গাহিয়া উঠিবে নতুন দিনের গান,

নতুন দিনের সূর্য উদিবে, হবে জুলুম অবসান!

সকল দেশের, সকল জাতির সকল মানুষ আসি'

প্রেম নদীর এক মোহনায়, শোনো এক মিলনের বাঁশি!

বিশ্ব জুড়িয়া উঠুক ধ্বনিয়া মানবতার আজ জয়,

মানুষের তরে ধর্ম, মানুষ ধর্মের তরে নয়!

এক সে আকাশ মায়ের ক্রোড়ে এক রবি, শশী দোলে,

হিন্দু, মুসলমানে ভেদ কেন এক দেশমাতা-কোলে?

 

হিন্দু, বৌদ্ধ, মুসলিম, খ্রিস্টান সব ভাই ভাই,

সবার উপরে মানুষ সত্য, তার উপরে কিছু নাই!

 

(নেছারউৎসর্গ)

 

 

কেমন প্রেম ছিল? (১১৬)

অর্পিতা চক্রবর্তী (পটিয়া, চট্টগ্রাম)

 

প্রেম হলো দুটো মানুষের মধ্যে একটা মিষ্টি সম্পর্ক

যা দুটো আলাদা মানুষকে

এক করে দেয়,

যা দুটো আলাদা মানুষকে

সারাজীবন একসাথে থাকার আশা যোগায়।

 

কিন্তু.....

আমাদের কেমন প্রেম ছিল প্রিয়?

যা শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়ে গেল।

না পেয়েছি তোমায় কাছে পাওয়ার সুখ

না পেরেছি তোমাকে সারাজীবন আগলে রাখতে,

শুধু পেয়েছি কিছু বিশেষ মুহূর্ত

আর পেরেছি তোমায় দূর থেকে ভালবাসতে।

 

প্রেম হলো নাকি দুটো মানুষের মধ্যে

অগাধ বিশ্বাসের এক সম্পর্ক

যা দুটো মানুষকে

 বিশ্বাসের সাথে বাঁচতে সাহায্য করে,

একে অপরকে নিঃস্বার্থভাবে

ভালবাসতে সাহায্য করে।

 

তাহলে......

আমাদের কেমন প্রেম ছিল প্রিয়?

যা ভুল বুঝে মুহূর্তেই ভেঙে গেল।

না পেয়েছি তোমায় কাছ থেকে ভালবাসার সুযোগ

 না পেরেছি একসাথে জীবন গড়তে,

শুধু পেয়েছিলাম তোমায় বন্ধু হিসেবে

আর পেরেছি তোমায় নিয়ে হাজারো স্বপ্ন দেখতে।

 

 আমাদের কেমন প্রেম ছিল প্রিয়?

কেমন প্রেম ছিল?

 

ভালো থেকো (১১৭)

হৃদয় হাসান নিরব (ফরিদপুর)

 

স্মৃতির ব্লাকবোর্ডে আজ ভেসে ওঠে

অজস্র কবিতার নাম

 

সবথেকে প্রিয় নামটি ছিলো ''প্রিয়তমা''

সব থেকে প্রিয় শব্দটি ছিলো "ভালোবাসি"

সব থেকে প্রিয় বস্তু ছিলো তোমার "হাত"

তোমার সব থেকে বেশী তৃষ্ণা ছিলো

মসৃণ ললাটের মধ্যভাগে আমার অধরের

অন্তিম চুম্বন!

 

বিশ্বস্ত হাত দুটি কে আকড়ে ধরে নির্জন বুকে

নির্ভরতার ঠাই পেতে

অনুভুতিতে সুখ খুজে পেতে!

নক্সী কাথার মত স্বপ্ন দিয়ে

একটি তুমি ময় ভালোবাসার ঘর বুনতে!

 

বাস্তবতা আর সমাজের সাথে ছিলো তোমার আজীবনের শত্রুতা

চাঁদের আলো আর বর্ষার আকাশ তোমার

ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল!

 

একদিন সেই বাস্তবতাকে আপন করে

সমাজকে বানালে বিচারক

তোমাকে ভালোবাসার অপরাধে আমার নামে

মামলা হলো

উকিল হয়ে লড়াই করলো শঠতার স্বজন!

 

রাই হলো বিচ্ছেদ!

তোমার সবথেকে অপ্রিয় শব্দটিকে তীর

বানিয়ে আমার দিকে ছূরে দিলে

"ভালো থেকো"!

 

সেই থেকে আমি ভালো আছি তোমার প্রিয়

বর্ষার আকাশ নিয়ে!

 

 

নিখোঁজ জোছনায় (১১৮)

মাহামুদুল হাসান মিথেন (ঢাকা)

 

রোজ বিকেলের স্বভাব তো

এক দুই পা হাঁটার থে

তোমায় লেখা চিঠির সাথে

আমায় পাবে

 

পথের ধারে জটলা রে

 চুমুক দেয়া চায়ের কাপে

 বলতে থাকা গল্প ভুলে

 আমায় পাবে

 

সেই ছেলেটাই

বৃষ্টি মাখা শীতল ছোঁয়ায় তোমার ছিল ;

বণ্য হাওয়ায় ভীষণ মাতাল মিষ্টি ছিল

মায়ায় ভরা দৃষ্টি ছিল

নেক দিনের আপন ছিল

 

দুষ্টমিটা বাধ ভাঙলেই খুব চটতে

ভিমানের বন্ধ তালায়

হাসপিসিয়ে সময়গুলো

কেমন ছিল?

 

এখনো তো বৃষ্টি নামে

বণ্য হাওয়ায় ভীষণ মাতাল ইচ্ছা জাগে;

তবু দেখ

মেঘ ঘোমটায়- জেছনাগুলো হারিয়ে গেছে!

 

হাত বাড়ানো শুণ্যতাতে

হঠাৎ হঠাৎ তোমায় খুঁজি

চোখের কোনায় গোচরেই কষ্ট বুজি...

 

 

বিষাক্ত মৃত্যু(১১৯)

এস,এম,হাবিবুর রহমান

 

মৃত্যুর পর মৃত্যু,

এপারে মৃত্যু ওপারে মৃত্যু,

বিস্তৃত বালি কণার ন্যায় ক্রমগত হচ্ছে মৃত্যু,

কেউ হারিয়েছি মা কেউ বা বোন,

কেউ হারিয়েছে ভাই কেউ বাবা,

কেউ হারিয়েছে তার বীর সন্তান,

কেউ হারিয়েছে তার সাহসী মানবসেবী চিকিৎসক সন্তান,

কেউ হারিয়েছে তার প্রিয়মুখ কেউ বা প্রিয় মানুষ,

এযেনো মনে হয় সন্নিকটে কেয়ামত,

এই মৃত্যুসংঘে কিছুক্ষণ পর যোগ হতে পারে আমার নামও,

 নির্দ্বিধায় বলা যায়,

দয়াময় _মহাশক্তিশালী _ সাত আসমানের মালিক' পারে

এই বিষাক্ত পৃথিবীটিকে আবারও পরিপূর্ণ রুপে সুস্থ করতে,

 

 

বসন্ত প্রতীক্ষায় তুমি(১২০)

মো:মিজানুর রহমান (বগুড়া)

 

পাশেই ছিলে,আমিও ছিলাম।

হয়তো তোমার হৃদয়ে নয়

তাই নিলিপ্ত হয়েই চেয়ে চেয়ে দেখেছি

তোমার প্রজাতি মনের বসন্ত প্রতীক্ষা।

বিষন্ন কুয়াশার চাদরে ঢাকা প্রকৃতি

শুষ্ক বেদনায় মলিন

দিকে দিকে শুধু শুকনো পাতার মড়মড়ে ধ্বনি

আনমনে বিভোর উদাসীন তুমি

ব্যাকুল প্রত্যাসী এক উষ্ণ হাতের

তোমার কল্পলোকে এখনও শীতের আমেজ।

আমি তোমার পাশেই

মাঝে শুধু দ্বিধা আর দ্বন্দ্বের দেয়াল।

তুমি দেখলেই না বাগানের ফাল্গুন

অপেক্ষায় অপেক্ষায় ফেকাসে হলো বাহারি বসন্ত

কত স্বপ্ন বুকে ঝরে গেল শিমুল

পলাশ শুনলেই না কোকিলের মহুয়া ডাক

তোমার প্রজাপতি মন বসন্ত প্রতীক্ষায়

আর আমি পুড়ছি পৃথিবীর নিঃশ্বাসের উষ্ণতায়

তোমার নির্মল সূচি বদনপানে চেয়ে চেয়ে

আমিও প্রতীক্ষায় একটা শ্রাবণের

পাশাপাশি দু'জন হাঁটবো

বৃষ্টিতে ভিজে হাতে হাত রেখে

হারিয়ে য়াবো দেবলোকে।

বালিকা যাবে আমার সাথে?

 

 

প্রত্যাশা(১২১)

রীতম দত্ত (বাগেরহাট)

 

আমার একান্ত বাসনায়,ভালোবাসায় ঘেরা সকল ভাবনায়

মনের অন্তরালে,গহীন সমুদ্রের ঢেউ ভরা ঝিনুকের মুক্তায়

প্রত্যেকটি দুঃখ,আনন্দ মিশ্রিত স্মৃতিময় হাজার ঘটনায়

শুধুই তোমার উপস্থিতি।

 

স্মৃতিচারণতা বা স্মৃতিকারতা

অভাববোধ বা অন্তরের শূন্যতা

কারণ বলো বা কত্রীই বলো

সবইতো তোমাই ঘিরে।

 

পূর্ণিমার চাঁদ আজও ওঠে

পূবে সূর্যের উদয় সে তো নিত্যকার নিয়ম

অমাবস্যার ঘোর অন্ধকার সে তো প্রকৃতির নিয়ম।

 

আমার স্মৃতির গ্রন্থাগারে তোমার রচিত পুস্তক

আমার প্রতিটি অঙ্গে জাগা অদ্ভুত শিহরণ

আহা!যাই বলি না কেন সব তো তোমায় ঘিরে।

 

ক্ষণিকের অপেক্ষা আজ দীর্ঘ হলো

ক্ষণিকের অভাববোধ আজ বিরাট শূন্যতা।

 

কি আর করি,তোমারই কথা ভাবি

আমার হৃদয়ের দরজার তুমিই তো চাবি।

 

জানো কি?

আজ আমি কবি হয়েছি

আজ আমি গল্পকার হয়েছি

আজ আমি ঔপন্যাসিক হয়েছি

আজ আমি নাট্যকার হয়েছি

শুধুই তোমার উপস্থিতি

শুধুই তোমার ছোঁয়া

আমার কল্পনায় অনুভবের জন্য।

 

শব্দ চয়নে তো আমি পাকা

বাক্য রূপান্তরেও আমি নয় খুব খারাপ

কিন্তু!ওহে আমার সখী

কার জন্য করব আমি শব্দ চয়ন

কার জন্য রচিব আমি বিরাট গ্রন্থখানা।

 

কবিতা লিখি বা গল্প

হৃদয়ের প্রথম পাঠিকা তো তুমি

উপন্যাস লিখি বা নাটক

হৃদয়ের প্রিয় অভিনেত্রী তো তুমি।

 

প্রকৃতির উপাদানকে করে আমি উপমা

রচিতে পারতাম আমি ভালোবাসার গান

কল্পনার সেই ভালোবাসার গানে

তোমার হৃদয়ে আনবে প্রেমেরই বান।

 

কিন্তু,

উপমা দিয়ে গান,সে তো কল্পনা

তুমি যে আমার বাস্তবতা।

 

অপেক্ষার প্রহর শেষ হবেই

এই আমার বিশ্বাস

আজ প্রহর গুনছি,চলছে

বেঁচে থাকার নিঃশ্বাস।

 

একদিন ঘুম থেকে উঠে হয়তো

আশপাশের সৃষ্টি হওয়া স্তব্ধতা

সকল কিছুর অবসান করে তুমি ফিরবে,

তুমি ফিরবে,তুমি ফিরবে এই আমার প্রত্যাশা।

 

অধ্যায়(১২২)

শর্মি মন্ডল (ভারত)

 

আজ আমি জীবনের ২৩ তম অধ্যায় থেকে ২৪ তম অধ্যায়ে পা দিলাম।

পিছু ফিরে জীবনের স্মৃতি চারনের খাতাটা উল্টে দেখছিলাম।

হারিয়েছি অনেক আপনজনকে

ছেড়ে আসতে হয়েছে

অনেক মায়াবী মুখকে।

অনেক না পাওয়া অধরা

স্বপ্ন আমায় কাঁদিয়েছে।

তবে অনেক না পাওয়ার মধ্যে

তুমি ছিলে আমার সব পাওয়া।

এই না পাওয়াগুলোকে তোমাকে পাওয়ার মধ্যে দিয়ে পুষিয়ে নিয়েছি।

আগামী সাত জন্ম আমার না পাওয়াগুলো অধরায় থাক।

প্রতি জন্মে তুমি না হয় এই না পাওয়ার মধ্যে সব পাওয়া হয়ে থেকো।


জীবন অংক(১২৩)

মুহম্মদ আবদুল বাকী (ঢাকা)

 

সরল অংক সরল তখন,

সুত্র মেনে প্রয়োগ যখন।

জীবন জুড়ে অংক ভরা,

জীবন ঘড়ি ছুটছে ত্বরা।

রোগ কষ্ট অভাব জরা,

অনল রুষ্ট পীড়ন ঝরা।

অংক গুলো শংকা হানে,

ইনতেহানের কুড়চি বাণে।

সবর দিয়ে প্রভূ ভক্তি,

ধৈর্য্য তুমি তিক্ত অতি।

দুঃখ দহন পোড়ায় যখন,

ধৈর্য্য দিয়ে মালিক ভজন।

সুখ আয়েসে ভুলো না মন,

শাহরগ শ্বাসে প্রভুর শমন।

শোকর তুমি স্রষ্টা জ্যোতি,

কৃতজ্ঞতায় রবের খ্যাতি।

শিরক বিদায়াত জানো কি?

জানছো যা তা মানছো কি?

শিরক যদি কর্মে মেশে,

কাঁদবে তুমি কাঁদবে শেষে।

তওবা দিয়ে শিরক ঢাকো,

বিদায়াত ঠেলে সুন্নাত চাখো।

পরীক্ষাতে থাকে যে জ্বালা,

ধৈর্য্য শোকরে খোলরে তালা।

জীবন অংকের এই সমাধান,

এই সূত্রেই তব স্বর্গসোপান।

 

পাগল মন (১২৪)

নাহিদা ইয়াসমিন (রংপুর)


পাগল মন মনরে

জগৎ জুড়ে মানব মেলা

নাই কোন আপন জনরে।

শুধু রাগ শুধু অপমান

বাসের নিচে গেলো যে প্রাণ,

মায়ের কষ্ট কেউ বোঝেনা

ঠিক শিক্ষা কেউ খোঁজেনা।

টাকার বিনিময়ে চাকুরী হল

আসল মানুষ কই গেল?

টিল মন মনরেবিধাতার

কথা এবার শোনরে।

 

কোভিড-১৯ (১২৫)

তনয়া গাঙ্গুলি (ভারত)

 

কলকাতা আর হাওড়া তে

টান পড়েছে টাকা ভাতে;

মানুষের ঘুম কাড়ছে রাতে..

মানুষ থাকে না মানুষের সাথে,

সাবান ঘষছে হাতে।

করোনা গ্রাসে মরছে

মানুষ প্রতি রাতে রাতে।।



কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.