লাভ (উপন্যাস) পর্ব-১৩ শেষ পর্ব
লাভ
এম, আব্দুল্লাহ আল মামুন
উপন্যাস- শেষ পর্ব
শান্তি ও হৃদয় পার্কে বসে গল্প করছে।
-শান্তি বললো, কি পরীক্ষার পরে আমার
বাবার সাথে দেখা করতে চেয়েছিলে যাবে না?
-যাব কিন্তু খুব ভয় করছে।
-কোন
ভয় নেই, আমার বাবা একদম মাটির মানুষ।
-আমি যা বলবাে তাই ঠিক।
-হাদয় বললো,
তাহলে কাল যাবাে, আজ তােমার বাবাকে সব বলবে।
-শান্তি খুশি হয়ে বললাে,
সত্যি বলছাে?
-জি সত্যি।
-শান্তি বাড়ি গিয়ে বাবাকে বললাে, বাবা আমি
একজনকে ভালবালি।
-বাবা হাসতে হাসতে বললাে, তুমি পছন্দ করেছ একদিনও তাে
আমাকে বললি না।
-বলিনি তাই অজি বললাম।
-কালকেই নিয়ে আসবে। আমি ওর জন্য
অপেক্ষা করবাে। অফিসে যাব না । ঠিক আছে বাবা কালই নিয়ে আসবাে।
-পরের দিন
হৃদয় এসেছে মােঃ আশরাফ চৌধুরীর সাথে দেখা করতে । শান্তির বাবা ভীষ খুশি
হৃদয়কে দেখে । এসাে এসাে বসাে ।
-হৃদয় বসলাে, আশরাফ চৌধুরী হৃদয়ের
সামনের সােফায় বসেছে । তােমার নাম কি?
-আমার নাম মােঃ মহাতাব উদ্দিন বিন
আফতাব ডাক নাম হৃদয় ।
-শান্তি তার ঘরে বসে আল্লাহ আল্লাহ করছে যেন হৃদয়কে
মেনে নেয় ।
-শান্তির বাবা বললো, তুমিই তাহলে হৃদয়ের শান্তি' উপন্যাস
লিখেছাে ।
-জি, তবে আপনি জানলেন কি করে?
-একদিন জনকণ্ঠ' পেপারে তােমার নাম
দেখলাম ।
-তােমার বাবা এই ঢাকা শহরে কিসের ব্যবসা করে ।
-আমাদের বাড়ী
বগুড়া।
-বগুড়ায় তাে অনেক ধনী লােক বাস করে।
-বগুড়া শহরে তােমাদের কয়টা
বাড়ি আছে।
ঢাকায় এসে কবে বাড়ি করলে।
-শােনাে
হৃদয় কালই তােমাদের বিয়ে । তােমার বাবা মার সাথে আমি পরে না। হয় দেখা
করবাে। আমার মেয়েটা সুখে কাঠ হয়ে গেছে তােমার চিন্তায়।
-বাবু
বললাে, আপনার যত ধারণা সব ভুল । আমাদের কোথাও বাড়ি নেই। আমার বাবা একজন
কৃষক । এখানে মেছে থেকে আমি লেখা পড়া করি ।
-হৃদয়ের কথা শুনে আশরাফ
চৌধুরী রেগে উঠে বললো, হােয়াট তুমি কি বললে কৃষক তােমার বাবা। কৃষকের ছেলে
হয়ে আমার মেয়েকে বিয়ে করতে চাও তােমার লােভ তাে কম নয়। বামন হয়ে
চাঁদকে ছুঁতে চাও । কত টাকা তােমার প্রয়ােজন ১০ লাখ, ২০ লাখ ৫০ লাখ নিয়ে
যাও, তুবও তুমি শান্তিকে ভুলে যাও।
-হৃদয় দাড়িয়ে বললাে, আমাকে ৫০ লাখ
কেন গােটা দুনিয়াটা দিলেও শান্তিকে আমি ভুলতে পারবাে না। এই বলে হৃদয়
বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলাে।
-বাবা রেগে শান্তির কাছে গিয়ে বললাে, ঐ ফকিরের
বাচ্চার সাথে তােমার বিয়ে হবে না।
-শান্তি কাঁদতে কাঁদতে বললাে, বাবা,
আমি হৃদয়কে ছাড়া বাঁচবাে না। সে । আমার জীবন। সে আমার মরণ ।
-আজ থেকে এ
ঘর থেকে বের হওয়া বন্ধ । বিয়ের পর এখান থেকে বের হবে। আমি তােমাকে কথা
দিলাম আমার শাহানারা পারভীন কমপ্লেক্সের ম্যানেজার যে হবে তার সাথে তােমার
আমি বিয়ে দিব। কালই আমি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিবাে
-না বাবা আমি কক্ষণও
বিয়ে করবাে না, তুমি বিয়েতে রাজি না হও তাহলে আমি ঐ ফকিরের বাচ্চা
হৃদয়কে খুন করে ফেলবাে। আর যদি রাজি হও তাহলে হৃদয় বেঁচে যাবে । এই বলে
বাবা ঘরের বাইরে যেতেই শান্তি বললাে, দাড়াও বাবা আমি রাজি তবুও হৃদয়কে
মেরাে না।
-ঠিক আছে তাহলে মারবাে না!
-শান্তি সারা দিন রাত না খেয়ে কাদে
হৃদয়ের চিন্তায় ।
-শান্তির মাও কাঁদে।
-পূরের দিন সকাল ১০টার সময় বাবু
চেয়ারে বসে বসে ‘ইনকিলাব' পত্রিকা পড়ছে। আর হৃদয় শুয়ে শুয়ে শুনছে।
বাবু হঠাৎ অবাক হয়ে বললাে, দেখ বন্ধু একটা দারুণ খবর।
-হৃদয় বললাে, পড়ে
শােনা।
-বাবু পড়ছে।
-ঢাকায় বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মােঃ আশরাফ চৌধুরীর নতুন
শাহানারা কমপ্লেক্স উদ্বোধনের পর একজন সুদর্শন অবিবাহিত এবং শিক্ষিত
ম্যানেজার নিয়ােগ করা হবে। বেতন মাসিক ৪০ হাজার টাকা। উচ্চতা হতে হবে ৫
ফুট ১০ ইঞ্চি। তার সাথেই আশরাফ চৌধুরীর মেয়ের বিয়ে দেওয়া হবে।
-হৃদয়
লাফ দিয়ে উঠে বললাে, আমি যাবাে শাহানারা কমপ্লেক্সের ম্যানেজার হতে। তবুও
ওর বাবাকে রাজি করাবাে ।
-বাবু বললাে, যা দোস্ত আমার বিশ্বাস তুই পাবি ।
-কিছুক্ষণ পর বাসায় একটি চিঠি এলাে । চিঠিটি লিখেছে বগুড়া থেকে চায়নার
বাবা ।।
-লিখেছে হৃদয় তুমি জলদি এসাে, চায়নার ব্লাড ক্যানসারে মৃত্যু
হয়েছে ।
-হৃদয় আশ্চর্য হয়ে বললাে, কি! চায়না তাহলে মারা গেলাে। আমার
খুব দুঃখ হচ্ছে চায়নার জন্য। যেতে পারলাম না। চায়নাকে দেখতে । যদি
ইন্টারভিউ না হতাে, তাহলে যেতাম। যাক যা হবার হয়েছে ।
-দু'দিন পর আশরাফ
চৌধুরীর শাহানারা কমপ্লেক্সে ম্যানেজার নিযুক্ত করা ।
-আশরাফ চৌধুরীর
পারসােনাল লােক বললাে, স্যার শাহানারা কমপ্লেক্সের ম্যানেজার খুব ভাল এবং
বিজ্ঞজ্ঞ । আমার বিশ্বাস এই ছেলে থাকলে এই ব্যবসায় আমাদের অল্প সময়ে
উন্নতি করে দিতে পারবে ।
-আশরাফ চৌধুরী হাসতে হাসতে বললাে, ছেলেটি দেখতে
কেমন? সুন্দর চেহারা, যেমন লম্বা, তেমন ফিটেস্ট বডি। আমার মেয়েকে আমি কথা
দিয়েছি সেই ছেলের সঙ্গে আমি মেয়ের বিয়ে দিব। আমার মেয়েকে আজকে গিয়ে
খবর দিব।
-বাবা শান্তিকে গিয়ে বললাে, ম্যানেজার নিযুক্ত করা হয়েছে।
-কালই
তােমাদের আমি বিয়ের ব্যবস্থা করবাে।
-আজ আশরাফ চৌধুরী সেই সুদর্শন যুবক
ম্যানেজারের সাথে দেখা করবে।
-আশরাফ চৌধুরী বললাে, শাহানারা কমপ্লেক্সের
ম্যানেজারকে ডেকে নিয়ে এসাে। আমার অফিসে। এই বলে তিনি কি যেন জরুরী কাগজ
পড়ছেন। ম্যানেজারকে নিয়ে এসে বললাে, স্যার নিয়ে এসেছি। বলার সঙ্গে আশরাফ
চৌধুরী ম্যানেজারের দিকে তাকিয়ে রাগ হয়ে বললাে, তােমাকে আমি ডাকিনি তুমি
কেন এসেছাে ।
-হৃদয় মুচকি হাসতে হাসতে বললাে, আমিই এই শাহানারা
কমপ্লেক্সের ম্যানেজার।
-ম্যানেজার? আশ্চর্য হয়ে ভাবতে লাগলাে, সত্যিই
হৃদয় আমার মেয়েকে প্রাণের চেয়েও বেশী ভালবাসে। তাছাড়াও তার যােগ্যতা
তাকে ম্যানেজার বানিয়েছে।
-আশরাফ চৌধুরী হাসতে হাসতে বললাে, সত্যিই তুমি
যােগ্য প্রেমিক, যােগ্য ছেলে এবং শান্তির জন্য তুমিই যােগ্য।
-আগামীকাল বিয়ের
আয়ােজন করা হলাে, অনেক লােক, খেয়ে চলে গেলাে ।
-শান্তি ঘরে বসে কাঁদছে।
তাকে সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছে। ঘর আরাে সুন্দর করে সাজিয়েছে। রাত ১০টা,
হৃদয় ঘরে ঢুকে দেখে তার শান্তি কত সুন্দর করে সাজিয়ে ঘােমটা দিয়ে বসে
আছে । হৃদয় দরজা লেগে দিল শান্তির প্রাণ কেঁপে উঠল । বুকের ধক ধক শব্দ
বেড়ে গেল। মনে হচ্ছে বুকে হাতুড় পিটছে। হৃদয় কাছে গেলে শান্তি বললাে,
খবরদার আমাকে ছােবে না । আমি একজনকে ভালবাসি । হৃদয়কে ছাড়া আমি কাউকে
বিয়ে করবাে না। ইসলামের দৃষ্টিতে মেয়ে রাজি না থাকলে বিয়ে হবে না। আমিও
রাজি নই।
-হৃদয় শান্তির কথা শুনে ভীষণ খুশি । হৃদয় গলার স্বর পাল্টিয়ে
বললো, আজ তােমাকে রাজি করেই তােমার সাথে বাসর ঘর করবাে। আমি মরে গেলেও
পারবে না। পারবাে কি না দেখাে। এই বলে হৃদয় শান্তির সামনে বসে ঘােমটা
তুলতেই শান্তি আশ্চর্য । হৃদয় তুমি। তুমি এখানে কেন?
-হৃদয় হাসতে হাসতে
বললাে, আমিই শাহানারা কমপ্লেক্সের ম্যানেজার ।
-শান্তি খুশিতে হৃদয়ের বুকে
মারতে মারতে বললাে, এই দুষ্ট আমাকে আগে বলনি কেন? -তােমাকে ছারপ্রাইজ
দিলাম। আগে বলাে, রাজি কি না? ৫০০ বার রাজি। তুমি বসে বসে গােন আমি বলছি ।
থাক থাক বলতে হবে না, শুধু তিন বার বল। রাজি, রাজি, রাজি।
-ব্যাস আর
তােমাকে কিছু করতে হবে না। এই বলে হৃদয় শান্তিকে শুইয়ে দিল ।
-হৃদয়
বললাে আজ তােমাকে অন্য এক ধরনের ভালবাসা দিব নিবে না? -শান্তি লজ্জায় মাথা
নেড়ে বললাে, হু নিবাে।
-হৃদয় লাইট বন্ধ করে দিলাে, শান্তি ভয়ে হৃদয়কে
জড়িয়ে ধরলাে । হৃদয় শান্তিকে আরাে শক্ত করে জড়িয়ে ধরল ভিন্ন ধরনের
ভালবাসা দিবার জন্য। সত্যিই ইসলাম ধর্ম একটি সুখ শান্তিপূর্ণ পূর্ণাঙ্গ
জীবন বিধান। হৃদয় শত অশান্তি পার হয়ে আজ সারাজীবনের জন্য পেলাে হৃদয়ের
শান্তি। কাল থেকে শুরু হবে তাদের ভিন্ন রকমের Love।



কোন মন্তব্য নেই