লাভ (উপন্যাস) পর্ব-১০
লাভ
এম, আব্দুল্লাহ আল মামুন
উপন্যাস(পর্ব-১০)
হৃদয় বাবুকে বললাে, চল তােকে একদিন আমাদের বাড়ি নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম
কাল তােকে নিয়ে যাব। এখানে আমার ভাল লাগছে না। ৭/৮ দিন বাড়ি থেকে এলে
মনটা ভাল লাগবে।
বাবু ভাবলাে, ঠিক আছে বাড়ি থেকে এসেই না হয় ক্ষমা
চাইবাে। ওর বাড়ি থেকে আগে ঘুরে আসি ।
-হৃদয় বললাে, বাবু চুপ করে আছিস কেন
যাবি না আমাদের বাড়ি? আমরা আসলে খুব গরিব। গরিব মানুষের বাড়ি কেউ যেতে
চায় না। এটাই বড় দুঃখ।
-বাবু বললাে, আমি কি তােকে বলেছি যাব না? যাব
কালকেই তােদের বাড়িতে যাব।
পরদিন ভাের বেলা দু’জন বের হল বগুড়ার
উদ্দেশ্যে। দুপুর ২টার দিকে বাড়ি পৌছে। এখন তাড়াতাড়িই ঢাকা থেকে আসা
যায় যমুনা সেতু হওয়ার পর । তাছাড়া আগে সারাদিন লাগতাে ঢাকা থেকে বগুড়া
আসতে। হৃদয় বাড়িতে গিয়ে মাকে সালাম করে বললো, মা আমার সেই বন্ধুকে নিয়ে
এসেছি যে বন্ধুকে বার বার আনতে চাই কিন্তু হয় না। এবার এনেছি।
-মা হাসতে
হাসতে বললাে খুব ভাল করেছিস যা ঘরে নিয়ে যা ।
-হৃদয় বাবুকে বললাে চল ঘরে
চল।
-ঘরে গিয়ে হৃদয় বললাে, দেখেছিস আমাদের বাড়ি কত পুরাতন। আমরা কত
গরিব।
-বাবু বললাে, এই, আর কোন দিন গরিব গরিব করিব না। আর একবার গরিব বললে
আর তাের সাথে কথাই বলবাে না।
-ঠিক আছে বন্ধু আর বলবাে না। হাত মুখ ধুয়ে
আয় ঐ যে বাহিরে টিউবয়েল । বাবু বললাে হাত মুখ ধুতে গেলে হৃদয় মার কাছে
গিয়ে বললাে মা জুসি কোথায়? ওর এক বান্ধবীর বাড়ি যাওয়ার কথা বলে গেল ।
-সারা দিন দৌড়ে বেড়ায় বাড়িতে আসলেই দিব মার। কলেজে উঠেছে তবুও এভাবে
চলাফেরা করে। -বাবু ও হৃদয়কে মা ভাত খাওয়ালাে ।
-হৃদয় বললাে একটু ঘুমা।
-ঘুমাবাে না আমি একটু তােদের গ্রাম দেখতে যাব।
-নারে
তােদের গ্রামটা খুব সুন্দর । আরাে দুই তিন দিন থাকতে ইচ্ছে করছে।
-একটু
দাড়া আমি আসছি।
-তােকে যেতে হবে না আমি একাই যেতে পারবাে।
কি ভাবে যাবি?
যেদিক দিয়ে যাব সেই দিক দিয়েই আসবাে। যতই কঠিন রাস্তা হােক ভুল হবে ।
হৃদয় বললাে, ঠিক আছে যা তবে সাবধানে যাস । ঠিক আছে সবসময় সাবধানে যাব। এই
বলে বাৰু একাই খালি পায়ে বের হল। খুব সুন্দর গ্রাম, বাবু গ্রাম খুব
ঘুরেছে। এই গ্রাম তাকে খুব সুন্দর লেগেছে। কত সুন্দর মনরম পরিবেশ। সামনে
যেতেই দেখে কি সুন্দর পেয়ারা বাগান। পেয়ারা বাগানের মধ্য দিয়ে যেতেই
বাবুর গায়ে ধপ করে একটা পেয়ারা পড়ল।
ইস্ কে পেয়ারা মারলােরে পিছনে ফিরে
দেখে দু’জন মেয়ে পেয়ারা দিয়ে পেয়ারা পড়ছে। বাবুর গায়ে পেয়ারা পাড়া
দেখে যে মেয়ে পেয়ারা মেরেছে। লজ্জায় চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। আর যে
মেয়েটি তার সাথে ছিল সে ভয়ে দৌড়।
বাবু রেগে মেয়েটির কাছে গিয়ে দেখে কি
অপূর্ব মেয়ে। বাবু মেয়েটির অপরূপ চেহারা দেখে রাগ তাে দূরে থাক কথাই
বলতে পারছে না। শুধু বিনা পলকে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে অতীতে সে অন্ধ ছিল।
আজ সে নতুন করে পৃথিবী দেখছে । ভাবতেই পারেনি এত সুন্দর মেয়ে এই দুনিয়ায়
আছে। যেন মনে হচ্ছে টকটকে আপেল । মেয়েটি বাবুর নেশাপূর্ণ চোখে তাকিয়ে
থাকা দেখে লজ্জায় বাড়ির দিকে দৌড় দিল। বাবুর মাথা বিগড়ে গেছে মেয়েটিকে
দেখে । বাবু ওখানেই পেয়ারা গাছের নিচে বসল মাথায় হাত দিয়ে। সত্যিই একটি
সুন্দর মেয়ে পৃথিবীকে সুন্দর করে তােলে। মনে হয় পৃথিবাটা খুব সুন্দর।
বাবু বাড়িতে গেলে হৃদয় বললাে, কিরে বাবু আমাদের গ্রামটা কেমন লাগল?
তােদের এই গ্রামের মত গ্রাম আজ পর্যন্ত কোথাও দেখিনি। ভবিষ্যতে দেখবও না।
বন্ধু তাের সাথে একটা কথা আছে আয় ঘরে আয় বলছি। ঘরে গিয়ে বাবু বললাে,
তােদের গ্রামে সুন্দর একটা জিনিস আছে ঐ জিনিসটা আমি পেতে চাই।
কি জিনিস বল ।
তােকে এনে দেওয়ার চেষ্টা করব।
শুধু নেওয়া নয়, সারা জীবনের জন্য নিব ।
আচ্ছা ঠিক আছে তােকে সারা জীবনের জন্য দেওয়ার চেষ্টা করব।
ঐ যে তাের মা
ডাকছে যা শুনে আয় তারপর বলবাে। ঠিক আছে।
-হৃদয়কে বললাে, যা দোকান থেকে এক কেজি চিনি নিয়ে আয়।
-টাকা দাও আনছি।
তাের বাবার সার্টের পকেটে আছে নিয়ে যায় ।
-হৃদয় চিনি আনতে গেলাে।
-মা
জুসিকে বললাে যা তাের এক ভাই এর বন্ধুকে ভাত খাওয়া।
-জুসি বললাে ভাইয়ার
বন্ধু মানে?
-তাের ভাই-এর সাথে তার বন্ধু এসেছে।
খাওয়াচ্ছি বলে জুসি জগে
পানি ভর্তি করে ঘরে ঢুকতেই জান চমকে উঠল। সেই ছেলেটি?
জুসির পা কাঁপছে।
বাবু দেখেও আশ্চর্য । অসম্ভব ব্যাপার সেই মেয়েটি এখানে! তাহলে এই মেয়েটিই
কি হৃদয়ের বােন।
বাবু বললাে, ওখানে দাঁড়িয়ে আছাে কেন এদিকে এসাে।
-জুসি
লজ্জায় তার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।
-তােমার নাম কি?
-ফারহানা ইয়াসমিন
(জুসি)
-তােমার নামটা খুব মিষ্টি। চেহারা আরাে মিষ্টি ।
-বলতেই জুসি হাতের
একটি পেয়ারা বাবুকে মেরেই দৌড়। বাবু হাসতে লাগলাে।
-মা আমি ঐ ছেলেকে
খাওয়াতে পারবাে না ।
-মা হাসতে হাসতে বললাে, কেন লজ্জা পেয়েছিস না? ঠিক
আছে আমিই যাচ্ছি। বাবুর কাছে মা গিয়ে বললাে, আমার মেয়েটা খুব লাজুক,
ছেলেদের সামনে যেতেই চায় না। খুব লজ্জা পায় ।
-বাবু মুচকি হাসছে।
-মা ভাত
খাওয়ালাে ।
-হৃদয় চিনি নিয়ে এসে বললাে, বল বাবু কি জিনিস নিবে।
-আর
বলবাে না। তােকে বললে সর্বনাশ হয়ে যাবে। বললি আমার আপত্তি নেই।
-বাবু
বললাে, সত্যি সুন্দরী মেয়ে স্বাগত অতিথি ।
-হৃদয় আশ্চর্য হয়ে বললাে,
কিরে তুই দেখি মেয়েদের পক্ষে কথা বলছিস।
-মাঝে মাঝে বলতে হয় ।
-জুসিকে আজ
কেমন যেন খুব আনন্দ লাগছে। কি যেন এক চিন্তা মাথায় ঘুর ঘুর করছে।
-আজ
রাতে জুসির ঘুম আসছে না। শুধু মনে পড়ছে একটি কথা। নামটা খুব মিষ্টি।
চেহারা আরাে মিষ্টি । বাবুর চেহারা খারাপ নয় লম্বা চওড়া স্মার্ট।
-রাতে
বাবু ও হৃদয় একঘরে । মা ও জুসি এক ঘরে, বাবা এক ঘরে ।
-বাবু ভাবছে আজ রাতে
জুসিকে ডাক দিয়ে তার ভালবাসার কথা বলবাে। কিন্তু কি করে সম্ভব । সে যদি
মাকে ডাক দেয় তাহলে মান সম্মান সব শেষ। যা হয় হবে ভালবাসতে ভয় করলে হবে
না ।
-এই বলে বাবু চুপ চুপ করে উঠে দরজাটা টেনে খুব কষ্ট করে খুললাে।
-জুসি
ঘুমায়নি । দরজা খুলে বাবু ভিতরে ঢুকতেই জুসি উঠে বসলাে।
-বাবু ঢুকেই
নিজের মুখে আঙ্গুল দিয়ে জুসিকে চুপ করতে বললাে।
-জুসি ভয়ে কাঁপছে । যদি
মা উঠে তাহলে সর্বনাশ।
-বাবু হাতের ইশারা দিয়ে জুসিকে ডাকলো।
-জুসি হাতের
ইশারা দিয়ে বললাে যাব না।
-বাবু জুসির কাছে গিয়ে হাত ধরে বাহিরে নিয়ে
এলাে। বাহিরে এসে জুসি ভয়ে ভয়ে বললাে, কি বলবেন বলুন। -কি বলবাে তুমিতাে
জানই ।
-জানি না।
-আমি তােমাকে ভালবাসি। তােমাকে ছাড়া আমি বাঁচবাে না ।
-ভয় হয়।
-সব ভয় আমি দূর করে দিবাে।
-ভাইয়া যদি মেনে না নেয়?
-আমি
মানিয়ে নিব।
-বাবা, মা?
-তােমার বাবা, মাকে রাজি করার দায়িত্ব আমার ।
-জুসি আর প্রশ্ন না করে বাবুর দিকে তাকিয়ে আছে।
-বাবুও তাকিয়ে আছে । জুসি
বাবুকে জড়িয়ে ধরে বললাে I Love you বাবু
I Love
you.
-বাবুও জুসিকে বুকে জড়িয়ে ধরে বললাে I Love you জুসি I Love you.
-ছাড়ো মা জানতে পারলে সব শেষ। কালকে কথা বলবাে।
-ঠিক আছে যাও। কাল অবশ্যই
কথা বলবে।
-জুসি আচ্ছা বলে ঘরে গেলাে।
-বাবুও ঘুমালাে । পর দিন সকাল ১০টার
সময় হৃদয় জুসিকে বললাে, যা গ্রামটা বাবুকে ভাল করে দেখে নিয়ে আয়।
-জুসি
মনে মনে খুশি হয়ে বললাে, ভালই হলো।
-বাবুও খুব খুশি ।
-জুসি বাবুকে নদীর
পাড়ে নিয়ে গেলাে।
-জুসি বললাে, এখানে বসাে।
-এখানে?
-এখানে কিভাবে বসবাে।
-এখানেই বসতে হবে এই বলে বাবুর হাত ধরে বসিয়ে দিল ।
-ইস্ প্যান্ট মেখে
গেলাে।
-যাক, আমি ধুয়ে দিবাে।
-দু'জন গল্প করতে করতে জুসি বললাে, তােমার
সাহসতাে কম নয়।
-কেন?
-কাল রাতে কোন সাহসে আমাকে ডাকতে গিয়েছিলে । যদি
আমি মাকে ডাক দিতাম।
-তুমি ডাক দিবে না আমি জানি কারণ তুমি আমাকে ভালবাস ।
-তুমি কিভাবে বুঝতে পারলে, আমি তােমাকে ভালবাসব?
-মেয়েদের চোখ দেখলেই বুঝা
যায় মেয়েরা কি চায় । তাছাড়াও যদি আমাকে তুমি পছন্দ নাই করতে তাহলে কাল
ঘরে গায়ে পেয়ারা মারতে না।
-উত্তর দিয়ে বাবু বললাে, তোমার সাহস তাে কম
নয়।
-আমি আবার সাহস দেখালাম কি?
-আমি তােমাকে একদিন না যেতেই ভালবাসার
প্রস্তাব দিলাম। তুমি মেনে নিলে কেন? আমি ভাল না খারাপ তাও একবার দেখলে না ।
-তুমি যে ভাল আমি আগে থেকেই জানি।
-কিভাবে জানলে?
-ভাইয়া যতবার বাড়িতে
আসে ততবার তােমার কথা বলে এবং তােমার প্রশংসা করে। তাছাড়াও আমার ভাই কোন
সময় খারাপ ছেলেদের সঙ্গে বন্ধুত্ব
-বাবু বললাে, তাহলে দু'জনের সাহসেই কাল
রাতের ঘটনা ঘটেছে।
-জুসি বললাে, চলাে বেশীক্ষণ এখানে থাকা ঠিক হবে না।
মানুষ দেখলে খারাপ ভাববে। বার এটা গ্রাম, তােমাদের মত শহর নয়। যেখানে
সেখানে গল্প করলে কেউ কিছু বলে না।
-ঠিক আছে চলাে সুযােগ পেলে ঘরে গিয়ে
গল্প করবাে।
-এভাবে দু'জনে আনন্দে কাটালাে ৫/৭দিন ।
-হৃদয় বললাে, চল আর
থাকবাে না কালই চলে যাব।
-ঠিক আছে
থাক। পরদিন হৃদয় তার বাবার সাথে হাটে গেছে। হৃদয়ের বাবা মা, বাবুকে খুব
পছন্দ করেছে। বাবুর সাথে জুসি রসিকতা করা দেখে মা বলে কিরে সামনে যেতে
পারিসনা আবার এতাে গল্প শিখলি কোথা থেকে ।
-মা রান্না করছে বাবু শুয়ে
শুয়ে গল্পের বই পড়ছে। জুসি গিয়ে বাবুর পাশে বসে বললাে কি বই পড়ছাে ??
-গল্পের বই।
-বই হাত থেকে কেড়ে নিয়ে বললাে, এখন গল্পের বই পড়া বাদ। কাল
তুমি চলে যাবে আমাকে কিছুই ভাল লাগছে না।
-কেন প্রতি সপ্তাহে একটি করে চিঠি
দি -অবশ্যই দিবে । না দিলে মনে করবাে তুমি আমাকে ভুলে গেছ। -তােমাকে ছাড়া
আমি অন্য কাউকে ভাবতে পারি না। পারবও না। তুমি শুধু আমার । অনেক কষ্টে
তােমাকে আমি খুজে পেয়েছি। তােমাকে ছাড়া আমি বাঁচবাে না জুসি ।
-জুসি
বললাে আমিও তােমাকে ছাড়া এক মুহূর্ত বাচবাে না বাবু। বাবুর জন্ম শুধু আমার
জন্যই হয়েছে। এই বলে জুসি বাবুর বুকে মাথা রাখলাে। বাবু জুসিকে জড়িয়ে
ধরে বসে দু’গালে চুমু খেতে লাগলো, কিছুক্ষণ পর জুসি সইতে না পেরে বললাে, এই
ছাড়াে, হয়েছে।
-নিঃশ্বাসের মধ্যে বাবু বললাে, না আর একটু।
-বাবু বললাে,
তােমার মা আমাকে হাত দিয়ে তুলে খেতে নিষেধ করেছে।
-ঐ যে বললাে, বাবুকে ভাত
খাওয়া। তাই তুমি আমাকে খেয়ে না দিলে খাব
-যদি মা আসে?
-আসবে না।
-জুসি
বাবুকে ভাত খাইয়ে দিল ।
-খেয়ে দেয়ে বাবু বললাে, এত সুন্দর করে ভাত কোন
দিনও খাইনি।
-বিয়ের আগে আর খেয়ে দিম্ব না । বুঝলে। এটাই শেষ।
-পরদিন সকালে
বাবু ও হৃদয় রওনা হলাে ঢাকার উদ্দেশ্যে। এই যাওয়াতে সবচেয়ে বেশী কষ্ট
হলাে জুসির। আগে শুধু ভাই যাওয়াতে কাঁদতাে। আজ ভাই ও ভালবাসা যাওয়াতে তার
চেয়ে অনেক বেশী কাদছে।
চলবে................


কোন মন্তব্য নেই