বাস্তবতার পরশে (নব কুমার) কবিতা।
গদ্য কবিতা
আজকের মহাভারত
উন্নয়নশীল থেকে উন্নত-এর পথে আমার ভারত..
সভ্যতার চাকা এগিয়ে চলেছে আলোর গতিতে
আধুনিকতার প্রখর তেজে সবটাই ঝাপসা
দৃষ্টিভঙ্গি ঠেকেছে তলানিতে , যেনো মরিয়ানা খাত
মানসিকতার নদীতে আজও আসেনি জোয়ার
শুধুই ভাটা আর ভাটা..
তবুও আমরা সভ্য, উন্নত, আধুনিক..!
আধুনিক ভারতের বুকে আজও জীবন্ত
সুপ্রাচীন মহাভারতের চরিত্রেরা..
ক্রমাগত চলছে কৌরব-পান্ডবের গৃহযুদ্ধ
সমাজকে খুবলে খাচ্ছে সেই দিনের শকুনিরা
আজও চক্ষুলজ্জার শিকার শত শত কুন্তী
ডাস্টবিনের ধারে হঠাৎ করেই দেখতে পাওয়া যায় কর্ণদের
কিছুই বদলায় নি সবটা আগের মতোই
তবুও আমরা সভ্য, উন্নত আধুনিক..!
সমাজের বুকে আজও রমরমিয়ে চলে দ্যূতক্রীড়া
বাজি ধরা নয় অসহায় দ্রৌপদীদের
সর্ব সমক্ষে খুলে নেওয়া হয় শরীরের কাপড়..
আহা! শরীরের কি লাবণ্য, জিভে আসে জল
উন্মত্ত ভাবে এগিয়ে আসে দুঃশাসনের দল
আজ নেই শুধুই লজ্জা বস্ত্র এগিয়ে দেওয়ার লোকটি
তবুও আমরা সভ্য, উন্নত, আধুনিক..!
সমগ্র সমাজই আজ ধৃতরাষ্ট্রে পরিণত
গান্ধারীরও দেখা মেলে ন্যায়ালয়ের চার দেওয়ালে
চোখে তাঁর শক্ত করে বাঁধা কালো কাপড়
মাথা উঁচু করে বুক ফুলিয়ে হেঁটে বেড়ায় দুর্যোধনেরা
দেখা নেই শুধুই সেদিনের শ্রেষ্ঠ ধনুর্ধর অর্জুনের
আজও প্রতিপদে চক্রব্যূহে পড়তে হয় অভিমন্যুদের
তবুও আমরা সভ্য, উন্নত, আধুনিক..
গদ্য
কবিতা
শতরঞ্চ_কা_খেল!
দুর্যোগের সমস্ত অন্ধকার ঘুচিয়ে
ঊষার অরুণ উঠবে হেসে!
সেই আশাতে গুনছি দিন, জানি প্রকৃতিও সমব্যথী
মনে তবুও জমাট বাঁধে আশঙ্কার ভীড়
ক্রমাগত কানের কাছে তাচ্ছিল্যের সুর তোলে
"তোরা উন্নত সমাজের বাসিন্দা" একথা যায় বলে
তীব্র কম্পন অনুভূত হয় হৃদয়প্রাচীরে ;
সবটা ওলটপালট হয়ে আসে, তলিয়ে যায় আঁধারে!
বিস্তীর্ণ দৃষ্টিপথে শুধুই চলছে "শতরঞ্চ কা খেল"!
অগণিত শোষিত লাঞ্ছিত সৈনিকের দল
শুধুই নেচে চলেছে রাজা-মন্ত্রীর আঙুলের ইশারায়
হীনবুদ্ধিতায় প্রতিনিয়ত পা দিচ্ছে প্ররোচণায়!
রক্তের সোঁদা গন্ধে ভরে উঠেছে যুদ্ধক্ষেত্র..
চারিদিকে মৃতের স্তূপ, রেহাই পায়নি হাতি-ঘোড়াও।
অর্ধমৃত কিছু সৈন্য বাঁচার শেষ চেষ্টায়!
দিনের শেষে হার-জিতের খেলা ভুলে প্রতিপক্ষ ভাই-ভাই..
সেজে ওঠে টেবিল দামী রঙিন পানীয়ের মেলায়
চলে উল্লাস শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ছাদের তলায়।
বিষাদের ছায়া নেমে আসে অসহায় সৈনিকের পরিবারে
আশঙ্কারা আবারও ফিসফিসিয়ে বলে যায় আমারে
ঘুচবে না এই অন্ধকার
কোনোদিনও
তোরা যে স্বার্থ আর
লালসার হোতা
উন্নত দর্শক কিংবা উন্নত শ্রোতা
পদ্য কবিতা
কৃষকই অন্নদাতা
কৃষিপ্রধান দেশে কৃষির কথা
ভূগোল শোনায় অল্প-স্বল্প
ইতিহাসের পাতা জুড়ে শুধুই
শুনি কৃষক শোষণের গল্প।
তোমরা আছো তাই নিশ্চিন্তে
দু'বেলা পাচ্ছি দু'মুঠো অন্ন
তবুও তোমাদের মন্দ কপাল
কেউই করে না তেমন যত্ন।
পুড়ছো রোদে সারাটা বেলা
ঝরাচ্ছো শরীরের ঘাম
তবু চিরটাকাল অবহেলিত
কেউ দেয় না শ্রমের দাম।
শক্ত হাতে ধরছো লাঙল
মাখছো শরীরে কাদা
পাচ্ছ না তবু ফসলের দাম
কিংবা যোগ্য মর্যাদা।
বৃষ্টির জলে ভিজিয়ে শরীর
ফলিয়ে সোনার ফসল
ঋণের টাকা গুনতে গুনতে
গেলো সবটা রসাতল।
পৃথিবী জুড়ে উঠছে স্লোগান
এঁরা ওঁরা সবাই যোদ্ধা
তোমার কথা বলেনি কেউই
জানায়নি কোনো শ্রদ্ধা!
মহামারীর বুকে লাঙল দিয়ে
অন্ন যোগাবেই অন্নদাতা
বুকেতে জ্বালিয়ে বজ্র শিখা
সমাজে তুমিই পরিত্রাতা!
পদ্য কবিতা
হতেই হবে প্রথম
খোকা আমার ভীষণ ভালো
বাংলাতে সামান্যই দুর্বল
গান বাজনাও বাদ নেই তার
ইংরেজিটা চলে অনর্গল।
ফুটবল পায়ে কাঁপায় মাঠ
আর ব্যাডমিন্টনেও সেরা
গানের জগতে নাম করবে
থাকবে গুণী জনে ঘেরা।
পিয়ানোর রিডে ছন্দ তোলে
অঙ্কটাও করে তুড়ি মেরে
ছবিটা আঁকে ভীষণ ভালো
মাইকেল সে ডান্স ফ্লোরে।
হয়ে যাক পৃথিবী ওলট-পালট
সবেতে প্রথম হতেই হবে
নইলে সমাজে থাকবে না মান
অসম্মানে মাথা নোয়াবে।
রেসের মাঠে ছুটছে খোকা
মনে দ্বিতীয় হওয়ার ভয়
মাথার উপর হাজার বোঝা
তবুও আনতেই হবে জয়!
বোঝার ভারে নুইয়ে পড়েছে
খোকার নরম শিরদাঁড়া
এগিয়ে তাকে যেতেই হবে
পেরিয়ে বিপদের খাঁড়া।
জীবন দৌড়ে জিতলো খোকা
মেডেলে ভরে উঠলো ঘর
মানুষ হওয়ার শিক্ষার অভাবে
আজ তোমরাই হলে পর!
পদ্য কবিতা
পৌঁছে যাবে উপকূলে
এগিয়ে ওরা নাই-বা আসুক
হবো নিজেই নিজের সান্ত্বনা
পাহাড় কেটে এগিয়ে যাবো
সইবো নাকো আর গঞ্জনা।
সাথে আছি, পাশে আছি
সবই কথার কথা জেনো
কাঁচের ভীড়ে হিরে খানি
একটু সময় নিয়ে চিনো।
দুখের মাঝে হাত পাবেনা
সুখে বসে লোকের মেলা
সব কিছুই উপেক্ষা করে
তুমি ভাসাও জীবন ভেলা।
ভিতরের পৃথিবীটা চিনে নিয়ে
বয়ে চলো স্রোতের প্রতিকূলে
বাইরের জগতও নিজের হবে
তুমি পৌঁছে যাবেই উপকূলে।
ভাবো যদি এসব কাব্যকথা
বাস্তবে এতোটাও সহজ নয়
কুমার ঠাকুরের বাণী টেনে
কয় "যে সয়, সে-ই রয়"!!
কবিতা
কেন আজও থমকে সমাজ
মৃগশিরা নক্ষত্রের চতুর্থপদে ধরিত্রীও হয় ঋতুমতী
বিধবা নারী বিধান মানেন, না মানলেই যে ক্ষতি।
ঢেকে যায় দেবীরও মুখমণ্ডল লজ্জা বস্ত্রের ভারে
সমাজ তাকেও এই কয়দিন রাখে একঘরে করে।
তাঁরাও করেন আর্তনাদ তবে শোনা যায় না সর্বত্র
তবে সবটাই এই ব্যর্থ কবির আজব কল্পনা মাত্র।
ধরিত্রী তো নির্জীব, আমরা জীবের কষ্টই বুঝি না!
মাসের পাঁচদিন নিশ্চুপ ভাবে নারীরা সয় যন্ত্রণা।
ভাগ করি না ব্যথা তাদের, করি নিয়ম ভাগাভাগি
এই সমাজে সুস্থ মানুষও করে কেবলই পাগলামি।
নারীকষ্ট বোঝে না নারীই, মনেতে কুসংস্কার
শোনা যায় তাঁদেরই কন্ঠে শুধুই আচারবিচার!
অশুচিতা নিয়ে এসো না বাপু মাঙ্গলিক কাজে তুমি
লাঞ্ছনা আর গঞ্জনায় কাঁপে কিছু নারীর মনোভূমি।
সময় এসেছে, এবার পাল্টে ফেলো অন্তর্দৃষ্টি
অপবিত্র হয় না কখনও যা ঘটায় নূতনের সৃষ্টি।
শুনেছি বছরে একবার দেবীও নাকি হন ঋতুমতী
তবু কেন থমকে সমাজ আজও নেই অগ্রগতি
পদ্য কবিতা
শিক্ষার আলো হোক উপহার
আইনের পাতায় আছে লেখা
শিশুশ্রম নাকি ভীষণ অপরাধ
তবু না রাখলে শিশুশ্রমিক
পূরণ হয়না বাবুদের সাধ।
আমার সন্তান থাক দুধে-ভাতে
বাকিরা সবাই চুলোয় যাক
তোমরা যতই করো কাব্যকথা
পথের শিশু পথেই থাক।
ওরা চাইলে টাকা রাস্তা-ঘাটে
কাজের কথা শোনাই ওদের
বন্ধ হোক শিশুশ্রম সমাজে
তবু এটাই ভাষা প্রতিবাদের!
মুখে তবু প্রতিশ্রুতির জোয়ার
ভাবিনা পথের শিশুর কথা
শিশুর অবস্থান আজ তাই
স্টেশন কিংবা ইঁট ভাঁটা।
শিশুরা নরম কাদার তাল
আর আমরা হলাম মৃৎশিল্পী
করবো যত্নে লালন পালন
এটাই হোক সবার প্রতিশ্রুতি।
আজকের শিশুই হবে ভবিষ্যতে
নূতন সমাজ গড়ার কারিগর
কেমন সমাজ চাও সকলে
চিন্তা করো অতি সত্বর।
পথের শিশুর রাখবো খেয়াল
সবার এটাই হোক অঙ্গীকার
শ্রমের বোঝা পড়ুক খসে
শিক্ষার আলো হোক উপহার!
পদ্য কবিতা
থমকে গেছে ন্যায়ের চাকা
সমাজের গগনে হিংসার মেঘ
ঝরছে কেবলই রক্তের বৃষ্টি
মিথ্যার জোয়ারে পিচ্ছিল পথ
অবরুদ্ধ হয়েছে সত্যের সৃষ্টি।
থমকে গেছে ন্যায়ের চাকা
ছুটছে অবাধ গতিতে অন্যায়
ব্যস্ত সকলেই পিঠ বাঁচাতে
পাছে মুখোশখানি খসে যায়।
কারো দিন কাটে পরিশ্রমে
জল হয় শরীরের রক্ত
না খেটেই বসে সিংহাসনে
যারা পা চাটার অন্ধভক্ত।
সম্মুখে চলে ভীষণ দলাদলি
ভাবটা সাপে নেউলের মতো
মিশছে দুই মেরু অগোচরে
মাঝের জন পিষে ক্ষতবিক্ষত!
সবের পিছনেই লুকিয়ে স্বার্থ
উঁকি দিয়ে যায় অবশেষে
বিপদের দিনে একলা তুমি
কেউ কাছেও আসেনা ঘেঁষে।
সকলের তরে সকলে আমরা
ওসব কাব্য কথাতেই থাকে
বাস্তবের ছবিটা আলাদা ভীষণ
কেই-বা কার খোঁজ রাখে।
পদ্য কবিতা
বেশ্যার মনের কথা
বুকের ভিতর গুমোট মেঘ চোখে আসে না বৃষ্টি
সমাজ করেছে নারীমন খুবলে বেশ্যা বৃত্তির সৃষ্টি।
জেনো কোনো কালেই খুঁজিনি আমি যৌনতৃপ্তির সুধা
পেটের জ্বালা মেটাতে আজ অন্যের মেটাই ক্ষুধা।
কামোন্মত্ততার নাটক করি রেখে মনের ব্যথা চেপে
বাবুরা দেখে বাইরের গঠন ভিতরটা দেখেনা মেপে।
দুঃখ চেপে রোজ সন্ধ্যায় বসে যাই সেজেগুজে
রূপের বহরে যদি একখান খরিদ্দার পাই খুঁজে।
আমার ঘরে আসে না মানুষ আসে শুধুই খরিদ্দার
বেশ্যা বলে পাইনা কদর সমাজ করেছে পরিহার।
দুগ্গামায়ের মূর্তি হয় না আমার ভিটের মাটি ছাড়া
তাই বছরে একবার মানুষ এসে দুয়ারে নাড়ে কড়া।
কলমের কালি নিঙড়ে পড়ুক বেশ্যার মনের কথা
তবুও সমাজ খুবলে খাবে বুঝবে নাকো ব্যথা।
পুরুষচক্ষে মাংসের চেয়ে যদি মনের দাম অধিক হতো
তবে কতো বেশ্যাই না আজ প্রিয়তমার তকমা পেতো।
পদ্য কবিতা
যোগ্যতা নিজ মূল্য খোঁজে
এখন তবে করছিস কি?
পড়াশোনা তো হলো শেষ
এই প্রশ্নটা শুনতে শুনতে
আজ হয়ে গিয়েছে অভ্যেস!
পাবেনা বুঝে নিজেদের মান
যোগ্যতারা নিজ মূল্য খোঁজে
হয় অবহেলিত প্রতিভা আজ
ফুটপাতে কভু অস্থায়ী কাজে।
কোনকাজই ছোটো নয় বলে
যারা সহানুভূতির ঝড় তোলে
পিঠের পিছনে নাক সিঁটকে
তারা উল্টো কথাই যায় বলে।
সততার মুখোশ মুখেতে চড়িয়ে
দুর্বলকে পেশে ওরা জাঁতাকলে
মুখে লেগে অন্যায়ের প্রতিবাদ
লেনদেন চলে টেবিলের তলে।
তোমাদের এই নোংরা খেলায়
কেউ করেছে দড়িকে আপন
কতজন আজও মুখটি বুজে
করছে শুধুই কষ্ট গোপন।
কবিতা (সনেট)
প্রিয়ার প্রতি
হে রমণী ! আমি চেয়ে তব চক্ষুপানে
ওষ্ঠ হতে রক্তিমতা ক্রমাগত ঝরে।
ভুলে গিয়ে নিজ সত্ত্বা থাকি আনমনে
গাত্র জুড়ে লাবণ্যতা শিহরিত করে।
কটিদেশের কম্পন মনে ঝড় তোলে
দুরুদুরু বক্ষে করি প্রেম নিবেদন।
মদনের পুষ্পবাণে ষড়রিপু দোলে
ভাবি এই প্রিয়া বুঝি দিলো নির্বাসন!
কন্ঠ শুনে কর্ণে হলো সুধার বর্ষণ
রাখলে হাতে কোমল হাত দুইখানি।
সুমিষ্ট হাসি জানালো তব সমর্থন
ভুলিয়ে দিলো মুহূর্তে সব আত্মগ্লানি।
এমন ভাবেই প্রিয়া থেকো আজীবন
সহাস্যে কাটিয়ো বাধা ভেঙো নাকো মন!
কবিতা (সনেট)
অনন্তের আস্বাদন
হতাশায় নিমজ্জিত সমাজের বুক
বিক্ষিপ্ত নয়নে তবু স্বপ্নদের ভীড়
খুঁজে চলে ক্রমাগত সাফল্যের নীড়
দমকা বাতাসে হয় পতিত কিংশুক।
মিছে আশার প্রলেপ লাগাতে উৎসুক
বারেবারে বাঁধে বুক তবুও চৌচির
উড়িয়ে ফানুস বৃথা অবনত শির
বেদনার বালুচরে কুড়ায় ঝিনুক!
জীবন সমুদ্রে চলে তরঙ্গের খেলা
কিছু আসে কিছু যায় বিধির বিধানে
তবু এগিয়ে চলাই জীবনের ধর্ম।
ফলের প্রত্যাশা ভুলে ভাসাও হে ভেলা
অনন্তের আস্বাদন মিলবে জীবনে
সুখের সন্ধানে করো কামশূন্য কর্ম!
গদ্য কবিতা
রঙ বদল
ঋতুর ন্যায় মানুষের চরিত্রেও আসে পরিবর্তন..
জমানো অভিযোগ রূপান্তরিত শিলার ন্যায় রূপ পায় অভিমানের।
জীবন-নদীতে চলতে থাকে ক্ষয় আর সঞ্চয় কার্যের খেলা;
ক্রমশ নগ্নী-ভবনে সম্পর্করা হয় ভিতর থেকে দুর্বল।
জীবনমঞ্চের চরিত্রেরা আমাজন অরণ্যের চেয়েও দুর্ভেদ্য!
পিথাগোরাসের সংখ্যাতত্ত্বও মেলাতে পারে না উত্তর
ভাঙনের খেলায় চূর্ণবিচূর্ণ হয় মনের প্রতিটি অণু-পরমাণু!
বধিরতায় আক্রান্ত সমাজ শুনতে পায় না শব্দ।
সুযোগ সন্ধানীরা তবুও বুলিয়ে যায় লালায়িত রসনা!
প্রয়োজন ফুরালে জলাভূমিও হয় মরীচিকা!
অম্লান বদনে চলে রঙ-বদলের খেলা..
অবাক চোখে তাকিয়ে দেখি মুখচোরাদের মেলা।
গিরগিটির ভীড়ে নিজেকে লাগে বড়োই বেমানান!
অভিযোজিত হতে না পারার আফসোস বুকে নিয়ে-
মৃতপ্রায় নদীর বাঁকে একটু ভিজিয়ে নিতে চাই শুষ্ক জীবনটাকে!
খুঁজে নিতে চাই রঙ-বদলের সঠিক সংজ্ঞা!
গদ্য কবিতা
ব্যর্থ প্রমিক
তোর নামে লিখে দিতে চাই আস্ত একটা কাব্য!
তোকে বেঁধে রাখতে চাই আমার কবিতায়;
তোর চোখের ভাষায় লিখতে চাই জীবনের অধ্যায়।
চাওয়া-পাওয়ার মাঝে তবু আলোক বর্ষের ব্যবধান ;
অবশেষে ওঁরা নাম দিয়ে যায় "ব্যর্থ প্রেমিক"!
জানি তোর চাওয়া চিরকাল স্বল্পই "একটু সময়"
তবু বারে বারে তলিয়ে যাই কালের সাগরে!
আমিও চাই তোর কাজল বিহীন চোখে হারিয়ে যেতে;
কখনও বা জুঁইফুলের গন্ধ হয়ে তোর শরীরে মিশতে।
সময়ের কর্পূর উবে রাত্রি আসে নেমে,
আশারা হয় বন্দী হতাশার কালো খামে!
ওঁরা আমায় চেনে "ব্যর্থ প্রেমিক" নামে।
খোলা চোখে তবু আজও খেলি কানামাছি;
মনের ঘরে প্রতিনিয়ত চলে ময়নাতদন্ত!
দুজনায় দাঁড়িয়ে দেখি স্বপ্নদের কাটা ছেঁড়া।
রক্তাক্ত পথে চলতে গিয়ে পিছলে পড়ি
দিনের শেষে নোনতা স্রোতে চলে অবগাহন!
ঘোচে না তবুও ওঁদের দেওয়া নাম "ব্যর্থ প্রমিক"!
গদ্য কবিতা
সামাজিক স্বীকৃতি
"সামাজিক স্বীকৃতি" শব্দটা সকলেরই সুপরিচিত ;
যা নাকি সম্পর্কে এনে দিতে পারে এক আলাদাই মাত্রা।
দুটি মানুষকে চিরকালের জন্য বাঁধতে পারে অদৃশ্য বাঁধনে ;
তবে মনকে বাঁধার উপায় আজও অনাবিষ্কৃত!
এবিষয়ে আপনাদের "সামাজিক স্বীকৃতি"ও বড্ডই অসহায়।
সবটা জেনেও চলছে মরীচিকার বুকেতে জলের সন্ধান;
সাহারার তপ্ত বালুতে প্রতিনিয়ত দগ্ধ হচ্ছে শতশত মন।
মেতে উঠতে বাধ্য হচ্ছে মধ্যরাতের মিথ্যা-উষ্ণতার খেলায়
অবশেষে বালিশ ভিজছে আক্ষেপের বৃষ্টিতে।
তবুও জারি আবেগকে দমিয়ে রাখার বৃথা চেষ্টা!
দুটি মনের মাঝে দেওয়াল তুলেতে চাওয়া হে ব্যর্থ কারিগর!
তোমার কাছে শুধুই একটি প্রশ্ন-"পারো কি মনের প্রাচীর করতে নিশ্ছিদ্র?"
ভিত যদি থাকে শক্ত তোমার দুরমুশও মানবে হার।
নামবে বৃষ্টি ওপারেতে এপারে জমবে জল!
চুঁইয়ে পড়া অনুভূতিতে স্যাঁতসেঁতে হবেই দেওয়াল।
দুটি স্বাক্ষর কিংবা কয়েকটি সাক্ষী গড়ছে সম্পর্কের লাইসেন্স!
স্টিয়ারিং হচ্ছে অনিয়ন্ত্রিত চালকের হস্তগত।
মনের হাইওয়েতে ক্রমাগতই ঘটে চলেছে দুর্ঘটনা!
ইচ্ছেদের মৃতদেহ থেকে ভেসে আসছে পচা দুর্গন্ধ।
তবুও অন্ধ সমাজ আজও হাতড়ে বেড়ায় সম্পর্কের "সমাজিক স্বীকৃতি"!
কোন মন্তব্য নেই