ভালোবাসার সাতকাহন (সামিয়া আক্তার) কবিতা গুচ্ছ।
কবি
সামিয়া আক্তার
মানুষ
বদলে
দিয়েছে চলার গতি
বদলে গেছে জীবন যাপন
বন্দী জীবন বন্ধ দুয়ার ;
চিনতে
হচ্ছে কাছের মানুষ ,
কতাে ছিলাে কতটা কাছে।
ভালােবাসার নতুন সংজ্ঞা দিয়েছে
যে কতাে ভাবে ;
দূরের মানুষ লাশ টানছে
কাছের আপন যাচ্ছে দূরে অসুস্থ
পৃথিবীতে।
মানুষ তুমি মানুষ হও
আবার নতুন করে ।
চেনা মুখ
ভুলে যাওয়া হয়নি কখনও তােমায়
সময়ের
প্রয়ােজনে মনের ভিতর থেকে
চেনা মুখ টা মুছে ফেলার চেষ্টা করেছি মাত্র।
ধুলাে জমেছে তােমার আমার সম্পর্কের মাঝে।
সময়ের ব্যবধানে হারিয়ে গেছে।
আমাদের ভালাে থাকার দিন গুলি ;
আজো ও স্বপ্ন গােরে হারিয়ে ফেলা সম্পর্ককে
খুঁজতে গিয়ে বেখেয়ালি মনে
নিজেকে নিজের মাঝে হারিয়ে ফেলি।
তুমি পারবেই
যদি সুখের সময় মুখ ফিরিয়ে নেয়
যদি বেঁচে থাক ইচ্ছে টা আর নাই বা না জাগে মনে
যদি কষ্টের পৃথিবীতে ধূসর হয়ে পড় তুমি ,
যদি
চলতে গিয়ে হোঁচট খেতে খেতে
ক্লান্ত দেহ আর নাই বা এগিয়ে চলে,
যদি
বিশ্বাস গুলাে ঠুনকো কাঁচের টুকরাে
হয়ে মনে দাগ কেটে দিয়ে যায়
যদি আঁধার
পৃথিবীতে আলাে হারাতে বসে।
যদি কাছের আপন জন পর ভেবে দুরে সরে পড়ে ,
যদি
কখনাে হাতটা টেনে ধরার মতাে কেউ বা পাশে না থাকে
তবে ভেবে নিও তুমি চল
তােমারি আপন শক্তি গুণে।
পিছিয়ে পড়ার ভয় তােমাতে না জাগে ।
পৃথিবী টা
তােমারই হাতে কারণ তুমি পারবেই।
চিলেকোঠার ঘর
চিলেকোঠার সেই ঘরে তুমি এসেছিলে
এক ফোঁটা ভালােবাসার আলাে হয়ে ;
তােমার আলতাে ছোঁয়ার পরশে খুঁজে
ফিরে
পেলাম বিষন্ন জীবনের নতুন মানে।
তােমার প্রতীক্ষার প্রহর গুণতে গুণতে
কেটে যেতো সকল প্রহর।
কখন তুমি আসবে আবার আমার
চিলেকোঠার ছােট্ট সেই ঘরে
এক ফালি
চাঁদের আলাে হয়ে।
বিচিত্র জীবন
সময়ের ব্যবধানে হারিয়ে যায়
কতাে প্রিয়জন ;
ভালােবাসার বাঁধনে আর হয়না বাঁধন
কেউ দূরে সরে যায়
ব্যস্ততার কারণে
কেউ দূরে সরে যায় স্বার্থ পুরালে
কেউ কাছে আসে সময়ের
প্রয়ােজনে
কেউ চলে যায় বড্ড অসময়ে
কেউ বাঁধে মায়ার বাঁধনে
কেউ সম্পর্ক
বাঁধে কিছু পাওয়ার আগে
জীবন বড়াে বিচিত্র ময়।
তারপর ও জীবন সাজে ভাঙা
গড়ার বিচিত্র সাজে।
সম্পর্কের বিভেদ
যদি সম্পর্কের মাঝে বিশ্বাস না
থাকে
তবে মানুষ কেনাে বা তাকে ভালােবাসা বলে ;
যদি দুখের শহরে সুখের হানা
না থাকে
তবে মানুষ মিছে কেনাে বা দুঃখ কে আঁকড়ে ধরে ;
যদি বেঁচে থাকার
ইচ্ছে টা মনে না জাগে
তবে মানুষ কেনাে বা ভালােবাসার স্বর্গ গড়ে তোলে
যদি আলাের মাঝে আঁধারের ছায়া না পড়ে
তবে মানুষ কেনাে বা আলােকে এতাে টা
কাছে টানে।
যদি তােমার মাঝে আমাকে না পাও,
খোঁজে আপন হয়ে কোনাে বা এতাে টা
কাছে এলে
এভাবেই কি চলে সব কিছুতেই সম্পর্কের বিভেদ।
তুমি আছাে সবখানে
তােমার বিচরণ সবখানে
কিভাবে বলাে তুমি নেই আমার মনে ;
তুমি ছিলে আমার শূন্যতায়
তুমি ছিলে আমার
পূর্ণতায় ;
আঁধারের আলােতেও তুমি ছিলে
আলােকিত আলােকেও তুমি ছিলে;
তুমি
বিনে এই মন বাঁচে বল কিভাবে?
মুখরিত কোলাহলে তুমি ছিলে
নিস্তব্ধ নিরবতায় তুমি ছিলে
তােমাতে আমি আর
আমাতে তুমি জুড়ে থাক সারাক্ষণ।
মুখােশ
জীবনের আহবানে সভ্যতাকে সাজিয়ে তুলছি
কতাে না ঢেলে
ধ্বংসের স্তুপে পরিণত আধুনিক মানব সভ্যতা এখন ;
মানবতার মৃত্যু
হয়েছে সেই কবে ;
কাঁটা তারে ঝুলে এখন মানব প্রাণ!
গােলা বারুদের ঝক্কারে ঝরে
অজস্র প্রাণ ;
মানব পৃথিবীতে নেই মানুষের বসবাস ;
মৃত্যু এখন কাঁদায় না
মানুষের প্রাণ
প্রাণ হীন শহরে প্রাণ হীন দেহ গুলাে মানুষের নামে
টিকে আছে শুধু মানুষের মুখােশ পরে।
মন
মনের আকাশে জমা কষ্ট গুলাে উড়িয়ে দিলাম
হাসির চলে অভিমানে ;
বুজলাে না কেউ বােবা মনেরই চাপা যতাে ব্যাথা
নিঃশব্দে
দীর্ঘশ্বাসে কষ্ট গুলাে ঝরে;
আমার লুকিয়ে থাকা চোখের জলে;
ভালােবাসা আমার
বিষন্নতায় ভরা;
অন্তরের ঢেউ বােবা মনকে সজোরে আঘাত করে;
বুঝলাে না তাে কেউ ;
আমারি যতাে ব্যাথা আজি হয়েছে মনের সখা ;
সুধাইলাে না তাে কেউ ;
একেলা
বেলা শেষে আমি বড় একেলা।
দ্বিধা-দ্বন্দ্ব
সময়ের তালে তালে চলতে গিয়ে
জীবন কখন যেন বদলে যায় ;
ভালােলাগা টা খুঁজতে খুঁজতে
কখন যেন ভালােবাসা
হারিয়ে যায় ।
বেশি পাওয়ার আশায় থাকতে থাকতে
ছোট পাওয়া গুলাে,
কখন কিভাবে যেন হারিয়ে যায় ;
দূরের মানুষ কে কাছে টানতে গিয়ে
কাছের আপন জন
কখন যেন দূরে সরে যায় ;
নিজেকে খুঁজে "পাওয়ার আশায় থাকতে থাকতে ,
ভিতরের মানুষটার অস্তিত্ব কখন যেন বিলীন হয়ে যায়।
এভাবেই মন বেচারা
কখন কিভাবে যেন
দ্বিধা দ্বন্দ্বের বেড়াজালে ভাসতে থাকে ?
নিষিদ্ধপল্লী
জন্ম আমার শুভক্ষণে
চাঁদনি রাতের
ঝলমলে আলােতে
বাপ- মা নাম রাখলাে তাই চাঁদনি মণি
নিয়তির নির্মমে আজ আমি
হয়েছি অন্ধকার ঘরের বাতি
যে ঘরে আছে শুধু মনের চাইতে দেহের দামটাই বেশি
টাকায় কিনলাম গাড়ি বানাইলাম আলিশান বাড়ি;
চারপাশে ঘিরে আছে কতাে শতাে
আলাে তারপরও
আমারি বােবা মন কেন জানি খুঁজে ফিরে
একটু খানি সুর্যের আলাে।
বেঁচে আছি মরার মতাে নিথর দেহখানি :
জীবন যৌবনের সময় কিভাবেই কেটে গেলাে
আমার এই নিষিদ্ধ পল্লী বাড়ি।
অস্তিত্ব
তােমার শরীরের অস্তিত্ব টুকু নিয়ে
বেঁচে আছি আজ ও সেই আমি ,
নিয়তির কি নির্মম পরিহাস সেই তুমি নেই পাশে
আমার
ভালােবাসা তে ছিলাে না কোনাে ছলনার ফাঁদ
তাই আজ ও তােমার অস্তিত্বের চিহ্ন
টুকু নিয়ে -
বেঁচে থাকার লড়াইয়ে টিকে আছি দিন-রাত
হাজারাে কষ্টে না বলা
ভাষায় তােমাকে ফিরে পাওয়ার আশায়।
নাইবা বাসলে আমায় ভালো ,
নিলে কিংবা ছলনার আশ্রয়,
সময়ের ব্যবধানে হারিয়ে গেছাে তুমি আজ
কোন একদিন ফিরবে
তুমি ফেলে যাওয়া ,
সেই আমাদের ভালোবাসার অস্তিত্বে।
যত্নে থাকা স্মৃতি
পুরনাে স্মৃতি গুলাে কখনাে
পুরিয়ে যায় না।
আলতাে ধুলাে জমে মাত্র।
পুরনাে স্মৃতি গুলাে তে ভালােবাসা
যত্নে থাকে
ব্যস্ততার চাদরে ঢাকা পড়ে বিবর্ণতা হারায় শুধু।
বেলা শেষে
অবেলায় পুরনাে স্মৃতি গুলাে কখনাে।
কখনাে ঝাপসা হয়ে ভালােবাসা বাড়ায়।
হারানাে স্মৃতি গুলাে পুরনাে হয়েও
আবেগের টানে থেকেই যায়।
মধুর শৈশব
ভাঙবে
আমাদের নিরবতা,
চলবে আবার অফুরন্ত আমাদের ছুটে চলা,
বাঁচবাে আবার নতুন করে,
শিখবাে নতুন কিছু,
জগতের সবকিছু সাজবে নতুন সাজে,
অনেক কিছু হারিয়ে যাবে,
হবে আবার নতুন করে
দেখবাে আবার স্বপ্নগুলাে কোন এক সকালে
নিস্তব্ধতা ভাঙবে আবার
ফিরবে কোলাহল লােকালয়ে।
কোলাকুলি হবে আবার কোন ঈদে,
চলো আবার ফিরে যাই
ফেলা আসা সেই শৈশবে,
যেখানে নেই কোন দ্বিধা, নেই কোন দ্বন্দ্ব,
আছে শুধু
অফুরন্ত দুরন্তপনা আর স্নেহ, মায়া,
মমতা, ভালােবাসা আর ভালােবাসা।
বিবর্ণ পৃথিবী
অবরুদ্ধ
পৃথিবী বিবর্ণ মানুষ,
অবরুদ্ধ আমার দেশ,
অবরুদ্ধ স্বাভাবিক চলাফেরা,
অবরুদ্ধ আমাদের ভালােবাসা,
অবরুদ্ধ আমাদের জীবন যাপন,
থমকে দাঁড়িয়েছে
বিশ্ব,
থমকে দাঁড়িয়েছে আমাদের বেঁচে থাকা,
স্বাভাবিক হােক আমাদের জীবন
যাপন,
স্বাভাবিক হােক আমাদের অফুরন্ত ছুটে চলা,
স্বাভাবিক হােক আমাদের
ভালােবাসা
বিবর্ণ পৃথিবী হয়ে উঠুক স্বরূপ ও স্বাধীন,
শেষ হােক এই করােনা
যুদ্ধ নতুন এই সকালে,
জেগে উঠুক আমাদের এই ঘুমন্ত পৃথিবী।
বোবা মন
কিছু কথা হয় না বলা,
কিছু কথা বলার থাকে না ভাষা,
কিছু কথার হয়না সঠিক বহিঃপ্রকাশ,
কিছু কথা
বােবা কষ্ট হয়ে বুকে ব্যাথা জমায়,
কিছু কথা আবেগ হয়ে চোখের জলে ঝরে পড়ে
নরম বালিশে কিছু কথার নিঃশ্বাস বুকের ভেতর
দীর্ঘশ্বাস হয়ে একাকী এই আমাকে
পােড়ায়,
আর বেলা শেষে রাতের আঁধারে মনের গহিনে
এই আমাকে আঘাত করে বলে
ভালাে আছাে তাে তুমি,
আমি ও পুড়ছি তুমি ও কি তাই,
এই আমায় ভেবে একটু
খানি।
অনুভূতি
খােলা চিঠি খােলা খাম, খােলা তােমার মন
খােলা আকাশের বিশালতায়
খুঁজে ফিরি,
বন্ধু তােমায় সারাক্ষণ ।
“মনে যদি না লাগে ভালাে।
মনের আকাশে
জমে থাকা কষ্ট গুলাে,
বন্ধু ভেবে একটু পড়তে দিও”
“সুখের শহরে নাইবা পেলাম
তােমায়,
দুঃখের শহরে বন্ধু ভেবে একটু থাকতে দিও"।
নিস্তব্ধতা
থমকে যাওয়া সময় গুলাে ফিরবে আবার,
সকল নিস্তব্ধতা কাটিয়ে।
আজ নয়, কাল নয় হয়তাে কোনাে এক শিশির ভেজা প্রভাতে,
হয়তাে কোনাে এক
রােদেলা দুপুরে,
হয়তাে কোনাে এক গােধূলির আলােমাখা অপরাহ্নে,
হয়তােবা
কোনাে এক রাতের আঁধারের মাঝে
জোছনার আলােকে
প্রতীক্ষার অবসান হােক,
আমাদের
সকল অপেক্ষার শেষ লগনে,
কোনাে এক সুখের শহরে হাজারাে মুখরিত কোলাহলে;
শতাে
নিস্তব্ধতা কাটিয়ে কোনাে এক বিশেষ মুহূর্তে।
আমার শূন্যতা তুমি, তােমার পূর্ণতা আমি
তােমার ভালাে লাগা সৃষ্টিতে,
আমার
বৃষ্টির ধারা
তােমার ভালাে লাগা রৌদ্র মাখা দিন,
আমার মেঘলা আকাশ।
তােমার
ভালাে লাগা হাজারাে মুখরিত কথা মালা
আমার নিস্তব্ধতা।
তােমার ভালাে লাগা
সবকিছুতে,
আমার শিশির ভেজা ভাের।
সবকিছুতে আমি - তুমি ভিন্ন যেন,
তারপরে
ও আমি ছাড়া তুমি আর তুমি ছাড়া আমি একেলা একা।
আমার গল্পে তুমি
যদি আলােহীন পথে দেখা হয়
সাথে
চলবাে দুজন একসাথে।
যদি নির্ঘুম রাতে একা একা লাগে ।
তবে কাটাবাে দুজন
জোৎস্নায় মায়াবী আলোতে,
যদি কষ্টের পৃথিবীতে ধূসর আমি তুমি হই এক সাথে,
তবে হাতে হাত দুটো ধরে চলবাে
দুজন।
নতুনের আহবানে আগামীর পথে।
যদি বিবর্ণ পৃথিবীতে বিষন্নতায় ছেড়ে
যায় মন,
সেই দিনও রবাে দুজন একসাথে
কোন মন্তব্য নেই