হিসাব নিকাশ/পরিণতি/রম্য গল্প (মাহবুবা সিদ্দিকা)
হিসাব-নিকাশ
সকালের সূর্যটা উকি মেরে জানান দিয়ে দিয়েছে আরেকটি নতুন দিনের। অন্যদিনের মতো আজও সামিরা তৈরী হচ্ছে কলেজে যাওয়ার জন্য। সামিরা হলো রানু বেগমের একমাত্র মেয়ে। সামিরার ৬ বছর বয়সে বাবা রফিক মিয়া বজ্রপাতে মারা যান।মেয়েকে মানুষ করতে কম কষ্ট পোহাতে হয়নি রানু বেগমের। পেটে টিউমারের কারনে রক্ত শুন্যতায় ভুগতেছেন।একেবারে লিকলিকে শরীর নিয়ে গ্রামের প্রভাবশালী ব্যবসায়ী নিজামের ঘরে ছুটা কাজ করনে রানু বেগম।ব্যবসায়ী সেই ছোটবেলা থেকেই সামিরার পড়ালেখার ব্যয় বহন করে আসছেন। অত্যন্ত মেধাবী সামিরা এস এস সি পরীক্ষায় জিপিএ ফাইব পেয়ে সবেমাত্র কলেজে ভর্তি হয়েছে।
সামিরার বাড়ি থেকে কলেজ অনেকটাই দূরে । গ্রামের রাস্তায় সকালে গাড়ি পাওয়া যায়না।সেজন্য অনেকখানি পথ হেটে যেতে হয়। প্রধান সড়কে পা দেওয়ার পর বাজারে ঢুকার একটুখানি পুর্বে হঠাৎ একটা মাইক্রোবাস এসে তার সামনে দাড়ায়।কিছু বুঝে উঠার আগেই একটানে তার মুখ চেপে তুলে নেয় গাড়ির ভিতর। সকাল গিয়ে বিকেল চলে এসেছে। মেয়ে এখনো ঘরে ফেরেনি। তাই রানু বেগম চিন্তায় অস্হির হয়ে যাচ্ছেন।মেয়ের দুই তিনজন বান্ধবীর বাড়ি ও ইতিমধ্যে তিনি গিয়ে ফেলেছেন। তারা কেউই সামিরাকে আজ কলেজে দেখেনি। বিকালে রেললাইনের পাশে সামিরার মৃত দেহ দেখতে পায় গ্রামবাসী। কারা যেনো ধর্ষন করে নির্মম ভাবে হত্যা করে সামিরার লাশ ফেলে রেখে যায়।তার সপ্নগুলো মাত্র ডানা মেলতে শুরু করেছিলো, তার আগেই পাষন্ডরা কেড়ে নেয় তার জীবন। মেয়ের এমন খবর শুনে রাণু বেগম বারবার মুর্ছা যাচ্ছেন। গ্রামে শোকের ছায়া নেমে আসে। কারন এই প্রথম তাদের গ্রামে এরকম ঘটনা ঘটেছে। এতোদিন ধরে এগুলো কাহিনি হিসাবে তারা শুনে আসছিল।
নেটওয়ার্কের মাধ্যমে এই খবর ছরিয়ে পড়ে গোটা দেশে। কেউ সমবেদনা জানাচ্ছেন। কেউ বা বলতেছেন, মেয়েটা বোরকা পড়েছিলো না ড্রেস।একটা যুবতী মেয়ে একা কলেজে কেনো যাবে এরকমটা ও কেউ বলতেছেন। সাংবাদিকদের উদ্ভট প্রশ্নে বিভ্রান্তিকর অবস্হার সম্মুখীন ও হতে হয়েছে রানু বেগম কে। ৩-৪ দিন পরই নিরব হয়ে যায় পুরো দেশ। শুধু রানু বেগম কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারতেছননা। বারবার ফরিয়াদ করছিলেন সৃষ্টিকর্তার কাছে।
মেয়ে মৃত্যুর তিনদিন পর যখন রাত্রিবেলা চোখের পানি ছেড়ে কাঁদতেছিলেন ।ঠিক তখন তিনি বুঝতে পারেন তার চোখে একটু একটু তন্দ্রা ভাব চলে আসছে। এমন সময় স্বপ্নে দেখেন সাদা ধবধবে কাপড় পরিহিত অবস্হায় তার মেয়ে। চেহারা উজ্জল ফর্সা। যেনো একটা আলোর জ্যোতি তার চেহারা থেকে ঠিকরে পরতেছে। তাকে বলতেছে মা, তুমি আমাক নিয়ে এতো চিন্তা করতেছো কেনো?তারা আমাকে মেরে আরও উন্নত অবস্হানে পাঠিয়ে দিয়েছে। আমি দুনিয়াতে যা যা করেছি তার প্রতিদান আমার সৃষ্টিকর্তা আমাকে দিচ্ছেন । এবং তারা যা করেছে তার প্রতিদান ও সৃষ্টিকর্তা তাদেরকে দিবেন।তার বিচারে কোনো ত্রুটি নেই। কেউ এক বিন্দু ও ছাড় পাবেনা। তার কাছে প্রতিটি মানুষ সমান। আমি এখানে অনেক ভালে আছি মা । ধর্ষক কে সেটা তুমি যেনে ও নিরবে কষ্ট সহ্য করতেছো। কারন তাদের ক্ষমতার কাছে তোমার প্রতিবাদ তুচ্ছ হবে তাই তুমি প্রতিবাদ করোনি। সেজন্য বিন্দুমাত্র কষ্ট তোমার প্রতি আমার নেই। তুমি দেখে নিও মা সৃষ্টিকর্তা দুনিয়াতে না হলেও পরকালে ঠিকই এর বিচার করবেন। তারা রেহাই পাবেনা তার কাছে থেকে।
দুবছর পর রানু বেগমের পেটের টিউমার এর ব্যথা মাত্রাধিক ভাবে বেড়ে যায়।অবস্হা বেগতিক দেখে প্রতিবেশীরা হাসপাতালে নিয়ে যান। মৃত্যুর সাথে যখন পাঞ্জা লড়ছিলেন তখন তাকে দেখার জন্য হাসপাতালে যান প্রতিবেশী জামিলা বেগম। রানু বেগম স্পষ্টতই শুনেছিলেন, জামিলা বেগম কাকে বলতেছেন " নিজাম ব্যবসায়ীর ছেলে নিয়াজ মোটরসাইকেল এক্সিডেন্ট করে গুরুতর জখম নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে"।বাচার কোনো সম্ভাবনা নেই। রানু বেগম শান্তির নিশ্বাস ছেড়ে বিড়বিড় করে নিজে নিজেকেই বললেন,যাক আমার মৃত্যুযাত্রাটা তাহলে শান্তির হলো।
পরিণতি
গ্রামের মেয়ে নাযিয়া। কিন্তু তার পোশাক আশাক ও চলাফেরায় গ্রামের ছিটাফোটা ও নেই।তিন বোন নাযিয়াদের।কোন ভাই নাই তাদের।ভাই না থাকাটা ও তাদের কাছে একটা খুশির ব্যাপার,তাদের মতে ভাই থাকলে তাদের স্বাধীন ভাবে চলাফেরায় বাধা সৃষ্টি হতো।তিন বোন আর মায়ের আয়েশী জীবন যাপন দেখলে টেরই পাওয়া যায়না যে, তাদের ঘরে দশ বছর থেকে পুরো শরীর প্যরালাইস্ট হওয়া একজন বাবা পড়ে আছেন।মা মেয়ে নিয়ে গঠিত এই পরিবারটিতে আয়ের উৎস নেই বললেই চলে।তাদের রাজার হালে জীবন যাপনের খোরাক যিনি দিয়ে থাকেন, তিনি হলেন ইংল্যান্ডে বসবাস করা নাযিয়াদের একমাত্র চাচা।চার বাচ্চাসহ একজন মহিলাকে বিলেতে বিয়ে করেছিলেন ভদ্রলোক। কয়েক বছর সংসার করে দেশে টাকা পাঠানো নিয়ে ঝগড়া করে ছেড়ে চলে গেছেন ঐ মহিলা।
নিজ দেশে বড় ভাই প্যরালাইস্টে আক্রান্ত,তাই তিনি প্রতিমাসে ভাতিজিদের কে টাকা পাঠান। আর এই টাকা দিয়ে নাযিয়াদের পরিবারের আয়েশী জীবন।ফ্যাশন আর সাজুগোজু নিয়ে ব্যস্ত থাকা নযিয়া সবেমাত্র কলেজ জীবন শেষ করেছে।অন্যদিকে নাজিয়ার ছোট বোন মাইশা ইন্টার প্রথম বর্ষে পড়ছে।দেড় বছরের ব্যবধান তাদের দুইবোনের জন্মের মধ্য। ফ্যাশন কুইন দুই বোন দেখতে অসম্ভব সুন্দরী।কলেজে অনেক ছেলেদের ক্রাশ দুইজনই।এ বিষয় নিয়ে রোজ সন্ধ্যায় দুই বোনের একটা বৈঠক হয়।এগুলো শেয়ার করতে তাদের মধ্যে কোনো দ্বিধাবোধ নেই।একেবারে কনিষ্ঠ কন্যা দিয়া এবার ক্লাস ফাইবে পড়ে।ছোট হলেও টিভিতে চলা গানের সাথে সে ভালোই নাচতে পারে।তাদের মা মোহনা চৌধুরীকে একেবারে বেকার ও বলা যায়না। নিজের সুন্দরী মেয়েদের প্রশংসায় নিজেকে ব্যস্ত রাখেন। উনার মেয়েরা ঘরের কাজ করতে পারেনা এটা ও একটা গুণ বলে মনে করেন তিনি।ওরা এখনো তুলতুলে ছোট বাচ্চা।
নাযিয়ার এইচ এস সি পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর একদিন তার চাচা মাকে কল দিয়ে বললেন, ভাবি, মেয়েতো অনেক বড় হয়েছে এবার বিয়ে দিয়ে দেই।কত জীবন আমি আপনাদের খরচ বহন করবো। আমার ওতো বাকি জীবন পড়ে আছে। বিয়ে করতে হবে। বিয়ে করলে তো আপনাদের এভাবে টাকা পাঠাতে পারবো বলে মনে হয়না।যেই ভাবা সেই কাজ।নাযিয়ার জন্য পাত্র দেখা হলো।একই গ্রামের,ছেলে ডুবাই থেকে আসছে।এখন ফ্রান্সে যাবে।তাই বিয়ে করে যেতে চাচ্ছে।মেয়ের রুপ দেখে সে পুরাই পাগল।কিন্তু একই গ্রামের হওয়ায় নাযিয়া কে ছেলের মা ভালো করেই চিনেন।মেয়ের চলন ঠিক না থাকায় তিনি ঐ মেয়েকে ছেলের বউ করবেননা।ছেলে কিন্তু নাছোড়বান্দা।সে এই রুপসী পরীকেই বিয়ে করবে।শেষপ্রর্যায়ে ছেলের মায়ের অমতে বিয়ে হলো।বিয়ের দিন নাযিয়ার কয়েকদিন আগে দেওয়া এইচ এস সি পরীক্ষার ফলাফল বের হলো।সে ইংরেজিতে ফেল করেছে।এটা নিয়ে তার বা তার পরিবারের কারো কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।বড়লোক ছেলের সাথে মেয়ের বিয়ে দিচ্ছেন, সে খুশিতেই মোহনা চৌধুরী আত্নহারা।
বিয়ের পর বউ পাগল কাশেম নাযিয়াদের পরিবারের ভাই হয়ে গেলো। তাই সে সালিকা মানে বোন মাইশার নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে প্রতিদিন তাকে বাইকে করে কলেজে নিয়ে যায়।অন্যদিকে বড় ছেলের বউয়ের হাতে রান্না খাওয়ার আশায় বসে থাকা কাশেমর মা যেই তাদের বাড়িতে বেড়াতে আসে, তিনি একটাই দুঃখ প্রকাশ করতেছেন যে, তার ছেলের বউ রান্না করতে জানেনা।কিন্তু কাশেমের কাছে তার বউ যে রান্না পারেনা এটা কোন খারাপ দিক মনেই হচ্ছেনা।সে যে পেটে ভূড়ি নিয়ে এতো সুন্দরী বউ পেয়েছে তাতেই সে অনেক ভাগ্যবান। বিয়ের এক বছরের মাথায় জন্মনেয় কাশেম নাযিয়ার ঘরে একটি মেয়ে। রাম রাখা হয় রাহা।নাতনি কে সেন্হে কাছে টেনে নিলেও নাযিয়া কে এখনো সহ্য করতে পারেননা কাশেমের মা।সহ্য করতে না পারার আরেকটি কারন ও যোগ হয়েছে।তা হলো, কাশেম এখন প্রায় তার শশুর বাড়িতে যায়।তাদের সকল দায়িত্ব সে তার কাধে নিয়েছে।শত হলে ও তো তার শাশুড়ী মা তাকে নিজের ছেলে বানিয়েছেন।তাই কাশেমের মায়ের ধারনা তিনি তার ছেলেকে হারিয়ে ফেলতেছেন।
মেয়ে জন্মের তিন থেকে চার মাস পরে তার শাশুড়ী মা তাকে বললেন, বাবা দেশে আসছো অনেক দিন হয়ে গেছে।এখন তোমার একটি বাচচা ও আছে।দেখো কি করবা।বেকার থেকে তো লাভ নেই।নাযিয়া ও এই বিষয় নিয়ে দু তিন বার তার সাথে রাগারাগি করে ফেলেছ। তাই সে সিদ্ধান্ত নিলো সে ফ্রান্স যাবে।পরদিন পাসপোর্ট নিয়ে সে ট্রাভেলসে আসলো সামান্য বোঝাপাড়া করতে। বাড়ি ফিরে যাওয়ার পথে বাস দুর্ঘটনায় সে আহত হয়, এবং মেডিকেল নেওয়ার আগেই সে মারা যায়।এই একটা দুর্ঘটনা যে নাযিয়ার জীবন থমকে দেবে সে চিন্তা ও করেনাই।চার মাসের বাচচা নিয়ে কোথায় যাবে।পাড়া পড়শীরা কাশেমর মাকে অনুরোধ করলেন তার দ্বীতৃয় ছেলের সাথে নাযিয়াকে বিয়ে দিয়ে তাদের কাছে রেখে দেওয়ার জন্য।কিন্তু নাযিয়া যেহেতু কোনোদিন তার শাশুড়ীকে সন্তুষ্ট করে রাখেনি।তাই সুযোগের সদ্ব্যবহার করে মহিলা নাযিয়াকে তার বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেয়।মহিলার ধারনামতে নাযিয়ার সাথে কাশেমের বিয়ে দেওয়ার পর কাশেম তার শাশুড়ী বক্ত হয়ে গিয়েছিল। তাই দ্বীতৃয় ছেলের সাথে যদি আবার বিয়ে দেন তাহলে ঐ ছেলে ও তিনি হারাবেন।তাছাড়া নাযিয়া উনার একদম পছন্দ না।
অন্যদিক নাযিয়া কে বিয়ে দিয়ে নাযিয়ার চাচা এক বাঙ্গালী মেয়েকে বিয়ে করেছিলেন। এরপর উনি উনার সংসার নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। আর নাযিয়াদের পরিবারের দায়িত্ব কাশেম নিয়েছিল।নাযিয়া চার মাসের মেয়ে রাহা কে নিয়ে বাবার বাড়িতে আসার পর শুরু হলো টানাপোড়ন।চাচা তো নাযিয়ার বিয়ের পর থেকে আর তেমনা টাকা পাঠাননা। তিনি তার নতুন সংসার নিয়ে ব্যস্ত।চাচার তৈরী বাড়িতে যে ওরা থাকতেছে নতুন চাচীর কাছে সেটাই অনেক বড় দয়া মনে হচ্ছে।
ধীরেধীরে নযিয়া দুনিয়ার আসল রুপ চিনতে শুরু করছে।একবছর এভাবে কাটিয়ে নাযিয়া চিন্তা করলো, তাকে কিছু একটা করতে হবে।মায়ের টানাপোড়েনর সংসারে মেয়েকে নিয়ে এভাবে কতদিন থাকবে।মেয়ের খেয়াল রাখতে গিয়ে আর অভাবে থেকে এই এক বছরেই সে তার সুন্দর চেহারার বদৌলতে মলিন চেহারার অধীকারী হয়ে গেছে। এখন আর তাকে গ্ল্যমার লুক নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেখা যায়না। এইচ এস সি তে ফেল করে দুই বছর হয়ে গেছে,তাই নতুন করে কলেজে ভর্তি হতে ও পারেনি।কোনো ধরনের ছোটখাটো ব্যবসা শুরু করার পূজি ও নেই।নেই কোনো বিষয়ে তার দক্ষতা। শশুড় বাড়ি থেকেও কোনো সাহায্যে সে পাচ্ছেনা।কোথায় গিয়ে সে কিনার পাবে এই চিন্তাই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।
পরিশিষ্টঃসিলেটের সামাজিক পরিপেক্ষিতে এই গল্পটা রচিত হলেও, আমার মনে হয় সারা দেশে এরকম হাজার ও আপু আছে।সৌন্দর্য আপনার কোনো অর্জন নয়, বা এটা আপনার কোনো আইডেন্টিটি ও নয়।আপনার পরিণতি ও এরকম হতে পারে কিংবা এর চেয়ে খারাপ ও হতে পারে।ভাগ্যক্রমে আপনার সাথে ভালো ও হয়ে যেতে পারে। হাজার কোটি মানুষের বাস করা এই পৃথিবীটা অনেক ছোট।এখানে সবাইকে সবার জায়গা তৈরি করে নিতে হয়। এই পৃথিবী আপনাকে শুধুমাত্র টেস্ট করবে।এইখানে নিজের জন্য নিজেকেই সবকিছু করতে হবে,তবে দেরী হওয়ার আগেই। আমি যে কথাটায় সব সময় বিশ্বাস করি সেটা হলো, do something before to late... দয়া করে কিছু একটা করুন, অনেক দেরী হওয়ার আগেই।
রম্য গল্প
ইদানিং আমাকে সকাল, বিকাল ফেইসবুকে এন্জেল জারা নামের একটা মেয়ে মেসেজ দেয়। হাই, আপু, হাওয়ার ইউ। এরকম টাইপ। আমি ও ছোটখাটো রিপ্লাই করি।কিন্তু কে,বা কেনো মেসেজ দিচ্ছে এটা খেয়াল করিনি। কিন্তু কেনো জানি দিন দিন তার মেসেজ আর কেয়ার এর পরিমাণটা বেড়েই চলছে। রোজ খবর নেয়। না খাইলে বলে খাওনাই কেনো এখনো? মাঝে মাঝে একটু একটু আদরের শাসন ও করে। আমি তো বেজায় খুশি। যেখানে আমার এক মাস বয়সী রিলেশনশিপ এর বয়ফ্রেন্ড ও এতো কেয়ার করেনা, অন্য একটা মেয়ে করতেছে, করুক না? তাতে সমস্যা কোথায়।একদিন সন্ধ্যার পর ফেসবুক ইউজ করতেছিলাম, তখন এন্জেল বলল, এই তুমি পড়তে বসো না কেন? তোমার ভাইয়ের সাথে পড়তে বসবা। আমি অবাক হয়ে, চিন্তায় পড়ে গেলাম ভাইয়ের সাথে পড়তে বসবো মানে কি? আমি তো সপ্তাহে অন্তত একবার বই খুলি, আর আমার ভাই ছয় মাসে বই খুলবে তো দূরের কথা, সে তার সব বইয়ের নামই ঠিক মতো বলতে পারেনা। তড়িঘড়ি করে এন্জেল এর প্রোফাইলে ডুকে স্ক্রল করে দেখতে পেলাম, এন্জেল জারা ইজ রিলেশনশিপ উইথ সাইলেন্ট বয়। আরে, এটা তো আমার নিক্কমা ভাইয়ের আইডি, যাকে আমি আর মা প্রতিদিন "তুই বউ পাবিনা " বলে অভিশাপ দেই। আর সে কিভাবে এই ডলের মতে মেয়েকে পটাইলো। কিছুই মাথায় ডুকতেছেনা।সাথে সাথে এন্জেল কে মেসেজ দিলাম। ওহ , তাইলে তুমি আমার ভাবি। সে বলল, নো, ভাবি ইজ ওল্ড ফ্যাশন। কল মি, সিস্টু।
অকর্মা ভাই এই মেয়েটার সাথে কিভাবে রিলেশন শুরু করলো, এই কৌতুহল ভিতরে জাগ্রত হলো। তাই এন্জেল কে প্রশ্ন করলাম,সিস্টু তোমাদের রিলেশনটা শুরু হলো কিভাবে? সে বলল, আরে,, বুঝোনা। তোমার ভাইয়া যে, ফেসবুকে লিখা গুলো দেয়না, সেগুলো দেখে আমি পুরোই ফিদা। শুধু আমি না আরোও অনেক মেয়েই তার উপর ক্রাশড। তিন হাজার ফলোয়ার তার ফেইসবুকে।সে যে ছবি গুলো আপলোউড করে এগুলো একদম জোস,জাক্কাস। তার লেখা গুলো আমার খুবই ভালো লাগতো, তাই তাকে মেসেজ করতাম। এভাবে কথা বলতে বলতে আমাদের ভালোবাসা হয়ে গেছে। জানো, তোমার ভাই আমাকে তার ফেইসবুক পার্সওয়াড ও দিছে। তার ইনবক্সে দেখলাম, জরিনা, সখিনা নামের অনেক মেয়েই তাকে প্রপোজ করছে। কিন্তু আমি লাকী, তেমার ভাইয়ের আমাকে পছন্দ হয়েছে। আমি বললাম, ওমা! তাই নাকি। সো সো সুইট। কি সুন্দর প্রেম, ফেইসবুক পাসওয়ার্ড ও দিয়ে দিছে। আমার বফ তো তার কয়টা আইডি আছে সেটাও পুরোপুরি বলে নাই। তাই আমার একটু মনঃক্ষুণ্ণ হলো।
পরেরদিন এন্জেল আমাকে মেসেজ করলো, এই আমি তো তোমারদের বাড়িতে কয়েক দিন পর বউ হয়ে আসবো, তাই তোমার ভাই সম্পর্কে একটু বলোনা, পীল্জ, খুব উপকার হবে আমার। সে কি তোমাকে ও কবিতা পড়ে শোনায়? আমি বললাম কবিতা পড়ে শুনাবে মানে? সে তো কবিতা লিখতে ও পারেনা, এগুলো পছন্দ ও করেনা। এন্জেল বলল, পাগল নাকি তুমি। ঐ যে? সে ফেসবুকে দেয়, ওগুলো কি? আমি বললাম, ওগুলো তো লাভ গুরুর কবিতা, সে কপি করে দেয় আরকি। আর যে পোস্ট গুলো করে, এগুলো তো গুগল থেকে কপি করে।" হাউ সিলি "এগুলো ও বোঝোনা তুমি। এন্জেল বলল, ওকে, লিখা দিয়ে কি করবো। থাক এইসব।সে হ্যন্ডসাম, কিউট,উফফ, কি সুন্দর ছবি দেয় ফেসবুকে। আর ওতো মানুষকে সাহায্য করতে ভালোবাসে। এগুলোতেই হবে আমার।প্রতিত্তোরে তাকে বললাম, সিস্টু, সে হ্যন্ডাসাম ব্যন্ডসাম কিছুনা। সে যে ছবি গুলো উপলোড দেয় সেগুলো ক্যনন ই ও স রেবেল টি৮আই ডি ডিএসএলআর ক্যমেরা উইথ ১৯-৫৫ লেন্স দিয়ে তুলা।এখানেই শেষ নয়, সে এই পিক গুলো দিন রাত পিক্স আর্ট, সেন্পসীড ইত্যাদি অ্যপ দিয়ে এডিড করে আপলোড দেয়। আর মানুষের হেল্প কোথায় থেকে আসবে।তার কাপড় গুলো ময়লা ঘরে পড়ে থাকায়, সে পিক তুলার সময় আমার মামাতো ভাইয়ের খালাতো ভাইয়ের চাচাতো ভাইয়ের কাপড় গুলো পড়ে পিক তুলে। পরে ঐ কাপড় গুলো রিন পাউডার দিয়ে আমাকে ধুইতে হয়। প্রমান হিসেবে আমি ভাইয়ের অগোছালো রুমের যেখানে কাপড় এদিক সেদিক পড়ে আছে সেদিকের দুইটা ছবি তুলে সিস্টুকে দিয়ে দেই। এতো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সিস্টুকে দেওয়ার পর, তাকে আরেকটা জরুরী কথা বললাম, ভাইয়া তোমাকে যে টেডি বেয়ার টা গিফট করেছিলো, ঐ সময় পরে দিয়ে দেবে বলে আমার কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলো। আমার টাকাটা এখনো ফেরত দেয়নাই।তুমি প্লীজ বলিও, আমার টাকাটা ফিরিয়ে দিতে। আমার টাকার খুব প্রয়োজন। তখন সিস্টু আমাকে কোনো রিপ্লাই না দিয়ে অনলাইন থেকে চলে গেলো। আমি ভাবলাম বেচারীকে এতো হেল্প করেছি, সেজন্য হয়তো সে আবেগে আপ্লুত হয়ে ধন্যবাদ দিতে ভুলে গেছে।
যাইহোক, আমি বহুদিনে কারো উপকার করতে পেরেছি এই সুখে শান্তির একটা ঘুম দিলাম।মেসেজের টুংটাং শব্দে আমার ঘুম ভাঙ্গলো। ফেইসবুকে ডুকে দেখলাম সাইলেন্ট বয় মেসেজ দিয়েছেন "নিজের একটা প্রেম টিকাইতে পারলিনা, তাই হিংসায় জ্বলে আমার এন্জেল কে ও দূর করে দিলি" এটা বলেই বল্ক। চোখ কচলাতে কচলাতে এগুলো পরলাম,কিন্তু আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না।এরমধ্যে নজরে পড়লো এন্জেল জারা ও " চাঁদ হয়ে এসেছিলে, মেঘ হয়ে চলে গেলে " এরকম টাইপ অনেকগুলো স্ট্যটাস ফেসবুকে দিয়ে ফেলেছে। কাহিনী কি তা বুঝার জন্য এন্জেল জারা কে হাই দিলাম। দিতেই সে কান্নার ইমুজি দিয়ে বলল,অন্তত তুমি আমাকে তার রিয়েল লাইফ সম্পর্কে আগে বলতে পারতা, বলেই সে ও ব্লক করে দিলো।শেষ প্রর্যন্ত কারো সাহায্য করা আমার হলোনা।এটা ভেবে আমার খারাপ লাগলো । ঠিক ঐ মুহুর্তে আমার মাথায় দারুন একটা সুপার ডুপার আইডিয়া আসলো। আমি আমার ফেসবুক ওয়ালে পোস্ট করলাম। ~ কোনো আপু ফেসবুক রিলেশনশিপে যাওয়ার পুর্বে নিচের কাজ গুলো অব্যশই করবেন।
১। কোনো ছেলে সুন্দর পিক আপলোড দিলে ভাববেননা সে হ্যন্ডসাম, তাকে পিকের অরিজিনাল কপি দিতে বলবেন।
২।কারো লেখা দেখে আপ্লুত হলে, তাকে বলবেন সে কার লিখা কপি করেছে তার নাম বলতে।
৩।ল্যপটাপ টাইপিং অবস্হায় পিক দিলে সিওর হবেন, সে কম্পিউটার এক্সপার্ট না তার বাবার ভাঙ্গা ল্যপটাপ দিয়ে পিক তুলেছে।
৪। নারীকে সম্মান দেখানো নিয়ে পোস্ট করলে জানতে চাইবেন ঘরে তার কাপড় কে ধোয়ে দেয়। এরকম টাইপ অনেক কিছু লিখে পোস্ট করলাম। যাক এবার একটা ভালো কাজ করতে পেরেছি। এবার একটু শান্তি পাইলাম।
দুই থেকে তিন মিনিট পর দেখি আমার পোস্টে ছেলেদের এন্গরি রিয়েক্ট আর গালাগালি।একটু পরে অনেকেই মেসেজ দিয়েছে, আমার পোস্ট পড়ে অনেক মেয়ে নাকি বফ কে পরীক্ষা করে, সত্যটা জানতে পেরে ব্রেকাপ করে ফেলছে। তাই আমাকে অভিশাপ দিয়ে ছেলেরা ইনবক্সে টেক্স ও করতেছে। মনটা খুব খারাপ হলো।অসম্ভব রকমের খারাপ।অপেক্ষা করতে থাকলাম, কখন আমার বাবু কল দিবে আর বলবে, "ইটস ওকে বেবী", মানুষ ভালো সহ্য করতে পারেনা।
পাঁচ মিনিট পর বাবু কল দিলো, খুশিতে আত্নহারা হয়ে বাবু বলতেই ওপাশ থেকে আওয়াজ এলো, বেয়াদব মেয়ে কি ভাবছো নিজেকে? ছেলেদের নিয়ে যা ইচ্ছা তাই লিখছো। ব্রেকাপ তোমার সাথে। ওমা! আমিতো সবার ভালে চাইলাম, সবাই এরকম করতেছে কেনো? অবশেষে আমার এক মাস বয়সী রিলেশনটা ও গেলো। কাঁদো কাঁদো চোখ নিয়ে বসে আছি। আপাতত কিচ্ছু করার নাই ।তাই গুনগুনিয়ে গান গাইতে লাগলাম (চিনতে পারলিনা তোরা চিনতে পারলিনা )
কোন মন্তব্য নেই