Header Ads

অব্যক্ত অনুভূতিরা (নন্দিনী সাহা) কবিতা গুচ্ছ।



Obekto
কবি
নন্দিনী সাহা (ভারত)

মনুষ্যত্বের জাগরণ
(গদ্য কবিতা)

আজকাল আর মৃতদেহ দেখে নয়,তার থেকে বেশি জীবন্ত লাশদের দেখে বড্ড অবাক হই..
ভীষণ হিসেবী ওরা,সিকি আধুলি সব হিসেব করে পাই পাই..
নিজের আখের গুছিয়ে নিয়ে বাকিদের কি হলো তা নিয়ে নেই কোনো চিন্তা,না আছে মাথাব্যথা..
দশটা-পাঁচটার কিউব বন্দী জীবন,চিন্তা শুধু ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স আর চোখ জুড়ে ভরপুর অর্থ-লালসা..

সবাই যেতে চায় এগিয়ে,ছিঁড়ে ফেলে সব রক্তবন্ধন,ফেলে রেখে সব পিছুটান..
উঠতে চায় ওরা সাফল্যের শিখরে,তার জন্য বিকিয়ে দিতে অবধি প্রস্তুত নিজের স্বকীয়তা,বিবেক,ইমাম..
ভাবায় না ওদের কোনো মানুষের মৃত্যু,না ভাবায় আধপেটা বুভুক্ষু চতুষ্পদ,কিংবা পথশিশুর মৃত্যু..
বহুতল প্রাসাদে বিলাস-ব্যসনে মত্ত ওরা,ছুঁতে পারেনা ওদের কোনো অভাব -সুখ..

ঈশ্বরের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি 'মানুষ' বলে পরিচিত হলেও,ওরা হারিয়ে ফেলেছে আজ নিজেদের মান আর হুঁশ..
মানবিকতার হয়েছে মরণ,হয়েছে ওরা হৃদয়হীন, অমানবিক,স্বার্থপর,আর অর্থলোলুপ..
মনুষ্যত্ব ওদের আজ ঘুমিয়ে আছে,স্বার্থ-অর্থের মোহে বিদায় নিয়েছে শিষ্ঠাচার..
শিক্ষিত আজ প্রায় সকলেই,আছে সকলের সার্টিফিকেট,দেশে বেড়েছে শিক্ষিতের হার..

প্রশ্ন জাগে,প্রকৃত শিক্ষিত হয়েছে 'জন,যার মধ্যে আছে মানবিকতা,সমানুভূতি,আর সদাচার?..
তাই,মানবিকতার পচন রোধে পুঁজিবিদ্যা নয়,মানুষের ঘুমন্ত মনুষ্যত্বকে সর্বাগ্রে জাগ্রত করা দরকার..

 

ইচ্ছেদের কবর

গদ্য কবিতা

শুধু তুমি নেই বলে একাকিত্ব তার সর্বগ্রাসী অনলে আমাকে পুড়িয়ে করছে ছাই..
গভীর রাতে যখন আমার শহরের সকলে ঘুমের কোলে ঢলে পড়ে..
আমার মনের বেডরুমে তখন বাজে তোমার দেওয়া বিষন্নতার ক্যাসেট..

যে সকল ইচ্ছেদের বুকের কোনো এক কোণে কবর দেওয়া হয়েছিল,তারা মৃত্যু ঘুম থেকে জেগে ওঠে..
পায়চারি করে সারারাত,দাপিয়ে বেড়ায় অলিন্দ নিলয় জুড়ে,চলতে থাকে সওয়াল জবাব..
জানতে চায়,কেন তাদের অকালে এইভাবে গলা টিপে কাফন দেওয়া হলো..

ওদের প্রশ্নের জবাব দিতে পারিনা,শুধু অবাক হয়ে চেয়ে থাকি..
গলা বুঁজে আসা কান্নাকে এক গ্লাস জল দিয়ে গিলে খাই..
আর 'এই তো বেশ আছি'' সান্ত্বনা পুরস্কারের ক্যাপসুল খেয়ে মনখারাপের চাদর জড়িয়ে ঘুমিয়ে পড়ি..
এইভাবেই কত ইচ্ছেরা রোজ মরে যায়,কিন্তু মৃত্যুসংবাদ কেউ পায়না..

 

কালো মেয়ে
গদ্য কবিতা

মেয়েটি শুনেছিলো কারোর যোগ্য হলে হতে হবে সুন্দরী আর গায়ের রঙ ফর্সা,
হাজারো গুণের অধিকারিনী হয়ে শুনতে হয়েছে মেয়ে ভালো,কিন্তু অপরাধ তার সে কালো..
অপ্রেমে কেটেছে তার যৌবন,তাচ্ছিল্যের ধুলোবালি ছাড়া আর জোটেনি কিছুই।

প্রাকৃতিক নিয়মে মেলানিনের তারতম্যে হয় শরীরের রং এর হের ফের..
শিক্ষিত পাত্রপক্ষ বলে গেছে গায়ের রং যদি হোত ফর্সা,পাত্রের পাশে মানানসই হোত বেশ..
সমাজে তার শারীরিক না হলেও মানসিক ধর্ষণ হয়েছে বারবার..
শুনতে হয়েছে আলকাতরার মতো মিশমিশে কৃষ্ণবর্ণ নাকি গায়ের রং তার।

শিক্ষা নয়,এই প্রগতিশীল সমাজে আজও রূপই হয় যোগ্যতার মাপকাঠি,
এই সমাজে আজও সাদা চামড়ার ভীড়ে কৃষ্ণকলিরা হারিয়ে যায়,রয়ে যায় অবহেলিত,
চোখের ভেতর শূন্যতা,আর হাতের মুঠোয় জমা হয় কান্না আর হাহাকার।

মেয়ে ভুলে যাও রূপ ছাড়া হয়না গতি,ভুলে যাও সেইসব ছেঁদো কথা,
দুঃখের বোঝা একেক করে খোলো,উড়িয়ে দাও কর্পূরের মতো সব মনখারাপ সব দুঃখ,
রূপের মদিরায় ডুবে থাকা সমাজকে বুঝিয়ে দাও,যোগ্য হতে রং নয়,প্রয়োজন শিক্ষা মানসিকতার।

মেয়ে তোমায় হতে হবেনা শান্ত,হবেনা হতে রূপে লক্ষ্মী,হও তুমি দস্যি অথবা কালী,
অনেক তো শুনলে বাঁকা ঠোঁটের বিকৃত হাসি,এইবার না হয় নিজের জন্য নিজের মতো বাঁচো,
করে তোলো নিজেকে শিক্ষিত যোগ্য,তখন সাদা চামড়ার নয়,হবে তোমারই গুণগান।

 

এর নাম নির্বাচন
পদ্য কবিতা

নির্বাচন আসে নির্বাচন চলে যায়-------
উন্নয়নের নামে,নেপথ্যে হয় মশকরা,প্রহসন,
সুদিন আনার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নেতারা যায় ভুলে
হয় হাজারো জনতার স্বপ্নের অকাল মরণ।

প্রয়োজনে নেতারা চায় বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ভোট
প্রতিশ্রুতি দেয় ওরা,প্রতিটি পেটে জুটবেই ভাত,
অভূক্ত দেখে দু'বেলা বাড়িতে পাত পড়ার স্বপ্ন
কিন্তু হায়! হাঁড়িতে ফোটে না কোনো গরম ভাত!

স্বপ্ন দেখায় নেতারা,বলে হবে অনেক কর্মসংস্থান
বেকার সেই মিছে কথার ছলনায় করে বিশ্বাস,
বেকার যে ছিলো,সে রয়ে যায় আগের মতোই কর্মহীন
জীবন যন্ত্রনা থেকে বাঁচতে গলায় দেয় দড়ির ফাঁস।

আশা জাগায় জনতা পাবে সুলভে স্বাস্থ্য পরিসেবা
হবে হাসপাতাল,মিলবে বিনামূল্যে চিকিৎসার সুযোগ,
শিশু,প্রসূতি মায়েরা মারা যায় অকালে বিনা চিকিৎসায়
নেতা থাকেন নীরব,হয় না অন্যায়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ।

নির্বাচন এলেই দেয় নেতারা এমন হাজার প্রতিশ্রুতি
জেতার নিমিত্তে দেয় দরদী নেতা নিজের দলের ইস্তেহার,
নেতার প্রতিশ্রুতিগুলি রয়ে যায় কেবল প্রতিশ্রুতি হয়েই
হয় না তার বাস্তবায়ন,শোনে না আর জনতার হাহাকার!

এইভাবেই সুদিন আসার স্বপ্ন দেখায় নেতারা প্রতিবার
ভালো মানুষের মুখোশের আড়ালে খেলে যায় তাস,
এমন অনেক ঘটনা যবনিকার আড়ালে যায় ঘটে
জানে না কেউ,হয় না লেখা বিশ্বাসঘাতকতার ইতিহাস!

 

গদ্য কবিতা
আমাদের পৃথিবী


এই অরণ্য,সুখ কুড়োতে যাবি?
অনেক তো হলো মান অভিমান,এইবার না হয় করি সুখের চাষাবাদ!
অন্ধকার হাতড়ে হাতড়ে বড্ড ক্লান্ত হয়ে পড়েছি,কতদিন শুনিনি আমার জন্য তোর হৃদযন্ত্রের বেড়ে ওঠা আওয়াজ।

যাবি আমার সাথে সূর্যোদয় দেখতে?করবি আবার শুরু সবকিছু নতুন করে?গড়বি আমাদের পৃথিবী?
ভোরের বেলায় শিশির ভেজা ঘাসে দু'জনেতে হাঁটবো,আর মাখবো গায়ে শরতের শিউলির গন্ধ!
করবো অনেক ছেলেমানুষী,হবো লাগামছাড়া,লোকে যে যাই বলুক,করবো দুষ্টুমি,হবো বেয়াদপ তোর জন্য..

লোকে দেখলে যদি বলে 'আহা!আদিখ্যেতা দেখো'!সে না হয় বলুক!
শরীরের বয়স বাড়ুক,চামড়ায় না হয় পড়ুক ভাঁজ,
তোর সাথে থাকলে হবো আবারো একুশের কিশোরী আর তোর হবে কত কখন?এই পঁচিশ কিংবা সাতাশ..!!

থাকবো দু'জনে একসাথে,পাশাপাশি থাকবে দুটি ঘর,
হবো দুজনে ছন্নছাড়া বাউন্ডুলে,এই আকাশের শামিয়ানায় বাঁধবো দুজনে ঘর।
সন্ধ্যে হলে বসবো ছাদে,মাখবো গায়ে জোৎস্না..
রাখবো কাঁধে মাথা যে তোর,কথা বলবে কেবল নিস্তব্ধতা আর অব্যক্ত অনুভূতিরা!

আমি বরাবরই অভিমানী,সেটা তুই জানিস!
অভিমানের পারদ ওপর উঠলে,তখন 'ভালোবাসি' বলে বুকে জড়িয়ে অভিমানটা ভাঙিয়ে দিস!!
তোর অভিমান হলে 'এই শোন তুই নিজেকে সামলে নিস',
আমি যে বড়ো ছেলেমানুষ,এত অভিমান ভাঙাতে পারি না,তাই প্লিজ তুই' আড়ি থেকে ভাব করে নিস!

আমাদের পৃথিবীতে থাকবে না কোনো ধর্মের প্রাচীর,থাকবে না কোনো নিয়মের পর্দা..
সপ্তর্ষিমণ্ডল,শুকতারাকে সাক্ষী রেখে পড়বো দু'জনে সাতপাকে বাঁধা।
এই অরণ্য,যাবি সেখানে?থাকবি সাথে?বাঁধবি ঘর?গড়বি আমাদের পৃথিবী?

যেখানে থাকবে না কোনো মানা,নিষেধ,করবে না কেউ জাজ!থাকবে না কোনো নিয়মনীতি,থাকবে না কোনো সাম্প্রদায়িক বিভেদ..
যেখানে ধর্মের অপর নাম হবে কেবল মনুষ্যত্ব কিংবা ভালোবাসা!!!

 

গদ্য কবিতা
অলীক সুখ


ইচ্ছে করে নিয়ম নিষেধের জেব্রাক্রসিং পার করে আবার শৈশবটাকে ছুঁয়ে দেখবো,
খেলবো আবার একা-দোক্কা,কানামাছি ভোঁ ভোঁ যাকে পাবি তাকে ছোঁ,
দুধ ভাত খেয়ে মায়ের কোলে কাটবে দুপুর,করবো আবার দস্যিপনা।

বাবা বকুনি দিলেই ঠোঁট ফুলিয়ে তখনই মায়ের আঁচলে লুকোবো মুখ,
মা মা বলে জড়িয়ে ধরে মাখবো মায়ের গন্ধ,মা গাইবে খোকা ঘুমোলো পাড়া জুড়ালো,তাতেই হবে সুখ,
বর্ষার জলে ভিজবো খুব,ভাসাবো কাগজের নৌকা..
ধূ ধূ প্রান্তরে ছুটে বেড়াবো,খেলবো গোল্লাছুট।
অনেক হলো হিসেবে বাঁচা,শিখলাম জীবনের রহস্য পাঠ,
পড়তে চাই আবারো আমি কিশলয়,নব গণিত মুকুল আর রবির লেখা সহজ সহজপাঠ।

হাসিগুলো হাসবে ঠোঁটে,থাকবেনা আর মেকি,
দিন কাটবে দুধে-ভাতে,থাকবেনা ভয় আর বসের ডেডলাইনের,না থাকবে ভয় আর ইএমআইয়ের..
উড়বো আকাশে আবার হয়ে সূতো কাটা ঘুড়ি।

জানি,যে সময় চলে যায় আসেনা ফিরে,পাবোনা ফিরে আর হারিয়ে ফেলা শৈশব..
বাস্তব না হয় নাই বা হলো,নাই বা হলো ফেরা শৈশবে,স্মৃতিচারণ করেই হোক না হয় অলীক সুখ..

 

হোক চেতনার জাগরণ
গদ্য কবিতা

চেয়েছিলাম পৃথিবীর আলো দেখতে
ডাকতে চেয়েছিলাম তোমায় মা,
গর্ভে বাড়ছিলাম কন্যাভ্রূণ হয়ে
তাই আমাকে বাঁচতে দিলে না।

বিবেক যদি কখনো করে দংশন
তখন উত্তরটা তাকে দিও,
কি ছিলো আমার অপরাধ মাগো
মেয়ে হয়ে জন্মেছিলে তো তুমিও!

ফারাকটা শুধু ক্রমোজমের
তবুও কেন হয় কন্যাভ্রূণ হত্যা,
শিক্ষিত হয়েও তোমরা করো বৈষম্য
কেন করো নিষ্পাপ জীবনের হত্যা!

চাইনি কারোর ক্ষতি তো আমি
চেয়েছিলাম কেবল ভালোবাসা,আদর,
এই সমাজে মেয়েরা কেন হয় আজও অবহেলিত
পায়না উপযুক্ত সম্মান,করেনা কেউ পুত্রবৎ সমাদর।

শিক্ষিত নয় যে সে,যার আছে অনেক ডিগ্রী
শিক্ষার প্রতিফলন হোক ব্যক্তির আচরণে,
নিপাত যাক সকল ভেদাভেদ,আর লিঙ্গ বৈষম্য
চেতনার হোক জাগরণ সকলের অন্তঃপুর,অন্তঃকরণে।

 

গদ্য কবিতা
সেকেলে প্রেম


তোমায় দেখার পর আবার ভীষণ বাঁচতে ইচ্ছে করছে,
করতে ইচ্ছে হচ্ছে ভীষণ ছেলেমানুষী,হতে ইচ্ছে করছে লাগামছাড়া,অষ্টাদশী কিশোরী!

বুকের ভেতরে আবারো শুরু হয়েছে সেই অপ্রতিরোধ্য হৃদযন্ত্রের ঢিপঢিপানি আওয়াজ,
বহুদিন কারোর নামের রেওয়াজ হয়নি এই বুকে,বাজেনি কোনো সেতার,
মনের দুয়ারে আসেনি কোনো বসন্ত!
কিন্তু আজকাল পরিচিত নাম ডাকতে গিয়ে বারবার ডেকে ফেলছি তোমার নাম,
ভেংচি কেটে,মাথায় চাঁটি মেরে নিজেই নিজের ওপর হাসছি,আর বলছি..
সর্বনাশী,কি করেছিস!তুই আবারো প্রেমে পড়েছিস!

এই ফেসবুক,হোয়াটস অ্যাপের যুগেও ফিরতে ইচ্ছে করছে সত্তর কিংবা নব্বইয়ের দশকে,
লিখতে ইচ্ছে হচ্ছে তোমার জন্য লাল,নীল খামবন্দী চিঠি।
মুঠোফোনে নয়,তোমায় আদ্যপান্ত চিঠিতেই জানতে ইচ্ছে হচ্ছে,
করতে ইচ্ছে হচ্ছে লোকে যাকে বলে সেকেলে প্রেম,
পেতে ইচ্ছে করছে তোমার লেখা,তোমার গন্ধমাখা আমার জন্য তোমার নামের আদুরে বার্তা।

তুমি না থাকলেও তোমার লেখা ওই সাদা কাগজের প্রতিটি অক্ষরে করবো তোমাকে উপলব্ধি,
আগলে রাখবো,জড়িয়ে ধরবো যেন তোমায় জড়িয়ে ধরেছি,
মুঠোফোনে এইসব আর জো কোথায়!
আজকাল সকলেই শরীর ছুঁতে চায়,মন ছোঁয়ার ম্যাজিক কতজন জানে বলো তো!
আমি তোমায় এইভাবেই ছুঁয়ে যেতে চাই,করতে চাই আলিঙ্গন,আগলে রাখতে চাই বাহুডোরে,
দেবে আমায় এইভাবে ছুঁতে?লিখবে চিঠি?
আলাপ জমুক চিঠিতে,ইনবক্স পেরিয়ে নস্টালজিক আবেগে প্রেম জমুক চিঠিতে।
আমাদের প্রেমটা আভিজাত্যের ঠুনকো আঁচে বা নিয়নের আলোয় নয়,
বরং মাটির প্রদীপের অনুজ্জ্বল আলোর শিখায় সেকেলে হয়ে বাঁচুক।

 

গদ্য কবিতা
তুই


দিনটা আজো মনে পড়ে ভীষণ,ছিলো সেদিন আমার জন্মদিন,এসেছিলিস হাতে নিয়ে তুই হলুদ গোলাপ
চোখে চোখ রেখে 'ভালোবাসি' বলেছিলিস স্ট্রেটকাট।
অপেক্ষা ছিলো এই দিনের শুনবো কেবল এই কথাটি
জড়িয়ে ধরে বলবি কখন 'এই ভেবলি তোকে ভালবাসি'

চলতো আড্ডা নন্দন,ভিক্টোরিয়ায়,আবার কখনো অস্তবেলায় ভালোবাসার সাক্ষী থাকতো প্রিন্সেপ ঘাট
রাখতিস নিজের বাম পাশে,ছাড়িসনি কখনো হাত।
আমি বরাবর দস্যি মেয়ে,ছিলাম ঝাঁসির রানী লক্ষ্মী
তুই বরাবর শান্ত ছেলে,বেচারা সহ্য করতিস খুনসুটি।

প্রমিস তুই করেছিলিস,যাবি না আমায় কখনো ছেড়ে
তবুও হারিয়ে কেন গেলি,চলে গেলি আমাদেরকে ছেড়ে
গিয়ে সেদিন দেখেছিলাম,সাদা কাপড়ে আছিস জড়িয়ে।
ডেকেছিলাম খুব করে,দিসনি সেদিন ডাকে তুই সাড়া
অসাড় হয়ে ছিলাম দুদিন,হয়েছিলাম নির্বাক,বাক্যহারা।

তোর ভেবলি আজ শান্ত ভীষণ,নেই আর সেই চঞ্চল
এখন হয়েছি স্বল্পভাষী,হয়েছি সংযমী,সাবধানী,অচপল
নেই আর আমি সেই ছিঁচকাদুনে,হয়েছি অনেক পরিণত।
স্মৃতির করিডোরে তবুও আজও তোরই যাওয়া আসা
আমার আমিতে তুই আছিস জুড়ে,থাকবি তুইই অবিরত।

 

গদ্য কবিতা
তোমার অপেক্ষায়


অপেক্ষায় কেবল কাটছে দিন,কাটছে তুমিহীনা হয়ে সকাল থেকে সাঁঝ,
অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে চলে গেলো কত বসন্ত,কেটে গেলো কত দিন,মাস।

হয়নি কতদিন খুনসুটি,হয়নি অনামিকা-কনিষ্ঠায় আদুরে আলাপ!!
মিলন হয়নি দুই নয়নের আঁখি-পল্লবের,যে চোখে দেখেছিলাম আমি আমার সর্বনাশ!

অপেক্ষায় আছি তোমার হাতটি ধরে সীমানা ছাড়িয়ে যাবো সাত সমুদ্র তেরো নদী পার,
রাখবো তোমায় বুকের বাঁ পাশে,হৃদয়দেশে থাকবে কেবল তোমারই রাজত্ব চিরকাল!

তোমার অপেক্ষায় আছে আমার উঠোনের কৃষ্ণচূড়া,ওরা এখনো কুঁড়ি থেকে ফুল হয়ে ফোটেনি,
অপেক্ষায় আছে তোমার জন্য আমার দুটি নয়ন,সেখানে বহুদিন সুখ বৃষ্টি হয়নি।

তুমি এলে হঠাৎ ফুরিয়ে আসা বিকেলে ডেকে উঠবে পাখি,গাইবে গান,ডাকবে 'ইস্টি কুটুম',
শুধু তুমি এলেই অকাল বসন্তেও গেয়ে উঠবে কোকিল, কুহু কুহু রবে করবে কলতান।

চেয়ে আছি পথের পানে,তোমার জন্য রেখেছি খুলে হৃদয়ের সব রুদ্ধ দুয়ার,
যদি তুমি আসো ফিরে হৃদয়ের শুষ্ক মরুভূমিতে নামবে বৃষ্টি,আসবে ভালোবাসার জোয়ার।

শুধু তুমি এলেই শান্ত হবে মনের সব ঝড়,উপশম হবে সব আঘাতের,তুমিই তো মনের মলম,মহৌষধি,
মুছিয়ে দিয়ো তুমি মনের ব্যথা,তুমি সাধারণ কেউ নও,সব ব্যথার উপশম,তুমি আমার বিশল্যকরণী।

 

কবিতা
নারীর স্থান


এই পিতৃতান্ত্রিক সমাজ নারী পুরুষের সাম্যের কথা বললেও নারী পায়নি আজও পুরুষতুল্য সমানাধিকার,
পায়নি পুরুষসম শ্রমের মূল্য,পায়নি বাঞ্ছিত সম্মান,হয়নি তার কদর,পায়নি তার জন্য নির্দিষ্ট মানবাধিকার।

যুগ যুগ ধরে এই সমাজ ঠিক করে দিয়েছে নারী পুরুষের জীবন যাপনরীতি,চলেছে এক লিঙ্গরাজনীতি,
এই সমাজ বারবার বুঝিয়ে দিয়েছে মেনে নাও,নয়তো নাও মানিয়ে এই তো আজীবন সংসারের রীতি।

এই সমাজ এয়োতিদের পরতে বলে শাঁখা,সিঁদুর,আর লজ্জার ঘোমটা কারণ নারীদের ভূষণই নাকি লজ্জা!
লজ্জা কেবল নারীর থাকতে হয়,অন্যের নয়,তাই বাড়ির পুরুষদের পাতে মাছের মাথা,মেয়েদের জোটে ল্যাজা।

বিয়ের পরে হতে হয়েছে স্বামীর ঘরে যৌতুকের নিমিত্তে বলি,হারাতে হয়েছে কত নারীকে অকালে মূল্যবান প্রাণ,
শিক্ষিত হয়েও করতে পারেনি প্রতিবাদ,দিতে পারেনি অবিচারের জবাব,রাখতে জন্মদাতা পিতার সম্মান।

একলা পথে চললে নারীর জাগে মনে ভয়,ভাবনা হয় মানুষ রূপী হায়নারা এসে ঝাঁপিয়ে পড়ে যদি করে ধর্ষণ,
তখন এই সমাজ ছেটাবে কালি,বলবে ছিলো হয়তো চরিত্রে বা পোষাকের দোষ,তাই তো হয়েছে ওর ধর্ষণ!

নারী মানেই সহজলভ্য,এমন ধারণার হোক নিরসন,হোক ওরা সাহসী ঝাঁসির রানী,মনে থাকুক বল,
করুক ওরাও অন্যায়ের প্রতিবাদ,বিপদ দেখলে করুক আঘাত,কিংবা মারুক আঘাতকারীকে ছোবল।

এসেছে আজ স্মার্টফোন,মানুষ যাচ্ছে চাঁদে,তবুও মানুষের ভাবনায় আসেনি আধুনিকতা,হয়নি অগ্রগতি,
তবুও ইচ্ছে জাগে মনে,মানুষের অন্ধকার মনে পৌঁছে যাক সাম্যের ভাবনার আলো,হোক নারীদেরও প্রগতি।

 

গদ্য কবিতা
তোমার অপেক্ষায়


অপেক্ষায় কেবল কাটছে দিন,কাটছে তুমিহীনা হয়ে সকাল থেকে সাঁঝ,
অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে চলে গেলো কত বসন্ত,কেটে গেলো কত দিন,মাস।

হয়নি কতদিন খুনসুটি,হয়নি অনামিকা-কনিষ্ঠায় আদুরে আলাপ!!
মিলন হয়নি দুই নয়নের আঁখি-পল্লবের,যে চোখে দেখেছিলাম আমি আমার সর্বনাশ!

অপেক্ষায় আছি তোমার হাতটি ধরে সীমানা ছাড়িয়ে যাবো সাত সমুদ্র তেরো নদী পার,
রাখবো তোমায় বুকের বাঁ পাশে,হৃদয়দেশে থাকবে কেবল তোমারই রাজত্ব চিরকাল!

তোমার অপেক্ষায় আছে আমার উঠোনের কৃষ্ণচূড়া,ওরা এখনো কুঁড়ি থেকে ফুল হয়ে ফোটেনি,
অপেক্ষায় আছে তোমার জন্য আমার দুটি নয়ন,সেখানে বহুদিন সুখ বৃষ্টি হয়নি।

তুমি এলে হঠাৎ ফুরিয়ে আসা বিকেলে ডেকে উঠবে পাখি,গাইবে গান,ডাকবে 'ইস্টি কুটুম',
শুধু তুমি এলেই অকাল বসন্তেও গেয়ে উঠবে কোকিল, কুহু কুহু রবে করবে কলতান।

চেয়ে আছি পথের পানে,তোমার জন্য রেখেছি খুলে হৃদয়ের সব রুদ্ধ দুয়ার,
যদি তুমি আসো ফিরে হৃদয়ের শুষ্ক মরুভূমিতে নামবে বৃষ্টি,আসবে ভালোবাসার জোয়ার।

শুধু তুমি এলেই শান্ত হবে মনের সব ঝড়,উপশম হবে সব আঘাতের,তুমিই তো মনের মলম,মহৌষধি,
মুছিয়ে দিয়ো তুমি মনের ব্যথা,তুমি সাধারণ কেউ নও,সব ব্যথার উপশম,তুমি আমার বিশল্যকরণী।

 

হার মেনো না
পদ্য কবিতা


হার জিত নিয়ে ভেবোনা কখনো
রেখোনা মনে সংশয়ের বিহ্বলতা,
সমস্যা,বাধা নিয়ে তুমি ভাববে যত
বাড়বে জীবনে ততোই জটিলতা।

হেরেও যদি আজ যাও তুমি
মনে জেতার ভাবনার করো উদয়,
প্রায়শ হেরে গিয়েও যারা দাঁড়ায় উঠে
মনে রেখো,তাদেরই হয় ভাগ্যোদয়।

বারবার করে যাও জেতার চেষ্টা
কখনো ভুল করেও হাল ছেড়ো না,
নিজের সর্বস্ব দিয়ে করো প্রয়াস
ব্যর্থতার ভয়ে পিছিয়ে এসো না।

চাওয়া পাওয়ার হিসেবনিকেশে
আছে সাধ আর সাধ্যের দ্বন্দ্ব,
ভাবনার সাথে বাস্তবের অমিলে
হাজারো স্বপ্ন হয়েছে লন্ড-ভণ্ড।

সব কামনা-ইচ্ছের হয়না পূরণ
নির্মম নিয়তির নিষ্ঠুর পরিহাস,
তবু হেরে গিয়েও যারা উঠে দাঁড়ায়
তারাই লেখে জয়ের ইতিহাস।

জীবন পথে আসবে চড়াই-উতরাই
দিয়ো না ব্যর্থতাকে মনে মননে গুরুত্ব,
পথ চলতে হোঁচট খেয়েও যে দাঁড়ায় উঠে
তাতেই মানুষের সবচেয়ে বড়ো বীরত্ব।

 

হও সচেতন
গদ্য কবিতা


এই সমাজে আজও বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে হলে পাত্র পাত্রীকে হতে হয় প্রায় সমবয়সী,
কিংবা বয়সের মধ্যে রাখতে হয় ব্যবধান..
পাত্রী যদি হয় পাত্রের থেকে বয়সে বড়ো,লাগে নাকি বড্ড বেমানান!

মেলাতে হয় ঠিকুজি কুষ্ঠি,মিলিয়ে নিতে হয় ছত্রিশ গুণ,
সেই দম্পতি সুখে থাকে,যার নাকি যত বেশী মিলবে গুণ।
যদি থাকে মাঙ্গলিক দোষ,জীবনসঙ্গীর জীবন বাঁচাতে সময় থাকতেই নির্মূল করতে হবে সেই দোষ!
নয়তো হবে ভুগতে,হবে আপশোস।

পাত্রপাত্রীকে হতে হয় একই ধর্মের,সাথে মিলিয়ে নিতে হয় দু'জনের গোত্র,
দেখে নিতে হয় পরিবারিক অবস্থা,পিতার আয়,
আর জেনে নিতে হয় পাত্রীপক্ষ দিতে পারবে যৌতুক হিসেবে কত!

পাত্র যদি উপার্জন করে মোটা মাইনে,
থাকুক যতই চরিত্রের দোষ,অর্থের প্রাচুর্যে সব দোষ যাবে ঢেকে।
পাত্রীকে জানতে হবে তাকে রান্না,হতে হবে দশভূজা,কিন্তু পাত্রীটি যেন না হয় প্রতিবাদী।

এইভাবেই হয় কন্যাদান,চলে পণের দেওয়া নেওয়া,
টাকা থাকলেই মেয়ে থাকবে সুখী,হায়!এই তো সমাজ সব মেয়েদের পিতার ধারণা!
টাকার সাথে হয় রূপের বিয়ে,কেউ মনের খোঁজ নেয় না,
এইভাবেই মানিয়ে নাও,নয়তো মেনে নাও রীতিতে কত পিতার কন্যারা করছে ঘরকন্না।

বেমিল বিয়ে পণের কারণে কত মেয়েকে বহন করতে হয় শরীরে সিগারেটের ছ্যাঁকার মতো অব্যক্ত যন্ত্রণা,
সহ্য ক্ষমতা মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে ওরা গলায় পরে নেয় কখনো দড়ির ফাঁস,দূর করতে সব জীবন যন্ত্রণা।

যুগ যুগ ধরে চলে আসছে এই রীতি,টাকা থাকলেই মিলবে সুখ,এই চিন্তাধারার হোক পরিবর্তন,
বিয়েটা হোক দুই মনের মিলনে,কিন্তু পণ নিয়ে যেনো না হয় কোনো পরিণয়।
ছড়িয়ে যাক সচেতনতা,প্রতিটি মেয়ে বাঁচুক সম্মানের সাথে,কারোর যেন না হয় আর জীবন নিয়ে সংশয়!

 

জীবন এক রঙ্গমঞ্চ
পদ্য কবিতা

আমাদের জীবনটা হলো একটি রঙ্গমঞ্চ
আমরা সকলেই অভিনেত্রী অভিনেতা,
সমস্ত উপস্থাপনা পরিচালনা করছেন যিনি
তিনি হলেন স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা,বিধাতা।

মাতৃগর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় থেকে
আমরা অবিরাম করে চলেছি অভিনয়,
শেষ নিঃশ্বাস নির্গত হওয়ার আগে পর্যন্ত
চালিয়ে যেতে হবে সকলকে অভিনয়।

এই রঙ্গমঞ্চে অবিরত সকলে করছে অভিনয়
কেউ কেউ আছে পরে ভালোমানুষের মুখোশ,
ভুল হয়ে যায় প্রায়শই মানুষকে চিনে নিতে
বিশ্বাস করে যখন ঠকে যাই,তখন হয় আফসোস!

দিবারাত্র করছে সবাই ভালো থাকার অভিনয়
মনের ব্যথা নিয়েও হাসি মুখে বলছে ভালো আছি,
জুটবে না অস্কারের মতো কোনো অ্যাওয়ার্ড জেনেও
তবুও সেরা অভিনেতা অভিনেত্রী হওয়ার চেষ্টা করছি।

যতদিন থাকবে বেঁচে,বাঁচার মতো করেই বাঁচো
করে যাও নিজের কর্ম,দিও সকলকে আদর সম্মান,
ইহলোকের ভূমিকা একদিন যখন হবে সমাপন
থেকে যাবে কেবল কর্ম,রয়ে যাবে আমাদের নাম।

অভিনয় শেষ হলে,যবনিকার হয় পতন
দর্শকরা চলে যায়,রঙ্গমঞ্চ তখন পড়ে থাকে খালি
পাড়ি দিতে হয় অনন্ত যাত্রার উদ্দেশ্যে পরলোকে
থেকে যায় অভিনয়ের রেশ,বিদায় নেয় কলাকুশলী।

সস

৪টি মন্তব্য:

  1. নন্দিনী,
    ।।তোমার প্রতিটি কবিতা আমার ভালো লেগেছে।আরও লেখ ।জীবনে আরও উন্নতি কর এই কামনা করছি । দাদু

    উত্তরমুছুন
  2. Khub khub khub sudar hoye6e kobita gulo. Aro kobitachai erokom.❤❤❤❤

    উত্তরমুছুন

Blogger দ্বারা পরিচালিত.