মাসিক ‘কবিতাকণ্ঠ’ নভেম্বর-২০, ১৩ তম বর্ষ, সংখ্যা ৫৫

পরিচালনা পর্ষদ
সম্পাদক :
এম, আব্দুল্লাহ আল মামুন
নির্বাহী সম্পাদক:
কবির পথিক
প্রধান শিক্ষক(উপশহর আদর্শ বালিকা বিদ্যালয়,বগুড়া)
উপদেষ্টা সম্পাদক:
কাজী হানিফ
(সিনি: ইন্সটাক্টর, টিটিসি)
প্রচ্ছদ:
এম, আব্দুল্লাহ আল মামুন।
আর একজন নজরুল চাই
----------------------------------------------
বিভাবরী স্রোত
সেলিম আলতাফ
কানামাছি সময়ে সবকিছু নেবে বলে
কৌমুদী পথে বাড়িয়ে দিলে হাত,
আমাকে ছুঁয়ে বাসন্তীকায় দেখাতে চাইলে
নতুন ফতুয়ায় ভালোবাসা ভরা কারুকাজ।
তারপরেও কিভাবে তোমাকে ছুঁই বলো?
এখানে যে এখনো আকাশের হাটে জল কাদা,
বরষার জলে ভিজে জেরবার ভরসার ব্যালকনি।
মনের মাঝে অনেক ঘর পায়রা বাসা-
এখনো খোলা আছে কতটা তার কে জানে?
অবসাদের ছাদে শ্যাওলা জমা সুখগুলো
কেবলই পিছলে যাবার ভয় নীলাভ পাখায়,
মরচে পড়া গোছা স্বপ্ন যতই শানিত করি
তবু দাগ থেকে যায় ছোপ ছোপ ঝিনুক শরীর।
কেটে যাক কিছু বারুদ সময়-
তবু বাড়িয়ে রেখো হাত।
কালো রাত পোষ মেনে দেখাবে সাদা সকাল,
তখন আমি ছুঁয়ে দেব তোমাকে বিভাবরী স্রোতে।
জ্যান্ত লক্ষ্মীরা আজকের দিনেও লাঞ্ছিত
প্রণব চৌধুরী
কি অদভুদ পৃথিবী !
আর কি তার অদ্ভুদ অদ্ভুদ নিয়ম বলুন তো ?
জ্যান্ত লক্ষ্মীরা সব রাস্তাঘাটে, ট্রামে,বাসে, শপিংমলে ও সর্বপরি একান্তে নিভৃতে নিজ বাসভবনে প্রতিনিয়ত প্রতিক্ষনে পলে পলে হচ্ছেন লাঞ্ছিতা,ধর্ষিতা ও খুন ৷
অথচ সেই দিকে আমাদের কোনো দৃষ্টি নেই,
নেই সেই চলাফেরা করা জীবন্ত লাশের প্রতি সহানুভূতির ছোঁয়া ৷
হয়ত একটু ছুঁয়ে দিলেই,
প্রাণের সঞ্চার সেখানে সঞ্চারিত হবেই,
সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না ৷
অথচ আজকের এই কোজাগরী লক্ষ্মী পূর্নিমার দিবসে ঘরে ঘরে হচ্ছে পুজিত ধনদেবীর আরাধনা
সাড়ম্ভেরের সহিত ৷
সকলেই উঠে বাজার যাচ্ছিলাম,
না,
পুজোর বাজারের জন্য নয়,
সমস্ত রাত্রি ঘুমোতে পারি নি দাঁতের ব্যাথ্যার জন্য ৷
তাই তড়িঘড়ি করে ঔষধ আনার জন্য ৷
আমাদের পাশের বাড়ির পরের বাড়ি,
কাজের মেয়ে লক্ষ্মী কাজে আসতে দেরি করায়,
গৃহকর্ত্রী বলে কিরে লক্ষ্মী ?
জানিস না আজ লক্ষ্মী পুজা ?
কত কাজ সকাল থেকে ?
আর আজকেই কিনা---------- তুই ?
কাল রাত্রি থেকেই আমার ছেলেটির খুব জ্বর,
তাই ভোর ভোর থাকতেই ডাক্তার বাবুর বাড়ি গিয়েছিলাম ,
তাই আসতে একটু দেড়ি হলো ৷
গৃহকর্তা বলে বসেন,
তোর তো শুধু বাহানা ৷
আর বিশেষ বিশেষ দিন গুলিতে যেইদিন করে কাজের ভির থাকে,
সেইদিন গুলিতে তোর ছেলের জ্বর হয় ৷
হতচ্ছাড়ি !
বলেই কতগুলি কাপড় তার মুখের দিকে ছুঁড়ে দিল ৷
গালে বাসিয়ে দিল ঠাস করে কষিয়ে একটি .চড় ৷
গিন্নী মা পাশ থেকে চিৎকার করে বলে,
নে দাঁডিয়ে আর ঠং করে কাঁদতে হবে না ৷
কাপড় গুলো কেঁচে তারপর সমস্ত উঠোন বাড়ি ভালো মুছতে হবে ৷
নাঃ,
দাঁতের ব্যথায় আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছিলুম না ৷
আমি চলে গেলাম ঔষধ আনতে ৷
ফিরছিলাম ঔষধ নিয়ে ৷
একই রাস্তায়,
আর রাস্তার পাশেই তাদের বাড়ি পড়ে ৷
বাড়ির পাশে আসতেই লক্ষ্মীর গলার আওয়াজ পাই,
না ছোটকর্তা আমায় ছেড়ে দিন,
পাশ থেকে চাপাগলায় পুরুষ কন্ঠ বলে ওঠে,
কাউকে যদি বলেছিস,
তো খবর আছে ৷
সেখান থেকে হাউ মাউ করে লক্ষ্মী কাঁদতে কাঁদতে বেড়িয়ে আসতেই,
গৃহকর্ত্রী ছোঁ মেরে তার হাতটি ধরে বলে,
হাঁরে লক্ষ্মী ?
তুই বলছিলি না তোর ছেলের জ্বর ,
এই পাঁচশত টাকাটা নে,
ছেলের ঔষধ ও পথ্য কিনে দিবি ৷
আর যদি-------------!
লক্ষ্মী রুদ্ধশ্বাসে সেখান থেকে বেড়িয়ে চলে যায় ৷
তাই তো ভাবি !
আর ভাবি!
আর কতদিন !
জ্যান্ত লক্ষ্মীকে পণ্য,
আর মুত্তির লক্ষ্মী কে ধন্য করব !
আমরা নাকি আবুনিকতম শিক্ষার আলোকে
আলোকিত
!
আমিউ তো চাই
মোঃ ইব্রাহিম মিয়া ।
আমিউ তো চাই
আমি কারো এমন কাছে যাই,
ভাল লাগার ঊর্ধ গগনে
উড়ি আমি কারো হৃদয় প্রাণে ।
আমাকে ছোয়ার আকুতি
স্বপ্ন দেখাবে তার ভালবাসার বসতি।
আমিউ তো চাই
আমি কারো এমন কাছে যাই,
মুখ ফুটে না বলে
অনুভবের খুব কোণে
লুকিয়ে রাখক আমায মনে মনে।
রাত দুপুরের সব শেষে,
আমি থাকি তার চোখে ভেসে।
আমিউ তো চাই
আমি কারো এমন কাছে যাই
হৃদয়ের খুব গহিনে,
চাওয়া পাওয়ার আল্পনা বূনে
রঙ তুলির রঙের কোণে
আমার ছবি আঁকুক কেউ ক্ষনে ক্ষনে ।
না আসে বঞ্চনা
জুনায়েদ খান প্রান্ত
আসে যতো বিপদ আর বঞ্চনা এ দেহে,
ভয় না করি সাহসিকতার সাথে পথচলি।
কেউ নাই বা দিল সান্ত্বনা তাতে কী?
খারাপ সময়কে যেন করিতে পারি জয়,
এই আমার একান্ত প্রার্থনা।
সহায় লোকজন না জুটে এইক্ষণে,
নিজের সংকল্প সঞ্চারিত করে লভিলে বঞ্চনা।
আত্মাবিশ্বাস যেন কখনো না টুটে,
নিজের দোষে নাহি হয় ক্ষয় সশরীরে।
নিজের মানে না যেন দেয় দাগ কালো অক্ষরে,
অন্যকে তুমি করিবে দান খোলা হাতে,
সর্বদা এই নয় আমার প্রার্থনা প্রভুর কাছে।
তরিতে যেন তবু বেঁচেরয় আশার বানী,
তুমি কখনো নাহি মেনে নেবে বঞ্চনা।
এই মননশীল চিন্তাদ্বারা নিয়ে করি ঘাটাঘাটি,
নাহি বা কখনো দিলে সান্ত্বনা এই প্রান্তরে।
বহে যেন নদী এমনি করে স্রোতস্বিনী,
নম্র কাননে নিখিল ধারায় সুখের দিনে।
হাসি উল্লাসের মাঝে লইবো চিনে,
বৈচিত্র্যময় প্রকৃতির অপরুপ মুখখানা।
কখনো যদি আবার আসে বঞ্চনা,
নাহি যেন আসে মনে কোনো সংশয়।
এই আমার একান্ত প্রার্থনা তোমার তরে।
শিখে গেছি
সৌরভ মজুমদার
সে হয়তো ভেবেছিল তাকে ছাড়া কষ্টে আছি
কিন্তু সে তো জানে না,
আমি এখন একাকিত্ব নিয়ে বাঁচতে শিখে গেছি।
হ্যাঁ, একটু কষ্ট পাওয়া তো স্বাভাবিক
তারপরও নিজেকে মানিয়ে নিচ্ছি।
বিভেদ
ফরিদুজ্জামান
আমার কাছে দামী যাহা
তোমার সেতো খেলনা,
আমি যেটা মাথায় তুলি
তোমার সেটা ফেলনা।
তোমার সদা আমিষ জুটে
পাইনা আমি নিরামিষ,
আমার যাহা অমৃত লাগে
তোমার কাছে সেটা বিষ।
যারে আমি মাথায় রাখি
তুমি দাও পায়ে ঠাঁই,
তোমর যাহা ভালো লাগে
আমার কাছে মূল্য নাই।
তোমার বাস সুখ নগরে
কষ্ট ভিটায় আমার ঠাঁই,
তুমি থাকো অট্টালিকায়
ভাংগা ঘরে আমি ঘুমাই।
খবরদারী করে খাও তুমি
আমি অধম খেটে খাই,
তোমার বেলায় সর্ব সুখ
আমার পাশে কষ্টটাই।
এক সমাজে করি বাস
এক নামে ডাকে সবাই,
তবু কেন এতো বিভেদ?
তোমার আমার মাঝে ভাই।
তবু ছাড়িনি হাল
দেওয়ান এহছান কবির
কোন এক জ্যোৎস্না প্লাবিত রাতে
হয় তোমার সাথে প্রথম দেখা,
তার সূত্র ধরেই চলছিল
মোদের মেলামেশা একা একা ।
আমার প্রথম স্বীকৃতিস্বরূপ প্রেম
করি তোমায় সমর্পণ,
মনে হয় তোমার বিভ্রান্তিকর রুচি
বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় সারাক্ষণ ।
দেখি অবাক চোখে, কি অদ্ভুত লাগে
সব যেন মনে হয় আজ গোলমাল,
এতদিনের সম্পর্ক, মনে হয় শুধু গল্প
এটা কি প্রতারণা ? না কি সময়ের কাল,
তবু ছাড়িনি হাল, আজকাল
তোমার মায়াবী চাহনি মনে পড়ে,
যদি কভু, ভাঙ্গে ভুল, এসো ফিরে
জ্যোৎস্না রাতে, চিরতরে
উদ্দেশ্যহীন কবিতা
রীতম দত্ত
রোজ যখন সকালে উঠে
কাঠের ডিজাইন করা সোফায় বসে
চা খাবে কথাটি বলে
যখন দিতে এক চিলতে হেসে,
আমি তখনও প্রেমের কবিতা লিখতে পারিনি।
রোজ যখন সন্ধ্যায় গানের আসরে
তাল দিতে দিতে চোখের আলাপ
আমরা অনুভব করতাম আজব সুখ
যদিও থাকতো গানের কথায় প্রলাপ,
আমি তখনও প্রেমের কবিতা লিখতে পারিনি।
আজ যখন চা খেতে খেতে
তোমার শূন্যতা অনুভব করছি
নির্বোধ আমি,পাগল আমি
বিরহের বদলে প্রেমের কবিতা লিখছি।
আজ বুঝেছি কবিতা হতে হয়
অদৃশ্যতমাকে উদ্দেশ্য করে
আশাহীনভাবে লিখতে হয়
লিখতে হয় সাদা কাগজ ভরে।
উদ্দেশ্যে থাকে নিরাশা
উদ্দেশ্যহীনে থাকে অপ্রাপ্ত আশা।
ঈদ-এ মিলাদুন্নবী
মোঃ রায়হান কাজী
দু-জাহানের বাদশা এলেন ধরনীর বুকে
আলোর প্রদীপ জ্বালিয়েছেন আকাতরে মানবের মনে।
অন্ধকারকে দূরে ঠেলে সৃষ্টি নূরের উল্লাসে,
আল্লাহ আল্লাহ রব্ ওঠে পথহারা ভ্রান্ত দিগন্ত জুড়ে।
নবীর প্রেমে মসগুল হয়ে বিদূরিত হয় কালো,
হাসিলো পাখপাখালি দেখিয়া নূরানী চেহারাখানি।
সেই খুশি যে আকাশচুম্বী বিস্তৃত জলরাশি,
জানতো সকল জগতবাসী সূদুর প্রসারী।
তাহার তরে মনুষ্যকূল পেলো খোদার শ্রেষ্ঠদান,
এটি নয় যে কোনো গ্রন্থ কিংবা উপখ্যান।
মুসলিম জাতির জীবন-যাপনের জন্য
পূর্ণাজ্ঞ এক সংবিধান আল-কুরআন।
চন্দ্র,সূর্য, গ্রহ,তারা আরো আছে কত-কী?
তাহার তরে দুরুদ পড়ে সমগ্র আসমা-জমিন সবি।
সেই হাওয়াতে হৃদয় ভাসে আসে যে,
সকল উম্মাদের মাঝে ঈদে-এ মিলাদুন্নবী।
কীভাবে বেচেঁ আছি।
মো. আলী আশরাফ মোল্লা
কীভাবে বেচেঁ আছি জানে নাতো কেউ
মুখে আমার হাসি অন্তরেতে করে আগুন দাউ দাউ
বাহিরেতে সবার সাথেই হাসি মিশি করি মিষ্টি আলাপন
কতটুকু ভালো আছি সুখে আছি জানতে চাই না তো কেউ।
এমনিতেই বাহিরে ফিটফাট ভেতরে তো প্রচন্ড আগুন
নেভানোর নাম গন্ধ নাই সবায় বাড়িয়ে দেয় জ্বালা দ্বিগুন
আরাম নেই স্বস্থি নেই সুখ নেই নেই থাকার সুব্যবস্থা ও
বেশ ভালো আছি সুখে আছি বলেই প্রিয়জনদের কাছে অভিনয় করতে হয় প্রতিনিয়তই।
কেমন আছে কোথায় আছে বন্ধু বান্ধব প্রিয়জন আত্বীয় পরিজন
কর্মযজ্ঞ ব্যস্তময় পৃথিবীতে কেউ রাখে না কারো খবর
সবাই যখন আনন্দযজ্ঞে চরম ব্যস্ত স্ত্রী পুত্র সন্তানাদি নিয়ে
আমি তখন ঠিক পিচঢালা রাস্তার মাঝখানে দাড়িয়ে থাকি অন্যের চলাচল মসৃণ করতে।
এক জীবন অসুখে কেটে যায় গোপনে
আইনুন্নাহার আল্পনা
এক জীবন অসুখের বিষে কেটে গেলে কেউ আশা কোথায় রাখে ?
এক মৃত্যু জীবনাবসান করে দিয়ে মনোবেদনা কোথায় রাখে?
আমি তো আকাশে রাখি জল
আমি তো মাটি খুঁড়ে রাখি হৃদয়।
আমি তো বাতাসে রাখি দীর্ঘশ্বাস
কোথায় কেউ খোঁজে পাবেনা আমার সেসব
আমি নারী আমি অন্তরালে অন্তর গোপন রাখি
আমি নারী আমি বৃষ্টিতে আমার আগুন জ্বালি
আমি পৃথিবীহীন পৃথিবীতে নিঃশ্বাস নিয়ে বেঁচে থাকার অভিনয় করি।
আমি পাবার আশায় কিচ্ছু চাই না কেবল হারাবার আশায় সময় অতিবাহিত করি।
যেমন করে অপ্রকাশিত রাখি আমার দুঃখ যেমন করে অপ্রাকাশিত রাখি আমৃত্যু যন্ত্রণার বিষ তেমন করে অপ্রকাশিত রাখি আমি আমাকে
উপেক্ষিত জীবনে মৃত্যু আর জীবন যে একি কথা।
আমার স্বাধীনতা কোথায়
আল ফারুক আহম্মেদ
কত মায়ের বুক খালী করে,
কত রক্ত আর কত মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে
পেয়েছি এই এক টুকরো মাটি,
আমি পেয়েছি একটি পতাকা
লাল সবুজের,
গড়বো সোনার বাংলা,
গাইবো গান, লিখবো গল্প কবিতা
আঁকবো সোনার দেশের ছবি।
স্বাধীন ভাবে বেঁচে থাকব বলে!
যেন হায়নার হাতে জীবন দিতে না হয়,
যেন আর কোন মা বোনের সম্ভ্রম হারাতে না হয় ।
কত রক্ত আর কত মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে
এনেছি এই স্বাধীনতা।
মাগো তোমার বুকে মাথা রেখে
ঘুমাবো নিশ্চিন্তে।
এরা কারা! আমাকে ঘুমাতে দিচ্ছে না,
ওদের লোলপ দৃষ্টি আমাকে খুঁড়ে খুঁড়ে খাচ্ছে,
ওদের রাক্ষুসে থাবা আমার সারা শরীরে রক্তক্ষরন করছে।
হায়নাদেরকে তো এদেশ থেকে তাড়িয়ে দিয়েছি সেই একাত্তরে,
নাকি ওদের বংশধর রেখে গেছে?
মাগো আমি বাঁচতে চাই
স্বাধীন ভাবে,
এই সোনার বাংলায়।
ব্যর্থতাই প্রেমের অলংকার
হাসিনা আক্তার আইরিন
প্রেমে স্বর্থকতা সবাই খোঁজে
জানে কয়জন, মঙ্গল হবে কিসে?
স্বার্থকতা শুধু আনে সুখ
ভরে উঠে শুধুই বুক।
বলো এতে আর কী আছে?
ব্যর্থতা হলো প্রেমের অলংকার
এই কথাটা জানা আছে কার?
সৃষ্টি করে সে অনেক কিছু
কবি সাহিত্যিক আর গীতিকার।
এ সবকিছু অবদান যে তার
তাই তো ব্যর্থপ্রেমিক হওয়া সবার দরকার।
ব্যর্থতাই হলো প্রেমের অলংকার
ক্ষনে ক্ষনে সে দেয় হৃদয়ে ঝঙ্কার
উথলে পড়ে কাগজ -কলমে বানী তার,
জানে না লেখক মূল্য কী তার
তাতেই যে হয় সবার উপকার।
প্রেমে স্বার্থকতা খুঁজে কী লাভ বলো,
ব্যর্থ প্রেমিক হই সবাই চল।
আমি নারী
আশিকুর রহমান
আমি নারী, আমি হানি ঐ নরপশুদের মুখে লাথি!
বিদ্রোহিণী আমি, রণোন্মাদিনী আমি- নব বিপ্লবে মাতি!
ধর্ষণ করে স্বামী দেবতায় বর্ষণ করে গাল,
আমি উঠিয়াছি, আমি ক্ষেপিয়াছি - তিষ্ঠিবে ক্ষণকাল?
মৌন যৌন-দাসী নই, শিকল খুলিয়া দিয়াছি স্বামীরে ফাঁসি!
থু থু ছুঁড়ে ঐ লাশের মুখে হাসি হা হা অট্টহাসি!
কালনাগিনী আমি-ছোবল হেনেছি উদ্ধত করি শির!
মরণ-ছোবলে জর্জরিত কায়া বিশ্ব-বিধাত্রীর!
উল্কার সম ছুটি সংসার-বন্দীশালা ভেঙে,
সত্যের খঞ্জর উঠিবে বক্ষ-পিঞ্জর খুনে রেঙে।
টেনে ছিঁড়ি আমি হুজুর-পীর-ফকিরের ছাগল-দাড়ি,
ধর্মগুরুর আস্তানা জ্বালি দুর্গার বাণ ছুঁড়ি!
আমি নারী, আমি হানি ঐ নরপশুদের মুখে লাথি!
বিদ্রোহিণী আমি, রণোন্মাদিনী আমি- নব বিপ্লবে মাতি!
ঘরের শোপিচ নই রে আমি, নই আর রাঁধুনি,
আমি ছিঁড়ে বেরিয়েছি ঘর হতে মোর হাত-পা'র বাঁধুনি।
ভোগের পণ্য নই আমি, নই সন্তান-উৎপাদী,
ধর্ষদণ্ড দাঁতে ছিঁড়ে আমি দানব-উল্লাসে মাতি!
আমি নই পরজীবী, নই পদসেবী, নই ক লক্ষ্মীদেবী,
প্রতি আঘাতের প্রতিঘাত হানি - খাসিলতে খুনখুবী।
আমি নারী, আমি সারাদিন কেন রান্নার হাঁড়ি ঠেলি?
দেব আজি স্বামী দেবতার গায়ে তপ্ত জল ঢালি!
আমি নির্যাতিতা, নিষ্পেষিতা, ধর্ষিতা দেবশিশু,
রোষে জ্বলে অণ্ডকোষ টিপে মারি মানবরূপী পশু!
আমি নারী, আমি জন্মেছি দেবী দুর্গার তেজ হতে,
হস্তে ঝলসে খড়্গ - নামিব মহিষাসুর বধে।
আমি নারী, আমি হানি ঐ স্বামী দেবতার মুখে লাথি!
বিদ্রোহিণী আমি, রণোন্মাদিনী আমি - নব বিপ্লবে মাতি!
আমি দাহন করিব নিখিল-বিশ্ব প্রলয়াগ্নি হেনে,
নীতির জগদ্দল শিলা ওড়ে প্রবল ঝড় তুফানে!
ঘোমটা ওড়াই - দ্যাখ রূপসীর রণোন্মত্ত রূপ,
প্রশান্ত ভাব নাশিয়া অশান্ত ভাঙিয়া মুখের কুলুপ!
পতির সতীত্ব নেই, তবু কেন আমি হব আজ সতী?
বলাৎকারের শিরে লাথি মারি - ধ্বংসযজ্ঞে ব্রতী!
আমি মানবী, মহামানবী - নহি কারো পোষ্য,
খোরপোষ দিই আপনারে, আমি শয়তান-শিষ্য!
আমি উল্কা, অগ্নি-হল্কা ছড়ায়ে ছুটে চলি মহাবেগে,
প্রভুদের তেজ নিভু নিভু, ওঠে - 'ত্রাহিত্রাহি' রব জেগে!
ভগবানে করি অপমান আমি অদৃষ্ট লয়ে খেলি!
দ্বার নই, দ্বারী দোযখের - কালাগ্নিতে ঈশ্বরে ঠেলে ফেলি!
আমি নারী, আমি হানি বিদ্বেষী জালিমের মুখে লাথি!
বিপ্লবী আমি, উন্মাদিনী আমি - নব বিদ্রোহে মাতি!
নিশার স্বপন
যাযাবর তুষার
যেখানে কেটেছে শৈশব
যেথায় গাঁথা আছে অস্তিত্বের শেকড়,
সেই মাটি, ফুলজোড় নদীর স্বচ্ছ জলে
খুঁজে পাই মায়ের আঁচল।
সেই নদী, সেই বালুচর
রাশি রাশি শুভ্র কাশফুল,
স্কুল পালিয়ে, ঘুড়ি উড়িয়ে
দাঁপিয়ে বেড়ানো দুকূল।
আর তেমন শাপলা ফোটে না গাড়াক্ষেত বিলে,
শালুকেরও নেই দেখা,
তবুও তাকিয়ে থাকি
শৈশবের অজস্র শাপলার সাথে কই কথা।
চোখ থমকে দাঁড়ায়
সেই শিউলি গাছের তলে,
নিজেকে খু্ঁজে পাই ফুল কুড়াতে আসা
কচি-কাঁচাদের দলে।
পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে সর্বত্র
হারিয়ে গেছে কত চেনা মুখ,
তবুও আশায় ছুটে আসি
জন্মভূমির মাটিতেই খুঁজে পাই সুখ।
এ মাটির সোদা গন্ধে, ভ
রে যায় বুক,
উবে যায় সকল ক্লান্তি অবসাদ,
ভুলে যাই দুখ।
রোমন্থন করি স্বদেশের স্মৃতি সে যে আপনার চেয়েও আপন,
দিবসের ভাবনা তুমি নিশার স্বপন।

কোন মন্তব্য নেই