মাসিক ‘কবিতাকণ্ঠ’ ডিসেম্বর-২০২০ (বর্ষ- ১৩, সংখ্যা- ৫৬)
পরিচালনা পর্ষদ
সম্পাদক :
এম, আব্দুল্লাহ আল মামুন
নির্বাহী সম্পাদক:
কবির পথিক
প্রধান শিক্ষক(উপশহর আদর্শ বালিকা বিদ্যালয়,বগুড়া)
উপদেষ্টা সম্পাদক:
কাজী হানিফ
(সিনি: ইন্সটাক্টর, টিটিসি)
প্রচ্ছদ:
এম, আব্দুল্লাহ আল মামুন।
ডিসেম্বর-২০২০ (বর্ষ- ১৩, সংখ্যা- ৫৬)
আর একজন নজরুল চাই
----------------------------------------------
সম্পাদকীয়

আমরা সবাই জানি এই মাস বিজয়ের মাস। বাংলা সাল অনুযায়ী অগ্রহায়ণের মাঝামাঝি সময়। আর ইংরেজীতে বলি ১৬ই ডিসেম্বর। ১৬ই ডিসেম্বর হলেও সারা মাস হয়েছে যুদ্ধ। অনেক রক্তপাত। যাই হোক আমরা কবিতাকণ্ঠ অনলাইনে প্রকাশ করছি ৬ মাস যাবত। বেশ ভাল সারা পেয়েছি আমরা। প্রতিদিন কবিতা আসছে অনেক। সাহিত্য চর্চা এখন নেই বললেই চলে। আমাদের এই সাহিত্য চর্চাকে বাঁচিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা। আপনারা যারা সাহিত্যকে ভালোবাসেন বা কবিতা লিখতে পছন্দ করেন তারা নিয়মিত লিখুন। ধন্যবাদ সকলকে।
এম, আব্দুল্লাহ আল মামুন
কবিতাকণ্ঠের আত্মকথা
কবির পথিক
মনের মধ্যে বর্ণমালার দোমড়ানো মোচড়ানোতে
মাদ্রাক্ষরিক থেকে একসময়
নব্য সুকান্ত নজরুল।
ভালোবাসার আশ্বর্য এক নিখাদ এডহেসিভে
একটার পর একটা বর্ণ সাজিয়ে
যে দিন আরেমোরা ভাংল ‘ ধুমকেতুর ভ্রুন’
মনের মহাকাশে সেদিন
শত চাঁদের সাদর সম্ভাষণ
আমি সেতো এক আলেকজান্ডার।
অগ্নীবিনার বাশির টানে।
পাঠাগার, লাইব্রেরী, বইয়ের দোকানে।
আরশোলা, টিকটিকি আর ইদুরের সাথে
সে কি সম্মুখ অস্তিত্বের পাঞ্জা !
অত:পর
বিষের বাঁশির এ্যারোসলে
‘ছন্দহিল্লোল’ মনে।
তথ্য প্রযুক্তির অভ্যূথানেও
আমি এক আশ্চর্য ‘বোরাক’
আমার পৃথিবী এখন মধ্যাকর্ষনহীন
শুধুই সামনে চলা, শুধু এগিয়ে চলা
নট নড়ন চড়ন, নট কিছু।
সাড়ারাত দুজনের
কাজী হানিফ
ইচ্ছে ছিলো কিছু লিখবো,
কিন্তু পারিনি কারন আমি জানিনি,
ভেবেছিলাম কিছু বলবো,
কিন্তু বলিনি মনে হয়েছিলো কিছু শুনবো,
কিন্তু শুনিনি
না লেখার যন্ত্রনা,
মনের কু মন্ত্রনা
কিছু ভাবনার আগেই পেয়ে যাওয়া
কল্পনার আকাশে বিশাল চন্দ্রজয়,
একটি ক্ষুদ্র বার্তা
পরিবর্তনের মোড়,
আজকে তোমার জন্য রাতের আকাশে
ঝলকানো চাঁদের
বিশ্ব কাঁপানো,
ভালোবাসার গল্প,
সাড়ারাত দুজনের,
তুমি যদি বিশ্বাস করো,
আমি তোমার আজীবনের বন্ধু ।।
কালপুরুষ
অর্নঃঈক্ষন
আমার ধুসর দেয়ালে তোমার আকা
গ্রাফিতি আমায় করেছে সুবোধ প্রেমিক।
মুখোশের আড়ালে ঢাকা
গভীর ভেজা চোখ আমায় করেছে শহুরে ডাহুক।
ফানুসের মত উড়ে মেঘের সাথে বসবাস
বৃষ্টিবিলাসে আমি আহত চাতক।
সেদিনের সেই নিরবতা অসহ্য নিরব ব্যাথা হয়েছি আমি প্রজাপতি ঘাতক।
শিশির শরীর
সেলিম আলতাফ
শীত রাতের কোলে ঝিমোয়
কুয়াশা চাদরে মুখ লুকানো
শিশির শরীর।
ষ্টেশনে সময় যত গভীর হয়;
ঘন কালো কবিরাজি জড়িবুটির মত
রাতও তত কালো হতে থাকে।
কোলাহল থেমে যায়, যাত্রী, হকার,
ভিখারি সবাই চলে যায় রাত যাপনে
যার যার মত।
কেউ কেউ বা কারো কারো
কোথাও যাবার তাড়া নেই - থাকেনা কখনো।
শীত ঘিরে ধরে সেইসব শরীর অস্তিত্ব
কুয়াশা নেমে আসে সাদা পরী হয়ে
কালোর শরীর ঘেঁষে।
আর বাতাস দুর্দান্ত হীম বালক হয়ে
দৌড়ে দৌড়ে খেলে বেড়ায় এই দুর থেকে
ঐ দুরের আনাচে কানাচে রেলের
সামন্তরাল পথ পরিক্রমায়।
যাদের কোথাও যেতে হয়না তারা
আগলে থাকে আঙটা হয়ে নিরুপায়।
শীতেও তারা ওম পায়না বিড়াল আদর।
ছেড়া চাদর বা ছেড়া বস্তা কাড়াকাড়িতে পড়ে
ভাগ বাটওয়ারার ভাগাভাগি উৎসব মচ্ছব।
প্লাটফর্মের কোথাও শুয়ে পড়লেই হল-
কখনো কখনো সঙ্গী হয় বেওয়ারিশ কুকুর।
এভাবেই যাবে তাদের পুরো শীতের
দুঃখ কষ্ট নিয়ে বসবাস আয়োজন।
অশীতিপর কোন বৃদ্ধ বা বৃদ্ধা চলে যাবে
হীম হাওয়ার হাত ধরে অন্য ভুবনের
অপরিচিত আলোয়।
এভাবেই প্রতিরাতে উপোষী শীত নামবে
শহরের রেল স্টেশনের পুরো সীমানায়
যতদিন তার বিদায়ের পক্ষীরাজ ঘোড়া
এসে তাকে ছিনিয়ে না নিয়ে যায়।
আর এভাবেই স্টেশনের আপন মানুষরা
কষ্ট মালায় গাঁথবে তাদের অস্ফুট দীর্ঘশ্বাস।
পরিণীতা...
দেবলীনা
কতগুলো রাত বিনিদ্র কেটে গেল ;
কই একবারও তুমি খোজ নিতে এলে নাতো ?
অবশ্য তোমার অবহেলতেই আজ
আমি আগের থেকে অনেক পরিনত।
আগের মতন দেরিতে ভাঙ্গেনা ঘুম,
আগের মতন ফুঁপিয়ে কাঁদিনা আর
এখন অনেক শান্ত হয়েছি জানো ,
আগের মতন করিনা চিৎকার!
আভীমাণ আর করিনা কাউর পড়ে,
কাউর জন্য কাজল পড়িনা চোখে;
কাউর জন্য করিনা প্রতীক্ষা,
চমকে উঠিনা কারু ফোনকল দেখে।
তোমার অপেক্ষা ছেড়েই দিয়েছি করা,
হয়ত তুমি ফিরবেনা কোনোদিন
তুমি ভাল থেক নিজের মতন করে
আমি নাহয় রইব সঙ্গীহীন।
ভেবেছিলাম রিক্ত তুমি টার
ভালবাসায় দুটো হাত দেব ভরে !
বুঝিনি তুমি এতটা নিঃস্ব যে,
ওইটুকুও রাখতে পারনি ধরে।
ভাল থেকো তুমি নিজের জগৎ নিয়ে,
আমিও আমার পৃথিবী গুছিয়ে নেব।
তোমার আকাশে নাই বা পেলাম ঠাই,
আমি আমার মাটিতে তোমায় বিছিয়ে দেব!
তোমার স্মৃতির চাঁদর জড়িয়ে গায়ে;
দিব্যি কাটবে আগুন্তি রাতদিন,
কল্পনা বুনে হাঁটব তোমার পাশে,
রাত্রিগুলো কাটবে অন্তহীন।
নিদ্রাহীন......!!
কেমন করে পেলাম আমি বাংলাদেশ
রাজীব আহমাদ
লক্ষ মানুষের ত্যাগের বিনিময়ে
পেয়েছি এই স্বাধীন ভূখন্ড
আপনি আমি কি কখন ও ভেবেছি
সেই মানুষ গুলোর জন্য
যাদের দেহ আজ মাটির গহীনে মিশে একাকার
কখন ও কি ভেবেছেন তাদের ও বুক ভরা স্বপ্ন ছিল
এই পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ নামক স্থানে
স্বাধীন ভাবে বেঁচে থাকার
কিন্তু তারা অনেকেই পায়নি সেই স্বাদ গ্রহন করতে
তাদের ত্যাগের বিনিময়ে আজ আমরা
স-গৌরভে দাম্ভিকতার সাথে ঘুরে ফিরছি এই স্বদেশে
কখন ও কি হাত তুলে দো'আ করেছেন প্রভুর কাছে তাদের জন্য
করেন নি তাই তো
বলবেন আরে আজব তারা তো আমার কেউ না
ভেবেছেন কি কখন ও তাদের ও পরিবার ছিল ভালোবাসার মানুষ ছিল আমাদের মত
কখন ও কি ভেবে দেখেছেন
কেমন করে পেলাম আমি বাংলাদেশ।
আমি অনলাইন ফেবু কবি
উত্তম দত্ত
অনলাইনে ফেবুতে কবিতা লিখে
হয়েছি আমি একজন কবি
কিন্তু আমি জানি কি আমার প্রতিভা
তবু প্রতিদিন পেয়ে যাই অনেক অনেক সম্মাননা
সেই সব দেখে ভাবি আছে আমার অনেক প্রতিভা।
আমার না আছে সেই প্রতিভা
যা লাগে একজন কবি হতে
তবুও আমি লিখে যাই সেইসব
জানি কেউ তা পড়ে না
তবুও কি করে পেয়ে যাই সেই সম্মাননা।
আছে অনেক অনেক গোষ্ঠী
এই অনলাইনের ফেবুতে
তারাই দেন এইসব সম্মাননা
পালা করে বিলোন এক একজনকে
যদিও না থাকে তাদের সেই অভিজ্ঞতা
তবুও তারা হয়ে যান আমার মতন একজন কবি।
শিখণ্ডী
আশিকুর রহমান
(কবিতাটা তৃতীয় লিঙ্গকে নিয়ে। শিখণ্ডী, বৃহন্নলা, উভয়লিঙ্গ – এই শব্দগুলো দিয়ে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে বোঝায়)
ভদ্র সমাজে বৃহন্নলারা আজিও অবহেলিত,
ঘুণে-খাওয়া এই নষ্ট সমাজে অধিকার বঞ্চিত!
ওরা নাকি নহে সুসভ্য? করে উদ্ধত আচরণ?
অধিকার কেড়ে গালি দাও তুমি, হে সমাজ! নিচু মন!
জন্ম যদি বা দিল কেহ এই সমাজে বৃহন্নলায়,
পশুর সমাজে পিতামাতা মুখ ঢেকে কাঁদে লজ্জায়।
'মানুষ' জন্ম লয়েছে যদি এ অজ্ঞের সমাজে,
মূর্খের দল! ‘মানুষ’ দেখে না, উহারা লিঙ্গ খোঁজে!
অন্ধ সমাজ! খোঁজে হাতড়িয়ে লিঙ্গের পরিচয়,
'মনুষ্যত্ব' মানুষের মনে, কভু লিঙ্গতে নয়।
বিশ্ব এগিয়ে চলিছে, - লিঙ্গ-গাঁজা খেয়ে ওরা আজ –
লিঙ্গের পরিচয় খুঁজে মরে মূর্খ, জংলী সমাজ।
মনুষ্যত্ব ভুলিয়া উহারা হয়েছে লিঙ্গবাদী,
মানববাদীরা এসো সেই সমাজের মুখে থুতু দি'!
সন্তান দিল খোদাতা’লা, আর উহারা ভুলেছে খোদা,
উভয়লিঙ্গ দেখে, কহে – “আমি ছেলের জন্মদাতা!”
ছেলে সন্তান দেখে পা মাটিতে পড়ে না অহংকারে,
মুখ ছেয়ে যায় কাল মেঘে, যদি শিখণ্ডী আসে ঘরে।
ওহে নির্বোধ! লিঙ্গ তো আসে খোদার তরফ হতে,
ছেলে জন্মাল! – ভুঁড়ি দোলাইয়া ছোটো তাই মসজিদে।
উভয়লিঙ্গ দেখিয়া তোমরা পাড়িছ 'হিজড়া' গাল,
জ্ঞানহীন তুমি, ও মাথা ভর্তি বিষ্ঠা ও জঞ্জাল!
নারী ও পুরুষ, উভয়লিঙ্গ, সৃষ্টি সে স্রষ্টার,
শিখণ্ডী যারা – দিতে হবে আজ মানুষের অধিকার।
রক্ত, মাংসের মানুষ ওরা, - আছে মানুষের অনুভূতি,
মানবতাবোধ ভুলে হে সমাজ, হয়েছ লিঙ্গ-জাতি!
লিঙ্গ-অন্ধ! ওরা শুধু খোঁজে লিঙ্গের পরিচয়,
মানুষের পরিচয় সবার আগে, তার আগে কিছু নয়!
উহারা অজ্ঞ ; জানে না ক' প্রেম, দয়া যার বুকে রয় –
মানুষের তরে কাঁদে যেই জন, তাহারে মানুষ কয়!
হোক সে মানুষ পুরুষ, রমণী, উভয়লিঙ্গ ক্লীব,
স্রষ্টার কাছে কোনো ভেদ নাই – সৃষ্টির সেরা জীব।
উভয়লিঙ্গে ব্যঙ্গ করিছ? ওরা কি মানুষ নয়?
মানুষের সম্মান কাড়ে যারা, তাহাদেরে 'পশু' কয়!
ধর্মান্ধরা শোনো! –
বৃহন্নলা যে জন্ম দিয়াছে, তাঁর পাপ নাই কোনো।
মানুষের সন্তান-রূপে ওরা এসেছে মায়ের কোলে,
তুমি সমাজের ভূত-প্রেত, তাই কহিছ – “জ্বীনের ছেলে!”
অমিত সম্ভাবনার সে শিশু আসে যদি ধরাধামে,
জ্বীনের বাদশা হুজুরেরা কয় – “জন্ম দিয়েছে জ্বীনে!”
উভয়লিঙ্গ মানুষের শিশু, ওরা শান্তির দূত,
ওরা জ্বীন-সন্তান হলে, তুমি বৃদ্ধ মামদো ভূত!
জাগিয়াছে মানবতা!-
দূর করো সবে সমাজের কুসংস্কার, অন্ধতা!
কাড়িয়াছে যেই সমাজ বৃহন্নলাদের অধিকার,
সেই সমাজের মুখে আজ তোরা লাথি মার! লাথি মার!
সংস্কারের শিকল আজিকে ভেঙে ফেল লাথি মেরে,
প্রেম ও জ্ঞানের আলো ছড়াও গো নিখিল বিশ্ব জুড়ে!
এই বিংশ শতাব্দীতে –
এসো হে মানুষ আলোকিত হই মনুষ্যত্ব বোধে!
উড়ে যাক যত অন্ধ, বদ্ধ সংস্কারের জাল,
সত্য-শিখায় পুড়ে যাক অপবিশ্বাস-জঞ্জাল।
লিঙ্গের ভেদাভেদ ভেঙে এসো করি সবে একাকার,
মানুষের রূপে জন্মেছ তুমি – তোমার অহংকার।
সাম্যের ধরণীতে লিঙ্গের নামে ভেদাভেদ করে,
ওরা পৃথিবীর জঞ্জাল! দূর করে দাও লাথি মেরে!
বিশুদ্ধ হোক ধরা, পুড়ে যাক মিথ্যের জঞ্জাল,
সত্য জাগুক! নিচে পড়ে থাক কিতাবের কঙ্কাল!
নতুন যুগের তরুণেরা এস, হাতুড়ি তুলিয়া ধরো,
সমাজের গড়া লিঙ্গ-প্রাচীরে মারো রে হাতুড়ি মারো!
এক স্রষ্টার সৃষ্টির মাঝে ভেদাভেদ ভেঙে দাও,
সত্য-ন্যায়ের নিশান উড়িয়ে সাম্যের গান গাও!
শুধাই সুধী সমাজ –
উভয়লিঙ্গ মানব গণ্য হইবে না কেন আজ?
লিঙ্গবাদীরা শোনো –
শিখণ্ডী রূপে জন্মেছে যে বা, লাজ নাই তার কোনো।
শোনো ধর্মের চাঁই,
নারী ও পুরুষ, শিখণ্ডী মাঝে কোনো ভেদাভেদ নাই।
মানবতাবোধ যার মনে রয়, তাহারে মানুষ কয়,
লিঙ্গতে নয়! সবার উপরে মানুষের পরিচয়!
কবির আত্মকথা
অর্পিতা চক্রবর্তী
কবিরা বড়ই দুঃখী
দুঃখই তাদের একমাত্র সঙ্গী,
আর সেই দুঃখ দিয়েই তারা
হাজার হাজার ডাইরির পাতা করে ভর্তি।
কবিরা কাল্পনিক হয়
কল্পনার জগতে তারা বসবাস করে,
আর সেই কল্পনা দিয়েই তারা
হাজার হাজার প্রেমের কবিতা সৃষ্টি করে।
কবিরা অফুরন্ত প্রেমের প্রেমিক হয়
রোজ নতুন ভাবে ভালোবাসা
তাদের কাছে কোন ব্যাপারি নয়।
কবিরা বড়ই নিঃস্ব হয়
একাকীত্ব তাদের সঙ্গী করে নেয়,
একলা তাদের বাঁচতে হয়
একলা তাদের লড়তে হয়।
বন্দিজীবন কবিদের পছন্দ নয়
তারা বড়ই স্বাধীনতাপ্রিয় হয়,
রুটিন মেনে চলা
তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
কবিদের মন বড় চঞ্চল হয়
জীবন তাদের শৃংখল নয়,
কিন্তু তাদের উৎশৃংখল মন নিয়ে লিখা শব্দগুলো
তারা খুব সুন্দর করে সাজায়।
কবিদের অন্ধকারে নেই ভয়
কারণ তাদের জীবনটা তো অন্ধকার দিয়ে গড়া হয়,
আর সে অন্ধকারই
তাদের কলমের কালি হয়।
কবিদের জীবন বড়ই কঠিন হয়
ক্লান্তি তাদের জীবনের অংশ নয়,
প্রতিদিন লড়াই করেই তাদের বাঁচতে হয়
তাদের এই লড়াইয়ের গল্প দিয়ে
কবিদের আত্মজীবনী লিখা হয়।
অবুঝ শিশু
মোঃ ইব্রাহিম মিয়া
মন আমার অবুঝ শিশু
যথায় তথায় চায় কত কিছু
লাগাম ছাড়া পাগলা ঘোড়া
মানে না কোন বেড়া ।
যতই টানি লাগাম রশ্মি
মন আমার দৌড়ায় বেশি
মনের চোখে রঙিন চশমা
দেখে কত সপ্ন আশা,
মিটেনা স্বাধ ভোগের নেশায়
থাকে শুধু পাওয়ার আশায়।
মন আমার অবুঝ শিশু
যথায় তথায় চায় কত কিছু
ভাল মন্দের দ্বার দ্বারে না
ন্যায় নীতির পথে হানা,
সু পথের সু কথা
মানে না মন কোন কথায়।
আসবো ফিরে রোজ এভাবে
সামিয়া আক্তার
আসবো ফিরে রোজ এভাবে ;
গ্রীষ্মের দুপুরে আম্রমুকুলের কাননে।
আসবো ফিরে রোজ এভাবে ;
বর্ষার অঝোর বর্ষনে।
আসবো ফিরে রোজ এভাবে ;
পাল তোলা নৌকার,
মাঝির ছুটে চলা বৈঠাতে।
আসবো ফিরে রোজ এভাবে ;
শিশির সিক্ত প্রভাতে, খেঁজুরের রস ভর্তি হাঁড়ি তে।
কৃষাণীর স্বপ্ন বোনা শীতল পাটিতে।
আসবো ফিরে রোজ এভাবে ;
শীতের চাদরে মোড়া , কৃষকের হাসিতে।
আসবো ফিরে রোজ এভাবে ;
বসন্তে কোকিলের কুহু কুহু ডাকেতে।
আসবো ফিরে রোজ এভাবে ;
শরতে কাশফুলের মায়াতে।
আসবো ফিরে রোজ এভাবে ; হেমন্তের নবান্নে ।
আসবো ফিরে রোজ এভাবে।
এভাবেই আসবো ফিরে রোজ ;
বাংলার প্রকৃতি তে।
ষড়ঋতুর ঋতু চক্রে ;
বাংলা কে ভালোবেসে।।
মাদকে না বলুন
মোঃ তাইজুল ইসলাম (তাজ)
মাদকে না বলুন সবাই
তবেই হবে ভালো,
মাদকে ছাড়তে পারলে তবেই
জীবন হবে আলো।
মাদক মুক্ত সমাজ করো
যুবক ভালো হবে,
মাদক সেবন করলে পরে
দেহের নষ্ট তবে।
সুস্থ থাকতে হলে সবাই
জীবন ভালো-বাসা,
জীবন ভালোবাসলে পরে
মিটবে সকল আশা।
মাদক হচ্ছে সকল রোগের
মানব রোগীর সৃষ্টি,
মাদক মুক্ত সমাজ করতে
রাখবো সবাই দৃষ্টি।
মাদক থেকে সচেতন হলেই
সমাজ হবে আলো,
মাদক সেবন করলে পরে
জীবন হবে কালো।
সুস্থ থাকতে চাইলে বন্ধু
মাদক ছেড়ে সব দাও,
জীবনটাকে ভালোবেসে
কাছে টেনে ভাই নাও।
ভালবাসার ঘর
রুকাইয়া
আমি তোমার ভালবাসার ঘর অবধ
যেতে পারিনি,
তাতে কি
মন ছুতে পেরেছি।
আবেগে আপ্লুত হয়ে
কাছে এসেছ
কিন্তু ভালবাস নি
করে গেছ ভালবাসার চেনার অভিনয়
হয়ত বুঝার কিছু ভুল ছিল আমার
আর ছিল,
দুজনের কিছু ভুল।।
কিন্তু,
আমি তো কোন করিনি ভুল
তবে ছুয়েছি তোমায়
তুমি তো কর বাধা,
করে গেছ আলতো ছোয়া
সেদিনই বুঝেছিলাম
তুমি হবে আমার প্রিয়া।।
সময়ের ব্যবধানে
তুমি তো মেনে নিয়েছ
আমার পাগলামিটা
এলোমেলো স্বভাবটা
অগোছালো ছন্নছাড়া ভাব
আর ভাল কিছু শিখার অভাবটা।।।
আমি ধন্য,,
আমি গাহি তোমার জয়গান
আমি পেরেছি,আমি জেনেছি
ছুয়ে দিতে তোমার মন প্রাণ।।
বুঝেছি অবশেষে
যখন দেখি বেলা শেষ
গোধুলি বিকেল অপেক্ষাকৃত
তোমার অপেক্ষায় রয়েছি অবিরত।।
তবুও আশ্বাস ছিল
আর ছিল কিছু বিশ্বাস
শুধু তোমার প্রতি,
থাকবে আমারই পাশে
কিন্তু তোমার ছায়াটাও নেই
আমার চোখের আশে পাশে।।।
আমি তো পেরেছি
তোমার হাতে হাত রেখে
ছলনার রঙ মেখে
তোমার সাথে চলতে
তোমাকে দেখে দেখে।।।
শুধু পারিনি
তোমার মনের ঘরে ঘর বানাতে,
পারিনি তোমায়
আমাকে ভালোবাসা শিখাতে
শুধু পেরেছ,
স্বপ্ল সময়ের ব্যবধানে
আমাকে ভুলে
নিজের অসিস্ত্ব বিশিয়ে
সবকিছু গুছিয়ে নিতে।।।।।
বাজিয়ে আপন তূর্য
জুনায়েদ খান প্রান্ত
আমরা যাবো এগিয়ে সকল কিছুর উর্ধে গিয়ে,
সহস্র বাঁধা ডিঙিয়ে বিজয় চিনিয়ে আনতে।
এগিয়ে আমরা চলবোই অধীর উদ্দামে সুপথে,
থাকবো নাতো অন্ধকার কোণে কুণ্ঠিত হয়ে।
রইবে যারা পিছু কিছুর টানে ভ্রান্তির মাঝে,
কাঁদবে তারা কাঁদবে,পথ হারিয়ে শূন্য পথে।
মন আকাশে কালো মেঘ জমিয়ে অশ্রু যখন ঝড়বে,
কে তোমাকে জড়িয়ে ধরে আপন হৃদয়ে রাখবে?
রৌদ্রছায়া আলোর ফাঁকে গাছগাছালি নাচছে,
আপন গন্ডী ছাড়িয়ে গিয়ে কোনখানেতে থাকবে?
মধ্যদিনের সূর্য যখন মাথার উপর ডাকছে,
আলোর নেশায় গেছি খেপে ওরা ওতো ফুঁসছে?
ছিঁড়বো বাঁধা রক্ত হাতে সাহস সঞ্চার করে,
চলবো হেঁটে রৌদ্র স্রোতে আপন কাজে।
সাগর-গিরি করবোই জয় দুর্নিবার নির্জনে,
একলা পথে করিনিতো ভয়,না থাকলেও সঙ্গী।
নিজের ঘোরে আছি মেতে বাজিয়ে আপন তূর্য।
দাঁড়িয়ে আছে ওরা গন্ডী পেতে একলা পেয়ে,
সব ছাপিয়ে পিছন ফেলে ডানাঝাপটিয়ে মন আকাশে,
আনবো ছিনিয়ে বিজয় ধ্বনি,ওরা ওতো কাঁদবে।
হৃদয় বীণা
চম্পা রায়
আমি ভবের মন্দিরে
ঘুরে ফিরে ভাবি
কোথায় বাঁধবো বাসা?
মন মন্দিরেই যে
রেখেছি তোমারে
আপনে আপনি আশা।
কেঁদে কেঁদে আমি
ভাসিলাম দ্বারে দ্বারে
ভবের সাগরে ভেসে
ওগো দেবতা ওগো প্রভু তুমি
কোথা আছো
কোন প্রদেশে?
দেখিবারে চায় মন বারে বার
তোমার চরণ দুখানি
অশ্রুসিক্ত নয়নে তারে
ধুয়ে হব বলিদানী।
সাজাবো যতনে ফুলে চন্দনে
ভরিব মনের রচায়
যতপারি তারে মাথায় লইব
হৃদয় গহীন গাঁথায়।
তুমি পিঞ্জরে বসিয়াছ ভরে
অকূলে ভাসিয়া রবো
সেথায় যেথা যে কূলে তুমি
আমারে করিয়া তব।
ভজিয়া ভজিবো তোমারেই
প্রভু
এই অরূপতার দায়ে
জীবনের প্রশান্তি জীবনে ভাসিবে
হৃদয় বীণার ছায়ে।
চলো ওরে ভাই
ফরিদুজ্জামান।
চল ওরে ভাই মসজিদে যা-ই
আদায় করি নামাজ,
আজানের ধ্বনি আসছে ভেসে
রাখ ফেলে তোর কাজ।
ধরনীর বুকে লাভ নেই ছুটে
নাইরে কোনো ফল,
মরলে পরে অন্ধকার কবরে
লাগবে শুধুই আমল।
আয় ছুটে যাই মসজিদ পানে
ফুরিয়ে যে যায় দিন,
সময় তো নাই চল ওরে ভাই
ডাকছে মুয়াজ্জিন।
নামাজ পড়ে দুই হাত তুলে
করি মোনাজাত,
আল্লাহ যেন দুর করে দেন
সকল মুসিবত।
স্বপ্নগুলো
সৌরভ মজুমদার
স্বপ্নগুলো পূর্ণ হোক,
আর চাইনা শোক।
ব্যার্থতা অনেক আছে,
তারপরও কষ্টের নোনা জলে চাইনা যেতে ভেসে।।
রাতের কবিতা
ফারহানা রিনি
আহা কি আনন্দে গগনে উড়িলো শুকনো পাতার ঝুড়ি।
আহা কি সানন্দে ছন্দ বুনিলো কবিতার ঝুলি।
এ মন-প্রাণে দেখো সহস্র ছন্দ লাগিয়াছে রইয়াছে আপন মনে।
নিশিতে আঁধারে ওপথে তারকা মাখিয়া ছন্দ ছড়াইয়াছে ভীড়ে ভীরে।
দেখো জ্বলে জোনাকি মিটিমিটি
ঝিঝিপোকা যেন গেয়ে গেলো কবিতার সুর গুলো।
সন্ধ্যার ওই সুখ তারা একাকিত্বে দিয়ে যায় সঙ্গ,
নয়নে জ্বলে খুশির খেলা, আর ডায়েরির পাতায় বসে কবিতার মেলা।
ঘন আঁধারে ঢাকা ওই নিরব শহরে-
দেখো কোনো এক ধুলো মাখা দেয়ালের কোনে
জাগিয়াছে হয়তো কোনো একজন কবি, নয় নিজের তরে
সে তো জাগিয়াছে কলমের প্রেম রঙে রাঙাতে ডায়েরি,
ইশাদী রূপে আপনাকে ডুবাইয়াছে কবিতার রাজ্যে।
ওই নিকষে জ্যোৎস্নার মিলনে রাগিণী ছুয়াইয়েছে মুগ্ধতা হিয়ায়ে।
ওই অভিমানের পাহাড় ভেঙে যাবে গুড়ি গুড়ি
লিখে যাবে রাতের স্রোতে প্রেমের কত কথা-কলি।
সাগরের নোনা জলে ভিজে যায় রক্তিম আভা।
কতোশত কোলাহলে চাপা পড়ে বিষণ্ণতা।
কবি বলে একটুকরো বিষাদ কুড়াইয়ে রাখিয়াছি অমর করে।
নিষ্টুর আঁধারে স্তব্ধতার ভীরে মর্মদেশে জাগে কোলাহলের চিৎকার।
রাগিণী বলে, দাও আমারে কিছু আবেগি বুলি, রাখিবো যতনে।
দাও রাগে-অনুরাগে, লিখে যাবো কিছু কবিতা মরীচিকা নিপে।
যদি কখনো
আয়নুন্নাহার আল্পনা
একমুঠো আলোয় ঝলমলে রোদ্দুরে হৃদয় সাজাতে পারি
যদি কখনো অলীক স্বপ্ন ছেড়ে দিয়ে মনের রংয়ে মন ভরে রয়
যদি কখনো চাঁদের সাথে কথোপকথনে সুখের হাসি রয়
তখন নাহয় এক আকাশে সোনার আলোয় এক জীবনের সকল হিসেব বেহিসাবি হোক
নদীর জলে এক ছবিতে স্বপ্ন সত্যি হোক
এই জীবনের সকল কথা তোমার সাথেই হোক
অন্য কথার অবসর না হোক মৃত্যুর পরেও পথের সীমা ফুরিয়ে যেনো না যায়
এক আকাশে মেঘের ছায়ায় লুকিয়ে হাসুক সোনার আলোর মধুমায়া।
এই জীবনের সকল কথায় দুঃখকথা
এই জীবনের সকল শ্বাসে নিস্তব্ধতা
সকল শোকে বিদিশা
তবুও তুমিই কেবল একটি ভেলা একটি আশা
তুমি নাহয় সব রেখে দাও আমায় কেবল প্রাণটুকু দাও
আমি না হয় প্রাণের দায়ে প্রাণ দিয়ে যায়
শুধু তুমি আমার মাঝে আমি হও।
সুখ দুঃখ সব মিলে এক জীবনের সকল পথ একটায় থাক
তুমি কিন্তু আমার রও।
শূণ্য দেশ
হাসিনা আক্তার আইরিন
তুমি বাংলাদেশ
এ কি তোমার পরিহাস!
দু'শো বছর ইংরেজ
কু রে কু রে নিঃশ্বেষ।
তেইশ বছর পাকিস্থান
শোষকের আর এক নাম।
এবার এল বাঙ্গাল
নিজেরা ই ছিড়ে
নিজেদের গাল!
অন্যরা কেড়ে কুড়ে
নেয় নিজের দেশে
বাঙ্গালী কি বুঝে
দেয় অন্য দেশে।
পৃথিবীর কোন দেশে
আছেনিরে কেউ
নিজ দেশী রে
দেখলে পরে বলে উঠে ঘেউ।
আর কত কাল দিবিরে দেশ
শূন্য করি কোল
জিবন কাটাবি হা হাকারে
ধীক্কার ঝড় তোল।
সোনার দেশ খালি হয়ে
হয়ে গেল ঢোল
তার পর ও বলবি
তোরা দে দোল দে দোল।
প্রিয়া
রীতম দত্ত
আমি অকালবোধন হতে চাই প্রিয়া
বাঁচতে আমি না চাই
শবের উপর মাথা দিয়ে কাঁদবে তুমি
দেখতে যেনো তা পাই।
মানুষ আমি
মো. আলী আশরাফ মোল্লা
মানুষ আমি
নয় কোন যন্ত্র,নয় কোন দানব
আমারও মন আছে,প্রাণ আছে
বুঝতেই চাই না কেহ!
মানুষ আমি
নয় কোন অলৌকিক কিছু
দেহ আছে মাথা আছে
তাই বলেই কি অবিরাম চলতে হবে?
মানুষ আমি
নয় কোন দেবতা, নয় অন্য কিছু
কাউকে পূজা দেবো, কেউ আমায় দিবে
এই রকম লোক নয় আমি।
মানুষ আমি
নয় কোন সুপার হিরো
সব সমস্যার সমাধানে
নেই কোন আমার কাছে যাদু।
মানুষ আমি
নয় কোন ফেরেশতা
আমারও যে ভুলভ্রান্তি হতে পারে
এ কথা ভুলে গেলে চলবে কেমন করে!
মানুষ আমি
নয় কোন কুস্তিগীর পালোয়ান
এক নিমিষেই শেষ করবো
বহু দিন ধরে জমে থাকা সব জঞ্জাল!
মানুষ আমি
নয় কোন জীব জন্তুু
যেখানেই ডাকবে চলে যাবো
যা দিবে তাই গ্রহণ করবো
এ রকম মনুষ্য জীব নয় আমি।
মানুষ আমি
নয় কোন অন্য গ্রহের প্রাণী
হাত পা চোখ মুখ নাক সবই আছে
অথচ দেখতেই পাচ্ছো না তুমি।
মানুষ আমি
আশরাফুল মাখলুকাত
জগতের সৃষ্টির সেরা জীব
ভেবে চিন্তে কথা বলো, পথ চলো
অন্যায় অসঙ্গির বিরুদ্ধে
প্রতিরোধ করো
আর সত্যের সাথে পথ চলো।
তবেই মানুষ আমি।
কোন মন্তব্য নেই