মাসিক কবিতাকণ্ঠ, জুলাই-২১, বর্ষ-১৪, সংখ্যা-৬৩
পরিচালনা পর্ষদ
সম্পাদক :
এম, আব্দুল্লাহ আল মামুন
নির্বাহী সম্পাদক:
কবির পথিক
প্রধান শিক্ষক (উপশহর আদর্শ বালিকা বিদ্যালয়,বগুড়া)
উপদেষ্টা সম্পাদক:
কাজী হানিফ
(সিনি: ইন্সটাক্টর, টিটিসি)
প্রচ্ছদ:
এম, আব্দুল্লাহ আল মামুন।
জুলাই- ২০২১ (বর্ষ- ১৪, সংখ্যা- ৬৩)
আর একজন নজরুল চাই
বৃষ্টি স্বপ্ন
কাজী হানিফ
রিম ঝিম বৃষ্টির তালে তালে
মন কেন হাওয়ায় দোলে
মন কেন উড়ে যায়
আকাশের অনন্ত দিগন্তে।
ভিজতে চাই আমি বৃষ্টি আনন্দে।
কাছে নেই তুমি আজ ভিজবো কেমনে,
চেয়ে আছি দিগন্তে হতাশার আশা নিয়ে।
ছিলে তুমি আজ নাই, পাখিগুলো ওড়ে না,
জুথুবু হয়ে আছে কেউতো দেখে না।
ডানা গুলো ভিজে আজ ক্রন্দন করছে,
হাঁস গুলো দেখ ওই মহানন্দে।
আমি কেন পারিনা ওই ভাবে ভিজতে।
গাছ পালা সবুজে বৃষ্টির পানিতে,
যৌবন আসে যায় মনের আঙিনাতে।
ভাল থাক প্রেয়সী ভালো থাকো যেওনা।
তুমি নেই আমি আছি, আমি আছি তুমি নেই,
সামনেই শ্রাবন,শ্রাবনের বারিধারা
অঝোরে বৃষ্টি দেখবো দুজনা।
অনাগত দিনগুলো আসবে বার বার
থাকবো আমি তোমার আসার অপেক্ষায়।
আষাঢ় গেলগেল মেঘ ডাকা দুপুরে
কালিমাখা মেঘ আকাশে ঘন হয়ে আসে,
ক্লান্ত হৃদয়ে ক্লান্ত হয়ে গেছি আমি
ভাল থাক, ভাল থাকো তুমি আমি স্বপ্ন বিভোরে।
আমার ফাঁসি চাই
এম, রেজা
আমার ফাঁসি চাই
যে আমি বধির- শুনতে পাইনা তোর চিৎকার।
যে আমি অন্ধ- দেখত পাইনা তোর নির্যাতন।
যে আমি খোঁড়া- যেতে পারিনা তোকে বাঁচাতে।
সেই আমার ফাঁসি চাই।
যে আমি ভিত- লিখতে পারিনা আপনার বিরুদ্ধে।
যে আমি বোবা- শ্লোগান দিতে পারিনা আপনার সম্মুখে।
যে আমি দূর্বল- পারিনা আপনাকে হটাতে।
ফাঁসি চাই ফাঁসি চাই, আমাকে ফাঁসি দাও।
যে আমি বিবেগহীন- অসহায়ের ছবি উঠাই।
যে আমি নির্লজ্জ- তোমার উকালতি করি, মিত্থে স্বাক্ষি বানাই।
যে আমি ক্ষমতাশালী- তোমার হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছি।
সেই আমাকে ফাঁসি দাও, শাস্তি দাও।
আমার বাঁচার নেই কোন আর অধিকার।।
আমি যতবার
ন্যান্সি দেওয়ান
আমি যতবার আমার মোবাইল ফোনে
তোমার ছবি দেখি, তুমিও কি ততবার আমার ছবি দেখো?
আমি যতবার মনে মনে তোমাকে খুঁজি
তুমিও কি, আমাকে খুঁজো ?
না কি, ভর করেছে
অন্য কেউ তোমাকে মনের মনিষ্ঠায়
বিশাল ভালোবাসা
বুকের এক কোণে রেখেছি
কি মায়া জাগে এই প্রাণে
আমি যতবার আমার মোবাইল ফোনে
তোমার ছবি দেখি, তুমি কি ততবার আমার ছবি দেখো ?
ছুঁয়ে দিক তাঁকে
কায়ছার অমি
ছুঁয়ে দিক তাঁকে
অজর ধারায় বৃষ্টির রেশ,
মনের গহীনে টিপ টিপ
ঝরতে যে থাকে!
ছুঁয়ে যাক মন,
বৃষ্টির মলিন ছোঁয়ায়
ক্রোধ ভুলে, মিলনের সন্ধীক্ষণ!
হাতে হাত ধরে,
বৃষ্টি পড়ুক শরীরজুড়ে,
শীতল হোক মন।
জড়িয়ে থাক দুটো দেহ,
দীর্ঘ চুম্বনে,
উষ্ণ ভালোবাসার কিছুক্ষণ!
প্রতি রাতে আমি যে স্বপ্ন দেখি
প্রণব চৌধুরী
প্রতি রাতে যে স্বপ্ন আমি দেখি,
সেই স্বপ্ন কি স্বপ্নই থেকে যাবে ?
জানি স্বপ্ন বিজ্ঞান অন্য কথা বলবে
ত--- বু--- ও---,
মনোবিজ্ঞানের পরিভাষায়,
তার ব্যখ্যা কিন্তু সুদূর প্রসারী ৷
গহীন মনের অন্তরালে,
শত, সহশ্রকোটির নিভৃত পর্ণকুটিরে,
পত্রপুটে ফলাহারে যে দাত্রীর দান তোমার দেহ ও প্রাণ কে করে তোলে সুশীতল,
সমগ্র ক্লান্তি অবসাদ অবসন্ন করে দেয় প্রাণের পরশ,
তাহলে সেই স্বপ্ন কেনো শুধু স্বপ্নই থেকে যাবে বলতে পারবেন কি কেউ ?
যে স্বপ্নে দর্শিত হয়-
লোভ, লালসা হীন স্বাধীন মুক্ত বিহঙ্গ,
তার দুইটি ডানা মেলে মুক্ত আকাশে করবে বিচরণ,
নাঃ,
কোনো শিকারী থাকবে না সেইখানে,
করেন আজ এই আবহে তো,
দেবদত্তদের প্রার্দুভাব বেশী,
সিদ্ধার্থরা তো আজকাল সমাধী তে সমাধিস্থ !
অহংকারীদের অহংকার,
অলঙ্কার স্বরূপ তাদের গলদেশে ফাঁসির দড়ির মতো আটকে গেছে,
বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা হাত ধরাধরি করে,
সমাজের প্রতিটি অঙ্গনে খুশীর ও শান্তির গোলাপ প্রস্ফুটিত করে,
তরণের তারুন্যতা,
যৌবনের উচ্ছলতা,
যেখানে দিগবিজয় করে মুক্তির সূর্যকিরণে,
কেনো ?
কেনো ?
ত-- বে-- স্ব--- প্ন---ই--- থেকে যাবে বলতে পারেন ?
কেনো তবে প্রতিরাত,
শুধু তমসা ঘন কুহকে ঢাকা থাকবে বলতে পারেন ?
কেনো আমারা কি পারিনা ?
যারা আলোক কে বন্দী করে রেখেছে অন্ধকার কারাগারে,
সেইখান থেকে কারার লোই কপাট ভেঙ্গে,
সকলকে সমভাবে বন্টন করতে ?
প্রতি রাতে আমি যে স্বপ্ন দেখি,
তা যেন স্বপ্নই না থেকে যায় তার ব্যবস্থা করতে ?
সেই তুমি
মোঃ ইব্রাহিম
আবছা আবছা একটু মনে পরে
সেই কবে,
তুমি আর আমি শ্রাবনের বৃষ্টিতে ভিজেছি
কদম গাছের তলে।
বাড়ির পাশের পুকুর পাড়ে
তোমার ভেজা শাড়ির আঁচল ধরে
গাছের নির্জন ছায়ায়
কত সময় কেটেছে
দুটি মনের চাওয়া পাওয়ায়।
আবছা আবছা একটু মনে পরে
সেই কবে,
শরতের বিকালে
কাশফুলের পালে
লোক চক্ষুর আড়ালে
কানামাছি খেলার ছলে
ভালবাসার প্রথম কলি আমায় বলেছিলে।
আবছা আবছা একটু মনে পরে
সেই কবে,
স্কুল ছুটির পরে
ইশারায় ডাকতে আমায়
বাশ বাগানের পাড়ে,
কি যানি কি বলবে তুমি
এমন ব্যাকুলতা ভরা
ছিল তোমার চাহনি,
খুব হাসতাম আমি
দেখে তোমার ভালবাসার এমন পাগলামি।
আবছা আবছা একটু মনে পরে
সেই কবে,
তোমার সাথে আমার শেষ দেখা হয়েছিল
রেলস্টেশনের প্লাট ফর্মের উপরে
দূর থেকে হাত নেড়ে,
এত মানুষের ভীরে
পিছন থেকে ডাকলে আমায়
হঠাৎ করে,
চেয়ে দেখি, সেই তুমি
বদলাউনি একটু খানি,
শুধু লাল বেনারসি শাড়ি পরা
সাথে কোন এক সঙ্গিনী ।
নন্দঘোষ
আমিনুল ইসলাম
বাহিরের উঠান,
তার পূর্ব কোনায় -
সদ্য শুকানো খড়ের আস্ত ঢিবি,
আড়ালে দৃষ্টির সীমান্ত ছায়া,
উপলক্ষ্য ছাড়া বোঝার তফাৎ নেই
সেখানে কি হয়!
গরু দুটো খাদায় বেঁধে দেয়,
খড় টানবে বলে সেই দিগন্তে পা ফেলে,
ছেলেটা মাথা অর্ধনিমগ্ন করে মোবাইল টিপছে।
"বাবু,কি করছো এখানে? "
ছেলেটা চমকে উঠে, " আব্বু, অনলাইন, অনলাইন ক্লাস "
আশ্চর্য! " অনলাইন ক্লাস? "
ছেলেটার সত্য লুকানোর অস্থিরতা,
" করোনায় স্কুলে ক্লাস বন্ধ, তাই অনলাইনে পড়াশোনা। "
বাবা রাগে, " ঘর কি হয়েছে তোর লক্ষি সোনা,কলম কই, কোথায় তোর বই খাতা?"
" আব্বু, অনলাইনে বই খাতা লাগে না।"
বাবার চোখে তো সোনালী ফসলের শুভ্রতা
আর রৌদ্রে স্নান বিদগ্ধ মস্তিষ্কে ---
অনলাইনের কী বুঝবে!
তবুও কৌতূহল জল্পনা বাবাকে স্থির থাকতে দিলনা।
আবারও প্রশ্ন "অনলাইন ক্লাস কি ঘরে বসে হয় না?"
ছেলে অত্যন্ত বিরক্ত, "তুমি অনলাইনের কি বুঝবে? "
ক্লান্ত বাবার কষ্টের নিঃশ্বাস, " ওহ্ আমি তো আবার স্কুল পড়িনি,অক্ষর চিনিনা, অনলাইন বুঝবো কিভাবে! আমি তো কাস্তে, কোদাল, পাসুনকে জানি,শুধু ফসল ফলাতে বুঝি!"
ব্যস্ত কৃষক, কাস্তের প্রত্যেক টানে টানে রঙ্গিন ফসলের সাথে চোখ ভরে স্বপ্ন দেখে -
ছেলেটাকে যেন আমার মতো রোদে পুড়তে না হয়, ঝড়ে ভিজতে না হয়।
একদিন সেই বুক বাঁধা স্বপ্ন হলো-
সাহারার মরিচিকা!
বিদ্বানে অন্ধ হলেও, কানের পর্দায় আসে...
সেদিনের অনলাইনে ক্লাসটা, ক্লাল ছিল না,
ছিল ফ্রিফায়ার, পাপজি গেম।
আদমরা অশিক্ষিত বাবা ফ্রিফায়ার পাপজি কী
তাও বোঝে না!
ব্যর্থ বাবা একটাই বোঝে, -বুক খুবরে মরে--
ছেলেটাকে নিজের মতো-
একজন সাচ্চা কৃষকও বানাতে পারলোনা কেন?
ঘৃণ্যতার ধিক্কারে অভিশপ্তের থুথু ফেলে
যে শিক্ষিত জাতি, যে শিক্ষক, যে বুদ্ধিজীবী
তাঁর লালিত বিশ্বাসকে দায়িত্বহীন মূর্খতার দামে বাজারজাত করেছিলেন।
যে শিক্ষিত জাতি শিক্ষা নিয়ে জোচ্চুরি করেছিলেন।
ওরা সবই দোষারোপের তালে --
নৃত্য করেন,করুক!
কিন্তু, আমি তো মাটির সাথে মিশে থাকা-
সবুজাভ ঘাসের নম্রতা,
নবান্নের মিষ্ট গন্ধে সবার আগে
মাথা উঁচু করে দাঁড়াই
আমিই চির নন্দঘোষ।
সোনাহাট স্থলবন্দর, কুড়িগ্রাম
বীরকন্যা প্রীতিলতা
সামিয়া আক্তার
কত কিছু লিখবো ভেবেছি,
তোমায় নিয়ে মনে মনে।
ভাবনার জড়তায়
লেখাগুলো হয়না আর লেখা
পায়না আর আলোর দেখা।
জীবন তরীর কতটা পথ,
হেঁটেছো তো একা একা।
দেখেছিলে স্বপ্ন,
লিঙ্গ বৈষম্যহীন হবে একটি সমাজ;
হবে ব্রিটিশ শাসনমুক্ত মাতৃভূমি।
জম্ম তোমার চট্টগ্রাম শহরে,
পড়াশোনা ঢাকার ইডেন কলেজ;
সমাপ্তি তার কলকাতার বেথুন কলেজে।
দেশের প্রতি ছিলো অগাধ টান,
তাই ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ;
রুখে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তে
ছিলে তুমি বলীয়ান।
সূর্য সেনের নেতৃত্বে নেমেছো শেষে,
ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে।
দেশের তরে দিয়েছো জীবন,
পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়ে।
করেছো প্রমাণ দেশের তরে
মহিলারাও দিতে পারে জান।
অবশেষে,
প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার এর স্বপ্ন হলো পূরণ;
১৯৪৭ এ ব্রিটিশ শাসনের হলো অবসান।
কিছু নাম যায়না ইতিহাস থেকে মুছে,
বীরকন্যা প্রীতিলতা;
তুমিতো তাঁর জলন্ত প্রমাণ।।
বাবা আমার বাবা
মো. আলী আশরাফ মোল্লা
বাবা আমার বাবা
নাই কোন তার তুলনা
বাবা নামে বটবৃক্ষ আছে যার
দুঃখ দুর্দশা হতাশা নাই তার।
বাবার সোহাগ শাসন পেয়েছে যারা
বলতে হবে বড়ই ভাগ্যবান তারা
বাবাই হলো সকলের আশ্রয়ের জায়গা
বাবাকে দেখলে দূর হয়ে যায় ক্লান্তি হতাশা।
বাবা আমার দুঃসময়ের কাণ্ডারী
সকল বিপদ আপদে প্রেরণা দানকারী
বাবার কাছে চেয়েছি যা জীবনে
কোন কিছুই অপূর্ণ রাখেনি মোরে।
নিজে দুঃখ করেছে কষ্ট সয়েছে
সন্তানকে কখনোই বুঝতে দেয়নি তা
বাবা আমার পরম পাওয়া
তার মতো এ জগতে কাউকে দেখি না।
বাবা আমার সকল চাওয়া
কখনোই কিছুতে ব্যর্থ না হওয়া
বাবা আমার সকল পূর্ণতা
সব কিছুই সহজেই পাওয়া।
বাবা মানে সকালে অফিসে যাবে বায়না ধরা
দুপুরে বাসায় না ফিরলে নাওয়া খাওয়া বন্ধ হওয়া
বিকেলে বাবাকে নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার অভিমান করা
রাতে তার বুকেই মাথা রেখে ঘুমাতে যাওয়া।
বটবৃক্ষ হয়ে যিনি দেন শীতল ছায়া
তিনিই হচ্ছেন আমার বাবা
শত বাধা শত ঝড়-ঝঞ্ঝা হতে আগলে রাখেন যিনি
তিনিই হচ্ছেন আমার বাবা আর তোমার বাবা।
বাবার আর্দশ সততা
ধারণ করে চলবে যারা
পথ বিচ্যুত কখনোই
এই ধরাধামে হবে না তারা।
বাবা মানে নির্ভরতার প্রতীক
আর আকাশ সমান আবদার
বাবা মানে শ্বাশত,চির আপন
বাবা মানে নিরাপত্তার চাদর।
তোমায় খোঁজার আভাস
মোঃ রায়হান কাজী
তোমায় খোঁজার আভাস রয়ে গেছে আড়ালে,
প্রভাতের মৃদু আলোতে পারিনিতো প্রকাশ করতে।
কথা বলে শেষ করে পারিনিতো বাঁধিতে,
তবে কী তুমি আসবেনা আমার চিলেকোঠাতে?
আজি নিভৃতে দ্বারে দ্বারে নবীনরূপে চুপিসারে,
নিখিল নয়ন জোড়া মেলে পারিনিতো সাধতে।
দেখেছি অনেক কিছু এদিক সেদিক ঘুরে,
জীবনে যা শূন্যেস্থান সবি যেন তোমায় ঘিরে।
সবি আছে ধরনীতে শয়নে স্বপনে নিদ্রার আবেশে,
তবুও একা ফিরে গেছে সে ভাঙা-গড়ার মহোৎসবে।
তুমি আর বুঝবেনা ভালোমতো আমাকে,
সেই আশায় ফুটেছিলো ফুল হৃদপিন্ডের দেয়ালে।
কী আছে কথ্য ভাষার মাঝে জানাবো চিত্রবেদন?
বোবা হয়েছে মন প্রকৃতির মাঝে বিচিত্র রূপ দেখে।
জানি এই প্রান্তের মাঝে নেইনি দীর্ঘশ্বাস প্রাণ খুলে,
সবকিছুতেই কী আর পূর্ণতা আসে পরশমেখে?
অতল জল
রীতম দত্ত
তরঙ্গিত আঁধার রাতে
গগন ভেদে রঙ্গ ভাসে
আমার হাসির বিকট আওয়াজ,
শুরু হবে সব শেষে।
বিজরিত কন্ঠ আমার
আবেগ আপ্লুত চোখের জল
নাসারন্ধ্র হারিয়েছে ঘ্রাণ শক্তি , সাথে দৃষ্টিশক্তি চোখ
এন্টিনা ব্যাবহৃত স্মৃতিশক্তি
মাথার চুল হয়েছে সুতো।
বিকলিত সম্ভাষিত , বিকলাঙ্গ হাত - পা
বিশ্বস্ততা হারিয়ে গেছে যুগের তলে
তাল মিলিয়ে হারতে হারতে
সব গিয়েছে আমার অতল জলে।
পতিতা
জুনায়েদ খন্দকার নীর
মৃত্যুর পরেও যাদের দাফনের জন্য বরাদ্দ হয়না একটুখানি জায়গা,
সৎকারের জন্য দেওয়া হয়না এক মুঠো মাটি,
আর এদেরকেই জীবনের বেশিটা সময় থাকতে হয়েছে সুসজ্জিত পরিপাটি।
যাদের শেষকৃত্যে আসেনা এগিয়ে ভদ্র সমাজের কোন ভাই, কোন পিতা।
কলা গাছের ভেলা যাদের জন্য হয় শেষ সঙ্গী।
জানেন এরা কে?
এরাই হলো আমাদের সমাজের পতিতা।
যাদের মৃত্যুর পর হয়না কোন জানাজা,
পুড়ানো হয়না ঘি, চন্দন কাঠে।
ভাসিয়ে দেওয়া হয় শৈবলিনীর স্রোতের মাঝে।
সেই তাদের কাছেই ভিড় করে যৌবনের মৌবনে সমাজের উচু নিচু জাতের আবাল বৃদ্ধ বনিতা।
মিটাতে আসে যে যার মত নিজের বিকৃত কাম লালসা,
আর এরা?
নিয়তির নিষ্ঠুর পরিহাসকে মেনে নিয়ে ফোটাতে চায় তাদের অবয়বে চাপা কষ্টের মাঝেও হাসির রেখা।
এটাই কি ছিল তাদের কপালে লেখা।
নিজেকে সুসজ্জিত করে অপরের মনোরঞ্জনে সঁপে দিতে হয় তাকে খুব সহজে,
এই পথ কী বেছে নিয়েছিল সে জন্মের পর নিজে নিজে?
হয়তো তার কল্পনাতেও ছিলনা এমন জীবন যাপন কাম্য,
তবুও নিজেকে সঁপে দিতে হয়েছে তাকে,
কারণ সমাজে এখনো নেই কোন প্রকার ভারসাম্য।
অসহায়, অভাবীদের পূনর্বাসনের নেই কোন সামাজিক প্রদক্ষেপ,
এক মুঠো ভাতের নিমিত্তে শরীর বিক্রি করতে হয় তাকে ভুলে গেছে এখন সে সব আক্ষেপ।
খুব ভালো করেই জানে সে।
পরিবর্তন হবেনা কখনো সমাজের সামাজিক ধারা,
সৃষ্টি লগ্ন থেকেই তাই গড়ে উঠেছে সব জায়গাতে পতিতা পাড়া।
রাতের আধারে যে হয় নিজের কাম তাড়িত হৃদয়ের কাছে ক্ষণিকের জন্য প্রেয়সী,
কাম শেষ হলে দিনের আলোতে তাকেই বলি দূর হয়ে যা চোখের সামনে থেকে ওরে ও সর্বনাশী।
যুগ যুগ ধরে চলে আসছে আমাদের এই নির্মম সামাজিকতা,
কারণ?
স্বার্থপরতার খেলায় মেতে আছে সমাজ,
দেখাতে চাই যে যার মত অর্থবিত্ত ও দাম্ভিকতা।
আর?
একি পরিণতির জীবন চক্রে বাঁধা পড়ে আছে আমাদের সমাজের পতিতা।
কোন মন্তব্য নেই